
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়-র কবিতা
থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি
মৃত্যুর পর আর দেহ নেই। তিলমাত্র মনও নেই।
তবে বেঁচে থাকতে তুমি তাকে জল গড়িয়ে দাওনি তো!
শরীর দাওনি!
সে যেন খচ্চর, এমন আচরণ করেছ!
কোথায় দেবব্রত বাজছেন,কেন যে তোমার দ্বারে আসি,সেই গানখানি।
আরেকটা বাড়ি থেকে আবছা ওয়েস্টার্ন ভেসে আসছে।
নীহারিকা দেখি।ব্রহ্মাণ্ড সামান্য হলেও বুঝি রোজ বাড়ছে, অনুভব করি।
করতে করতে শোক, তুলোর মতন হালকা হয়ে আসে। তখন,
পরের দিনের ফর্দ বানাতে বসি,
অনুশোচনার পৃষ্ঠা যত্ন নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দিই,
কে আসে,তাকাই
দ্বিতীয় শ্রেণীর লেখালেখি
ভাইদের নামগুলো খুবই বাহারি। শতদ্রু, অমর্ত্য…
এরপর কন্যাসন্তান জন্ম নিলে, সকলের ক্লান্ত লাগে,
নামকরণের কথা ভাবলেই গায়ে জ্বর আসে।
চট করে যাহোক তাহোক কিছু বসিয়ে তো দিতে হবে।তাই–
পুতুল নামের মেয়েটি।
বাংলা পড়তে পারে।বাংলা লিখতে পারে।
শেষে,বাংলায় কবিতাচর্চা ধরল।
খুব চাপে থাকে।
বারবার পানপাতা দিয়ে মুখ ঢেকে
চুল্লিতে ঢুকে পড়ে সে!
তবে কি ভালোবাসা আসবে না?
হ্যাঁ, আসবে। পরক্ষণেই তাকে মেঘ ঢেকে দেবে।
শেষে, সন্তানের চোখের মণিতে ওর প্রেম লেগে যাবে।
জনান্তিকে জানাত ওরা,
মেয়ে তো! মেয়েদের কথা লিখতে লিখতে,
প্রতিভার পরমায়ু ফুরোবে।
দেখা হলে সামনাসামনি বলত,’না, মানে,
আমাদের মেয়ে-বৌ, আপনাকে পড়ে টরে…’
তারপর,পুতুলের লেখাপত্র
আগুনের দিকে বেঁকে গেল।
নানা প্রহরণ হয়ে গেল!
তারপর,যেভাবে শিশুকন্যাকে ওরা নুনের হাঁড়িতে রেখে
নদীজলে ভাসাত একদিন,সেভাবে ওকেও
বুজিয়ে ফেলতে চেয়ে,
অক্ষরগুলো,ধুলোবালি দিয়ে মুড়ে দিল।
কবিতার ভেতরে আমি গল্প টানা ভালোবাসি না।
কবিতার মধ্যে এই গল্পখানা এসে,
থেমে গেছে ভেবেছি যখন,ফের,
দশমুখে কথা বলে ওঠে
ব্লাসফেমি
দেখ, এতদিন হয়ে গেল, এখনও বিহ্বলতা কাটল না…
আমি আধমরা মেয়েদের মধ্যে ঘুরিফিরি।
পোকা-খাওয়া মিড-ডে-মিলগুলি দেখিশুনি।
স্রেফ অবাঙালি হয়ে যাওয়া একটা প্রজন্ম লক্ষ করি।
আমি রেশনদোকান আর হাসপাতালের ঘোলা জল হাতে ঘাঁটি।
কবিতা লিখি না,গানও বাঁধি না।
নিরানন্দ দিন আমাকে কী আনন্দ দেবে!
আঙুল ও চোখ শক্ত হয়ে আসে।
ঘরে ফিরি। রোজকার মতো, তোমাকে প্রতিষ্ঠা করি নয়নের মাঝে!
দেখ, এতকিছু ঘটে গেল, এখনও কোমলতা কাটল না