ধারাবাহিক উপন্যাস <br /> মনে রবে কিনা রবে ষষ্ঠ পর্ব <br /> মোনালিসা ঘোষ

ধারাবাহিক উপন্যাস
মনে রবে কিনা রবে ষষ্ঠ পর্ব
মোনালিসা ঘোষ

ছয়
ইন্দ্রনাথ জন্মান্তর মানে না।তার ইচ্ছে হয় না, তাই মানে না । মানবার মধ্যে সে কোনো যুক্তি খুঁজে পায় না। তার যা চাই, তা এই জন্মেই চাই। এই শরীরে চাই। এই মন দিয়ে সে সেই পাওয়াটাকে সেলিব্রেট করতে চায়। একবার এই দেহ নষ্ট হয়ে গেলে, তার তখন সব যাবে। সে তখন থাকল কি থাকল না, সেটা সে বুঝবে কিনা কে জানে? অতশত সুদুর ভাবনা তাই সে ভাবত না। তাকে হাসিল করতে হবে যা কিছু সে চায়, আর সেই হাসিল করার পদ্ধতি নিয়ে ভেবে ভেবে সে দিন কাটাত।
ভুলোমনা যদিও তখন ভুলোমনা হয়নি সে ছিল মিঠুয়া , তবুও ভুলোমনার কাছে ইন্দ্রনাথ ছিল একটা চ্যাপ্টার, যাকে আদ্যপ্রান্ত পড়ে ফেলতে হবে।
রিমপোচের কাছ থেকে ফিরতে ফিরতে ভুলোমনা দেখল ঘন কুয়াশা হয়েছে। মেঘ নেমে এসেছে চারপাশে। মনে হয় বৃষ্টি হবে। চোখের সামনে যে পাহাড়ের ঢাল সব ঢেকে গেছে ঘন কুয়াশায়। ধোঁয়া ধোঁয়া পৃথিবী, ধোঁয়া ধোঁয়া জগৎ, কে ভেদ করবে এর রহস্য !
ভুলোমনা তার কেবিনে ঢুকে এল। কাঁচের শার্সি দিয়ে বাইরেটা দেখল। বাইরে সব হারানোর দেশ। অথচ সেখানে তার যা হারিয়ে গেছে, তাই খুঁজতে এসেছে সে। নিঃশ্বাসের ভাপ দিল সে শার্সিতে। সেখানটা উঠল ঘেমে। সেখানে, ভুলোমনা লিখল ইন্দ্রনাথ। বারবার ঘুরে ফিরে কেন ইন্দ্রনাথই আসে তার স্বপ্নে, চিন্তায়, মনে ! অ্যালবাম ভর্তি এত মানুষ, কই তারা তো এমন চোদ্দবার করে হানা দেয় না ভুলোমনার মাথায় ! সেই ঘেমে ওঠা শার্সিতে ভুলোমনা দেখতে পেল একটা টেবিলে মুখোমুখি ইন্দ্রনাথ আর সে বসে আছে। যেন তার পুর্বজন্ম!
চেহারাটা ছিল ভুলোমনারই। আর ঘটনাগুলো গলগল করে কালো ধোঁয়ার মত বেরিয়ে আসছিল শার্সির ওপরে। পুর্বজন্মই বটে ! ভুলোমনার মত চেহারার এক মানুষী ইন্দ্রনাথ নামধারী এক মানুষের সঙ্গে বসে আছে।সিনেমার মত চেয়ারের সামনে কি সব নড়াচড়া করছে…ঘরটার উজ্জল আলো, টেবিলচেয়ার ইত্যাদি। কেমন অফিস অফিস পরিবেশ।গম্ভীর মুখে কড়া গলায় ইন্দ্রনাথ ওকে জিজ্ঞেস করছে আপনি স্মোক করেন? ড্রিঙ্ক করেন ? ভুলোমনা ভয় পাওয়া পাখির মতো ঘাড় নেড়ে নেড়ে কেঁপে কেঁপে না বলছে। অভিমানে ভারী হয়ে যাচ্ছে বুক। মনে হচ্ছে আমাকে দেখে কি এসব মনে হয় ! যেন বোঝা উচিত ছিল ও স্মোক করে না, ড্রিঙ্ক করে না। এসব যেন গায়ে লেখা থাকে। ভাল মেয়ে মার্কা একটা স্ট্যাম্প তার গায়ে মারা আছে বলেই তার ধারণা।তার সঙ্গে… স্মোকিং-ড্রিঙ্কিং এসব মোটে যায় না। সে যে ভাল মেয়ে এই সহজ সত্যিটা এই লোকটা বুঝতে পারছে না কেন? অবশেষে লোকটা নরম হয়ে পড়ে। লোকটা মানে অবধারিত ভাবেই ইন্দ্রনাথ। নরম সুরে সে বলে, আপনাকে আমি তুমিই বলছি। মনে হচ্ছে অনেক ছোট। আপনি কিছু মনে করছেন না তো?…
-না।(উহ্য) এতে মন করাকরির কি আছে?
-মনে করছেন না তো? বারবার তিনবার। তিন সত্যি করল ভুলোমনা। মনে করছে না সে কিছু।বেয়ারাটাকে ডেকে ইন্দ্রনাথ একটা কিছু কুরিয়্যর করতে পাঠাল।নাকি জেরক্স? নাকি অন্য কিছু। মনে পড়ছে না। ঘরের দরজাটাকে খুলে দিতে বলল। বেয়ারাটা ফিরে এলে দরজাটা বন্ধ করে দিতে বলল। এইরকম দরজা খোলা এবং বন্ধ পর্ব বারবার চলল। ভুলোমনার মনে হল, দরজা খোলা রাখা আর বন্ধ করা নিয়ে লোকটা অযথাই বেশী বাড়াবাড়ি করছে। বেয়ারাটা না থাকাকালীন দরজাটা খোলা রাখছে। যাতে সে বন্ধ ঘরে ইন্দ্রনাথকে ভয় না পায়। এমনটাই মনে করল সে। এইসময় ইন্দ্রনাথ বলল, তোমার বাঁ হাতে যে চুড়িটা পরে আছো, সেটা সবসময় পরে থাকো তুমি? এইরকম একটা অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন শুনে বেজায় অবাক হল ভুলোমনা। ভুলোমনা নয় মিঠুয়া। ওখানে যে গেছিল সে ভুলোমনা ছিল না, মিঠুয়া ছিল। মিঠুয়া দেখল চুড়িটাকে। বলল, এটা চুড়ি নয়। ইন্দ্রনাথ বলল, জানি, এটাকে বলে নোয়া। সবসময় পরে থাকো তুমি?
এইসময় ঘরের আধো অন্ধকারের মধ্যে হতচকিত অবস্থায় ভুলোমনা নিজের বাঁ হাতটা হাতরালো । সেখানে নেই ওই চুড়িটা যার পোষাকি নাম নোয়া।
জোরে ধাক্কা খেল ভুলোমনা। বাইরে কড়কড় করে বাজ পড়ল যেন তুমুল দামাল এক পাহাড়ী ঝড় উঠেছে চতুর্দিকে । অন্ধকারে পাহাড়ের গায়ে আটকানো বিশাল আকৃতির গাছগুলো যেন মাথা ঠুকে ঠুকে মরছে। ঘরের মধ্যে নিজের একটা ভোঁতা হয়ে যাওয়া মাথা নিয়ে মিঠুয়ার শরীরের মধ্যে বসে থেকে থেকে ভুলোমনা ভাবল, সে কি বিবাহিত ছিল ?
এক্ষুনি অ্যালবাম দেখা দরকার। কিন্তু অ্যালবাম খুলতে ইচ্ছে করছে না। আবার কতগুলো সারি সারি মুখের মিছিল দেখতে হবে। যে মুখগুলো মিঠুয়ার জগতে ছিল। তার জগতে নেই। আমি তবে কে? নিজেকে বড় অসহায়ের মত প্রশ্ন করল ভুলোমনা।
মোবাইলে রিং বাজছে ভীষণভাবে। ভুলোমনা নিজের মোবাইলটা খুঁজল। না তার নয়। মিঠুয়ার মোবাইল বাজছে।স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে ইন্দ্রনাথ।ইন্দ্রনাথ ফোন করে কি হাবজা-গ্যাবজা বলছে। কোন একটা প্রেমকাহিনী বলছে, যেটা বিরহেণ সমাপয়েৎ । ইন্দ্রনাথের বেশীরভাগ প্রেমকাহিনীই বিরহেণ সমাপয়েৎ। সব মেয়েই ভয়ঙ্কর ধরণের আকর্ষণীয়া। কোন না কোন দিক দিয়ে। অথচ তারা ইন্দ্রনাথের পেছনে দৌড়োদৌড়ি করছে, কাজকম্ম ছেড়ে এইরকম বক্তব্য ইন্দ্রনাথের। সেইরকম একটা মেয়ে একই কোচিনে পড়ত ইন্দ্রনাথের সঙ্গে।
-তো কিভাবে প্রোপোজ করলেন বলুন?
-আমি প্রোপোজ করিনি। শোনো, একটা কথা জেনে রাখো। আমি আজ অবধি কোনো মেয়েকে কখনও প্রোপোজ করিনি।
-তবে কি তারা আপনাকে আদেখলার মত প্রোপোজ করেছে।
-অফ কোর্স।
-আচ্ছা, বলুন, এই শ্রেয়সী না কে, এ কিভাবে প্রোপোজ করল?
-আরে, আমি তো কোচিনে খাতা জমা দিয়েছিলাম। খাতার ওপর আমার বাড়ির ল্যান্ডলাইন নম্বরটা লিখে দিয়েছিলাম। তো শ্রেয়সী সেটা দেখে নেয়। ব্যস।
-ব্যস !
-তারপর ফোন করে নির্ঘাৎ বোকাবোকা কথা শুরু করলেন?
-আমি করিনি। শ্রেয়সী করেছিল। ও একটু বোকা টাইপেরই ছিল।
-আপনি তো কিছুই করেননি। ধোয়া তুলসীপাতা কোথাকার। তো তারপর কি হল?
-শ্রেয়সীর ছোড়দা প্রচণ্ড রাগারাগি করে আমাকে গুন্ডা, বদমাশ ইত্যাদি বলল বাড়িতে।আর বাড়ির লোক শ্রেয়সীকে অন্য লোকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিল।
-আর আপনি বসে বসে আঙুল চুষলেন?
-না না, তা কেন? আমি বিদিষার সঙ্গে প্রেম করতে শুরু করে দিলাম।
-বাঃ, ভাল ভাল। তা ইদানিং এই বুড়ো বয়সে শ্রেয়সী এসে আদিখ্যেতা করছে কেন?
-ও, প্রথমে বলতে এসেছিল যে, ও ভুল করেছিল। তারপর ও খুব ভাল রান্না করে তো? তাই আমাকে খাওয়াবে বলল। আর টিফিন কেরিয়ার ভর্তি করে নিজে রেঁধে নিয়ে এল।
-এই, এটা কিন্ত শরৎচন্দ্রমার্কা বোকা বোকা মেয়েগুলোর মতো হয়ে যাচ্ছে।
– হয়ে গেলে হয়ে যাচ্ছে। তুমি তো আর আমাকে বিশ্বাস করবে না।
– আপনাকে বিশ্বাস করার মতো সত্যি কোনো কারণ ঘটেনি। আমি তো বুঝতেই পারছি না, মেয়েরা সারাক্ষণ আপনার পেছনে হেদিয়ে মরছে,আর আপনি কেন তবে আমায় পেছনে পড়ে আছেন?
– সত্যি, কথা বলত তোমার ভয় করছে না? সিরিয়াস হল ইন্দ্রনাথ।
– ভয় ? ভয় মানে… না তো? হাঁ, আমার আপনাকে দেখে ভয় ভয় করছে।
– না, না। তোমার নিজেকে ভয় করছে না ?
– নিজেকে ভয় করবে ? কেন ? আমি কি আমাকে কামড়ে দেব নাকি ?
– করছে না বলছ ?
– নাহ।
– তুমি নিজেকে ভয় পাচ্ছ না এই ভেবে যে, তুমি আমার প্রেমে পড়ে যেতে পারো ?
ভীষণ আবাক হল মিঠুয়া। এতটাই অবাক হল যে, এটা একটা মোক্ষম হাসির কথা মনে হওয়া সত্ত্বেও সে হাসতে ভুলে গেল।
ওঃ, ইন্দ্রনাথের নিজের সম্পর্কে কি সুউচ্চ আকাশছোঁয়া ধারণা,কি গভীর আত্মবিশ্বাস যা প্রায় বাড়াবাড়ির পর্যায় পৌঁছে গেছে। এত বেশী উচ্চমন্যতার পেছনে ঘাপটি মেরে আছে অতল অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকা হীনমন্যতা!!!

ইন্দ্রনাথ তার লেখা একটি প্রবন্ধ পড়তে দেয় মিঠুয়াকে। প্রবন্ধের নাম প্রেম। ইন্দ্রনাথের কাছে প্রেম মানে কি? তাই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু। ইন্দ্রনাথের কাছে প্রেম মানে খুব পরিষ্কার। একটি মেয়ের সঙ্গে দেখা হবার পর চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে ফেলা। সানগ্লাস খুললেন কেন ? সে যদি জিজ্ঞেস করে, তাহলে বলা তোমায় ভাল করে দেখব বলে। এবং বার বার, চোদ্দবার যত মেয়ের সঙ্গে প্রেম করা হয়েছে, সবাইকার সঙ্গেই এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করা। এই সব বোকাবোকা কাজ করা। মিঠুয়া খুব গভীরভাবে ভাবতে থাকল এইসব নিয়ে। ভাবতে ভাবতে একসময় ইন্দ্রনাথকে বলল, প্রেম কি তাহলে শুধু কিছু টেকনিক? ইন্দ্রনাথ খুব গম্ভীর হয়ে গেল এবং নড়েচড়ে বসল। তার মনে হল তার ‘প্রেম’কে মিঠুয়া সিরিয়াসলি নিতে পারছে না। ইন্দ্রনাথ বলল, না প্রেম একটা প্যাশন। যার মধ্যে নানারকমের অস্থিরতা কাজ করে। কিন্তু প্রেমে গভীরতা বাড়তে বাড়তে একটা সময় আসে, যখন প্রেম একদম শান্ত, স্থির গভীর জলাশয়ের আকার ধারণ করে। তখন প্রেম হয়ে ওঠে একটা আশ্রয়, যাকে অবলম্বন করে বাঁচা যায়। সেটা তখন আর প্রেম থাকে না।
যারপরনাই বিস্মিত হয়ে মিঠুয়া জিজ্ঞেস করল , প্রেম থাকে না? তাহলে বদলে গিয়ে কি বকচ্ছপ হয় ?
-প্রেম তখন ভালবাসা হয়ে ওঠে।
-প্রেম আর ভালবাসা আভিধানিক অর্থ তো এক।
-আমার কাছে নয়। প্রেম আমার কাছে যার মধ্যে ভাল লাগা, প্রচণ্ড মোহ ইত্যাদির সঙ্গে অস্থিরতা, বুক দুরুদুর ইত্যাদি জড়িয়ে থাকে । ভালবাসা আশ্রয়ের মতো, তাই তার মধ্যে কোনো অস্থিরতা নেই। মিঠুয়া গভীর চিন্তায় পড়ে যায়। সে ভীষণ ভাবতে থাকে। কি যে সাত-পাঁচ ভাবে সে নিজেই টের পায় না। ভাবতে ভাবতে একসময় সে আপনমনে হেসে ফেলে। আর ইন্দ্রনাথ আলতো করে তাকে বলে, হাসছ যে! ‘হাসছ যে’ শব্দটা ইলেকট্রিক কারেন্ট-এর মতো মিঠুয়ার কানকে স্পর্শ করে।কান থেকে সেটা চলে যায় মস্তিষ্কে । মস্তিষ্ক জাগায় মনকে।আর মিঠুয়া শিহরিত হয়ে ওঠে। একটা ‘হাসছ যে’ শব্দ তার ভেতরের সমস্ত সূক্ষ্মতাকে কাঁপিয়ে, নাড়িয়ে, ঝাঁকুনি দিয়ে তার অন্তরাত্মাকে স্পর্শ করে, একেবারে গোড়ায় সমূলে সজোরে শেকড়শুদ্ধ ঘুমিয়ে থাকা লিবিডোতে টোকা দেয়।মিঠুয়া আচ্ছন্ন হয়ে পড়তে থাকে, ‘হাসছ যে’ এই দুই শব্দের নেশা ধরানোর শক্তিতে। কি যেন ঘটে যায়।অলক্ষ্যে দুইজনের মধ্যে।

অতঃপর তারা সাহিত্যে উপন্যাসে, কবিতায় যত রাজ্যের প্রেম আছে, সেইসব বিভিন্নধর্মী প্রেমেদের নিয়ে পড়ে। ইন্দ্রনাথ একের পর এক কবিতা বলে যায়। ‘দূরে ছিলাম, কাছে গেলাম, ডেকে বললাম, খা, আঁখির আঠায় জড়িয়েছে বাঘ নড়ে বসছে না।/ওইরকম একটা বাঘের স্বপ্ন দেখতে থাকে মিঠুয়া। ইন্দ্রনাথ বলে, আমি তার অলিখিত চিঠি মনে মনে পড়ে ছিঁড়ে ফেলি , মিঠুয়া নিস্তদ্ধ হয়ে যায়।

ভুলোমনা দেখল গোটা ঘরটা একটা বোঁদা অন্ধকারে গুমোট হয়ে আছে।গুমোট অন্ধকারে উড়াউড়ি করছে স্মৃতিরা। ফরফর করে শোনা যাচ্ছে তাদের ডানার আওয়াজ। মনে মনে যে কোন একটাকে ধরে ফেললেই পাওয়া যাবে একপাতা স্মৃতি, যা তলিয়ে গিয়ে আবার ভেসে উঠতে চাইছে।অন্ধকার হাতড়ে ডায়েরিটা খুঁজে বার করল ভুলোমনা। একটা মোমবাতি জ্বালালো সে। দেবেন্দ্রই কখনও কোনদিন একসময় এসে রেখে গিয়েছিল। পাহাড়ে নাকি টর্চ, মোমবাতি, দেশলাই, দড়ি, ছুরি এসব হাতের কাছে রাখতে হয়।দড়ি আর ছুরি নিয়ে আমি কি করব?
-আত্মরক্ষা ।
এই না বলে দেবেন্দ্র ছুরি হাতে খানিকক্ষণ কুংফু করতে করতে নাচানাচি করেছিল। তখন হাওয়াই চটীটা চট চট করে আওয়াজ করছিল।
ভুলোমনার মনে হচ্ছিল,ওর দড়িরও দরকার নেই, ছুরিরও না। কারণ বিপদের সময় ও জানে যে, ঠিক অন্ধকার ফুঁড়ে বিপদের মুর্তিমান যম হিসেবে উদয় হবে চিকু। তার চিকু আছে। গরীব মানুষদের যেমন ভগবান থাকে তেমনি।

চিকু প্রকৃতির অঙ্গ।প্রকৃতির মধ্যে মিশে থাকে সে।
ডায়েরির পাতা খুলে ভূলোমনা দেখল, সে শেষ ডায়েরি লিখেছে, এখানে আসার পর পর। মাত্র কয়েকটালাইন। “এখানে এলাম। সবাই বলে আমি অসুস্থ। এদেরও তাই বলা হয়েছে। সামন্ত এসে রেখে দিয়ে গেল।যাবার আগে গুরুং আর সামন্ত আলাদা অনেকক্ষণ কথা বলছিল। যাবার আগে সামন্ত সবকিছু ফুল প্রুফ হয়েছে কিনা, তাও দেখে নিচ্ছিল। যাবার আগে সামন্ত আরও আরেকটা জিনিস করছিল। সে আমার চোখের দিকে অনেকটা উদভ্রান্তের মত তাকিয়ে থাকছিল। মনে হচ্ছিল, পারলে সে আমাকে পট করে একটা চুমু খাবে। পাছে সে চুমু খায়, তাই আমি তাড়াতাড়ি বারান্দার কাঠের হাতল ধরে চারপাশটা দেখতে লাগলাম, মন দিয়ে। সে বলল, আসছি। আর তারপর আমি খুব হন্তদন্ত হয়ে হ্যাঁ, হ্যাঁ বলে সামন্তর বগলের কাছে নাকটা নিয়ে গিয়ে জোরে জোরে শুঁকলাম। পশুপ্রাণীরা যেমন শুঁকে থাকে আর কি! সামন্ত একটু হকচকিয়ে গেছিল, কিন্তু খুব বেশী না। সম্ভবত হকচকানোর মত এত ঘটনা ওর জীবনে ঘটেছে যে, কিছুতেই তাই ও তেমন বেশী হকচকায় না। আসলে আমি সামন্তর গায়ের গন্ধ শুঁকে দেখছিলাম, স্মৃতি জেগে উঠে জানিয়ে দেয় কিনা যে, সামন্ত আমার বেশ চেনা। সেরকম তো কিছু হল না। আমার মাথাটা একটা প্রাণহীন পাথরের মত শক্ত হয়ে রইল। ভাবলাম, আমার মাথাটা দেখছি, তেমন ফুলপ্রুফ ছিল না। সামন্ত রওনা হয়ে গেল মন খারাপের মত মুখ নিয়ে। ও রওনা হয়ে যেতেই আমার খচখচ করে উঠল, সামন্তর নিজের মাথাটা ফুলপ্রফ তো! কেন জানি না, মনে হল, সামন্তর মাথাটা ফুলপ্রফ থাকা ভীষণ জরুরী ।”
এর পরে দেখা যাচ্ছে যে আর একদিনও ভুলোমনা লেখেনি। বেখাপ্পার মত একটা জায়গায় শুধু একটা লাইন দেখা গেল। “দেবেন্দ্র বেবুনের মত পাহাড়ে ওঠে।” লাইনটা একা একা দাঁড়িয়েছিল।ভুলোমনার মত।
এই একা একা থাকাটাকে নাড়াচাড়া করার ইছে হল ভুলোমনার। তার হাত চলতে শুরু করল ।সে লিখতে থাকল ..

বোধহয় নয়, আমি স্থির নিশ্চিত যে তখন আমার সতেরো বছর বয়স। সেইসময় আমি বড় বিপদের মধ্যে ছিলাম। বিপদ মানে, খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট থাকার জায়গার অভাব, বাবার চাকরি চলে যাওয়া বা মায়ের হার্ট অ্যাটাক করে প্যারালিসিস হয়ে পড়ে থাকার মত জীবন সংগ্রামের দুরূহ ও বাস্তবিক কোনো সমস্যা আমার ছিল না। আমি খেতে পরতে. পেতাম এবং ভালভাবে থাকতাম। মুখ শুকনো করে আমাকে ভবিষ্যতে বেঁচে থাকার জন্য ভয় পেতে পেতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হত না।
আমাকে জ্বালাতন করে তিতিবিরক্ত করে প্রায় স্থবির করে তুলেছিল একটা নিদারুণ দুশ্চিন্তা। কোন জীবনটা ভাল। কোন জীবনটা আমি বাঁচতে চাই ! সন্ন্যাস জীবন না গৃহীর জীবন। পথ কি? উচিত কি আর অনুচিতই বা কি? ঠিক কোনটা, কোনটাই বা বেঠিক?
চুরি করা বা মিথ্যে কথা বলা, লোককে রেগে গালাগালি দেওয়া এসব যে খারাপ, খুব ছোটবেলাতেই আমি বুঝে গেছিলাম। ভাল মেয়ে হতে গেলে বাধ্য হতে হয় আর ছেলেদের সঙ্গে বেশী মিশতে নেই। এসবও যেন কেমন করে বুঝে গেলাম। সারাক্ষণ টিভি. দেখা বা গুচ্ছের পাকাপাকা সিনেমা দেখা ভাল নয়। পাকামো করা ব্যাপারটা ভাল মেয়েদের সঙ্গে যায় না। ইত্যাদি ভজরং ভজরং কতগুলো নীতিবাগীশ ব্যাপার-স্যাপার আমার মাথায় ঢুকে গেছিল। তার মধ্যে অন্যতম প্রধাণ ছিল, কাম জ্বালায় প্রাণ যায় যায় হয়ে মরে গেলেও আমার জীবনের একমাত্র পুরুষ আমার বর ছাড়া আমাকে কেউ চুমু খাবে না। এদিকে যে আমার প্রেমিক হবে, সেই হবে আমার বর। জোরজবরদস্তি। বিয়ের আগেই প্রেম যদি চটকে মটকে যায়, তবে যে কি হবে, সে বিষয়ে আমার মোটে কোনো ভাবনা ছিল না। এইসব ধ্যান ধারণার বাইরে কিছু ঘটলে আমার চোখ কপালে উঠত। অনাসৃষ্টি কাণ্ড বলে মনে হত এবং ঘন ঘন শিহরণ হত।
আমার সতেরো বছর বয়সটা ছিল সাংঘাতিক। আমি সেসময় হঠৎ টের পেয়ে যাই পৃথিবীটা হু হু করে বদলে যাচ্ছে এবং এটা সবসময়ই বদলাচ্ছিল। আমিই একটা গর্দভ ছিলাম। এতদিন ধরে মহাসুখে সবকিছু স্থিত ভাবছিলাম। নিজের বুদ্ধির উৎসে সে সময় আমি করাঘাত করছিলাম এবং গভীর বিষণ্ণতায় আচ্ছন্ন হয়েছিলাম এই ভেবে যে, এইরকম একটা পরিবর্তনশীল জগতে পরম সত্য তবে কি? যে সত্যিটা কোনদিন পরিবর্তিত হবে না। সর্বসময়, সবজায়গায় অটল অবিচল সত্যরূপে প্রতীত হবে। এমনি কোন কিছুই আমার চোখের সামনে ছিল না। আমার চোখের সামনে সর্বত্র অহরহ পরিবর্তনশীল একটা জগৎ ঘোরাফেরা করছিল, যেখানে মানুষ তার একখানা গোটা জীবন ধরে ক্রমশই বদলে যাচ্ছিল। এককালে গমগম করা মানুষভর্তি সুন্দর বাড়িগুলো ভেঙে ভেঙে পরে যাচ্ছিল। তাদের সারানো হচ্ছিল আর যেখানটা সারানো হচ্ছিল, সেখানটা হয়ে উঠছিল আখাম্বার মত আধুনিক এবং তা আদৌ বাড়ির পুরনো অংশগুলোর সঙ্গে সামন্জস্যপূর্ণ ছিল না। মানুষের ধ্যানধারণা বদলে যাচ্ছিল। পোষাক পরিচ্ছদ যতই আধুনিক হয়ে উঠছিল, ততই পুরনো ধাঁচের পোষাকগুলোকে বোকার মত মনে হচ্ছিল। বাদ অর্থাৎ মার্কসবাদ, অমুকবাদ তমুকবাদ, তা নিয়েও ঝামেলা হচ্ছিল বিস্তর। কলকাতায় দেখতাম সিপিএম এবং আরও বেশী প্রতিক্রিয়াশীল সি.পি.আই.এম এদিকে ধনতন্ত্রবাদ এদিকে গণতন্ত্রবাদ, আরেকদিকে সমাজবাদ ইত্যাদি, প্রভৃতি বাদের কোন শেষ ছিল না। বাদ নিয়ে বিবাদও কম ছিল না। ধর্ম নিয়ে দুরূহ সব প্রশ্ন আমাকে খাবলে খাবলে শেষ করে দিচ্ছিল। যত মত তত পথ মেনে নিলেও আমার পক্ষে কোনটা সঠিক পথ মাথা খুঁড়ে খুঁড়েও ভেবে পাচ্ছিলাম না। ভারী বিপর্যয়ের মধ্যে ছিলাম আমি। কোনদিকে যাব, কি করব এগুলো ছিল জ্বলন্ত প্রশ্ন। আর তার সঙ্গে এই ঘনঘন পরিবর্তনশীল জগৎ আমাকে বিষণ্ণতার শেষপ্রান্তে ছেড়ে দেয়।
নিজের সঙ্গে একটা রফায় আসি অবশেষে । আমি এই এই করব, এই এই মানব, এগুলোকে সঠিক বলে জানব আর এইভাবে চলব। এইরকম একটা নির্দিষ্ট জীবন ধারা তৈরি করি নিজের জন্য। এবং সেগুলোকে নিয়ে যা বুঝেছি সার বুঝছি ভেবে নির্দিষ্ট পথে হাঁটতে থাকি।
একরকম ভালই চলছিল সেটা। বেশ অনেকদিন সেটা ভালমত চলে। কিন্তু হঠাৎ একদিন আসে, যেদিন আমি চোখ খুলি এবং দেখতে পাই নিজেরই তৈরি করা সীমানার মধ্যে আমি দমবন্ধ হয়ে হাঁপিয়ে ঘেমে একসা হয়ে যাচ্ছি। আবার আসে আরেকদফা বিষণ্ণতার যুগ। এবং মনে হয়, আমাকে এইভাবেই চলতে হবে এই বাধ্যবাধকতা কে তৈরী করেছে? সে তো আমিই করেছি| যেটা আমি নিজেই ভেবেচিন্তে নিজের জন্য তৈরি করেছিলাম একদিন, আমার মনে হতে থাকে, তাতে আমি সন্তুষ্ট নই।
তারপর থেকে আমি নিজেকে দু টুকরো করে ফেলি। আমার অর্ধেকটা ব্যস্ত থাকে রোজকার কাজকর্মে, আর আরেকটা আমি বেরিয়ে পড়ি একা একা জীবন খুঁজতে। প্রশ্নটা ছিল এই জীবন লইয়া কি করিব?
ভগবানই জানত কি করিব। তারপর একটা কি যে হয় , সব ঘেঁটে যায়। আর আমি সব ভুলে যাই, শুধু ভুলিনা ওই প্রশ্নটা এ জীবন লইয়া কি করিব ?
এর ফাঁকে নিশ্চয় সামন্ত এসে পড়েছিল আমার জীবনে। কিছু ভুলে যাবার পর যতবারই সামন্ত সম্পর্কে কিছু ভাবার চেষ্টা করি আবছা আবছা দেখতে পাই আমি একটা সবুজ রঙের রান্নাঘরে চিকেন স্টু রাঁধছি । জুকিনি কেটে কেটে সঁতে করছি। কেন কে জানে? ও হ্যাঁ , সেদিন ঘুরতে ঘুরতে আমি গুরুংদের বিশাল ফার্মে এক
জায়গায় জুকিনির গাছ দেখেছি আর দেখেছি মাশরুমের চাষ। জুকিনিগুলো গাছে ঝুলছিল আর মাশরুমণ্ডলো নেট দিয়ে ঢাকা ছিল।

সামন্ত সম্পর্কে এর বেশী কিছু মনে পড়ে না। জোর করে ভাবতে গেলে চিকেন স্টু-এর ছবিটা হিজিবিজি হয়ে ঘেঁটে কানের কাছে গ্যাঁও গ্যাওঁ করে অদ্ভুত একটা আওয়াজ হয়। আর তারপরই আমার হাই ওঠে। ভীষণ ঘুম পেয়ে যায় আমার। নিজেই তখন নিজেকে বলে ফেলি, নে বাবা, উঃ একটু ঘুমিয়ে বাঁচি।
কাজ খুঁজতে যাবার মত করে জীবনে খুঁজতে বেরনোর সময় আমার নিজের জন্য নির্দিষ্ট করা শিক্ষাদীক্ষার ঝুলিটা কাঁধে ঝুলিয়ে নিয়েছিলাম। শিক্ষাদীক্ষার ঝুলিটা থাকায় একমাত্র সুবিধে এটাই হয়েছিল যে, লেখালেখির জগতে ঢুকে পড়তে আমার বেশী বেগ পেতে হয়নি, আর জীবন খুঁজতে খুঁজতে তার অভিজ্ঞতাগুলোও গল্পের আকারে লিখে ফেলা যাচ্ছিল। একদম একটা সাদা মন নিয়ে বেরোলে ভাল হত, নাকি শিক্ষাদীক্ষার ঝুলিটা থাকাটা বাঞ্ছনীয় ছিল সেটা নিয়ে আমার নানান সংশয় আছে। কিন্তু এখন অবস্থাটা হয়েছে এমন যে আপনা আপনিই খামচা খামচা করে অনেক কিছু সাদা হয়ে গেছে। নাঃ,ভুলে যাওয়া পর শিক্ষাদীক্ষার ঝুলিটাকে আমি
আর খুঁজে পাইনি। এই পাহাড়ে অন্ততঃ ওটা আর আমার সঙ্গে নেই। ওটা ছিল বিচ্ছিরি রকমের ভারী জগদ্দল পাথরের একটা বস্তার মত। নেহাতই একটা দায়।
কিভাবে যে আমি ইন্দ্রনাথের খপ্পরে এসে পড়ি কে জানে। ইন্দ্রনাথও লেখালেখির জগতেরই একজন ছিল। যদিও তার সবসময় মনে হত, প্রতিভা অনুসারে সে যথেষ্ট স্বীকৃতি পাচ্ছে না। সে সময় ওই বোঝাখানা আমার
কাঁধে ছিল। ইন্দ্রনাথকে ওটা ধরতে দিয়ে একটু বাথরুম থেকে আসছি, বলে কেটে পড়লেই হত। তখন ইন্দ্রনাথ কেমন বোকা বনে যেত! ভারী মজা হত।
এইসময়টায় আমি মাঝেমধ্যেই বাথরুমের স্বপ্ন দেখতাম। আর দেখার পর পরই বিছানা থেকে ওঠার আগে স্বপ্নগুলো লিখে ফেলতাম ডায়েরিতে। এত বেশী বাথরুমের স্বপ্ন দেখেছি,কতগুলো তার কোন হিসেব নেই। সবকটা লিখেও রাখিনি। কিন্তু যে স্বপ্নগুলো ছিল ভয়ানক অস্বস্তিকর সেগুলো নিয়ে ভেবে ভেবে সেগুলো প্রায় মুখস্থ করে ফেলেছিলাম এবং এইসব স্বপ্নগুলো আমার লেখক জীবনে কাজে লাগত।
একবার কনকনে শীতের দিনে এক বিয়ে বাড়িতে শাড়ি পরা অবস্থায় আমি কোন এক বাথরুমে ঢুকি। সেখানে বালতি, ড্রাম, সবেতেই জল ভর্তি করা ছিল। আমার শাড়ির তলাটা কিভাবে যেন একটু ভিজে গেল। ভেজা জায়গাটা স্যাঁতস্যাঁতে ঠাণ্ডা
হয়ে আমার পায়ে অস্বস্তির কারণ হচ্ছিল। খুবই বিরক্তিকর ছিল পরিস্থিতি। সবথেকে ভয়ের ব্যাপার হল তখন , যখন কমোডে পেচ্ছাপ করব বলে ভাবছি তখন দেখতে পেলাম ড্রামের পেছনে একটা থুত্থুরে বুড়ো বসে আমার দিকে লক্ষ্য করছে। ভয়ে এবং অশান্তিতে আমার শরীর হিম হয়ে এসেছিল। আসলে…কে যেন দরজায় টোকা
দিচ্ছে। _হাই দি, ডিনার ইজ রেডি।

দেবেন্দ্রর ডাকে ভুলোমনা খেয়াল করল তার খিদে পেয়েছে। ঘোরানো কাঠের সিঁড়িটা বেয়ে নেমে এল সে। বাইরে তখন বেজায় হিম পড়ছে। মুখ দিয়ে ভাপ বের হচ্ছে। এক হাত দূরে আর কিছু দেখা যাচ্ছে না।
রহস্যময় জগৎ। খেতে শুরু করল ভুলোমনা। গুরুং আ্যালার্ট হয়ে থাকলেও ভেতরে ভেতরে রিল্যাক্সড্। বাকীসব ছেলেরা সুরেন্দ্র, রাজভাইয়া, দেবেন্দ্র সবাই আ্যাটেনেশনের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে । মন দিয়ে খেতে হচ্ছিল ভুলোমনাকে। কারণ ডিনারে সার্ভ করা হয়েছিল নুড়ুলস্। শুধু তাই নয় সেই মোমবাতির আলো আর ঘোর ঘোর অন্ধকার পেয়ে বসেছিল ভুলোমনাকে। সে যেন স্বপ্নের ঘোর থেকে বেরোতেই পারেনি। আধাখ্যাঁচড়া ভুলে যাওয়া স্মৃতি তাকে ক্রমশঃ টানছিল অস্তঃসলিলা হতে।

চিলি গারলিক চিকেন যখন খেতে শুরু করল তার সাথে, তখন স্মৃতি তাকে খ্যাদাতে লাগল দূর অতীতে। একবার ইন্দ্রনাথ তাকে নিয়ে গেছিল কোথাও চাইনিজ খেতে।বেরোনোর আগে সে এতবার এস.এম.এস. করছিল সে রেডি হওয়া হয়ে উঠেছিল দায়। তখন ইন্দ্রনাথ এস.এম.এস. করল-দেরী হবে?
মিঠুয়া নামক মেয়েটি উত্তর দিয়েছিল-এত এস.এম.এস. করলে দেরী তো হবেই। তখন কিছুক্ষণের জন্য রেহাই পাওয়া গেছিল।তারপর এইরকমই একটা চিলি গারলিক চিকেন ছিল যেন। সেইসময় ইন্দ্রনাথ এমন একটা ভাব করছিল যেন মিঠুয়ার সঙ্গে প্রেম করে।মিঠুয়া বলল, এত ধোঁয়া ধোঁয়া কথা বলার মানে কি?
– তুমি যে কিছুতেই একটা কথা বুঝতে চাইছ না, সেটা কি আমার দোষ?
একটু ভেবে নিয়ে মিঠুয়া বলল, হ্যাঁ আপনার দোষ।
– আচ্ছা।
মিঠুয়া ভাবছিল, ইন্দ্রনাথ আসলে চাইছেটা কি? প্রেম করতে? কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে প্রেম করতেই নয় ও আসলে ফ্লার্ট করতে চাইছে।নিদারুণ আকর্ষণীয় ওর ধুরন্দরপনা।

ভাবনা-চিন্তা ছেড়ে মিঠুয়া কড়া গলায় বলল
-আপনি কি ভাবছেন, আপনি রুড হতে পারি না? চাইলে আমি যথেষ্ট রুড হতে পারি, কিন্তু সেটা আমি হচ্ছি না।

গালে হাত দিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে ইন্দ্রনাথ বলল, তাহলে রুড হও। মিঠুয়া মহা সমস্যায় পড়ে গেল। তার ধারণা রেগে গেলে সে বেশ রুড। কিন্তু এখন একজন মিচকে টাইপের লোকের সামনে হুট করে কি করে রুড হওয়া যায়? অনেক ভেবে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে বলল,
এখন রূড হতে ইচ্ছে করছে না। তখন ইন্দ্রনাথ জোরে জোরে হাসতে লাগল।

বাইরে ভয়ঙ্কর কুয়াশার মধ্যে ইন্দ্রনাথের সেই হাসি ঘুরপাক খেতে লাগল গোল গোল। আর খাওয়াদাওয়া ভুলে গভীর ধ্যানমগ্নতার সঙ্গে ভুলোমনা তাকিয়ে রইল সেই কুয়াশায়।

ষষ্ঠ পর্ব সমাপ্ত

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (2)
  • comment-avatar
    ইন্দ্রাণী দত্ত 2 years

    লেখার মান ষষ্ঠ পর্বে এসেও এতটুকু কমে নি। চলন, ন‍্যারেটিভ শিফট, বাক্যগঠন, শব্দের ব‍্যবহারে লেখার কিছু অ্ংশ যেন সুরমূর্ছনা। অনন্য কিছু অভিব‍্যক্তি যেমন অন্ধকার শব্দের আগে “বোঁদা ” বিশেষণের ব‍্যবহার , কিম্বা স্মৃতির “খ‍্যাদানো” মনে থেকে গিয়েছে।

    টাইপো, বানান ঠিক করতে হবে।
    আর আবার‌ও ‘মেথরটা’ র মতোই ‘ বেয়ারাটা।’

    লেখক ও সম্পাদককে এই দিকে দৃষ্টি দিতে বলি।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes