অনির্বাণ চৌধুরীর দীর্ঘ কবিতা

অনির্বাণ চৌধুরীর দীর্ঘ কবিতা

হিটওয়েভ

প্রচণ্ড গরমে বসে ছিলাম গড়িয়াহাট ব্রীজের তলায়
যেখানে সারাদিন একদল মানুষ
একসাথে বসে
চার চৌকো খোপ কাটা বোর্ডে দলবেঁধে দাবা খেলে!
তার ঠিক পাশেই যে পাবলিক টয়লেট
সেখান থেকে হাত মুখ ধুয়ে বেড়িয়ে এসে
তীব্র গরমে অল্প একটু জিরিয়ে নেব বলে
কিছুক্ষণ বসে ছিলাম ওখানে;
জুন মাসের তীব্র হিটওয়েভ, গল্ফগ্রিন মিনির কণ্ডাক্টরের ডাক,
ঘামে ভিজে ঢোল হয়ে যাওয়া পকেটের রুমাল, এবং
চারপাশের অজস্র কিছু বিরক্ত মানুষের মুখ
এসবের ভিতর খেয়ালই করি নি –
কখন যেন দাবার বোর্ড সব ফাঁকা হয়ে গেছে?
গরমে হাঁসফাঁস,
বোর্ড ফাঁকা,
সাজানো ঘুঁটি,
রাজা আর মন্ত্রীর যুদ্ধ, বিপক্ষের চাল, বোড়ের নির্মম আত্মত্যাগ
এবং শেষমেষ কিস্তিমাত!
এসব আজকাল বড়ো বেশী যেন একঘেয়ে হয়ে গেছে
বোর্ড তাই ফাঁকা, এখন আর কেউ বসে নেই খেলার মত,
এদিকে যে সত্যি কারের খেলা বাকি আছে এখনও;
তার থেকে যদি কাউকে আরও দুটো চারটে বেশী খিস্তি দিই,
জানি, সে জন্য এসে এখন আর কেউ কোনরকম আপত্তি করবে না!

কপালের ঘাম মুছে এসব ভাবতে ভাবতে,
যে মুহূর্তে সেখান থেকে উঠতে যাব,
ঠিক তখনই চোখে পড়ল
একটু দূরে ফুটপাথের ওপর বসে থাকা –
চারটে ল্যাংটো বাচ্চার দিকে!
গোল হয়ে এক জায়গায় ছায়ার তলায়,
একটা অর্ধেক আলু আর তাতে একটা শুকনো কাঠি গুঁজে
চারজনে মিলে,
এই তীব্র গরমেও –
এক অদ্ভুত হাসিমুখে নিজেদের মধ্যে, আইসক্রিম আইসক্রিম খেলা খেলছে!
একজনের মুখ থেকে বার করে গুঁজে দিচ্ছে –
আরেক জনের মুখে;
ওদের ওই অদ্ভুত হাসি মুখ যেন আমার ঘাম জবজবে রুমাল, গল্ফগ্রিন মিনির কণ্ডাক্টার,
অজস্র সেইসব বিরক্ত মানুষগুলোর মুখ
এমন কি –
জুন মাসের তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কীকরণ,
সবাইকে, একসাথে যেন সজোরে একটা বিরাশি সিক্কার চড় কষালো!

কিছুক্ষণ তাই আরও দাঁড়িয়ে গেলাম সেখানে;
রাস্তা পেড়িয়ে কোনদিকে যে বাস ধরার কথা ছিল?
দেখতে পেলাম, দূরে গোলপার্ক মিশনের বাড়িটা,
ওখানেই তো আজ যাবার কথা…
বিকেলে কোন একটা বেশ কনফারেন্স শুনবো যেন?…
ঈশ্বর চেতনা, মহারাজের বাণী, পবিত্র স্তোত্রপাঠ;
হরি ওম!
অসহ্য গরমে দৈনিক হয়রানি
তবুও জানি,
গুরুদেব কী ঈশ্বর নয় বরং আজ আমারই দেরী হয়ে গেছে অনেকটা।
হয়তো তাদেরও –
যারা মাঝ রাতে ভয় দেখেন
মাথার ওপর ব্রীজ ভেঙে পড়ার!
পা ছুঁয়ে আশীর্বাদ নিয়ে যারা রোজ কনফারেন্স শেষে বেড়িয়ে আসেন,
আর মিশনের বড়ো দরজার সামনে স্বেচ্ছায় রাস্তা ছেড়ে দেন
যাতে –
মহারাজ স্বয়ং ঠিক সময় মত ফিরে যেতে পারেন
অনুদানের ল্যাণ্ড রোভার চড়ে!
রাস্তা আর বাসের নম্বর গুলিয়ে ফেলা আমি
গড়িয়াহাট ব্রীজের তলায় তখনও
ফ্যালফ্যাল করে এরকমই ঘামে ভেজা বিরক্ত মুখে
তাকিয়ে একটানা দেখে চলি –
আমার ‘দেশ, যাকে ‘মা’ বলে স্কুলের টেক্সটবুকে জেনেছিলাম কোন একসময়,
তার সন্তানেরা (হয়তো তারা আমারই বৈমাত্রেয় কোন ভাইবোন?)
কী সুন্দর আলুরূপী আইসক্রিম মুখে নিয়ে
অদ্ভুত ব্যাঙ্গের হাসি হাসছে আমার এবং
যারা রাস্তা ছেড়ে দেন, তাদের সকলের উদ্দেশ্যে;
আমার মায়ের সংসারের উনুনের ধোঁয়া পার্কিংয়ে পাশাপশি দাঁড়ানো
বিএমডব্লিউ আর মারুতি গাড়ির গায়ে
এঁকে দিচ্ছে ওদের চারজনের মত আমারও কোন গোপন জন্মদাগ!
ওরা, অর্থাৎ আমার বৈমাত্রেয় ভাইবোন বা আমার ‘দেশ’ নামী মায়ের সন্তানেরা
ওরা এভাবেই একটু একটু করে একদিন
আমার মত বয়সে বড় হোক!
না হলে, আমাকে এবং তাদেরকেও (অর্থাৎ যারা রাস্তা ছেড়ে দেন, ভয় দেখেন ব্রীজ ভেঙে পড়ার!)
পিছনে ফেলে, বাড়তে বাড়তে –
একদিন এই মহানগর, রাজ্য, এমন কি দেশেরও (যাকে টেক্সটবুকে ‘মা’ বলে ছোটবেলায় শিখেছিলাম) –
সব সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে যাক ব্রীজের ওপর পর্যন্ত!
গাড়ির চাকায় পিষ্টে গেলেও,
রাস্তা থেকে ঠিক অন্য কেউ এসে কুড়িয়ে নেবে ওদের আলু আইসক্রিমের চুষিকাঠি!

বরং আরও কিছুক্ষণ দাবার বোর্ডের গজ আর নৌকার মত
আমি ও তারা
সকলে মিলে অপেক্ষা করে যাই,
বাস্তবের মহারাজেরা কখন কনফারেন্স শেষে বেড়িয়ে আসবেন?
রাজা আর মন্ত্রীদের আসল কাটাকুটি খেলা কখন শুরু হবে?
প্রাণ যাবে বোড়ের, শেষমেশ তবে কে দেবে কিস্তিমাত?
তারপরেও যদি ওনারা সকলে মিলে আমাদের এই বিরক্ত মুখগুলোতে
ওদের চারজনের মতোই অদ্ভুত হাসি ফোটাতে পারেন,
তবে –
ক্ষতি কী?

(সম্পূর্ণ সামাজিক এবং অরাজনৈতিক)

লেখাটি যদি ভালো লাগে, আবহমানে নিজের ইচ্ছেমতো ফোন পের মাধ্যমে
অবদান রাখতে পারেন, এই কিউ আর কোড স্ক্যান করে। ফোন পে করুন 9051781537
অথবা স্ক্যান করুন পেমেন্টের লিংক

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes