অরিন্দম মুখোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ

অরিন্দম মুখোপাধ্যায়-এর কবিতাগুচ্ছ

আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু হলে অন্য আকাঙ্ক্ষারা খেকে যায়
শরীরের রক্তে যাকে রোজ করি লালিত পালিত
তবু কতো তার জন্য ভাবি আমরা প্রতিনিয়ত
অনেক কথার জাল জমা আছে মনের খাঁচায়
আশিটা বসন্ত পরও তোমার গোলাপ ফোটে মনে
তুমি আসতে আর সেতারের সুর বাজাতো চারদিকে

এমন প্রেমের কথা গান গেয়ে গেছে পূর্বসূরি
জন্ম জন্মান্তর ধরে কতো গল্প কথা লেখা আছে
সুদূর প্রস্তর পৃথিবীর পথ দেখি পার হয়ে
তোমার আমার নাতি নাতনীদের থেকে ছোট কুঁড়ি
অযুত বসন্ত পরে গোলাপের অনন্ত বাগানে
জন্ম থেকে মৃত্যু আর মৃত্যু থেকে জন্মেরও পরে

আকাঙ্ক্ষার মৃত্যু হলে অন্য আকাঙ্ক্ষারা খেকে যায়
অযুত বসন্ত পরে গোলাপের অনন্ত বাগানে


{ নাম – নেই ( তিন # টুকরো # দৃশ্য )}

যে শৈশব হত্যাদৃশ্য লুঠপাট ধর্ষিতার দেহ
বারবার আমাকে দেখিয়েছে বর্ষা ভেজা কাদা মাঠ
কুৎসিত ভাবে হেসে উঠেছে তাকিয়ে আমার দিকে
একক মূকাভিনয় কিংবা নেচে ওঠা অঙ্গভঙ্গি
পাথরের নীরবতা ঘেরা এক সুদীর্ঘ অন্ধকার
লোহার পাতে মোড়ানো বুট বুলড্রজার চালিয়ে
হত্যা করলো সোনালি ক্ষেত, হাসি ভরা তৃণভূমি
নেচে ওঠা ফুলের বাগান বিদ্যমান আজও মনে

বিভিন্ন বয়সের মহিলারা তাদের আসার অপেক্ষায় আছে যাঁরা তাদের নিয়ে যাবে। অপেক্ষা করার সময়, তারা অনেক দিন ধরে নিজেদের বিধবা ভাবতে থাকে আর চোখের এমন দৃষ্টি যেন তারা পাথরের সাথে কথা বলে। পাইন বনের থেকে দূরে, মরূদ্যানের থেকে দূরে, সমুদ্রের থেকে দূরে, জলপ্রপাতের কাছাকাছি যেখানে তারা তাদের শিশুদের সাঁতার শিখিয়েছিলেন, ভালভাবে, স্রোতের প্রতিকূলে। তাদের পুরো জীবন, চাষের মাঠের আলপথে, দিল্লীর শাহিনবাগে, সমগ্র পৃথিবীর ক্ষেত-খামারে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে প্রানের গান গাইতে শুনেছি। এবার ফিরে যাও, সব সম্ভাব্য সম্ভাব্যতা কে নিয়ে ফিরে যাও। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে মূল আকৃতিকে প্রত্যাবর্তন করো। ভ্রূণ যা মাতৃগর্ভের গর্ভ, এই দিগন্তের প্রশ্নবিদ্ধ লাইনের উপর যা নির্ভর করে, যা প্রাচীন গাছের শাখাগুলির অভ্যন্তরে পৌঁছে যায়। আশ্রয় নেয় রূপকের শরীরে – একটা সুদীর্ঘ আলোকহীন স্যাঁতস্যাঁতে

অন্ধকার এখন, ট্র্যাফিক লাইট সুস্পষ্ট অতি
অন্ধকার শহর যেখানে প্রতিটি মানুষ স্তব্ধ
ফুটপাথ ধরে ভেড়া ধীরে হাঁটতে থাকে সঙ্গে রাত
ফেব্রুয়ারি , চাঁদের আলোয় পুড়ে ছাই হয়ে যায়
দিনগুলো অন্ধকার সমুদ্রের উপর বিছিয়ে
বায়ু অতি দ্রুতগামী আন্দোলনের নিশান ওড়ে
অন্ধকার এখন, ট্র্যাফিক লাইট সুস্পষ্ট লাল
রক্তাক্ত বিপ্লবের দেহ রাস্তায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে

বাস্তবিক বাগানের ফুল এখনও ফোটে শুভ্র থানের আঁচলে
আমাদের বাড়ির সামনের দ্রুত বেড়ে ওঠা আগাছা এখনও সবুজ
গ্রীষ্মের সূর্যের বিশুষ্ক এবং উষ্ণ রশ্মি; অশ্রু শুকিয়ে যায় চোখের কোলে
আমার সময়, হেমন্তের পড়ে থাকা শেষ বিকেল হাত নাড়ে
এবং আমার চুলে ধূসরতা দিয়েছে দেখা
যদিও স্পন্দিত হৃদয় তরুণ বসন্তের মতো উদ্দাম মাতাল

এই জীবন সংক্ষিপ্ত, তবু হয় তাড়াতাড়ি গোলাপী গোলাপ
ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। আমার বুকের উপর মাথা রাখো, বিশ্রাম নাও
আর হাঁটু মুড়ে বসো না মধ্যরাতে থানের আঁচল পেতে, সমাধিতে
যেতে পারি এবং যাবো একাকী মৃত্যুর অন্ধকার গহ্বরে
তবু তোমার জন্য আমার ক্ষরিত হৃদয় আবদ্ধ, যা এখনো বহন করে
সবকিছুর পরেও সর্বত্র, এই প্রেম এই নৈশব্দের উচ্চারণ

হৃদয় সমুদ্র থেকে শব্দ প্রবাহিত মহাবিশ্বে
যে শব্দ ধমনী শিরা পথে হৃদয় অন্তরে সূক্ষ্ম ছুঁয়ে যায়
যদি শুধুমাত্র সঙ্গোপনে তোমার হৃদয় স্পর্শ করে থাকি,
হৃদয় সমুদ্র থেকে যদি হৃদয় সমুদ্রে আছড়ে গিয়ে পরি
দীর্ঘায়িত হয় বাঁশি চুম্বনে চুম্বনে
সে বাঁশি তো তুমি বন্ধু হৃদয় অন্তর হতে হৃদয় ব্রহ্মাণ্ডে

একটা বিষন্ন উপকূলে, নতুন রাতে মুখোমুখি বিষন্ন

সমুদ্র হৃদয়ের শব্দ ছড়িয়ে পড়ে,
এবং ধ্বংসাবশেষ তার বিষন্ন নীল ব্যানার
তার অর্ধশায়িত ছায়া, বিষন্ন, সমুদ্রের বিলাপ
গভীর হৃদয়ের বিচ্ছুরিত রক্ত
সেই অবিশ্রান্ত লাল জলের এটা শব্দ হবে, ছায়া শব্দ,
নিঃসঙ্গ, মৃত্যুর মতো

একটি নিঃসঙ্গ উপকূলে, নতুন রাতে মুখোমুখি

দিন আসে, বয়ে যায় অনন্তের দিকে
দূরের আলোকবর্ষ হতে বহু দূরে
আমরা ও চলেছি কোথা তার খোঁজ কেইবা রাখে বলো!
এই যে দেহে সুখ, এই যে দেহে দুঃখ, ছন্দ আছে বাঁধা
দেহের মাটিতে গ’ড়ে তার দেহে প্রাণ দিলে যদি
তোমা প্রদক্ষিণ শেষে যদি দেহ পঞ্চভূতে মাটি
তবে কোন গর্ভ পথ পার হই জন্ম জন্ম ধরে?
গর্ভে তবে আর কোন সত্য আছে আলোর ওপারে?

যেমন নিখুঁত সৃষ্টি বৃদ্ধি পেতে পারে
তোমার চরণে করতলে উজ্জ্বল মায়া আলোক
সসীম জিনিষ কি অসম্পূর্ণ হন?
পুনরাবৃত্তি কি একই ভাবে চলতেই থাকে, অনন্ত?

যারা তোমার সংস্রব থেকে দূরে , হৃদয় সাম্রাজ্য থেকে দূরে
এই জীবনই বা আর কতটুকু যে গ্রহণ করবে কিংবা দান!
যখন পায়ের তলায় তোমার সৃষ্টির হামাগুড়ি দেয়
তুমি একা সকলের মাঝে; এদিকে ওদিকে চতুর্দিকে
আকাশ পাতাল কাঁপিয়ে নতজানু হয়ে ডেকেছো ঈশ্বর ঈশ্বর

হাড় মাশে গড়া ভীত ঈশ্বর কম্পিত কণ্ঠে বলছেন
যে দীর্ঘ চাঁদ তারাহীন শান্ত প্রকৃতির শরীর জুড়ে ছায়া
যে ঘূর্ণি বাতাস অন্ধকারকে টানে কেন্দ্রের গতিতে প্রচণ্ড
সে এক, শত দেহ, সহস্র মন, অযুত আত্মা, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড


পঞ্চ শঙ্খের তরঙ্গ ব্যাপী তোমার বিস্তার
বিন্দুর সৃষ্টির রূপ তার রসাতলে ডুবে আত্মা
স্বর্গীয় পৃথিবী দেখি দীর্ঘ পথ …… ভাসমান অনন্ত
লক্ষ লক্ষ স্বর্গ আর তার গম্বুজ শক্তির ধ্বজা
নিঃসঙ্গ নির্জনতার কেন্দ্র মাঝে ধ্যানমগ্ন একাকী ঈশ্বর

অথবা সেখানে যদি পোড়ে হৃদয় আগুনে
তোমার উচ্চতা কার দেখা? আর কতো, কেইবা জানে?
গভীর আবেগ যায় রসাতলে ডুবে,
কেন, তারপর, এই বরফতুল্য আমাকে দেখো,
সুখ এবং সুখ ব্যাস তারপর তুমি কেবল শুধুই ঈশ্বরের?

কেন জ্বরাক্রান্ত দেহে বাঁচে উদ্দীপিত প্রাণের আনন্দ
কাঠে বিদ্ধ লৌহদণ্ড জানে পৃথিবীর মাটি কত যন্ত্রণা কাতর
পূর্বে সন্তান ছিলেন দৃঢ় সংযমের পর এজন্মের পিতা
আমাকে কফিন দাও, কবরের জন্য সাড়ে তিন হাত জমি
গভীর নীরবতা ভেঙে নেমে আসেন ঈশ্বর একাকী

আমি একের পর এক, তোমরা সবাই কানে ফিসফিস করার চেষ্টা করে,
আমার সজাগ কান আর চোখে ক্ষণস্থায়ী আলো

যার জন্য আমি জন্মগ্রহণ করেছি পরিতক্ত মাছের বাজারে
সজাগ কান আর চোখে ক্ষণস্থায়ী আলো
তবু সে স্বপ্নে কোন পাপ ছিলোনা

যার জন্য রক্তে গভীরভাবে বেঁচে থাকে রক্তাক্ত চুম্বনের অপেক্ষা
একটি চমৎকার রামধনু, প্রত্যুষ যার সাক্ষী
জীবন্ত মানুষ যে আছে জীবনের ওপারে
যার জন্য অন্তর হতে উৎসারিত বাক্য অসমাপ্ত রেখেছি

১০

তামাকের গন্ধ আমি পাই ফুসফুসে
ব্যথা তার অন্তর্নিহিত আমেজ
তোমাদের শ্বাস বাহিত বাতাসে আঁশটে গন্ধ
মিষ্টি নির্যাতনের গন্ধ
তবু তোমরা যদি আমাকে নেশাগ্রস্থ ভাবো
তবে তোমার কাছ থেকে উল্লাস চেয়ে নেবো

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (8)
  • comment-avatar
    Sulekha Sarkar 4 years

    প্রতিটি কবিতা ভালো লাগল।কবিকে শুভেচ্ছা। আন্তরিক অভিনন্দন আবহমান পত্রিকাকে।

  • comment-avatar
    Rituparna Acharya 4 years

    Bhishon bhishon bhalo laglo kobita gulo. Sir er lekha gulo prokasher jonno Abahaman Patrika ke abhinandan.

  • comment-avatar
    তনয়া চৌধুরী 4 years

    ভীষণ ভালো লাগলো কবিতাগুলো পড়ে। কবিকে ও আবহমান পত্রিকাকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

  • comment-avatar
    মন্দিরা গাঙ্গুলী 4 years

    সব কবিতা অপূর্ব

  • comment-avatar
    তথাগত মজুমদার 4 years

    সব কবিতাই অনবদ্য

  • comment-avatar
    প্রত্যুষ ভাদুড়ি 4 years

    প্রতিটি কবিতাই উচ্চ মার্গের লেখা। আর ৮ নম্বর কবিতাটা তো সবকিছু বলার ঊর্ধ্বে। কবিকে ও পত্রিকাকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন।

  • comment-avatar
    তনয়া চৌধুরী 4 years

    প্রথম কবিতাটাই তো ছিটকে দেওয়া কবিতা। সত্যিই অন্য ধারার লেখা লেখেন এই মানুষটা, অনবদ্য সব কবিতা।

  • comment-avatar
    অনন্যা মিত্র 4 years

    প্রথম কবিতাটা তো পরিক্রমার অরিন্দম মুখোপাধ্যায় কে মনে করিয়ে দিলো। এছাড়া ২, ৭ ও ৮ আমার কাছে ” এক, শত দেহ, সহস্র মন, অযুত আত্মা, সমগ্র ব্রহ্মাণ্ড”। দীর্ঘদিন বাদে আপনাকে এই ভাবে পেলাম তার জন্য আবহমান পত্রিকাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes