‘অতিকায় অস্তিত্ববাচক’ কাব্যগ্রন্থের একটি কোয়ান্টাম ক্রিটিসিজম <br />  মাসুদ শাওন

‘অতিকায় অস্তিত্ববাচক’ কাব্যগ্রন্থের একটি কোয়ান্টাম ক্রিটিসিজম
মাসুদ শাওন

কবিতা ও কবির জন্মের সময়ই আয়ু নির্দিষ্ট হয়ে যায়। এর আগে যারা ‘শব্দের বিহ্বল ডানা’, ‘শরীরপরব’ ও ‘আয়াত’ পড়েছেন শুভম চক্রবর্তীর কবি-প্রতিভার সাক্ষর টের পেয়েছেন। কেবল লিখে যেতে হবে বলেই লেখা— তাঁর ধাত নয়। ‘শরীরপরব’ থেকেই কবির মন্ময়তা ও কাব্যমুর্ছনার জোর আমরা টের পেয়েছি। ছন্দ অলঙ্কারের অভিনবত্ব মুগ্ধ করেছে আমাদের। আর ‘আয়াত’-এ এসে আমরা পেয়েছি একজন কবির সবচেয়ে প্রবল ক্ষমতার পরিচয়। নিজেকে ভেঙে ফেলার ক্ষমতা। অনেক লিখিয়ের জীবন পার হয়ে যায় নিজের মোহে। নিজেকে ভাঙার চেষ্টায় কবিত্ব শক্তিকেই ভেঙে চুরমার করে ফেলে অনেকে। শুভম চক্রবর্তী সেই দলের নন।

তাঁর বই অনন্যতার দাবি রাখে এ দিক থেকে। এবং এ পেরিয়ে যাওয়া, ভাঙার মধ্যে আসলে কেবল বাহ্যিক খোলস ত্যাগ নেই;— আছে হৃদয়ের, কাব্যোক্তির অভিযোজনও। ‘অতিকায় অস্তিত্ববাচক’ তাঁর সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থ। ষোলো পাতার ছোট্ট সংকলন।

বৈদিক রণন আর চার্বাক বিস্ময়ে রচিত তাঁর এই বইয়ের কবিতাগুলি। যেহেতু বিস্ময় ফুরিয়ে গেলে, বোটানিক্যাল গার্ডেনের বটগাছে কচিপাতা গজানোও থেমে যায়; রণন সমাপ্ত হলে কাহারবাকে মনে হয় ক্যানেস্তারা।

“মাটিরা তামাটে আর মাটিরা কষাটে আর মাটিরাই স্তব। শবের কাঁদব থেকে খুবলে তোলা মারাত্মক শব। আমার ভিতর বাজে অলক্তক রাগের দখিনা। যেকোনো প্রসন্ন মৃত্যু ডাল খুঁজে চড়ে বসে আছে। এসবই আমার জানা-অজানার বহু পরপারে, আরাম আর সবুজাভ কুয়াশা চিরেছে। অতি নৈর্ব্যক্তিক আলো ব্যক্তিগত দুখের দামামা খনন সমাপ্ত হলে খাল আর খাবলা খাবলা মাটি।”

অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন, সংশয় আর দ্বিধা চিরকালীন। তবু মনে হয়, চরম নাস্তি, অনস্তিত্ব থেকে যাত্রা শুরু করছেন কবি। অস্তিবাদী ক্রাইসিস ফুটিয়ে তুলছে প্যারানয়িক সেলিব্রেশন যেন। অচিৎ বলার চেয়ে বি-চিৎ কথাটি ব্যবহার করতেই আমি শ্রেয় বোধ করব তাঁর অস্তিত্বের কেন্দ্রকে বোঝাতে।

সমগ্র বইটি জুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আমরা দেখতে পারবো রয়েছে অ্যাবসার্ডিটি। মিনিংলেসনেস আর সমাপ্তি বা অবসানের চলমান বৃত্তীয় প্রক্রিয়া।

“কী খুঁজি জানি না আমি কেউ জানে এসব কথায় হো হো শব্দে মাত্রাছাড়া কলস্বর কুলকুচি করি।”

রয়েছে অ্যাক্সিডেন্টাল যথেচ্ছাচারী উদ্দেশ্যবাদী আমাদের পৃথিবীর মানে,

অস্তিত্ব কেবল কণা কিংবা তরঙ্গ নয়, সে কঠিনও নয়, তরলও নয়। তার আছে ন্যূনমান-দ্বৈধতা (Quantum Duality)। নিজেকে পৃথক নির্মোহ বিজনে রেখেও সে আসলে যুক্ত সমান্তরাল এবং বৃহৎ দুই অস্তিত্বের সাথে। বিজড়ন (Entanglement) আর তরঙ্গসত্যও (Wave Realism) তার থাকা না-থাকার মতো বেড়াল। কারণ, আমাদের দেখার বাইরে সেই বেড়ালের অস্তিত্ব বিনস্তিত্ব নেই।
“গর্তের ভেতর আমি মাটি খুঁড়ি, সন্ধানপ্রয়াসী। গর্তের ওপর আমি নিদ্রাহীন সুদক্ষ প্রহরী।”

অথচ এই দ্রষ্টা স্থির চৈতন্য নয় তাঁর কবিতায়। তা— বাউলের দেহতত্ত্ব, এমাইল জোলার হেরাডিটরিও
“পৃথিবী উপুড় হয়ে ঢেলে দিয়ে গেল তার ভরা ভাম, কুচুটে কামনা।”
-এর মতো পঙক্তি।

পড়তে পড়তে কখনও আবার হঠাৎ মনে হবে, ক্রাইসিস শেষ। যেন আত্মাধীন হয়ে কোনো বৃহৎ সংযোজীর সাথে একাত্মতা। কিন্তু সে গুড়েও বালি পড়ে তাঁর জড়সত্ত্বার খননে। মনে হয় আত্মধ্বংসের মধ্যেই আত্মপরিচয়। মনে পড়বে “আত্মহত্যাই অত্বিত্বের প্রশ্নে সবচেয়ে বড় সমাধান।” যখন কবি লিখবেন—
“আমার অস্তিত্ব সেই, যে কোনো মূল্যেই যাকে খুন করবোই।”

কখনো মনে হবে যেন এই অস্তিত্ব আসলে অফলপ্রদ বাতিলের মানে খোঁজার চেষ্টা। কিংবা অশান্ত হয়ে ক্রমাগত অস্তিত্বের অস্বীকারে অস্বীকারে নতুন গজিয়ে ওঠা মায়ায় এগিয়ে যাওয়া। স্বর্গীয় প্রভুর নাম মুখে নির্ভয়ে কনসানট্রেশন ক্যাম্পের দিকে হেঁটে যাওয়া।

যেন অস্তিত্ব-সত্যের বাইরে, ব্রহ্ম ধারণার বাইরে কোথাও আবার এগিয়ে যেতে হবে Flammarion engraving এর মতো। মহাবিশ্বের শেষ দেওয়ালে ওঠে আবার তির নিক্ষেপ করতে হবে পরবর্তী দেওয়ালের বুকে
“আমার অস্তিত্ব তার সমূহ বলয় ভেঙে রক্তরাঙ ঝাঁপিয়ে পড়েছে।”

সিসিফাসের মিথের মতো ‘অতিকায় অস্তিত্ববাচক’-এর মূল উদ্দেশ্যই যেন, যেকোনো ধারণা, মতামত, বিশ্বাসকে ছেড়ে অস্বস্তি আর অশান্ত অতৃপ্তির দিকে এগিয়ে যাওয়া। তারপর স্বস্তির জন্য সামরিক মেনে নিতে ইচ্ছা করা একটা বিশ্বাস তৈরি করা এবং আবার সমূহ ভুল ভেঙে এগিয়ে যাওয়া।

সবশেষে এই গেজিয়ে তোলা ফেনিয়ে তোলা, পাওয়া বিশ্বাস নিয়ে পড়ে থেকে তাকে অযোগ্য সত্য করে তোলা। যেখানে অস্তিত্ব মানেই সংযোগ। অস্তিত্ব মানেই গুড়ো গুড়ো হয়ে যাওয়া। একটা ইকোলজিক্যাল বাঁধনে ধ্বংস আর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে অন্য কোনো অমৃতলোকে পৌঁছে যাওয়া। পিঁপড়ের সারির মুখে, মাটির ভিতরে গড়াগড়ি খাওয়া। আত্মা হয়ে যাওয়া নয়— অস্তিত্ব— আসলে অস্তিত্বের বিষয় হয়েই থেকে যাওয়া, বয়ে যাওয়া…

সিদ্ধান্ত নয়, বিশ্বাস নয়, আনন্দ হতাশা নয়;— অস্তিত্ব অতিকায় চলনবাচক এক জাড্য, যার চলা প্রজাপতি প্রভাবের (Butterfly Effect) মতো ডানায় টাইফুন জমিয়ে রাখে।

অতিকায় অস্তিত্ববাচক
প্রকাশনা– মথ
প্রকাশ সাল — ২০২১
প্রচ্ছদ– সন্তু দাস

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes