ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন <br /> নবম পর্ব <br /> ব্যক্তিগত জার্নাল <br /> সন্দীপন চক্রবর্তী

ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন
নবম পর্ব
ব্যক্তিগত জার্নাল
সন্দীপন চক্রবর্তী

শঙ্খ ঘোষের একটা কবিতা নিয়ে, কিছুদিন আগে তাঁর এক ছাত্রী একটা আশ্চর্য প্রশ্ন করেছিলেন আমায়। শিরোনাম ছাড়াই, একটি কবিতা উদ্ধৃত করে পাঠিয়ে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, এটা কোন বইতে আছে? কারণ, লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে যে, এইরকম কবিতা আগে যেন পড়েছি স্যারের, কিন্তু হুবহু ঠিক এইরকমও নয়। পড়ে প্রথমে মনে হচ্ছিল যে এটা ‘বাবরের প্রার্থনা’-র কবিতা। কিন্তু ‘বাবরের প্রার্থনা’-য় খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, সেখানে হুবহু এই কবিতা তো ঠিক নেই! তাহলে?

এই বিচিত্র সমস্যার মুখোমুখি হয়ে, আমিও শুরু করলাম খুঁজতে। আর খুঁজতে গিয়ে বেশ মজার একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম। ২০০৩-এ শঙ্খ ঘোষ লিখছেন সেই কবিতা –

কোথাও কি ঘটল কিছু? চুপ চুপ, হাশ্‌ হাশ্‌

নেই কোনো সন্ত্রাস।

এখন সবই শান্ত সবই ভালো।

চোখের কোণে হঠাৎ কারো বিদ্যুৎ চম্‌কাল?

টান দিয়ে নাও ওকে

ব্যক্তি হবার ঝোঁকে

বড্ড বেশি জন্মেছে দুই ডানা।

রক্তপাতে মানা?

মুঠোর মধ্যে মুচড়ে ধরো প্রাত্যহিকের দানা

শান্তভাবে অলক্ষিতে খসবে সবার ডানা।

তারপরে আর কোনোখানেই থাকবে না সন্ত্রাস

নেই কোনো সন্ত্রাস

ত্রাস যদি কেউ বলিস তাদের ঘটবে সর্বনাশ।

এই পর্যন্ত ব্যাপারটা স্বাভাবিক। কিন্তু মজাটা অন্য জায়গায়। জয়দেব বসুর যেমন সব কবিতার নিচেই সাধারণভাবে তারিখ আর সময় দেওয়া থাকতো তাঁর সব কবিতার বইতে, জয়দেবের শিক্ষক শঙ্খ ঘোষ কিন্তু সেটা করতেন না। অথচ গ্রন্থবদ্ধ অবস্থাতেও দেখছি, এই কবিতার নিচেই ছোট হরফে ‘২০০৩’ এই সময়চিহ্ন দেওয়া আছে। এই কবিতা আছে যে বইতে, সেই ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ বইয়ের বাকি কবিতাগুলোয় কিন্তু তা নেই। আছে শুধু এখানে। এই ব্যতিক্রম কেন?

এইবার খেয়াল করা দরকার কবিতার নাম। কবিতাটির নাম ‘আঠাশ বছরের পুরোনো কবিতার পুনর্লেখন’। এইবার দেখি, ‘জলই পাষাণ হয়ে আছে’ বইটি প্রকাশিত হচ্ছে কবে? ২০০৪-এ। তার থেকে আঠাশ বাদ দিলে? কিন্তু না, এভাবে হিসেব করা উচিত হবে না। এভাবেই হিসেব মিললে, আলাদা করে কবিতার নিচে সময়চিহ্ন দেওয়ার দরকার হতো না। কবিতার নিচে সময়চিহ্ন ‘২০০৩’। তার থেকে আঠাশ বাদ দিলে হয় ১৯৭৫। ওই সময়ে কোন বইয়ের কবিতা লেখা হচ্ছে? ‘বাবরের প্রার্থনা’। সেখানে তাহলে কোন কবিতা আছে, যার পুনর্লেখন এই কবিতা?

খুঁজতে গেলে দেখা যাচ্ছে যে, এই ‘নেই কোনো সন্ত্রাস / ত্রাস যদি কেউ বলিস তাদের / ঘটবে সর্বনাশ’ তো পড়েছিলাম ‘বাবরের প্রার্থনা’-র ‘মার্চিং সং’ কবিতায়! আবার সেখানেই ‘শৃঙ্খলা’ কবিতায় পড়েছিলাম ‘শব্দ কোরো না / হেসো না বাচ্চা / চুপ’। এখানকার ‘চুপ চুপ, হাশ্‌ হাশ্‌’ কি তাহলে সেখান থেকেই এলো? কিন্তু এ কবিতার ছন্দের চলন তো ‘ঘাস বিচালি ঘাস’-এর মতো শোনাচ্ছে। আবার ওই ‘এখন সবই শান্ত, সবই ভালো’ তো উঠে আসছে ‘আপাতত শান্তিকল্যাণ’ কবিতা থেকে! আবার ‘মিলের জন্য ব্যক্তিগত’ কবিতায় সেই যে বলা ছিল – ‘এখন লেগেছে গায়ে বড়ো বেশি ব্যক্তিগত হাওয়া’, তারই পাল্টা হিসেবে হয়তো আসছে ‘ব্যক্তি হবার ঝোঁকে / বড্ড বেশি জন্মেছে দুই ডানা’।

তাহলে বোঝা যাচ্ছে, ‘বাবরের প্রার্থনা’-র কোনো নির্দিষ্ট একটা নয়, বরং একাধিক কবিতার থেকে নিয়ে, এই লেখার পুনর্গঠন। এরই মধ্যে কোনো কবিতার কোনো লাইন বা শব্দবন্ধ, কোনো কবিতার চলনভঙ্গী — এগুলো মিলেমিশে উঠে আসছে এই কবিতায়। একেই কি তবে সাম্প্রতিক কেতায় বিনির্মাণ বলে? ইতিহাসের চক্র যখন ঘুরেফিরে প্রায় একইরকমের সামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে এনে ফেলে একজন মানুষকে, তখন লেখকের মৃত্যু আর পাঠকের জন্ম কী করে একই লেখকের মধ্যেই সময়ান্তরে ঘটে যেতে পারে, তারই হয়তো চমৎকার একটা উদাহরণ হতে পারে এই লেখা। কিন্তু এই গোয়েন্দাগিরি কি কবিতার আস্বাদনে কোনো ফারাক ঘটাতে পারে? জানি না। একজন কবির কবিতা ধারাবাহিকভাবে পড়ার চেষ্টা করেন যে পাঠক, তার কাছে হয়তো সেই কবিকে চেনার ইতিহাসের পট নতুন করে খানিক খুলে দেখায় এই গোয়েন্দাগিরি, কিন্তু সাধারণভাবে একজন পাঠকের কাছে খুব কি নতুন উদ্ভাস নিয়ে আসে তা? অনেক ভেবেও এই প্রশ্নের কোনো যথাযথ একপাক্ষিক উত্তর খুঁজে পাইনি আমি।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes