
ঋভু চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
যেভাবে পালিয়ে যাওয়া
একটা অসমাপ্ত শস্য৷ক্ষেত্রের সামনের
সারিতে বসে চোখ মুখ ঢেউয়ের স্রোতে।
এই পর্যন্ত সব তৈরি করবার পর দায়িত্ব
নিয়ে ভেঙেও দেওয়া হল। দেখা যাচ্ছে সব
পালা করে গাওয়া, সব নষ্ট শ্রেণি।
এই মাত্র ফুসফুস অগণতান্ত্রিক আন্দোলন
দেখে লুটিয়ে বৃষ্টি ফোঁটা। জানা গেছে যতদূর যাওয়া
যাবে সেখানেই জল ও বাষ্প একেএকে
ঘর ও হাসপাতালে, এখন ‘ধা’ বলে মুখ আর ‘কা’
বলে মুখোশ, এরপর আর কোন বাসর নেই,
চোখের সামনে বন্ধ অন্ধকারের পাপ থেকে পেরিয়ে
যাওয়া আত্মীয়তা শুধু খাতা ও কলম।
ভিতরের অন্ধকার দেখলেই বাইরের
আলো পালিয়ে ‘ধা’ কিতকিত।
তৈরি থাকার আগে
অপেক্ষার আগেই সব প্রস্তুতি সারা,
এমন কি গলা অবধি জলে ডুবেও সহযোগীকে
বলা ছিল,‘ক্লিক।’ ভাসার জন্যে ডোবার আগেই
তৈরী ভালোবাসা ও অপলকা চালা ঘর।
শুকনো চিড়ে গুড় মাখিয়ে লুটে খাওয়া জমানো টাকা,
এই তো এভাবেই বুক চিতিয়ে বাঁধে বাঁধন আঁটা,
বলা নেই শুধু মৃত্যু ভয় থেকে কয়েকটা পা দূরে
বেঁচে থাকার ইচ্ছে কিছুটা এই রকম
অথবা ও ভাবেই চলে।
ফিরে যাবার স্বাদ
ফিরে যাওয়ার মাঝে এই যে বিলম্বিত স্বাদ
তাকে ফেলে আসার মধ্যেই যাত্রাপথ।
অথচ এক পাশ বেশ নিরিবিলি,
হাহাকার ফুটে ওঠে দাবার রূপকথায়।
ওপাশে যেভাবে ছোঁয় বুকে ওঠে দিনবদল
অথচ উপকারের পিছনে একটা স্থান বদল
বা একটা জায়গার অলংকার রাখা
অন্যপাশ ভরপুর শূন্যতা। একে একে ধারাবাহিক
হাঁটা চলার মধ্যে দিয়েই যে দুর্বিপাক তার হাত ধরেই
এবার শুরু হতে পারে আরেক যাত্রাপথ।
সেখানে গুটি জন্ম
সেখানেই ভাসমান জ্যোৎস্নার কাঁধে হাত রাখা,
শুরু হয় ঠেলা অথবা আরো কিছু গোপন
কথোপকথন। সেখানেই জ্বলন্ত ভাবনা থেকে
নিভের্জাল চুমু সরিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালা।
একটা রাস্তা নিমেষেই তো পথ হারায়,
একটা বাসা ছাদ ছাড়াও দিব্যি দাঁড়িয়ে মাথা
গোঁজার ইতিহাস দেখে, তারপর একে একে
সব গুটির অপেক্ষা এদিক না হোক ওদিকে
একটা প্রজাপতি হবে।
সন্ধিক্ষণ
এই তো শূন্যতা আবার দেখা হলে পিরামিড
গলে জল হবে, চোখের কোণে কোণে বজ্রপাত।
এভাবেই নিরীহ সম্পর্ককে ঠিক ওয়াক থু বলে
ছুঁড়ে ফেলা, এভাবেও রাস্তায় জল পড়ে
পিছনে পড়লেই অজ্ঞাতবাস।
সমস্ত বিচারের গন্ধে নাক গলানো,
কখনও মুখ ফিরিয়ে বুঝিয়ে দেবার একটা সন্ধিস্থল,
এরপর যা বলবে মানতে হবে,
যা শোনাবে সেখানেও একটা সাধারণ শ্বাস,
যারা তালি দেয়, তাদের শরীরে কারো কারো
ক্ষত লেগে থাকলেও সব ভোরেই অন্ধকার মানা যায় না।
উত্তরের প্রশ্ন চিহ্ন
শুধু একটা বড় গোল্লা দিয়ে যেভাবে
উত্তরের প্রশ্ন চিহ্ন আর প্রশ্নের পাশে
একটা উড়ন্ত কঙ্কাল ছুটে নেমে পালিয়ে
ফুসমন্তর সেখানেই ভাবার বিষয় কতটা গেলে
অক্ষরেও নদী জন্মায়। এর মধ্যে হাত পা
ও সারাটা শরীর একটা প্রকাণ্ড বালিয়াড়ির
ভিতর ঢুকে যাচ্ছে, আর মুখে বেঁচে থাকা বললেও
একটা গোটা মৃত্যু দেখতে হচ্ছে রোজ।
যাত্রাপথ
উল্টে গেলেই হল?
যেভাবে বুকের কোশে(ষ)গরম পাথর চাপে
স্তনহীন কিশোরী সকাল অথবা ভগাঙ্কুর
উপড়ে ফেলে ধর্ষনের নীতিকথায়,
যেভাবে এক একটা পার্টি অফিস গোল টেবিল
বৈঠক ধরে ফেলে উপস্থিত বা হাজিরার খাতা,
না হয় শুধুমাত্র ফিরিয়ে দেবার কথা বলে আবার
দখল হওয়া আরেকটা রাজ্যপাটের সীমা নির্দেশ,
সেভাবেই তো মেঘ লাগে, ধূসর যাত্রাপথে
ধুলো জন্মায়, বালিতে পার্থক্য গড়ে চণ্ডীকাকা।
ধুলো বালি আবার মেঘের ঘর বাড়ি।
এক থেকে তিন মাটি রঙে পড়ে আশমানি নীল।
একটা জটিল অঙ্কেই একটা ভেস্তে যাওয়া
বৈঠক জেগে ওঠে। তারপর তার থেকে পেঁয়াজের
খোসার মত বেঁচে থাকবার সব ধুলো বালি
খুলে খুলে মাটির গভীরতা মাপে, সেভাবেই একদিন
সব কাগজ নিয়ে পাড়ি জমানো সন্ধ্যাবেলা,
যাত্রাপথে এভাবে পাহাড় মেঘ ধরবার খাঁচা সঙ্গে আছে।