জগাদার গবেষণাপাতা:দ্বিতীয় পর্ব মহত্তর জীবন ও কাব্য সত্য কম্বো <br />  শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

জগাদার গবেষণাপাতা:দ্বিতীয় পর্ব মহত্তর জীবন ও কাব্য সত্য কম্বো
শুদ্ধেন্দু চক্রবর্তী

ব্যতিক্রমী হওয়া সহজ নয়।তার নিজস্ব কুফল আছে।মানুষ তার জীবনকর্মে যে সব সিদ্ধান্ত নেয় তার একটি খুব সহজাত মনস্তত্ত্ব মেনেই 'হিউরিস্টিক'।সে নিজেই খনন করে বের করে বাহিরপথ।তারপর তুল্যমূল্য বিচার করে দেখে সেখানে সফল হবার সম্ভাবনা কতোটা প্রবল।সাধারণত সেই পথটাই তার নির্বাচিত পথ হয়ে যায়।আধুনিক বাংলা কবিতা যেমন।সেখানে আজকাল কোনও তরুণ কবি তৎসম শব্দ প্রয়োগ করলেই চারপাশের কবিকূল 'গেল গেল' রব তোলেন।ভাবখানা যেন এই,যে আধুনিকতার সূর্য বুঝি অস্তমূখী হল।আধুনিকতার যে ধাঁচা তৈরি করা হয়েছে,সেখানে নিবদ্ধ থেকেই লিখতে হবে অক্ষর।অন্যথায় গেল-গেল পরিস্থিতি।এই পরিবেশ অবশ্য নতুন নয়।শ্রীঅরবিন্দর 'সাবিত্রী' যেমন একশো বছর বাদেও সমান প্রাসঙ্গিক থেকে যাবে।এ সত্যও তেমনই।

কাব্য সত্য ও এই মহত্তর জীবন ক্রমশ অলীক হয়ে উঠছে জানেন।কবিতার সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন দলবদ্ধ কবিরা।মুক্তোমালার এক একটি মুক্তোর মতো এক একটি দল।শুধু মধ্যিখানের সুতোটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না কিছুতেই।এই দলবদ্ধ বিচ্ছিন্নতা না থাকলেও কাব্য সত্য বলে যদি কিছু থাকে,তাহলে তার দরবারে একাকিত্ব অন্যতম প্রধান সভাসদ।কবির কাজ আসলে কী?এর উত্তরে ‘ভ্যবিষ্যতের কবিতা’ প্রবন্ধমালার ‘মহত্তর জীবনের স্পন্দন’ প্রবন্ধে শ্রীঅরবিন্দ বলছেন,”তাঁদের কাজটি হল জীবনবীক্ষার এক নবতর গভীরতর রীতি সৃষ্টি করা।একদিকে অসীম ও অনন্ত,অন্যদিকে মানুষের সীমাবদ্ধ মন,অন্তরাত্মা ও বিমূর্ত জীবন-এই দুইয়ের মধ্যে সূক্ষ্ণদৃষ্টিলব্ধ আলোর সেতু রচনা করা,দুয়ের মধ্যে ছন্দের মিলটি আবিষ্কার করা।”দুর্ভাগ্য সত্য কিন্তু এটাই যে শ্রীঅরবিন্দ আধুনিক সময়ের অনেক কবির কাছেই একজন ‘প্রণাম ঠুকে রেখে দেবার মতো’ কবি।তার বীক্ষণে আধুনিক বাংলা কবিসভার বিশেষ কিছু যাবে আসবে না।এক ধরনের বার্টার সিস্টেমে চলছে কাব্য আলোচনা।সেই সিস্টেমের বাইরে যাঁরা থাকতে চেয়েছিলেন,তাঁদের অনেককেই আপাতত মানুষ ভুলতে বসেছে।কিন্তু ‘মহৎ’ শব্দটির সংজ্ঞাও তো বেশ গোলমেলে।বিশেষত সেই সময়, যখন গুড ডে ,এ ওয়ান,বিস্কফার্মের মতোই ‘মহৎ’ শব্দটিই যখন একটি ব্র্যান্ড।কবিতা রচনার ক্ষেত্রে যুগের প্রয়োজন শ্রীঅরবিন্দ অস্বীকার করছেন না।”যেসব কবির মধ্যে একদিকে মানুষ এবং বস্তুরাজির অন্তরের শ্বাশ্বত স্বরূপ এবং আত্মার সত্য এবং আত্মার বাস্তবতা,অন্যদিকে জীবনের প্রতি নিষ্ঠা-এই দ্বিবিধ শক্তির জন্যে দ্বিমুখী অন্বেষণা মিলিত হয়েছে,সেই কবিদের উপরে সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপের যথেষ্ট কারণ হল যুগের এই প্রয়োজন,এই চাহিদা।”শ্রীঅরবিন্দ মনে করছেন মানুষ হল জীবনের উপরে ঠিক ঠিক জায়গায় বসিয়ে দেওয়া এক একটি বোতাম।জীবনেই যেন ঢাকা পড়ে গেছে সেই মানুষ।আর তেমন নিস্তার নেই।কাব্যকে সুন্দর করে তোলার ব্যাপারে কবির বিশেষ মনোযোগ রয়েছে এই প্রবন্ধটিতে।তবে তার চেয়েও বেশি যা রয়েছে,তা হল একটি ‘খোঁজ’।আধ্যাত্মিক সম্বোধির সেই খোঁজ।সেই সম্বোধি অনয়া অনির্বাণ অক্ষয়।সাহিত্যে যুগের প্রয়োজনে জীবন,কর্ম,কর্কশ সুর তিনি মেনে নিচ্ছেন।কিন্তু তা কখনওই চিন্তার ব্যাপ্তিকে কমিয়ে ফেলে নয়।”জীবনের যেসব রাজপথ আছে,যেসব গলিপথ আমাদের হাতছানি দেয়,সেই সবকটি পথই আরো ব্যাকুলভাবি আরো নিবিষ্ট হয়ে আমরা মনের পিছু পিছু ছুটছি এবং এছাড়া অন্য কিছু হবারও উপায় ছিল না।”
ব্যতিক্রমী হওয়া সহজ নয়।তার নিজস্ব কুফল আছে।মানুষ তার জীবনকর্মে যে সব সিদ্ধান্ত নেয় তার একটি খুব সহজাত মনস্তত্ত্ব মেনেই ‘হিউরিস্টিক’।সে নিজেই খনন করে বের করে বাহিরপথ।তারপর তুল্যমূল্য বিচার করে দেখে সেখানে সফল হবার সম্ভাবনা কতোটা প্রবল।সাধারণত সেই পথটাই তার নির্বাচিত পথ হয়ে যায়।আধুনিক বাংলা কবিতা যেমন।সেখানে আজকাল কোনও তরুণ কবি তৎসম শব্দ প্রয়োগ করলেই চারপাশের কবিকূল ‘গেল গেল’ রব তোলেন।ভাবখানা যেন এই,যে আধুনিকতার সূর্য বুঝি অস্তমূখী হল।আধুনিকতার যে ধাঁচা তৈরি করা হয়েছে,সেখানে নিবদ্ধ থেকেই লিখতে হবে অক্ষর।অন্যথায় গেল-গেল পরিস্থিতি।এই পরিবেশ অবশ্য নতুন নয়।শ্রীঅরবিন্দর ‘সাবিত্রী’ যেমন একশো বছর বাদেও সমান প্রাসঙ্গিক থেকে যাবে।এ সত্যও তেমনই।সময়ের যন্ত্র ঘুরিয়ে তিনশো বছর আগেকার বুন্দীর দরবারে ফিরে যাই।সেই দরবারে ব্রজভাষী সভাকবিটির নাম কেশবদাস।তখন আবার ভারতীয় সাহিত্যচর্চার ধারায় সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্রর দাদাগিরি চলছে।সেই সময়ে কেশবদাস লিখলেন ‘রসিকপ্রিয়’।বিষয়বস্তুতে নতুন কিছু নেই।বাণিজ্যিক পত্রিকার সাতটি উপন্যাস কবিতা গল্প নিবন্ধ পড়লেও যেমন হতাশ হতে হয়।মনে হয় এ যেন একই লোকের লেখা,সে সময়টা তেমনই।রাধা কৃষ্ণ লীলাবর্ণনা।মেরেকেটে কিছু শৈব শাক্ত অনুষঙ্গ।কিন্তু তার বাইরে তেমন কিছুই নেই।থাকলেও তার স্বীকৃতি নেই।রসতাত্ত্বিকরা তাকে পরিত্যাগ করবেন।তাই কেশবদাস বেছে নিলেন প্রথাগত রূপদর্শনের ধাঁচা।কিন্তু তার ভাষা সংস্কৃত রইল না।তাঁর ভাষা ব্রজভাষা।রাধারাণীর বীর রস,রৌদ্ররস,শান্তরস শ্রীমদভাগতমের অংশ হয়েও কেশবদাসের নিজস্ব।কেশবদাস শ্রীঅরবিন্দকথিত সেই ‘আধ্যাত্মিক সম্বোধি’র সন্ধান পেয়েছিলেন হয়তো।কেশবদাসের অভিনবত্বর উদাহরণ দিই।রুদ্রভট্ট তাঁর শ্রীঙ্গারলতিকায় বর্ণনা দিচ্ছেন প্রেমিকপ্রেমিকার মিলনস্থানের।সেই প্রাচীন পুঁথি অবলম্বন করেই হয়ত ব্রজভাষী কবিদের লিখতে বলা হয়েছিল কবিতা।কেশবদাসও লিখলেন।কিন্তু নিজস্ব ভঙ্গিতে।’অতিভয়কো মিলন’।বিপদের ভিতর প্রণয়যুগলের মিলনবর্ণনা।পরতে পরতে উৎকন্ঠা।রীতিগ্রন্থরচয়িতারা বলেন,এই পদ তারা নিজেদের অন্তরাত্মার স্পন্দন থেকে রচনা করেছেন।তাই মেনে নেওয়াই যায় যে কেশবদাসও এই প্রথার ব্যতিক্রম নন।তিনি বর্ণনা করছেন কী করে রাধারাণীর ঘরে আগুন লেগে গেছে।সেই হুড়োহুড়ির ভিতর কৃষ্ণ সকলকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাধারাণীর কক্ষে প্রবেশ করছেন।তীব্র দাবদাহর ভিতরেও রাধারাণীর চম্পকনয়ন কৃষ্ণকে বিমোহিত করে তুলছে।তিনি রাধারাণীকে তুলে নিচ্ছেন তাঁর বাহুডোরে।তারপর দুজনে গভীর চুম্বনে বিমোহিত ডুব দিচ্ছেন।সেই মুহূর্তে তাঁদের আশপাশে ঘটে যাওয়া তাণ্ডব তাঁদের দুজনের কাছে অপ্রাসঙ্গিক।আরো একজন কৃতী ব্রজভাষীকবি চিন্তামণি ত্রিপাঠী তার ‘কবিকূলকল্পতরু'(১৬৭০) তে বর্ণনা করছেন কীভাবে ‘ভাষাকবিতা’য় কবির নিজস্ব ‘বিচারধারা’ কাব্যমানসে নিজস্ব বৌদ্ধিক সম্বোধি এনে দেয়।কেশবদাসের ‘অতিভয়কো মিলন’ সেই বৌদ্ধিক মাধ্যমেই কাল অতিক্রম করে তার রূপককে তিনশো বছর বাদেও অতিমারীকবলিত সভ্যতায় প্রাসঙ্গিক করে তুললেন।তরুণ কবিদের মার্গ দেখিয়ে গেলেন।সময় ও আধুনিকতার অনুশাসন বোধের বিকাশের অন্তরায় হতে পারে না।বরং হুইটম্যানের মতো সেই কবিমনকে অতিমারী উপেক্ষা করে,অনুশাসন উপেক্ষা করে,প্রলোভন উপেক্ষা করে খুঁজে যেতে হবে।এ প্রসঙ্গে শ্রীঅরবিন্দ বলছেন,”….জড়জগৎও আর খুব বেশিদিন আমাদের অভিজ্ঞতার একমাত্র বা বিচ্ছিন্ন এলাকা হয়ে থাকবে না;কারণ যে বিভেদের প্রাচীর এই জড়জগৎকে অন্তরাত্মিক জগৎ এবং তার নেপথ্যের অন্যান্য জখৎ থেকে পৃথক করে রাখত,সেটা এখন ক্ষীণতর হয়ে আসছে,এবং অন্তরের জগৎ থেকে কত কন্ঠ,কত সব সত্তা আবরণ ভেদ করে ছড়িয়ে পড়ছে,আমাদের পৃথিবীর উপরে তাদের প্রভিবকে দৃশ্যমান করে তুলছে….এই নতুন জগৎ,নতুন বাতাবরণ এমন করে তার যৌক্তিকতা প্রমাণ করবে যে সেরকমটি আগে কখনো করা হয়নি।অস্তিত্বের এক বৃহত্তর ক্ষেত্র মানুষের অভিজ্ঞতার কাছে আরো বাস্তব হয়ে উঠবে এবং সেটাই হবে ভ্যবিষ্যতের কবিতার জগৎ।”

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes