
দুটি কবিতা
:: ঋজুরেখ চক্রবর্তী
দিনের কবিতা
একেকদিন বেলা করে ঘুম ভাঙলে তোমার মনে হয় আধখানা জীবন তুমি ফুরিয়ে ফেলেছ অযথা নির্লিপ্ত অমনোযোগে।
এই যে মনে হওয়া—এই যে—তুমি অনেকাংশে ফুরিয়ে ফেলেছ নিজের তথাগত সম্বল, গুঁড়িয়ে দিয়েছ তার সমূহ করুণ অবশেষ, পুড়িয়ে ফেলেছ তার অন্তিম স্মৃতিচিহ্নটুকুও, আর উড়িয়ে দিয়েছ আপাতত তোমার শেষতম যে অপরাধবোধ তার যাবতীয় ছাই—এ তোমার রোজনামচার খাতা নয় যে এই ধারাবাহিকতা থেকে কিংবা এই কালক্রম থেকে তুমি যদৃচ্ছা মুক্তি পেতে চাইতে পার।
এ কোনও শৃঙ্খল অথবা শৃঙ্খলাও এমনকি নয় যা ভেঙে ও ভাঙিয়ে তুমি ফেঁদে ফেলতে পার এক অমোঘ এলিজির মোক্ষম বিভাব অংশটুকু।
এ কি তবে নেহাতই এক অপরিণামদর্শী অপচয় যা থেকে প্রাণরস আহরণ করে তোমাকে এগিয়ে যেতে হবে দিনান্তের দিকে, সেই অন্ধকার দ্বিতীয়ার্ধের দিকে, যার পরও সব প্রশ্ন অমীমাংসিত থেকে যাওয়ার অর্থই হল তোমার জন্য অপেক্ষা করে আছে এক নির্মম নির্ণায়ক টাইব্রেকার?
তার বাঁশি নিশিভোরে বাজে তোমার জানা আছে বলেই কি বেলা করে ঘুম থেকে উঠে ম্যানসাইজ আয়নায় নিজের পূর্ণাঙ্গ প্রতিকৃতিটি একবার দেখে নিতে এত ব্যাকুল হয়েছিলে তুমি?
রাতের কবিতা
রাত হলে ইদানীং, দরজা-বন্ধ জানলা-আঁটা পর্দা-টানা ঘরে এসি ইন্ডিকেটরের ক্ষীণ আভায় যখন নিজের হাতের ছায়া পড়েছে দেখতে পাও তোমার এযাবৎ যাপিত সমগ্র জীবনের কৃতকর্মের ওপর, তুমি বুঝতে পার যে বরাবর কোনও না কোনও মিথ্যে আলোর কাছে তুমি প্রতিশ্রুতি চেয়ে এসেছ শুশ্রূষার, যা আসলে তোমাকে আরোগ্যের শর্তে সুস্থতা ছাড়া আর কিছুই কখনও দেয়নি। টিকটিকিদের যেমন ক্লস্ট্রোফোবিয়া থাকলে চলে না, আর যেমন ভার্টিগো বা অ্যাক্রোফোবিয়া থাকলে চলে না পাখিদের, তুমিও বুঝে গেছ নিজের কাছে আত্মছলনার এটুকু অভিমান না রাখলে কিছুতেই তোমার চলবে না।
এতই যখন তোমার আলোকপিপাসা, উদ্ভিদের কাছে নিজের চলৎশক্তি তবে তুমি নিঃশেষে সমর্পণ করনি কেন কখনও?