চিন্তার চিহ্নমালা ১২
সন্মাত্রানন্দ
"বাপু হে, তোমাদের আমরা মেনে নিয়েছি, তাই তোমাদের ভাষা ‘মান্য বাংলা’! তোমাদের আমরা প্রামাণ্য ব্যক্তি বলে মেনে নিয়ে পূজা করেছি, তাই তোমাদের ভাষা ‘প্রমিত’! যদি তা না মানতাম, তবে কোত্থেকে আসত এই ‘মান্য বাংলা’ বা ‘প্রমিত বাংলা’? গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা—ওসব তোমাদের সারহীন মুখস্থ কথা—ওসব তোমরা আদপেই করার চেষ্টা করনি। যা করেছ, তা হচ্ছে, নিজেদের শহরকে তোমরা দশমুণ্ড কুড়িহাত রাবণের মতো বাড়িয়ে তুলে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের গ্রামগুলিকে গ্রাস করেছ। এইভাবে তোমাদের কলকাত্তাই ভাষাটাই আজ গ্রাম বা মফস্বলেও চালান হয়ে গেছে। গ্রামের ভাষা যেটুকু যেখানে টিকে-টুকে যা আছে, তাকে এখন আবার তোমরা ‘প্রান্তবর্গীয় মানুষের ভাষা’ বলে লেবেল দিয়ে সংরক্ষণ করার ভণ্ডামি করে চলেছ। ওই পরিভাষাটি নির্মাণের মধ্যেই তোমাদের ঔদ্ধত্য, তোমাদের নাগরিক অহমিকা, তোমাদের আত্মশ্লাঘা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। " দ্বাদশ পর্বে লিখলেন সন্মাত্রানন্দ। চিন্তার চিহ্নমালা।
পূর্ব প্রকাশের পর
আদি আর আরোপিত
‘বুবুন’ সাধারণত মেয়েদের নাম হয়, অথচ আমার মামাতো দাদার ডাকনাম ছিল ‘বুবুন’। আমরা দু’জন পিঠোপিঠি দুই ভাই সে-সময় এতটাই ছোটো যে, আমাদের সম্বন্ধে তখন ‘ছোটো তারা, কথা ফোটে নাই’ কথাটা বলাই চলত। বা, ঠিকভাবে বললে আমাদের মুখে তখন সবে আধো-আধো বুলি ফুটেছিল। তা আমার বুবুনদাদা প্রজাপতিকে বলত ‘তাতাপুচি’। আর আমি গোরুকে বলতাম ‘উম্মা’। ধীরে ধীরে আমি কান পেতে শুনলাম বাড়ির বড়োরা উম্মাকে ‘গোরু’ বলে এবং বুবুনদাদাও নিশ্চয়ই এটা টের পেতে শুরু করেছিল যে, বড়োরা তাতাপুচিকে ‘প্রজাপতি’ বলে থাকে। ফলত, আমি এবং বুবুনদাদা কয়েকমাস ধরে ধীরে ধীরে চেষ্টাচরিত্তির করে বড়োদের মতো ‘গোরু’ কিংবা ‘প্রজাপতি’ বলতে শিখে যাই।
শুধু বুবুনদাদা বা আমিই নই, তুতাই, ঘোঞ্চু, টিকলু, লিরিক, রিমঝিম, তোচন আমাদের প্রত্যেকেরই ছোটোবেলায় এক-একটা নিজস্ব ভোকাবুলারি বা শব্দভাণ্ডার ছিল। ভেবে দেখুন, এক-একটা করে গোটা ভোকাবুলারি! আর সেই ভোকাবুলারির শব্দগুলো নেহাত অযৌক্তিক ছিল না। তাতাপুচি আর প্রজাপতি—এদুয়ের ধ্বনিগত সাদৃশ্য উপেক্ষা করা যায় না। মানে, ‘প্রজাপতি’ কথাটা যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে নির্বাচিত শব্দ হয়, তবে ‘তাতাপুচি’-ও একই কারণে যুক্তিসঙ্গত হবে। আর ‘তাতাপুচি’ বলে ডাকাটা যদি অযৌক্তিক হয়, তবে ‘প্রজাপতি’ বলে ডাকাটাও কি অযৌক্তিক নয়? গোরুর ডাকটা আমার কানে ‘উম্মা’ বলে মনে হত, তাই আমি ‘উম্মা’কে উম্মাই বলতাম! এবং বেশ করতাম, বলতাম।
এখন হল কী, চারপাশের লোকজনের চাপে পড়ে আমরা অস্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমাদের ভাষা বদলাতে হবে। এবং এই জন্যেই প্রতিটি শিশু, যদিও শৈশবে এক-একটি সম্পূর্ণ নিজস্ব নতুন ভাষার উদ্ভাবক, পরিপার্শ্বের চাপে পড়ে কয়েক মাস বা কয়েক বছরের মধ্যে তাদের প্রত্যেককেই সমাজ-স্বীকৃত একটি সাধারণ ভাষা শিখে নিতে হয়। সেই ভাষা বড়োদের ভাষা। এবং একবার সেই ভাষা শিখে নিলে শিশুটি ধীরে ধীরে ভুলে যায় তার শৈশবের প্রথম ভাষাটি, যে-ভাষা সে নিজেই উদ্ভাবন করেছিল। এক-একটি শিশু বড়ো হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে অবলুপ্ত হয়ে যায় এক-একটি আদি ভাষা। সেই অবলোপ, আমার চোখে, হরপ্পা মহেঞ্জোদড়ো বা ট্রয়ের মতো প্রাচীন নগরী অবলুপ্ত হয়ে যাওয়ার চেয়েও কম শোকাবহ নয়।
গ্রাম থেকে, মফস্বল থেকে আমরা যখন কলকাতায় প্রথম যৌবনে লেখাপড়া শিখতে এসেছিলাম, তখনও আমাদের মুখে ছিল একটা অন্যরকমের ভাষা—গ্রামের ভাষা, মফস্বলের ভাষা। আজকাল যাকে কায়দা করে ‘প্রান্তবর্গ মানুষের ভাষা’ বলা হচ্ছে। আসলে এই অভিধার মধ্যে সুকৌশলে ধরে নেওয়া হয়েছে, কলকাতা হচ্ছে কেন্দ্র, আর গ্রাম বা মফস্বল হচ্ছে প্রান্ত। কিন্তু আমি জানি না, এরকম বৃত্তাকার মডেল কেন বেছে নেওয়া হয়েছে কিংবা এরকম বৃত্ত সত্যিই কোথায় আছে। অথবা কেন আমরা এমন একটা অসীম বৃত্তের কথা ভাবতে পারি না, প্রত্যেকটা মানুষই যার কেন্দ্র এবং যার পরিধি কোথাও নেই?
সেকথা থাক’গে। গ্রাম থেকে মহানগরীতে এসে আমাদের সভয় চালচলনের সঙ্গে পদে পদে আরেক বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমাদের ওই মুখের ভাষা। আমাদের শ/স, আমাদের র/ড়, আমাদের চন্দ্রবিন্দু-প্রেম, আমাদের নাই/নেই, আমাদের কথার গ্রাম্য সুর—সবকিছুর জন্যেই আমরা কলকাতার বাবুদের কাছ থেকে যে কী পরিমাণ হ্যাটা সহ্য করেছি, তা কহতব্য নয়। ধীরে ধীরে চাপ খেতে খেতে বুঝেছি, এখন থেকে আমাকে এই কলকাতার লোকেদের মতো করেই কথা বলতে হবে, তা না হলে প্রতি পদে পদে কেস খেয়ে যাব। অবশেষে চাপে পড়ে এই ‘মান্য বাংলা’ বা ‘প্রমিত বাংলা’ আমাদের শিখে নিতে হয়েছে। এবং ক্রমে ক্রমে আমার স্মৃতি থেকে আবছা হয়ে গেছে সেই ভাষা, যে-ভাষায় আমি জীবনের প্রথম সতেরো-আঠারো বছর ধরে কথা বলেছিলাম।
বাপু হে, তোমাদের আমরা মেনে নিয়েছি, তাই তোমাদের ভাষা ‘মান্য বাংলা’! তোমাদের আমরা প্রামাণ্য ব্যক্তি বলে মেনে নিয়ে পূজা করেছি, তাই তোমাদের ভাষা ‘প্রমিত’! যদি তা না মানতাম, তবে কোত্থেকে আসত এই ‘মান্য বাংলা’ বা ‘প্রমিত বাংলা’? গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরা—ওসব তোমাদের সারহীন মুখস্থ কথা—ওসব তোমরা আদপেই করার চেষ্টা করনি। যা করেছ, তা হচ্ছে, নিজেদের শহরকে তোমরা দশমুণ্ড কুড়িহাত রাবণের মতো বাড়িয়ে তুলে ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের গ্রামগুলিকে গ্রাস করেছ। এইভাবে তোমাদের কলকাত্তাই ভাষাটাই আজ গ্রাম বা মফস্বলেও চালান হয়ে গেছে। গ্রামের ভাষা যেটুকু যেখানে টিকে-টুকে যা আছে, তাকে এখন আবার তোমরা ‘প্রান্তবর্গীয় মানুষের ভাষা’ বলে লেবেল দিয়ে সংরক্ষণ করার ভণ্ডামি করে চলেছ। ওই পরিভাষাটি নির্মাণের মধ্যেই তোমাদের ঔদ্ধত্য, তোমাদের নাগরিক অহমিকা, তোমাদের আত্মশ্লাঘা আমাদের কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
কিন্তু কথা হল, আমরাই বা তোমাদের বা তোমাদের ভাষাকে মেনে নিতে বাধ্য হলাম কেন? তার পেছনে আছে বহু সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কারণ। আছে এক হীন মনস্তত্ত্ব, যা দিয়ে একজন আরেকজনকে কোনোকিছু মানতে বাধ্য করে। এমন একটা মগজ-ধোলাইয়ের গল্প সেটা যে, নতুন পরিবেশে আগত মানুষ নিজের স্বাভাবিক উৎকর্ষ ভুলে গিয়ে নিজেকে খামোখা ‘আমি আটপৌরে, আমি এলেবেলে’ বলে ভাবতে আরম্ভ করে। তারপর এলেবেলে থেকে হোমরাচোমরা হওয়ার করুণ চেষ্টা শুরু হয়, অর্থাৎ নতুনদাদাদের অন্ধ অনুকরণ। এসব নিম্ন মানের পদ্ধতি আমরা দু’শো বছর ধরে আমাদের ঔপনিবেশিক প্রভুদের কাছ থেকে শিখেছি। চাকর-গোলামের জাত তো, তাই অত্যাচারের পদ্ধতিটাও প্রভুদের কাছ থেকেই শিখে নিতে হয়! চাবুক চালানোর একটা গুরু-পরম্পরা আছে বই-কি!
প্রশ্ন উঠতে পারে, এক-একটা অঞ্চলের মানুষ যদি এক-এক রকমের ভাষায় কথা বলতে থাকে, তবে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হবে কীভাবে? কীভাবে একজন নাগরিক মানুষ একজন গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে ভাব-বিনিময় করতে পারবে, যদি প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষকেই তার স্বাভাবিক ভাষা-অভ্যাসের মধ্যে থাকতে দেওয়া হয়? এর উত্তরে আমি বলব, প্রথমত, স্বাভাবিক আদান-প্রদানের রীতি অনুযায়ী যা যতটুকু হওয়ার তা-ই যদি হত, তাহলে আমার বা অন্য কারোই কোনো আপত্তি থাকত না। আপত্তি থাকলেও তা টিকত না। কিন্তু তা হয়নি। তা হয়ও না। যা হয়, তা হচ্ছে এক ধরনের রাজনৈতিক ও সামাজিক মুখ-শোঁকাশুঁকি। ওই মুখ-শোঁকাশুঁকিটাতেই আমার সর্বাত্মক আপত্তি আছে। দ্বিতীয়ত, যারা এই যোগাযোগ-সাধনের স্বার্থে নগরের ভাষা দিয়ে গ্রামের ভাষাকে গিলে ফেলার পক্ষে সওয়াল করছেন, তাদের যে কাউকে আমি এখান থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ত্রিপুরার কাঁকড়াবন, বিশ্রামগঞ্জ বা ছেচরিমাইয়ের মতো গ্রামে ছেড়ে দিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে চাই। সেসব গ্রামের বাংলা ভাষা কলকাতার বাংলা থেকে এখনও সৌভাগ্যক্রমে দূরবর্তী। প্রথম কয়েকদিন সামান্য অসুবিধে হলেও দুয়েকদিনের মধ্যেই ভাববিনিময় বা যোগাযোগ-সাধনের কোনো অসুবিধে হবে না। আমি নিজেই নিজের ওপর সেই পরীক্ষা করে দেখেছি। অসুবিধে যে হয় না, তার কারণ—ভাষা আসলে আভিধানিক নয়, তা আসলে অভিপ্রায়গত। এবং ভাষার আদিতম রূপ ‘শব্দ’ নয়, তা হল সেই সব আদি ধ্বনিরূপ, যা শৈশবে প্রতিটি শিশুই উদ্ভাবন করে। শৈশবে শিশুর সেই ভাষা অব্যর্থভাবে বুঝে নিতে শিশুটির মায়ের কোনোই অসুবিধে হয় না। কেন হয় না? কারণ, মা শিশুকে ভালোবাসেন। এই ভালোবাসাই ভাব-বিনিময়ের এক এবং একমাত্র চাবিকাঠি। ভাষা সেক্ষেত্রে ঔপচারিক মাত্র।
প্রকৃতি-জননী আমাকে জন্মলগ্নেই সুস্থ দৃষ্টিশক্তি, শ্রবণশক্তি ও বাগ্শক্তি দিয়ে পাঠিয়েছেন। ফলত, চোখ দিয়ে আমি আমার বাইরে কোনো একটা প্রাণীকে দেখে মনে মনে যা ভেবেছি, সেটাকেই বাগ্যন্ত্র দিয়ে ‘উম্মা’ বলে ডেকেছি। পরে কান পেতে শুনেছি ওকে বড়োরা ‘গোরু’ বলেন। তখন আমি নানা কারণে ধীরে ধীরে ‘উম্মা’ পালটে ‘গোরু’ বলতে শিখেছি।
এখন আমি যদি জন্ম-বধির হতাম, অথচ আমার দৃষ্টিশক্তি যদি অটুট থাকত, তাহলে আমি কোনোদিনই ওকে ‘গোরু’ বলতাম না, অন্য কিছু একটা বলে যেতাম। কারণ, ‘গোরু’ বা অন্য কোনো শব্দই তখন আমার শ্রুতিগোচর হওয়ার আর উপায় থাকত না। সেক্ষেত্রে অন্যরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলে বা ভাব-বিনিময় করতে চাইলে, তাদেরকেই শিখে নিতে হত আমার ভাষা। অবশ্যই আমার সঙ্গে ভাব-বিনিময় করতে হলে তাদের ভাব-বিনিময় করতে হত অঙ্গভঙ্গি-সহকারে, কেননা আমি তাদের কোনো কথাই শুনতে পেতাম না সেক্ষেত্রে।
আর আমি যদি জন্মান্ধ হতাম, অথচ আমার শ্রবণশক্তি যদি অটুট থাকত, তাহলে আমি বস্তুকে চিনতাম মুখ্যত স্পর্শ দিয়ে। বিশেষ স্পর্শযুক্ত এক-একটা বস্তুকে আমি মনে মনে এক-একটা নাম দিতাম এবং সেই নামটাই আমি বাগ্যন্ত্র দিয়ে প্রথমে উচ্চারণ করতাম। পরে কান পেতে শুনতাম, অন্যরা ওই স্পর্শযুক্ত বস্তুটিকে কী নামে ডাকছে। তারপর চাপে পড়ে অন্যদের দেওয়া নামটাই আমি উচ্চারণ করতাম।
কিন্তু যদি আমি একই সঙ্গে জন্মান্ধ ও জন্ম-বধির হতাম, তাহলেও আমি আমার স্পর্শ-নির্ভর অনুভূতিকে আমার ধ্বনি-নির্ভর ভাষায় প্রকাশ করতাম। অন্যকে শিখে নিতে হত সেই ভাষা, আমার সঙ্গে তাদের যোগাযোগের দায় থাকলে। তারপর আমাকে নানাভাবে ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্পর্শ করেই আমাকে তাদের মনের ভাব বোঝাতে হত।
এবার যদি আমি জন্মান্ধ, জন্ম-বধির এবং জন্ম-মূক একই সঙ্গে হতাম, তখন? তখন আমার বাইরের পৃথিবীকে অনুভব করার প্রধান উপায় থাকত স্পর্শেন্দ্রিয়। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগেরও একমাত্র উপায় থাকত তখন প্রধানত স্পর্শের ভাষা। আর সেই অবস্থায় যদি কোনো অসুখে স্নায়বিক দুর্বলতার কারণে আমার শরীর অসাড় হয়ে যেত, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তখন যোগাযোগের আর কোনো উপায় থাকত না আমার; কিন্তু সেক্ষেত্রেও আলবাৎ মন থেকে যেত। কারণ, সেই অবস্থায় মস্তিষ্ক তো সচল। তখন যে-ভাষা মনের মধ্যে উঠত-পড়ত, তাকে কি আদৌ ভাষা বলব আমরা?
কেন বলব না? নিজের সঙ্গে অহরহ নিজেই কি আমি ভাব-বিনিময় করি না? স্বগত-কথনের সেই মাধ্যমকে ‘ভাষা’ বলবই না বা কেন আমি?
সেই ভাষা অন্য মানুষের ভাষা নয়, পাখিদের ভাষা নয়, সুরের ভাষাও নয়। কারণ, ওসব ভাষা কানে শোনা যায়, মুখে বলা যায়। ওসব ভাষা জন্ম-বধির, জন্ম-মূক, স্পর্শশক্তিহারা মানুষের ভাষা নয়।
যত উদ্ভটই শোনাক আপনাদের কাছে, তবু এবার আসল কথাটা বলে ফেলা দরকার। সেই জন্ম-বধির, জন্ম-মূক, স্পর্শশক্তিহারা মানুষটির ভাষাই যোগীদের ধ্যানাবস্থার ভাষা। সেখানে কোনো শব্দ নেই। অর্থমাত্রনির্ভাষম্। কেবল অর্থ রয়েছে। সেই ‘ভাষা’ই আদি ভাষা। অন্য সব ভাষা তার উপর আরোপিত ভাষা।
সেই আদি ভাষাটিকে শ্রদ্ধা করতে পারলে, ভালোবাসতে পারলে অন্য কোনো আরোপিত ভাষার সাহায্য ছাড়াই অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। সেই আদি ভাষাই সকল আরোপিত ভাষার উৎস এবং সকল আরোপিত ভাষার লয়স্থান।
অসাধারণ এই আত্ম বিস্মৃতি রচনা
অসামান্য লেখা। লেখক বারবার মুগ্ধ করেন, এই চিন্তামালা আশ্রয় হয়ে উঠছে অনেক চিন্তার। শ্রদ্ধা জানাই।
আপনি আমার ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা নেবেন।
অনবদ্য…