গৌতম চৌধুরীর কবিতা
অপরগুচ্ছের দুইটি
১.
অর্ধসত্যের উপর দিয়া ভাসিয়া চলে কাছিম। শেওলা-ঝাঁঝি লতা-তন্তুতে পথ পদে পদে আবিল। ভাসমান শরীরের নিচে বহিয়া- যাওয়া এই প্রণালী, এ কি সত্যই দিগন্ত পার হইয়া চলিয়া গিয়াছে? না কি এ এক গাঢ় সবুজ মায়া, যাহা পুরা অন্ধকারও না, আবার আগুপিছু আশপাশ টেরও পাওয়া যায় না। একবার ডুব মারিয়া দেখিলেই হয় সেই রহস্যের চেহারাখান। কিন্তু কাছিমের পিঠে যে সারা দুনিয়ার বোঝা। সে ডুব দেয় কেমনে! কেহ যদি ধরিত হাল, কেহ যদি বাহিত দাঁড়, পাল খাটাইয়া দিত কেউ পিঠের উপরে, বেশ হইত। ঝপাং করিয়া ডুব মারিয়াই তরতর তরতর করিয়া পার হইয়া যাইত পথ। যে-পথ একটি ইশারা মাত্র। আছে কি নাই, তাহার ভাস্যি নাই। তবু ভাসিয়া চলে কাছিম। সে বুঝে, সত্য-মিথ্যার তল পাওয়ার এলেম তাহার নাই, ফুরসতও না …
২.
মৃত এক যন্ত্র হাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরিয়া বেড়ায় উন্মুখ রমতা যোগী। একটু সামান্য ধ্বনি, তাহার জন্য কী কাঙালপনা। কত নৌটঙ্কি, কত কসরত। তাহাদের রকমফেরগুলি দিয়া যদি একটি প্রদর্শনী করা যাইত! স্থিরচিত্রে তো পুরা ধরা পড়িবে না, চাই দেখিতে-শুনিতে-পাওয় চলমান কয়েকটি ছোট ছোট মুহূর্ত। কত যে তাহাদের রাগরাগিণীর বাহার, কত আজান, কত মন্ত্রপাঠ! গ্রামে গ্রামে ঘুরিয়া এই প্রব্রজ্যা – ছু ছু করিয়া কুকুর লেলাইয়া দিল কতজন। কতজন উপদেশ দিল – খাটিয়া খাইতে পার না। কে বুঝাইবে, ইহা তো দুই মুঠি তণ্ডুলের ব্যাপার নয়। সামান্য একটু ধ্বনিই শুধু। মৃত যন্ত্রের ভিতর পড়িয়া যে-ধ্বনি গম গম করিয়া বাজিয়া উঠিবে। বুঝাই যাইবে না বাজিতেছে কে – ওই যন্ত্র, ওই ধ্বনি, না কি দৃশ্যমান ও অদৃশ্য সমস্ত চরাচর …
gc16332@gmail.com
অসাধারণ লাগলো!