কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্যের কবিতা

কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্যের কবিতা

ব্যক্তিগত বিবাদ

এই যে দীর্ঘতম জয়ী সেতু
এই যে নীরব ও নীলাভ ফুলবাড়ির উড়াল…
তাতে কি সংসারের নতুন ভাষা আছে ?
তাতে কি জলপাইগুড়ির করলা নদী আগের চেয়ে আরও পবিত্র হলো ?
না । একদম না ।
(স্বপ্নে কবি কালিদাস, কাল রাতে)

যেভাবে লালপুঁই পটল ঝিঙে আর নলজন্মা শিশু বাড়ে, বাড়ুক।
যেভাবে কলোসাগর জেগে থাকে পশ্চিম ককেশাসে, জাগুক ।
আমার সমস্যা হল,
সেভাবে চৈত্রমাস এল না আর আংরাভাসায় ।
ফুলবাড়ি সীমান্তের ঘাসেদের প্রশ্ন করে জানলাম
কাওয়াখালির ভারত পেট্রোল পাম্প থেকে রাজশাহী বহুদূর।
এত কাদা এত জলপানি পার হয়ে
আবার তিব্বত-চমুলহরিতে, বরফে ফিরে যাব ?
আর্টিকেল টুটুসিক্সে
এই উদ্ভট নিয়ে কিছু লেখা নেই।

প্রজাপতিরা যখন জলে নেমে স্নান করে, তখন
সংসার অরণ্যময়, তখন আংরাভাসা বারবার ।
তখন বরং নদীর পশ্চিমপাড় হেঁটে হেঁটে
সূর্য চাঁদ ইউরেনাস নেপচুন প্রদক্ষিণে যাই…
এতক্ষণ যারা মেঘ ও নীলিমা ছিল , আকাশ ছিল…
তারা সব আদি রোম আদি পাটলিপুত্রের হিমবাহ হয়ে
ইতিহাসে জেগে রইলেন। থাকুন ।

এই যে বিধ্বস্ত লালপুঁই, তার পূর্বজ অতলান্তিকের কালোসাগর, চৈত্রের বাতাস
এদেরও তো নিশ্চয়ই ব্যক্তিগত
সপ্তর্ষিমন্ডল আছে, কূহেলিকা আছে…

একটি অবান্তর কথা

কত অবান্তর কালো কবুতর
কত বাকশক্তিহীন না-কলঙ্ক সাদা শ্মশান
কত অশরীরী কালপুরুষের মহাছায়া
অকাল-সমীরণ-ঝঞ্চা বিজয় করে
তিস্তার পুবপাড়ে ওড়ে চিল…
তা কি পান্ডবেরা জানতেন ?
কত নদীকাতর ফল্গু-অঘ্রাণের ঘ্রাণ নিতে নিতে
একটি আমবাড়ির একাকী পাখি জেগে থাকে…
সে কি বাঙলার কোনও পুরোহিত জানতেন ?

ভোরের সাগরমেলায় এসে এরকম প্রশ্নকাতর এক
ঋষিফকির হয়ে হাঁটছি তো হাঁটছিই…
পদযাত্রার এই মেঘময় কুয়াশায় কে কার কাছে যাবে ? যাবে কি আদৌ?
কে পানতাম্বুল হবে, কেই বা হবে তার বরজসন্তান ?

এইসব কফির পান্ডুলিপি নিয়ে ঘামছি কেবল !

যেদিন জুলুশ এসেছিল পানবাড়িতে, পটেকের গ্রামে
যেদিন নাটাবাড়িতে মদন গিদালের শেষ
চোর-চুর্ণির পালাটিয়ায় দাঙ্গা বেঁধেছিল
সেদিনও এরকম সাংঘাতিক হেঁটেছিল
জালধোয়ার কিষান-কিষানিরা..

মলমবিক্রেতারা কি টের পায়
রক্ত কীভাবে তার সাম্রাজ্য বাড়ায় !

সনেট

সাগরজন্ম ভালো, অমৃত ছড়ায়
টেথিস যতক্ষণ জল, সব ঠিক ছিল
তখনই সন্ধ্যা নেমে গিয়েছিল
গারোখুটায়, রসিকবিল জঙ্গলে ।
আমরা, পাড়ার বালকেরা তখন অসহায় পাখি, বক ধর্মাচারী ।

প্রভাতী কম্পনকান্দনের পর
বিকেলের ভাষাসমীরণে আন্দোলনে যারা
তারা সব ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের মাঠে আসুন —
এখানে স্বরবর্ণাশ্রমে, ঘামে কিছুক্ষণ হাঁটুন…

আংটি হারালে যা যা ঘটে
আজ আমার প্রতিবেশী আম ও নারকেলরাও
সেই পাপে বিদ্ধ হল । ফলে,
জ্বর হল, মাথাব্যথা, করোনা হল
আমাদের সবার ।
সুবীর শুভময় সমর মাছ ধরছিল
ওদের সকলের যৌথকম্পন ও করোনাকান্দন
জেলার নয়ানাম এনে দিল, যেন
ওই নাম সত্য হ্যায়
বিকেল আক্রান্ত হল ঝড়ে ও হিংসায় ।

প্রিয় মহিষেরা আমার
আংরাভাসার জলপ্রেয়সীরা
এই গ্রহ কবে ফের
চতুর্দশপদী ও মায়াময় সনেট
ছুঁড়ে দেবে ঘরে ঘরে ?

মধ্যাহ্নকাহন

আমাকে মধ্যাহ্নে ফেলে
সম্পূর্ণ ফকির করে সাঁজঘরে হেঁটে গেল
কাজাকিস্তানের সেই রান্না জানা মেয়েটি
দেহরক্ষীর বদলে আমার সামনে এল
ফুলবাড়ির কিছু বৈধ কাঁটাতার, রাতকাতরতা
তুমুল অপরাহ্ন-তপষ্যার পর গালিব এলেন
তমসাকাতর ও সান্ধ্যপত্রিকার মতো গালিব এলেন…

কিন্তু… কিন্তু , এত
দীর্ঘ মরিচিকা-মধ্যাহ্ন তো দেখি নি কোথাও
রান্না জানি না বলে পৃথিবীও বাকরুদ্ধ হল
মধ্যাহ্ন কাটে না, মধ্যাহ্ন কাটে না..

আমি ও আমার খলিফা-গালিব
আমাদের চার নগ্ন হাত, তালু ও পাতা
রান্না-জানা কাজাখবালিকাকে বললাম–,
অপরাহ্ন দাও…

অট্টালিকাপ্রাণ

মনে করি এই স্পষ্ট অট্টালিকাই আমাদের আফরিন বাগান
এতে কত অস্পষ্ট ইঙ্গিতে-ইশারায় বৃষ্টি পড়ে, পুজো আসে…
এতেই তো কত প্রেমিক-প্রেমিকার জল
কে বলেছে, গরম পড়েছে ?
এই তো ব্যালকনিভরা কত স্পষ্ট পল্লব, মায়ের মতো উপবাসী।
এইসব কালো নুনিয়ার চাষে অতিশয় মগ্ন আছি
কেউ আমায় ফোন মেল দেবেন না কিছুদিন ।

আজ আমার গ্রেসিদিদির সাঁওতালী ময়ুরের পাখাটি উড়ে এল নিজে নিজেই
যেন ঘরে এল শামুকতলার ঘন দুপুরের মুখ
যেহেতু ময়ুর ইত্যাদিদের আমি সর্বদাই
পূর্ণিমার তোরসার ভাঙন মনে করি
অট্টালিকায় আছাড় খেল আষাঢ়ের ভুটান
এই দূর্নিবার মাটি পাথর ও গাছেদের
জলাবতরন দেখতে দেখতেই
আমি আমার আফরিন বাগান ।

এই যে রক্তচাপ এই যে স্নায়ুর অসম্ভব চঞ্চলতা
তাকেও তো দেখেশুনে রেখেছে, এই
অট্টালিকার কালিদাসের চিঠি, ফলে
সেলাম মেঘদূতম, সেলাম বৃষ্টিকে।

আমরা, বাদামবিক্রেতারা,
পকেটে বিষবৃক্ষ নিয়ে ঘুরি, প্যারাসিটামল খাই
আমাদের লাল-কালো ভাটাশ্রমিকের
রাতের শয্যার মতো নাঙ্গা
আমরা গরিবেরা, ঘাসের সঙ্গেই
শত্রুতা করি, মিত্রতা করি
আমাদের প্রস্রাবে সবারই অবারিত দ্বার ।

জার্মানির বন থেকে , বন্ধুগণ–
এইমাত্র ঠসা ভ্যান বিটোভেন এলেন…
তিনি আজ থেকে আমাদের বাগানেই
পতাকা হয়ে থেকে যাবেন ।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (5)
  • comment-avatar
    Krishnopriyo Bhattacharya 4 years

    ভালো সংখ্যা হয়েছে ।

  • comment-avatar
    শীর্ষা 4 years

    ভীষণ ভালো লাগল কবিতা গুলো। প্রতি কবিতায় কবির নিজস্ব সুর মুগ্ধ করেছে। শ্রদ্ধা জানাই।

  • comment-avatar
    সুদীপ্তা সর্বজ্ঞ 4 years

    বেশ কয়েকবার পড়লাম কবিতাগুলো। খুব ভালো লাগল। প্রথমটা একটু বেশিই পছন্দ হল।

  • comment-avatar
    Fazlul Haque 4 years

    অসাধারণ একটি চিহ্নায়ক সংখ্যা । আপনাদের সকলকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই । কবিতা বিভাগের এসংখ্যার কবি কৃষ্ণপ্রিয় ভট্টাচার্যের কবিতাগুচ্ছ পড়ে আনন্দের শেষ নেই । এতো শুদ্ধ কবিতা সচরাচর চোখে পড়ে না । আবহমান সত্যিকার অর্থে এ সময়ের একটি সেরা প্রকাশনা । সম্পাদনার সাথে সমবায়ী সকলের জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো ।

  • comment-avatar
    মোস্তাক আহমাদ দীন 4 years

    কবিতাগুলো পড়ে ভালো লাগল। ভাষা ও বিষয় অন্যরকম।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes