তিরন্দাজির পথে, জেন – সপ্তম পর্ব   <br /> পার্থজিৎ চন্দ

তিরন্দাজির পথে, জেন – সপ্তম পর্ব
পার্থজিৎ চন্দ

জেন’- শতাব্দীর পর শ‘তাব্দী পেরিয়ে চলা রহস্যময়, মিস্টিক এক সাধনপদ্ধতি; প্রাচ্যের সুগভীর দর্শনের একটি ধারা, যে ধারার মধ্যে মিশে রয়েছে পারমিতার ছায়া, ‘না-জানা’র মধ্য দিয়ে জানার গূঢ় পদ্ধতি। একটি সুবিখ্যাত জেন-কবিতায় পাওয়া যায়, ‘Sitting quietly, doing nothing / Spring comes, and the grass grows itself’। এই ‘কিছুই না-করা’র পদ্ধতি অর্জন করতে হয় দীর্ঘ অনুশীলনের মাধ্যমে। আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানের এই ধারার সঙ্গে তিরন্দাজির মতো একটি শৌর্যময় বিষয়ের কি কোনও সংযোগ থাকতে পারে? তিরন্দাজি কি শিল্প? এই শিল্পের মধ্যে দিয়ে কি প্রবেশ করা সম্ভব জেন-এর মিস্টিক পৃথিবীতে? আজ থেকে প্রায় সত্তর বছর আগে প্রকাশিত হয়েছিল অয়গেন হেরিগেল-এর ‘Zen in the Art of Archery’। ব্যক্তি-অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ এ কাহিনি যেন এক রোমাঞ্চকর শান্ত থ্রিলার, ইউরোপের চোখে ‘জেন’ দর্শন অথবা ভিন্নধারার ডিসকোর্স।

তিরন্দাজির সুবিপুল ঐতিহ্য রয়েছে, দিনের পর দিন আমি তার ভেতর প্রবেশ করছিলাম সাবলীলভাবে। অনেকটা যেন স্বপ্নের ভেতর দিয়ে চলেছিলাম। গুরুজির ভবিষ্যৎবাণী একটু একটু করে মিলে যাচ্ছিল। কিন্তু তির ছোড়ার সময় মনঃসংযোগ সেই কিছুটা টলে যাচ্ছিল, একইভাবে। সেটার হাত থেকে কিছুতেই নিস্তার পাচ্ছিলাম না। চরম মুহূর্তের জন্য টানটান হয়ে অপেক্ষা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি, বুঝি টানটান মুহূর্তটাও শিথিল হয়ে আসছে। বিরক্ত হয়ে মন ঘুরিয়ে দিই তির ছোড়ার দিকে, সচেতনভাবে।
গুরুজি বলেন, ‘তির ছোড়ার বিষয়টা মন থেকে দূর করে দাও! এ ভাবে ভাবলে কোনওদিন ঠিকভাবে ছুড়তে পারবে না’।
‘এ ভাবে অপেক্ষা অসহ্য, পারছি না,’ আমি উত্তর দিই।
‘তুমি এখনও ‘নিজেকে’ পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারনি তাই এমন ঘটছে। বিষয়টা খুব সহজ, বাঁশপাতা দেখেছ?’, গুরুজির প্রশ্ন শুনে আমি চুপ করে থাকি। গুরুজি বলতে থাকেন, ‘কীভাবে অপেক্ষা করতে হয় সেটা একটা বাঁশপাতার থেকেও শেখা যায়, শীতে বরফ পড়তে শুরু করলে বরফের ভারে বাঁশপাতা একটু একটু করে মাটির দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকে। এক সময়ে হঠাৎ বরফ গড়িয়ে পড়ে মাটিতে আর বাঁশপাতা কেঁপে ওঠে। বাঁশপাতা যেমন বরফের গড়িয়ে পড়ার চরম মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে ঠিক তেমনভাবে চূড়ান্ত মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করো। দেখবে, যখন অপেক্ষার প্রহর পূর্ণ হয়ে উঠবে তির আপনিই ছুটে যাবে। তোমার সচেতনভাবে ভাবনার আগেই ছিলা থেকে তির ছুটে যাবে, অনেকটা ওই বাঁশপাতা থেকে বরফের ঝরে পড়ার মতো।’
আমি সব শুনতাম, জানতাম; কিন্তু কিছুতেই বিষয়টা করে উঠতে পারতাম না। চরম মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব হয়ে উঠত না আমার পক্ষে। এক নাগাড়ে এই ব্যর্থতা পাগল করে দিয়েছিল, এদিকে আমার জাপানে থাকার মেয়াদও ফুরিয়ে আসছে। তিনবছর হয়ে গেল অনুশীলন করে যাচ্ছি, কোনও উন্নতি নেই।
আজ বলতে দ্বিধা নেই দিনের পর দিন ভেবেছি এই সময় অপচয়ের হয়তো কোনও মানেই হয় না; এতদিন যা শিখেছি, যেভাবে বেঁচেছি তার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও কাজেই লাগবে না এই শিক্ষা। মনে পড়ে আমার এক বন্ধু একবার বলেছিল এই তিরন্দাজি-শিক্ষার থেকে জাপানে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে জানার ও শেখার। যদিও তার কথাকে আমি উড়িয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু মাঝে মাঝে সেটা মনে পড়ত। নিজের দিকে তাকিয়ে বলতে পারি, মনে হত তার কথায় সারবত্তা আছে কিছু।
গুরুজির চোখ কিছুই এড়াত না, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন আমার ভেতর কী তোলপাড় চলছে। মিঃ কোমাচিয়া আমাকে পরে একদিন বলেছিলেন গুরুজি সে সময় নাকি জাপানি দর্শনের সাহায্য নিয়ে আমার মনের সংশয় ও ঝড় দূর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও বিশেষ কিছু কাজ হয়নি; তিনি গম্ভীরমুখে দর্শনের বই সরিয়ে রেখেছিলেন। বলেছিলেন যে মানুষ নিজেকে এতটা গুরুত্ব দেয়, যে নিজেকে নিয়ে এত ভাবিত তার পক্ষে তিরন্দাজির মতো একটা বিষয় শিখে ওঠা মুশকিল।
এ সময়ে গরমের ছুটিতে আমরা কিছুদিনের জন্য সমুদ্রের ধারে একটা জায়গায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। জায়গাটা শান্ত, চমৎকার।
যাবার সময় সঙ্গে করে তিরধনুক নিয়েই গেছিলাম, সেখানে গিয়েও দিনের পর দিন তির ছোড়া অভ্যাস করতাম। কেমন যেন ঘোর লেগে যেত, ভুলে যেতাম গুরুজির সতর্কবাণী; গুরুজি বলেছিলেন, নিজেকে সম্পূর্ণ ভুলে গিয়ে তিরন্দাজিতে আত্মনিয়োজন করতে হয়। সেটা না-হলে ওই তির ছুড়ে যাবার কোনও মানেই হয় না। মাথায় একগাদা চিন্তা নিয়ে ঘুরতাম, একদিন ভেবে বসলাম আসল সমস্যাটি অন্য জায়গায়। গুরুজি বলেন বটে অহংশূন্য আর উদ্দেশ্যবিহীন হয়ে উঠতে, কিন্তু আসল সমস্যাটি রয়েছে ডানহাতের বুড়ো আঙুল আর অন্য আঙুলগুলির মধ্যে সম্পর্কের ভেতর। আমি যত অপেক্ষা করি তত অন্য আঙুলগুলি দিয়ে বুড়ো আঙুলটিকে চেপে ধরি, অজান্তে। স্থির করলাম বিষয়টাকে বদলাতে হবে। বেশি খাটাখাটুনি করতে হল না; একটা উপায় পেয়ে গেলাম।
ধনুক তোলবার পর সচেতনভাবে বুড়ো আঙুলের ওপর থেকে অন্য আঙুলগুলিকে আলগা করে নিয়েছিলাম, বুড়ো আঙুলের সেই ব্যথায় টনটন করে ওঠা ভাবটা আর নেই। তিরও বেশ সাঁইসাঁই করে ছুটে গেল লক্ষ্যের দিকে, অনেকটা গুরুজির বলা বাঁশপাতা আর বরফের উপমার মতো।
উপায়টা খুঁজে পেয়ে বেশ আনন্দ পেলাম, একদিন রাইফেল-চালানো শিখেছিলাম। আজ যেন তার ফল পাচ্ছি। তর্জনীও ধীরে ধীরে ঠিকঠাক কাজ করছিল। সব মিলিয়ে বেশ আনন্দের একটা ব্যাপার।
নিজেকে নিজেই বুঝিয়েছিলাম, অবশেষে ঠিক পথ খুঁজে পেয়েছি। প্রায় সবকটা তিরই সাবলীলভাবে ছুটে যাচ্ছে, লক্ষ্যে গিয়ে আঘাত করছে। স্বাভাবিকভাবেই সাফল্যের এ সময়ে আমি অন্যদিকে খেয়াল দিইনি; খেয়াল করিনি যে ডানহাতের বিষয়টাকে ঠিকভাবে প্রয়োগ করতে গিয়ে আমাকে পুরো মনোযোগ দিতে হচ্ছে। সচেতনভাবে করতে হচ্ছে সেটা। বরং নিজেকে বুঝিয়েছিলাম এভাবে তির ছুড়তে ছুড়তে একদিন এমন আসবে যে আমাকে আর ডানহাতের বিষয়টা নিয়ে বেশি ভাবতে হবে না; নিজেকে সম্পূর্ণ মুছে নিয়ে অহংশূন্য হয়ে চরম-মুহূর্তে তির-ছোড়ার বিষয়টি করে উঠতে পারব। বিষয়টা আধ্যাত্মিকতার পর্যায়ে রূপান্তরিত হবে। আমার মধ্যেও কয়েকটা প্রশ্ন দেখা দিচ্ছিল, স্ত্রী’ও বিষয়টা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু নিজেকে প্রবোধ দেবার অনেক উপায় ছিল আমার।
গরমের ছুটি কাটিয়ে ফিরে এসে আবার গুরুজির কাছে শিক্ষা শুরু হয়েছিল। ছুটির পর প্রথমদিনের ক্লাস, আমি আমার নতুনভাবে তির ছুড়তে শুরু করলাম। প্রথম তিরেই বাজিমাত, সাবলীলভাবে তির ছুটে গেল। গুরুজি যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করে কোনও রকমে বললেন, ‘আর একবার তির ছোড়ো…।’
দ্বিতীয়বার ছুড়লাম, এটা যেন প্রথমবারের থেকেও বেশি দ্রুত উড়ে গেল লক্ষ্যের দিকে। গুরুজি একটা কথাও না-বলে আমার কাছে হেঁটে এলেন, ধনুক আর হাত দেখলেন, তারপর আমার দিকে পিছন করে কুশনের উপর বসলেন। ততক্ষণে আমি বুঝে গেছি কী হতে চলেছে, তির ছোড়া বন্ধ করে ভয়ে কাঁপছি প্রায়।
পরের দিন মিঃ কোমাচিয়া জানালেন, গুরুজি আর আমাকে শিক্ষাদান করতে চান না, কারণ তাঁর মনে হয়েছে আমি তাঁকে ঠকিয়েছি। এ ধরণের চিন্তা যে গুরুজির মনে আসতে পারে ভাবিনি, আমি আঁতকে উঠে কোমাচিয়াকে বোঝাবার চেষ্টা করলাম দিনের পর দিন নষ্ট করবার বদলে আমি এ পথ বেছে নিয়েছিলাম। কোমাচিয়া আমার হয়ে গুরুজির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন, তাঁর অনুরোধে গুরুজি আবার শিক্ষাদান করতে সম্মত হয়েছিলেন। তবে শর্ত রেখেছিলেন, আর কখনও তিরন্দাজির মহা-ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন করে কিছু করা যাবে না।
লজ্জার থেকে বেশি কাজে দিয়েছিল গুরুজির ব্যবহার। তিনি বিষয়টা নিয়ে বেশি শব্দ খরচ করেননি, শুধু বলেছিলেন, ‘উদ্দেশ্যবিহীনভাবে অপেক্ষা করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে হয়, সেটা না-করলে কী হয় তুমি নিজেই দেখেছ। নিজেকে বরং বারবার প্রশ্ন করো, ‘আমি কি পারব? আমি কি সফলতা পাব?’
‘আমার জাপানে থাকার এটি চতুর্থ বছর, মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে’, গুরুজিকে বলেছিলাম।
‘লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাবার জন্য যে পথ তাকে এভাবে মাপা যায় না, জেনের কাছে এসে বছর, মাস, দিনের কোনও সীমারেখা থাকে না আর’, গুরুজি বলেছিলেন।
‘কিন্তু মাঝপথে যদি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে হয়?’, গুরুজিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম।
‘একবার অহংশূন্য হয়ে যাবার পর তুমি যে কোনও পর্যায়ে ছেড়ে যেতে পারো’, গুরুজি উত্তর দিয়েছিলেন।
আমরা আবার প্রথম থেকে শুরু করেছিলাম, যেন এতদিন যা শিখে এসেছি সব অর্থহীন। কিন্তু চরম মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করে থাকাটা যে তিমিরে সেই তিমিরেই রয়ে গেল, আমি কিছুতেই কানাগলি থেকে বের হতে পারছি না। একদিন গুরুজিকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কীভাবে তির ছোড়া সম্ভব যদি সচেতনভাবে ‘আমি’ সেটা না করি?’
“ ‘এটি’ নিজে থেকে ছুটে যাবে।”
‘আপনি বহুবার এটা বলেছেন আমি শুনেছি, কিন্তু আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে। আমি নিজেকে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে তির ছুড়ব কীভাবে যদি সেখানে ‘আমি’-ই না থাকি?’
“ ‘এটি’ চরম মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে।“
‘সে কে?’
‘তুমি যদি একবার সেটা জেনে যাও তোমার আর আমাকে প্রয়োজন হবে না, আর আমি যদি তোমাকে সেটা কী বোঝাবার জন্য ইঙ্গিত দিই তবে আমাকে আর জেন-গুরু হিসাবে গণ্য করা উচিত হবে না। তার থেকে এপথ ছেড়ে অন্য কিছু করা ভাল আমার পক্ষে। তাই এ বিষয়ে আর কোনও প্রশ্ন না-করে অনুশীলনে মন দাও।’
সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে যায়, আমার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয় না। কিন্তু আমি লক্ষ করলাম বিষয়টা তেমন ভাবাচ্ছেও না আর। আমি কি তা হলে গোটা বিষয়টা নিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছি? আমি তিরন্দাজি শিখেছি কি, শিখিনি; গুরুজির কথা মতো ‘তার’ সাক্ষাৎ পেয়েছি কি, পাইনি সে নিয়ে কিছুই আর ভাবছিলাম না। সমস্ত বিষয়টা যেন অনেক দূরের একটা জিনিস হয়ে উঠছিল। বহুবার মনে হয়েছিল গুরুজিকে এই বিষয়টা বলি, কিন্তু তাঁর সামনে দাঁড়ালেই আমার সাহস কমে যেত। মনে হতো যাই বলি না কেন সেই একই উত্তর পাব, ‘প্রশ্ন না করে অনুশীলনে মন দাও।’ আমি প্রশ্ন করা ছেড়ে দিয়েছিলাম, অনুশীলনও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম; কিন্তু গুরুজি শক্ত করে হাত ধরেছিলেন। আমি দিনের পর দিন কাজ করে যেতাম, এই কয়েক বছর কীভাবে নষ্ট হয়েছে সে নিয়ে আর ভাবনাচিন্তা করতাম না।
তারপর একদিন, একটা তির ছোড়ার পর গুরুজি নিজে যেন কাকে প্রণাম জানালেন, বললেন, ‘এইমাত্র ‘সে’ ছুটে গেল লক্ষ্যের দিকে।’ গুরুজির গলায় উত্তেজনার সুর। আমি হতবাক হয়ে গুরুজির দিকে তাকিয়ে। তারপর যখন বুঝলাম তিনি আসলে কী বলতে চেয়েছেন আমি আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম।
গুরুজির গলা আবার শান্ত, ‘দেখো, আমি যা বলেছি তা প্রশংসাসূচক নয়, এটা শুধু একটা কথা। এ কথায় তোমার প্ররোচিত হবার কিছু নেই, আমি যে প্রণতি জানালাম সেটাও তোমার জন্য নয়; কারণ তির ছোড়ার সময় তুমি নিজে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছিলে। চরম মুহূর্তেও তোমার মধ্যে কোনও উদ্দেশ্য কাজ করেনি; তাই সাবলীলভাবে ধনুক থেকে তির ছুটে গেছে। যাও, আবার অনুশীলনে মন দাও; ভুলে যাও… কিছুই ঘটেনি এটা ভেবে আবার তির ছোড়ো’।
বেশ কিছুটা সময়ের পর আরও কতগুলি ঠিকঠাক তির ছোড়া হয়েছিল, গুরুজি অভিবাদনের ভঙ্গিতে সেগুলিকে মান্যতা দিয়েছিলেন। তিরগুলি যে কীভাবে ছিলা থেকে উড়ে যেত, কীভাবে শক্ত করে থাকা ডানহাত খুলে যেত সাবলীলভাবে আমি সেদিনও ব্যাখ্যা করতে পারিনি, আজও পারব না। সত্যি এটাই যে বিষয়টা ঘটে যেত; সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ সেটা। শুধু একটা কথা বলার, আমি নিজে থেকে ভুল আর ঠিক তির-ছোড়াকে তখন আলাদা করতে পারতাম। দুটি ধরণের মধ্যে গুণগত পার্থক্য এতটাই যে একবার অনুভব করলে সে দুটিকে আলাদা না-করে পারা যায় না। বাইরের কোনও মানুষ বা দর্শকের কাছে ঠিক ও ভুল ছোড়ার মধ্যে পার্থক্য একটাই – ডানহাত বিন্দুমাত্র না-কেঁপে স্থির হয়ে যাবে, শরীরে ঝাঁকুনি লাগবে না। ভুল ভাবে তির ছোড়ার ক্ষেত্রে চেপে রাখা নিঃশ্বাস হুস করে বেরিয়ে যায়, শ্বাস নেওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। ঠিক ভাবে তির ছোড়ার বেলায় নিঃশ্বাসের শেষবিন্দু বায়ু বেরিয়ে আসে; প্রশ্বাস নেবার সময় কোনও তাড়াহুড়ো থাকে না। হৃদপিণ্ডের চলন থাকে স্বাভাবিক, পরের তির ছোড়ার দিকে তিরন্দাজ মন দিতে পারে সহজে।
কিন্তু ভেতর ভেতর বিষয়টা একটু আলাদা; ঠিক পদ্ধতিতে তির ছোড়ার পর তিরন্দাজের মনে হয় এইমাত্র যেন দিন শুরু হল। সে বোঝে সবকিছু ঠিকঠাক করছে, তারথেকেও বড় কথা সে কিছু না-করাটা ঠিকঠাক পালন করছে। এই মানসিক অবস্থা বেশ আনন্দের। কিন্তু যে এ অবস্থায় পৌঁছেছে সে গুরুজির দিকে তাকিয়ে বড়জোর একবার হাসবে, তারপর আবার এমনভাবে অনুশীলনে ডুবে যাবে যেন সে এই স্তরটিতে উন্নীত হয়নি।
কঠিন পরিস্থিতিতে মন শান্ত রেখে সে সাফল্য-ব্যর্থতা দু’টিকেই মেনে নেবে।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes