
তপন রায়ের কবিতা
পাড়ার লোক
একটি কথা বলার ছিল
কিন্তু খুবই লজ্জা লাগে
কথার গোপন গুহ্য মানে
বুঝতো শুধু পাড়ার লোকে
তেমন গভীর কথাই নয়
তোমায় বলার মতন নয়
শুনলে তুমি বুঝবে না যে
পরে বলবে গান্ডু লোক
উচ্চারণে ভুল ধরিবে
বলবে ভাষা শিষ্ট নয়
অল্প নয় হদ্দ বোকা
শোনার মতো কথাই নয়
কথাগুলো কাঁটার মতো
গলার কাছে আটকে আছে
কিন্তু বলে হালকা হতাম
শুনতো যদি পাড়ার লোকে
বিষাদ
এমনি এক লোক ছিল
কী-যেন-এক নাম ছিল
বলতে গেলে কিচ্ছু নয়
মৎস্য ধরাই কাজ ছিল
ঠোঁটকাটা সে লোক ছিল
আলজিভেতে দোষ ছিল
বদ ছিল তার পড়শিরা
আড়ালে খুব হাসছিল
ছন্নছাড়া ভাব ছিল
দোক্তামাখা দাঁত ছিল
কী-যেন-এক নাম ছিল
কী-যেন -এক নাম ছিল
শখের মধ্যে শখ ছিল
যাত্রা দেখে ফিরছিল
হত্যা কইত্যে হাইত্যন্ন
এই কথা সে বলছিল
ঠোঁটকাটা সে লোক ছিল
আলজিভেতে দোষ ছিল
হয়তো বিষাদ-সিন্ধু তে
মনটা তার ডুবছিল
কী-যেন-তার নাম ছিল
কী-যেন-তার নাম ছিল
পেদ্র পারামো
সকালবেলার স্বপ্ন ছিল
লক্ষীট্যারা
দুর্গাটুনটুনি
পাড়াকে পাড়া নদীকে নদী
ঘুমন্ত সব
শালুক পুষ্করিণী
স্বপ্নে পাওয়া গল্পনগর
পোয়া মক্কা
গনেশগুড়ি
পাড়াকে পাড়া নদীকে নদী
ঘুমন্ত সব
রাত্রিকোজাগরী
ছেলের মা দু:খিনী যে
চল্ল ছেলে
বাবার খোঁজে
পাড়াকে পাড়া নদীকে নদী
বাবাকে ছেলে
দেখেনি কোনোদিন
যুদ্ধ নয় শান্তিও না
কিছুই আমি
চাচ্ছি না
আমার শুধুই বাবাকে চাই
বল্ল ছেলে
চল্ল তেপান্তরে
কারো নিষেধ শুনলো না
কার নিষেধ ?
পিশি কোথায়?
মাঠকে মাঠ ঘাটকে ঘাট
উজার সব
শূন্যলঙ্কাপুরী
####
পড়শি
পাড়ার শেষ প্রান্তিকে
কুঁড়েঘর সেই ভিক্ষুকের
ভিক্ষা করতে যেত আরশিনগর
ইচ্ছে হ’লে পদব্রজে
বা কখনো রেলগাড়িতে
টিকিট কেটে করতো মাধুকরী
পাড়ায় তাকে দেখেনি কেউ
দেখেনি ভিক্ষা নিতে
ভিক্ষা নিতে যেত আরশিনগর
একদা এক মধ্যাহ্নে
কিম্বা বুঝি সায়াহ্নেই
তাহাকে আমি পেলাম কুঁড়েঘরে
লাজুক তবে সহজ হেসে
কুণ্ঠাভরে বলছিল সে
আজকে আর যাইনি কোনদিকে
কাল পেয়েছি অনেকটা চাল
পাঁচটি বেগুন একটি তাল
গেলাম না আর ভিক্ষা করতে আজ
‘চা খান তো ? একটু বসেন’
পেয়ারা এক এনে বল্ল, ‘ধরেন’
‘ভাগ্যি আজ এমন সাগাই পেলাম’
দাওয়ায় ইতস্তত ইক্ষু
ঘড়াতে জল কাকচক্ষু
একতারাটির আজকে বিশ্রাম
দিব্য হাঁড়ি উনুনে
তাকিয়ে দেখি গনগনে
টগবগিয়ে ফুটছে চায়ের জল
মাটির নৌকো
মাটির নাও দেবদেবীতে ঠাসা
দেবাদিদেব আছেন মাথার পরে
সাগর নেই,দীঘিও,আজ্ঞা পেলে
নৌকো ভাসে স্বপ্নে-পাওয়া জলে
দেবদেবীদের পুতুল পুতুল মুখ
কিন্তু সবার কপাল-জোড়া চোখ
ওচোখ থেকে ঠিকরে পড়া আলো
দেখতে পেল একটি অন্ধ লোক
বিরাট বিপুল ছিল মাটির নাও
মাটির গায়ে জলের মোটিফ আঁকা
সেসব জলে উঠতো কতো ঢেউ
উঠতো আর ভাঙ্গতো ক্ষণে ক্ষণে
সেসব ছিল স্বপ্নে-পাওয়া জল
স্বপ্নাদেশে পাগল পাড়ার লোক
নাওযের দু’দিক পাখির মুণ্ডু আঁকা
আজ্ঞা পেলে শূন্যে ভাসে নাও
আকাশপথে উড়তো মাটির নাও
জলের কোলে উদাস লাগে যদি
হলেও দেবী স্ত্রীলোক তাদের মন
দেবীর মন বুঝবে সে কোন দ্যাও
মাটির নাও মাটির ঘরেই বাঁধা
বাঁশের খুঁটি ছণের ছাওয়া চাল
জীর্ণদশা মাটির কাঁচা ঘর
যদিও মাটি লক্ষী-হাতে লেপা
বছর বছর পাল্টে যাবে সব
ছণের চাল বাঁশের কাঁচা খুঁটি
দেবদেবীরা রঙের প্রলেপ মাখা
অসাবধানে কারো বা ট্যারা চোখ
একটি কলা চারটি নকুল দানা
দেবদেবীদের দুপুরবেলার
ভোগ
আমরা ক’জন হ্যাংলাপ্যাঙলা ছেলে
ভাগ্য হ’লে ঘটতো প্রসাদ-যোগ
মাটির নাও অজস্র দেবদেবী
আকাশপথে উড়তে দ্যাখো যদি
ক্লান্ত মন হতাশ কোনো রাতে
জানবে তারা ঘুরছে তোমার খোঁজে
হয়তো তুমি ভুলেই গেছ কবে
একটি কলা চারটি নকুলদানা
জানবে এমন বিস্মরণের রাতে
জন্মান্তরে যাচ্ছে ভেসে নাও