চিন্তন ও বুদ্ধিমত্তা <br /> ডেভিড বম <br /> ভূমিকা ও অনুবাদ – অনুপ সেনগুপ্ত

চিন্তন ও বুদ্ধিমত্তা
ডেভিড বম
ভূমিকা ও অনুবাদ – অনুপ সেনগুপ্ত

চিন্তন ও বুদ্ধিমত্তা কীভাবে সম্পর্কায়িত? উভয়ের কি একই উৎস? এই অনুসন্ধানেই এখানে পদার্থবিজ্ঞানী ডেভিড বম। এই লেখাটি তাঁর ‘হোলনেস অ্যান্ড দি ইমপ্লিকেট অর্ডার’ গ্রন্থের ‘থট অ্যান্ড ইনটেলিজেন্স’ শিরোনামে একটি ছোটো অংশের অনুবাদ। ডেভিড বম ( ১৯১৭-১৯৯২) একদা লরেন্স রেডিয়েশন ল্যাবরেটরির গবেষক এবং বিভিন্ন সময় প্রিন্সটন, সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়, হাইফা ও বার্কবেক কলেজের তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার প্রফেসর ছিলেন। কম্যুনিজ়মে অনুরক্ত হওয়ার জন্যে তাঁকে জন্মভূমি ইউএসএ ছাড়তে হয়েছিল। ১৯৫৬-য় হাঙ্গেরি আপরাইজ়িং-এর সময় অবশ্য কম্যুনিজম থেকে তাঁর বিশ্বাস চলে যায়। কোয়ান্টাম বলবিদ্যার পর্যবেক্ষণনির্ভর বিষয়গত-বাস্তবতাবিরোধী ডিসকোর্সের বিপরীতে বমের নিগূঢ় চলরাশিতত্ত্ব (হিডেন ভেরিয়েবলস থিওরি) তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় আলোড়ন ফেলেছিল। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদ ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যাকে মিলিয়ে বম কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বের কথা বলেন। তাঁর মতে তন্মাত্রিক কণারা এই ক্ষেত্র বা ফিল্ডে প্রবাহিত তরঙ্গের ঘনীভূত রূপ। বমের নিহিত শৃঙ্খলা বা ইমপ্লিকেট অর্ডারের ধারণাও বাস্তবতার অজানা দিগন্ত উন্মোচন করে। তিনি বলেন, যে-কোনও বস্তুরূপ সেই নিহিত শৃঙ্খলা থেকে প্রকাশিত হয়, আবার তা নিজের গভীরে মহাবিশ্বের সমগ্রতায় যুক্ত হয়। দার্শনিক জিদু কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে বমের একাধিক আলোচনা ‘দি এন্ডিং অব টাইম’, ‘দ্য হোলনেস অব লাইফ’ এমন সব গ্রন্থে দেখা যায়। তাঁদের দ্বিরালাপে বারে-বারেই সমগ্রতা ও খণ্ডতার কথা উঠে আসে।

| চিন্তন ও বুদ্ধিমত্তা |

জ্ঞান যে আসলে কার্যপ্রণালী তা বুঝব কীভাবে – এ প্রশ্নের অনুসন্ধানে আমাদের প্রথমে লক্ষ করতে হবে যে তামাম জ্ঞানই সম্ভূত, প্রদর্শিত ও জ্ঞাপিত হয়, পরিবর্তিত ও প্রযুক্ত হয় চিন্তায়। চিন্তন, যা তার মূর্তনের প্রবাহেই লব্ধ, (এবং শুধুমাত্র তার আপেক্ষিকভাবে সুসংজ্ঞাত সব ভাবচ্ছবি ও ধারণাগত আধেয়তে নয়) বস্তুত সেই প্রক্রিয়া যেখানে জ্ঞানের যথার্থ ও নির্দিষ্ট অস্তিত্ব রয়েছে।

চিন্তন-প্রক্রিয়া কী? চিন্তন স্বরূপত আমাদের জীবনের প্রতিটি দশায় স্মৃতির সক্রিয় সাড়া। স্মৃতির মেধাগত, ভাবপ্রবণ, ইন্দ্রিয়জ, পেশিসংক্রান্ত ও শারীরিক যত সাড়া, আমরা চিন্তায় অন্তর্ভুক্ত করি। এই সমুদায় রূপই এক অবিচ্ছেদ্য প্রক্রিয়ায় নিহিত। তাদের বিচ্ছিন্নভাবে দেখতে গেলেই খন্ডতা ও বিমূঢ়তায় পৌঁছোব। প্রতিটি বাস্তব পরিস্থিতিতে এরা স্মৃতির একই প্রতিস্পন্দনের প্রসরে থাকে এবং একাদিক্রমে আরও অবদান রাখে স্মৃতিতে – আর এভাবেই পরবর্তী চিন্তাকে প্রভাবিত করে।

চিন্তার এক আদিমতম ও অসংস্কৃত রূপের দৃষ্টান্ত – আনন্দ ও যন্ত্রণার স্মৃতি, সঙ্গে সেই চাক্ষুস, শ্রবণীয় বা আঘ্রাত মনোপ্রতিমা, কোনও বস্তু বা পরিস্থিতি যাকে জাগিয়ে তোলে। আমাদের সংস্কৃতি সচরাচর ভাবচিত্রের স্মৃতি ও অনুভূতির স্মৃতিকে পৃথকায়িত করে। কিন্তু স্পষ্টত এমন স্মৃতির সামগ্রিক তাৎপর্য হচ্ছে ভাবচিত্র ও তা থেকে উদ্ভূত অনুভূতির সম্মিলন। (বুদ্ধিগত আধেয় ও শারীরিক প্রতিক্রিয়াসহ) তা আকরিত করে মীমাংসার গোটা শরীর, অর্থাৎ কীভাবে স্মরণে থাকবে – ভালো না মন্দ, আকাঙ্ক্ষিত না অনাকাঙ্ক্ষিত এমনতর।

স্পষ্ট যে, চিন্তা – স্মৃতির সাড়ারূপে যাকে বিবেচনা করা হচ্ছে – কাজের ধারায় মূলত যান্ত্রিক। হয় তা স্মৃতি থেকে উদ্ভূত পূর্ব-অস্তিত্বশীল কিছু কাঠামোর পুনরাবৃত্তি, নয়তো কিছু স্মৃতির সমবায়সজ্জা ও সংগঠন থেকে পরবর্তী ভাব, ধারণা, বিষয় ইত্যাকার চেহারায় রূপান্তর। এমন সমবায়ের বিশেষ ধরনের অভিনবত্ব রয়েছে – তা স্মৃতির উপাদানগুলির আকস্মিক আন্তঃক্রিয়ার ফলশ্রুতি। কিন্তু স্পষ্টত এই অভিনবত্বও মূলত যান্ত্রিক (কালাইডোস্কোপে নতুন নতুন সজ্জার মতো)।

যে বাস্তব পরিস্থিতি চিন্তারাশিকে জাগিয়েছিল, তার সাপেক্ষে ওই চিন্তারাশি যে প্রাসঙ্গিক বা যথাযথ হবেই তেমন কোনও যৌক্তিকতা এই যান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেই । নির্দিষ্ট চিন্তারাশির প্রাসঙ্গিকতা বা উপযুক্ততার সংবেদনে প্রয়োজন কোনও শক্তির ক্রিয়াশীলতা। সেই শক্তি যা যান্ত্রিক নয়। এই শক্তিই বুদ্ধিমত্তা। বুদ্ধিমত্তাই এমন নতুন বিন্যাস ও সংরচনা প্রত্যক্ষ করতে সমর্থ, যা স্মৃতিগত কিছুর পরিবর্তিত রূপ নয়। যেমন, ধরা যাক, কেউ দীর্ঘদিন ধরে এক দুর্জ্ঞেয় সমস্যার সমাধানে নিয়োজিত। হঠাৎ কোনও নতুন শৃঙ্খলা ও সংরচনার ভিন্ন প্রয়াসে বোধের এক ঝলকে তিনি বুঝতে পারলেন সেই সমস্যা বিষয়ে তাঁর চিন্তার অপ্রাসঙ্গিকতা। স্পষ্টত এই ধরনের ঝলক প্রকৃতপক্ষে চিন্তন-প্রণালীর বাইরে সংবেদনক্রিয়া, যদিও পরে তা চিন্তায় প্রকাশিত হয়। পার্থক্য-অভেদ, বিযুক্তি-সংযুক্তি, অপরিহার্যতা-আকস্মিকতা, কার্য-কারণ ইত্যাকার সম্পর্কায়িত এবং বিমূর্ত পরম্পরা-বিন্যস্ত মনোগত সংবেদনই এ কাজে নিয়োজিত।

এইভাবে স্মৃতির মূলত যান্ত্রিক ও শর্তাধীন সাড়াসমূহকে যে-একটি শব্দ বা প্রতীকে আমরা প্রকাশ করেছি, তা হচ্ছে চিন্তন। আর একে পৃথক করেছি বুদ্ধিমত্তার সেই সজীব, অকৃত্রিম ও নিঃশর্তাধীন সাড়া (বা বুদ্ধিগত সংবেদন) থেকে, যেখানে নতুন কিছুর উদ্ভব হতে পারে। এক্ষেত্রে কেউ প্রশ্ন করতেই পারেন, এমন নিঃশর্তাধীন সাড়া যে প্রকৃতই সম্ভব, তা কীভাবে একজন জানতে পারে? এ এক মস্ত প্রশ্ন। তাই এখানে তা পুরোপুরি আলোচনা করা যাচ্ছে না। শুধু এটুকু বলা যায়, প্রত্যেকেই অন্তর্নিবিষ্টতায় এই ধারণা করতে পারে যে বুদ্ধিমত্তা নিঃশর্তাধীন (এবং, বস্তুত, কেউ অন্যরকম ধারণায় স্থির থাকতেও পারবে না)।

উদাহরণ হিসেবে ধরুন বলার চেষ্টা করা যাক, মানুষের সব কাজই শর্তাধীন ও যান্ত্রিক। প্রকারভেদে, এই দৃষ্টিভঙ্গি দু-ভাবে গড়ে ওঠে। হয় বলা হয়, মানুষ মূলত তার বংশগত গঠনতন্ত্রের সঞ্জনন, নয়তো সে নিয়ন্ত্রিত হয় তার পরিবেশের প্রভাবকদের অধীনে। এখন বংশগত-নির্ধারণবাদীর ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলা যায় – মানুষটির নিজস্ব বিশ্বাসগত বক্তব্য তার বংশগত সংবিধানের সৃষ্টি কিনা। অন্যভাবে বললে, সে কি বাধ্য হল তার জিনগত কাঠামোহেতু এ-কথা বলতে। একইরকম প্রশ্ন ওঠে পরিবেশগত-নির্ধারণবাদী সম্বন্ধে – তার বিশ্বাসগত উচ্চারণ, যে পরিবেশের নিয়ন্ত্রণাধীন সে, সেই পরিবেশ থেকে নির্গত শব্দের বিন্যাস কিনা। স্পষ্টত উভয়ক্ষেত্রেই (একইসঙ্গে বংশগত ও পরিবেশগত প্রভাবকদের যোগফলের শর্তাধীনতায় বিশ্বাসীর ক্ষেত্রেও) উত্তরটিকে নেতিবাচক হতে হয়, কারণ নইলে সব বক্তাই তাদের কথার অর্থ থাকতে পারে এমন সম্ভাবনাকে অস্বীকার করবেন। প্রকৃতপ্রস্তাবে যে-কোনও বক্তব্যের ক্ষেত্রে অনিবার্যত বক্তার বুদ্ধিগত সংবেদন থেকে কথা বলার ক্ষমতা যে আভাসিত হয়, আর যা কোনও সত্য বয়ানের ক্ষমতায় রূপান্তরিত হয়, তা কখনোই অতীতে অর্জিত অর্থময়তা ও দক্ষতানির্ভর যান্ত্রিকতার ফলশ্রুতি হতে পারে না। তাই আমরা বুঝতে পারি, ওই বক্তাদের কেউই জ্ঞাপনপ্রণালীতে আভাসিত না করে পারে না যে সেই মুক্ত নিঃশর্তাধীন সংবেদন, যাকে আমরা বলছি বুদ্ধিমত্তা, সে অন্তত তার সম্ভাবনাকে গ্রহণ করেছে।

এখন প্রভূত পরিমাণ প্রমাণ রয়েছে একথা বলার জন্যে যে চিন্তন মূলত একরকম ভৌত প্রক্রিয়া। বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন দেখা গেছে মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রে বৈদ্যুতিক ও রাসায়নিক ক্রিয়া এবং পেশীর আনুষঙ্গিক পীড়ন ও চলন থেকে চিন্তন অবিচ্ছেদ্য। তাহলে কি কেউ বলতে পারে: হয়তো আর একটু সূক্ষ্ম প্রকৃতিতে বুদ্ধিমত্তাও সেই একই প্রক্রিয়া?

বোঝাই যাচ্ছে, আমরা তা বলতে চাই না। যদি সংবেদনের নিঃশর্তাধীন ক্রিয়া হয় বুদ্ধিমত্তা, তাহলে এই ভূমি কখনোই হতে পারে না কোষ, অণু, পরমাণু বা তন্মাত্রিক কণাদের কাঠামো। শেষপর্যন্ত যা-কিছু এইসব কাঠামোর সূত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে, তা স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকবে। এইভাবে যান্ত্রিক প্রকৃতির কিছু থেকে উদ্ভূত হলে তা মূলত যান্ত্রিক প্রকৃতির চিন্তন প্রণালীতে আত্মীকৃত হবে। বুদ্ধিমত্তার প্রকৃত ক্রিয়াশীলতা এভাবেই কোনও জ্ঞেয় সূত্রের বিষয়রাজি দ্বারা নির্ধারণের বা প্রভাবের বাইরে থেকে যায়। ফলত আমরা বুঝি বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিভূমি অবশ্যই সেই অনির্ধারিত ও অজানা প্রস্রবণ যা পদার্থের সুসংজ্ঞাত রূপগুলিরও ভিত্তিভূমি। বুদ্ধিমত্তা এইভাবে জ্ঞানের কোনও শাখার (পদার্থবিদ্যা বা জীববিদ্যা) সাহায্যে নিরূপিত ও বিশ্লেষিত হতে পারে না। একে ব্যাখ্যা করার যে-কোনও শৃঙ্খলার চেয়ে অনেক গভীর ও অন্তর্নিবিষ্ট এর উৎস। (প্রকৃতপ্রস্তাবে, পদার্থের সুসংজ্ঞাত রূপের শৃঙ্খলাকে বুঝতেই হয়, যার মাধ্যমে আমরা বুদ্ধিমত্তাকে বোঝার আশা করব।)

তাহলে চিন্তার সঙ্গে বুদ্ধিমত্তার সম্পর্ক কী? সংক্ষেপে বলা যায়, যখন চিন্তন প্রক্রিয়া চলে, তা যান্ত্রিক। তা বুদ্ধিমত্তা নয়। কারণ তা স্মৃতি থেকে অপ্রাসঙ্গিক ও অনুপযোগী নিজস্ব শৃঙ্খলাকেও টেনে এনে আরোপ করে। চিন্তা শুধুমাত্র স্মৃতির সাড়া দিতেই সক্ষম নয়, তা বুদ্ধিমত্তার নিঃশর্ত প্রত্যক্ষীকরণের সাড়া দিতেও সক্ষম। বুদ্ধিমত্তার এই প্রত্যক্ষীকরণ প্রকৃতপক্ষে বিচার করে চিন্তার কোনও রূপরেখা প্রাসঙ্গিক বা উপযুক্ত হয়েছে কি হয়নি।

এখানে রেডিও গ্রাহকযন্ত্রের সাদৃশ্য কেউ কার্যকরভাবে বিবেচনা করতে পারেন। যখন ইনপুটে পুনর্নিবেশ (ফিড ব্যাক) করে গ্রাহকযন্ত্রের আউটপুট, তখন গ্রাহকযন্ত্র থেকে তার নিজস্ব অর্থহীন, অপ্রাসঙ্গিক গোলমেলে আওয়াজ বের হয়। কিন্তু এটা যখন রেডিও তরঙ্গের সংকেতে সংবেদী, তখন এর বিদ্যুৎপ্রবাহের ( যা শব্দতরঙ্গে রূপান্তরিত হয়) অন্তর্গতির নিজস্ব বিন্যাস রেডিও-সংকেতের বিন্যাসের সমান্তর থাকে। আর এভাবেই গ্রাহকযন্ত্রটি একপ্রকার অর্থপূর্ণ শৃঙ্খলা আনতে কাজ করে যার উৎস যন্ত্রটির নিজস্ব কাঠামোর বাইরে। সেই শৃঙ্খলা বা বিন্যাসকে যন্ত্রটি নিয়ে আসে নিজস্ব গঠনতলে। তাহলে বলা যায়, বুদ্ধিগত সংবেদের ক্ষেত্রে, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র সেই সার্বিক ও অজানা প্রস্রবণের শৃঙ্খলায় সরাসরি সাড়া দেয়। এই সার্বিক ও অজানা প্রস্রবণের শৃঙ্খলাকে কোনোভাবেই এমন কোনোকিছুতে রূপান্তরিত করা যাবে না যাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারা যায় জ্ঞেয় গঠন-কাঠামো দিয়ে।

এইভাবে বুদ্ধিমত্তা ও বস্তুগত পদ্ধতির শেষপর্যন্ত একটাই উৎস – তা হচ্ছে সেই সার্বিক প্রস্রবণের অজানা সমগ্রতা। বিশেষ অর্থে বলা যায়, যাদের আমরা সাধারণত মন ও বস্তু বলি তারা উভয়ই সেই সার্বিক প্রস্রবণ থেকে উদ্ভূত দুটি অবস্থা। উভয়ই বিবেচিত হবে এক সমগ্রগতির মধ্যে দুটি ভিন্ন ও আপেক্ষিকভাবে স্বাধীন শৃঙ্খলারূপে। বুদ্ধিগত সংবেদনে সাড়া দেয় যে চিন্তন, তা মন ও বস্তুর সামগ্রিক স্বরসংগতি বা হার্মোনি ঘটাতে বা তাদের যথাযথ জুড়ে দিতে পারে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes