কাশ্মীরি কবি দিনানাথ নাদিম-এর কবিতা <br />  অনুবাদ ও ভূমিকা : সায়ন রায়

কাশ্মীরি কবি দিনানাথ নাদিম-এর কবিতা
অনুবাদ ও ভূমিকা : সায়ন রায়

দিনানাথ নাদিম (১৯১৬-১৯৮৮) ১৯৪৭-এ পাকিস্তানি দখলদারি সহ অন্যান্য রাজনৈতিক অস্থিরতায় কাশ্মীরবাসী যখন চূড়ান্ত বিপর্যস্ত। যখন শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী তথা সাধারণ মানুষের মনোবল তলানিতে পৌঁছেছে,এক গভীর হতাশা গ্রাস করছে তাদের, সেই সময় সাহিত্য তথা কবিতায় প্রয়োজন ছিল এমন এক কণ্ঠস্বরের,যে কণ্ঠস্বর সাধারণ মানুষের দুঃখ,দুর্দশা,হতাশা; তাদের আশা, আকাঙ্ক্ষার কথা সহজবোধ্য ভাষায় তুলে ধরে তাদের প্রকৃত অবস্থাটাই শুধু ব্যক্ত করবে না,তাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ তথা প্রতিরোধের আগুন প্রজ্জ্বলিত করবে।এই সময় কাশ্মীরি কবিতায় আবির্ভাব ঘটেছিল দিনানাথ নাদিম-এর।মাস্টার জিন্দা কল এবং গুলাম আহমদ মেহজুর-এর প্রয়াণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল কাশ্মীরি কবিতায় নাদিম-এর আগমনে সেই শূন্যতা পূরণ হয়।কাশ্মীরি কবিতায় শুরু হয় নাদিম যুগ।প্রকৃতপক্ষে তার হাত ধরেই আধুনিক কাশ্মীরি কবিতার পথচলা শুরু হয়।শ্রীনগর শহরে ১৯১৬ সালে দিনানাথ জন্মগ্রহণ করেন।পিতা পণ্ডিত শঙ্কর কল মারা যান যখন তার বয়স আট।অতঃপর মায়ের কাছেই মানুষ হন দিনানাথ।তার মা ছিলেন মুরান গ্রামের মেয়ে।যে গ্রামের লৌকিক সংস্কৃতির অঙ্গই ছিল মৌখিক কবিতা।তার মা গাইতেন লাল দেদ-এর বাক্ ও অন্যান্য কবির কবিতা।মা-ই তার মধ্যে জ্বালিয়েছিল কবিতার আলো।১৯৪৩-এ বি.এ. এবং ১৯৪৭-এ বি.এড পাশ করার পর দিনানাথ শ্রীনগরের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।দেশ স্বাধীন হবার পর তাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর অফ সোশ্যাল এডুকেশন পদে নিযুক্ত করা হয়।তিনি সাহিত্য একাডেমির সদস্যও হয়েছিলেন।বরাবর তার ঝোঁক ছিল বামপন্থার প্রতি।কাশ্মীরে বামপন্থী আন্দোলনের অন্যতম স্থপতি। নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রোগ্রেসিভ রাইটার্স মুভমেন্ট-এ।গিয়েছেন রাশিয়া ও চায়না।১৯৭১ সালে তাকে সোভিয়েত ল্যান্ড নেহেরু পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়।১৯৮৬ সালে পান সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার।দিনানাথ নাদিমের কবিতার সামর্থ্য লুকিয়ে আছে উদ্ভাবন, পরীক্ষানিরীক্ষা, গভীর স্বজ্ঞায় যা তিনি সফলভাবে প্রয়োগ করেছেন একজন সাধারণ কাশ্মীরির কল্পনাকে উস্কে দিতে।তার কবিতায় একজন সাধারণ কাশ্মীরির দুর্দশা, অন্তরের আকুতি যথার্থভাবেই ফুটে উঠেছে।শুরুতে উর্দুতে কবিতা লিখলেও তিনি অচিরেই সরে আসেন কাশ্মীরি ভাষায় এবং প্রকৃতই জনগণের কবি হয়ে ওঠেন।কাশ্মীরি ভাষার ইন্টেলেকচুয়ালাইজেশন ও কাশ্মীরাইজেশনের কৃতিত্ব তাকেই দেওয়া হয়।

একটা মৃদু বাতাস হাঁটতে বেরিয়েছিল

একটা মৃদু বাতাস হাঁটতে বেরিয়েছিল
সে চেয়েছিল
এক মেলায় যোগ দিতে।
বিরাট এক বায়ু গিলে নিল তাকে;
মৃদু বাতাস হারিয়ে ফেললো তার আত্মা।

একটা ভাঙা আয়না

একটা ভাঙা আয়না
ঝকমক করছিল আবর্জনার স্তুপে।
একটা গরু এলো
আর
তাকালো এর দিকে ;
একটা কুকুর এল
আর
শুঁকলো আয়নাটিকে;
এক উন্মাদ রমণী তুলে নিলো তাকে
আর
ঢেকে দিলো ছেঁড়াখোঁড়া কাপড়ে।
কেউ জানে না
কী ঘটেছিল সেই ভাঙা আয়নার
তারপর।

একটি জুতো

একটি জুতো
তার খোলা মুখ নিয়ে
পড়েছিল রাস্তায়
ছটফট করছিল এক ঢোঁক জলের জন্য।
একটা কুকুর এলো
ছিন্নভিন্ন করলো জুতোটিকে
আর
সেটাকে নিয়ে গেল নদীতে।
তৃষ্ণা কিপ মিটেছিল ?

একটা ইঁট পাথরকে জানিয়েছিল :
‘ তুমি অংশ মাত্র
আমি হলাম পূর্ণ ‘।

একটি পাত্র

একটি পাত্র
বৃষ্টির জলে ধোয়া
দেখাচ্ছিল রমণীর তরল মুখের মতো।

বৃষ্টিফোঁটা
ধুয়ে দিয়েছিল তার পাপ।

কেউ একজন এলো
আর লাথি মারলো পাত্রটিকে।
ভাঙা টুকরোগুলো পড়ে রইলো
এখানে ওখানে।

দুদিন বাদে
শিশুরা খেলতে লাগলো
সেই টুকরোগুলো নিয়ে।

নরক থেকে স্বর্গ
আড়াই পা-এর দূরত্ব।

পাহাড়ের পাদদেশে

পাহাড়ের পাদদেশে
একটি প্রজাপতি ডানা গুটিয়ে কাঁপতে কাঁপতে
ফিরে আসছিল ঘর।
পথের মধ্যে
ফুলেরা তাকে স্বাগত জানালো আর বললো :
‘এসো,
বসো আমাদের পাশে
আর উপভোগ করো তোমার যৌবন।’
প্রজাপতি উত্তর দিয়েছিল :
‘তুমি প্ররোচিত করো আর মেলে ধরো আর পাগল করে দাও;
আমি আমার সকল রঙ দেখাই ব্যর্থভাবে।’

একটা রাস্তা ঝাঁপ দিয়েছিল গলির ভিতর

একটা রাস্তা ঝাঁপ দিয়েছিল গলির ভিতর ;
অন্ধকার যেখানে শিকড় গেড়ে ছিল।
নিকটবর্তী দুটি দরজা
ফিসফিস করেছিল
আর
হেসেছিল
যখন তারা দেখেছিল রাস্তাটিকে।
যদি বলা যায়
কথা দীর্ঘায়িত হবে।
নীচে ফুলেরা ঝরিয়েছিল অশ্রু
আর
ওপরে আকাশ ছিল তারায় ভরা।

একটি ক্ষীণ জলধারা

একটি ক্ষীণ জলধারা
পাহাড় বেয়ে বয়ে যাচ্ছিল নীচে
রাজার মতো।
একটা গাছের ডাল ছিল তার মাথার মুকুট।
নদী ভাসিয়ে দেবে তীর
আর
ঝাঁকাবে এই পৃথিবী।
একটা ছপাৎ জলশব্দের পর
গাছের ডালটি আটকে গেল বালির ঢিবিতে।
সুন্দর দাস নয় শূন্যতার।

তার রঙ বলেছিল আমায়

তার রঙ বলেছিল আমায়
যে সে-ই ছিল।
আমি তার নাম দিতে চেয়েছিলাম
কিন্তু
আমার নিঃশ্বাস জমে গিয়েছিল,
ঠোঁট নিথর
আর মুখ স্তব্ধ হয়েছিল।
সবকিছু ছিল অন্ধকার
শুধু
একটা বিদ্যুৎঝলক দেখিয়েছিল তার দাঁত।

এক ভাস্কর খোদাই করেছিল একটা রিলিফ

এক ভাস্কর খোদাই করেছিল একটা রিলিফ,
রঙ করেছিল সেটি
আর
পুনরাবিষ্কার করলো এর প্রত্যেকটি অঙ্গ।
যখন সে তাকালো এর মুখের দিকে
সে খুঁজে পেল কী কী হারিয়ে গেছে
আর
হারিয়ে ফেললো তার সকল খোঁজ।

একটা নুড়ি রাস্তার কোণে

একটা নুড়ি রাস্তার কোণে
ধৌত হয়েছিল সূর্যের আলোয়।
ঠিকাদার
পাথরের ওপর জড়ো করছিল পাথর।
কাঁকরের মধ্যে
নুড়িটি হারিয়ে গেল।
অনেক আগে
ভাগ্য তার ললাটে লিখেছিল :
‘ রাস্তার জন্য নিবেদিত ‘
গুঁড়ো করলো ঠিকাদার।
নুড়িটি ধুলো হয়ে গেল।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes