অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />   ষোড়শ পর্ব   <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
ষোড়শ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ষোড়শ পর্ব।

১৬

ভিসি হাত নাড়লেন চেয়ারে বসে। অজিত ঢুকছে সামনের দরজা দিয়ে।ওর মধ্যে একটা ব্যাপার আছে স্বীকার করতেই হবে। একটা সম্মোহনী ক্ষমতা। ঠিক কোথায় সেটা আছে, ধরা যায় না। ওর চোখে নাকি? নাকি কথাবার্তায়? ক অক্ষর গোমাংস যাকে বলে অজিত হচ্ছে তাই। কিন্তু কথাবার্তায় সেটা ধরে কার সাধ্যি। যা বলে চরম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলে। মনে হয় এটাই শেষ কথা, এর ওপর কোন কথা হয় না। আসলে এই ইউনিভার্সিটিটা ও হাতের তালুর মতো চেনে। স্ট্যাটুইট বইয়ে কী আছে, তা ওর মুখস্থ। সুপ্রতিমও অত জানেন না। অবশ্য তাঁকে অত জানতে হয় না। বিদেশের ডিগ্রি তাঁকে প্রার্থিত গ্ল্যামার দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সে তো অনেকেরই থাকে। হাওয়া বোঝার ক্ষমতাটাই এখন এই বঙ্গে আসল। সেটা কজনের আছে?বাম জমানায় আলিমুদ্দিনের ঘনিষ্ঠ সুপ্রতিম ট্রাপিজ খেলোয়াড়ের দক্ষতায় উল্টোদিকের দোলনায় উঠে পড়েছেন ঠিক। উঠে পড়েওছেন আর দুলছেন দোদুল দোলে ঝুলনার মাখো মাখো আবেগে। এটা কজন পারবে? সুপ্রতিম এ বিষয়ে একেবারেই অপ্রতিম।

কিন্তু এতসব পারলেও অজিতের রহস্যটা কোথায় ভেবে পেলেন না সুপ্রতিম দেবরায়। খুব যে দশাসই চেহারা অজিতের তা নয়। রঙ মাজা মাজা। কিন্তু ওর হাঁটাচলার আত্মবিশ্বাস ওকে আর পাঁচজনের থেকে আলাদা করে দ্যায়। ধীরেসুস্থে গদাইলশকরি চালে ও হাঁটে না, ক্ষিপ্রতা ওর সহজাত। যখন দিনে দুটো শুখনো রুটি জোটানোও কঠিন ছিল, তখনো ওর যা ওজন ছিল, এখন যখন শহরের সব পাঁচতারা হোটেলের সব খাবার খেতে পারে এবং যত ইচ্ছে খেতে পারে এবং তার জন্যে নিজের গাঁটের একটি কড়িও খসাতে হয় না, এখনো ওর ওজন প্রায় তাই । আগে জিমে যেতে পারত না, বাড়িতেই ফ্রি হ্যান্ড করত, ডাম্বেল ভাঁজত। এখন জিমে যায় নিয়মিত, পার্লারে চুল ছাঁটে, সাঁলো থেকে ফুল বডি স্পা করায়। ফিট থাকার একটা খুব সোজা তরিকা আছে অবশ্য। সাঁতার কাটা। কলকাতার দু তিনটে বড় ক্লাবের লাইফ মেম্বার অজিত। একটা তো বাড়ির কাছেই। খুব ভালো সুইমিং পুল আছে সেখানে। পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। কিন্তু ব্যায়ামের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যদি সাঁতারটাই পড়ে থাকে, তবে বেঢপ মোটা হয়ে গেলেও জিন্দেগীতে সাঁতার কাটবে না অজিত। জল তার জীবনে অমঙ্গল ডেকে এনেছে বরাবর। সেই যে ছোট বেলায় গাঁওয়ের অম্বা মাইয়ের মন্দিরের চাতালে তার পাশ থেকে উঠে তলাবে ডুবে মরতে গেছিল তার মা, ছোট্ট অসহায় পাপ্পু তার পেছন থেকে ডেকে বলেছিল ‘নেহি মা, নেহি’।
সেবার মাকে বাঁচাতে পারলেও, অনেক অনেক বছর পরে পিংকিকে বাঁচাতে পারেনি অজিত। কেন? মার বেলায় ওর মন জানতে পারলেও পিংকির বেলায় মন কিছু জানতে পারেনি কেন? কেন ও পিংকিকে একটা প্রায় আনপড়, গাওয়ার মেয়ে ভেবে নিয়েছিল, সেইসব মেয়েদের একজন, যারা, যে রুটি দ্যায়, তার কথায় উঠবে বসবে, যাদের কোন নিজস্ব চিন্তা ভাবনা নেই, মান অপমান নেই শহরের নখরাবাজ মেয়েদের মতো, সে তো ভাবতেই পারেনি একটা থাপ্পড়, সামান্য একটা থাপ্পড়কে অত ভেতর থেকে নেবে পিংকি, পিংকির মতো একটা সাধারণ মেয়ে। একটা থাপ্পড় তাকে অতখানি অপমানিত করবে, সেই রাজভবনে গেঁড়ে বসা লোকটার মতো, কথায় কথায় যার অপমান হয়। যদি জানতে পারত, তবে কি মাকে যেমনভাবে বাঁচিয়েছিল, তেমনভাবেই আটকাতে পারত না পিংকিকে? কিন্তু সেই সুযোগ সে পেল না। সেদিন সে সারারাত কামিনী ফুলের গন্ধ পেয়েছিল, মৃত্যুর গন্ধ পায়নি তো। আর সবকিছু হল সেই তলাবের জন্যে। ‘এ পাড়ায় তলাব নেই?’ এত নিরীহ একটা প্রশ্নও নিতে পারেনি অজিত। কারণ ওর চোখে বারবার ভেসে উঠছিল আঙ্গুরবালা সর্দারের মুখ, ও দেখতে পাচ্ছিল বুড়ির বডি ফুলে ঢোল হয়ে উঠেছে জল খেয়ে খেয়ে। ও দেখতে পাচ্ছিল একটা ছোট কাঁসার রেকাবে বুড়ি চারটে নাড়ু এগিয়ে দিচ্ছে তার দিকে, সঙ্গে কাঁসার গেলাসে জল। ‘এটুকু দিয়ে জল খাও বাবা। আমার নিজের হাতে বানানো। ওই যে দেখছ নারকেল গাছগুলো। কতদূর থেকে কষ্ট করে এসেছ। কিন্তু এ জমি আমি বেচতে পারব না শুনে রাখো। রোজ সন্ধেয় আমি যখন তুলসীতলায় পিদিম দেখাই, ওপর থেকে আমার স্বামী শ্বশুর, তাদের চোদ্দ পুরুষ সেই আলোটুকু পায়। ওপরে, জানো তো বাবা, নিকষ কালো অন্ধকার। ওঁরা সারাদিন একটা গুহার মধ্যে কুণ্ডলী পাকিয়ে বসে থাকেন, কি ভীষণ অন্ধকার সেই গুহা, সব আলো শুষে নেয়। সারাদিন ওঁরা বসে থাকেন এই আলোটুকুর জন্যে। আমি পিদিম দেখাই, একটা থালায় নাড়ু বাতাসা আর গেলাসে জল নিয়ে ধরি। ওঁরা জলটুকু খান। দিনান্তে এইটুকু আলো আর জল। এর থেকে ওঁদের আমি বঞ্চিত করতে পারব না বাবা’
অজিত ক্ষিপ্ত গলায় বলেছিল ‘আরে বুড়িমা, তোমার তো বালবাচ্চা নেই। তুমি চলে গেলে কে জল আলো দেবে? সেই তো পাঁচ ভূতে লুটে খাবে। তার থেকে আমাদের দিয়ে দাও। ভালো দাম পাবে। তীর্থ করে এসো। এসে দেখবে তোমার জন্যে একটা ভালো ফ্ল্যাট রেখে দিয়েছি’
কিন্তু ঘাড়বেঁকা বুড়ি শুনল না সে কথা। ফলে কী হল? বেঘোরে প্রাণটা গেল, জমিটাও বেদখল হয়ে গেল। দু চারদিন পুলিশ ফরফর করে উড়ল হেমন্ত সন্ধের শ্যামা পোকার মতো, তারপর যে কে সেই।শ্যামাপোকাগুলো যেমন কয়েক মিনিট জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, চোখে গায়ে চিড়বিড়িনি দিয়ে পটাপট মরে যায়, পুলিশও তেমনি ভ্যানিশ হয়ে গেল সিন থেকে। পার্টি এলে পুলিশের বাপেও কিছু করতে পারবে না। ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত সেটিং। কিছু লোক গাধা, এসব বোঝে না, ফালতু শোর মাচায়, এদের নিয়ে বলিউড, টলিউড হিট সিনেমা বানায়, তালিয়া তালিয়া, তারপর হয় এরা শহিদ হয়, বৌ বাচ্চাকে টাকা দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয়, কিংবা যদি লাস্ট মোমেন্টে এদের দিমাগ কি বাত্তি জ্বলে ওঠে, তো এরা প্রাইজ টাইজ নিয়ে বড় বড় পোস্টে চলে যায়, অমুক কমিটি, তমুক কমিশন আলো করে ফুটে থাকে। তখন অজিতরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। শালা সেই টোপ গিলবি, প্রথমেই গিললে এত হুজ্জুতি হত না। এরকম বোকাচোদাগুলো পুলিশে এলে কিছুদিন হেব্বি টেনশন যায় অজিতের। পুরো দলটাকে আন্ডারগ্রাউন্ড করে দিতে হয়। সে কি মুখের কথা? একজন দুজন নয়, তার তো অনেক লোক নিয়ে কারবার। কেউ জমি বাড়ির সেটিংটা ভালো বোঝে, কেউ কয়লারটা, কেউ গরু, একটু সফি সফি মালগুলো, যারা খানিকদূর পড়ালেখা করে বাড়ির অভাব কিংবা অন্য কারণে ছিটকে পড়েছে, তাদের ইউনিভার্সিটির জন্যে বেছে রাখা। এদের মধ্যে একজন মার্কেজ জগা আছে, সে অ্যাকশনে গিয়ে খুনের আগে বা পরে মার্কেজের বই পড়ে। এই মার্কেজ মালটা কে অজিত জানে না। সাহেব কেউ নির্ঘাত। বই লেখা সাহেব। অজিত ভেবে পায় না, তার লেখায় এমন কী থাকতে পারে যা অ্যাকশনের উত্তেজনার থেকেও বেশি! শালা, বই চোদাতে গিয়ে মরবি নাকি? না, এই কথাটা ঠিক মার্কেজ জগাকে মুখের ওপর বলতে পারেনি। ছেলেটার মুখে কী যেন একটা আছে, যাতে ওর সঙ্গে সহজে কথা বলা যায় না, খিস্তি করা তো দূরের কথা। মার্কেজ যখন কথা বলে, চুপ করে শুনতে ইচ্ছে করে। একবার একটা গোপন মিটিং হয়েছিল হস্টেলের একটা কেচ্ছা সামলাতে। সে, মার্কেজ আর এক-দুজন প্রেফেসর, আর হস্টেল সুপার ছিল। মার্কেজ এমন শান্ত গলায় কথা বলেছিল আর সেসব কথা অজিতের মাথার ওপর দিয়ে গেলেও ও মনে মনে স্বীকার করেছিল, হ্যাঁ এই একটা বাঘের বাচ্চা এসেছে তার দলে, যার জন্যে তাকে একদিকে গর্বিত অন্যদিকে আশংকিত হতে হবে। সত্যিই তার মনে হয়েছিল এই একটা ছেলে তার সাম্রাজ্য টলিয়ে দিতে পারে। একদিকে জোশ, অন্যদিকে ব্রেন। মেকানিকালের সিনিয়র প্রফেসর বৌধায়ন মজুমদার বলেছিলেন ‘একে কোথা থেকে জোগাড় করলে অজিত? ঠিক সময়ে জন্মালে এ তো দেশের এক নম্বর তাত্ত্বিক নেতা হত’
অজিত মার্কেজের কথায় ভেতরে ভেতরে মুগ্ধ হলেও বৌধায়নের খোলা প্রশংসা ওর যেন আঁতে ঘা মেরেছিল। ও গলায় খানিক উষ্মা মিশিয়ে বলেছিল ‘কীসব ভাট বকছেন স্যার? এইসব তত্ত্ব ফত্ত্ব নিয়ে দেশ কী করবে? ছিঁড়বে? এসব অনেক হয়েছে। এই করেই তো বাঙালি জাতটা ডুবল। তত্ব। বালের তত্ত্ব। এখন অ্যাকশন চাই, অ্যাকশন’
‘ছিঁড়বে’ শব্দটা শুনে কীরকম ছাই হয়ে গেছিল বৌধায়নের মুখ। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি, তাঁর মতো সিনিয়র প্রফেসরকে মুখের ওপর কেউ এরকম, তাও আবার একজন ক্লাস থ্রি স্টাফ, বলতে পারে। সময়টা কী পালটে গেল সত্যি সত্যি!
তিনি কী ভাবলেন তা নিয়ে অবশ্য মাথাব্যথা নেই অজিতের। তাকে অনেক বড় বড় কাজ নিয়ে মাথা ঘামাতে হয়। কোথাও কেস খেলে এতগুলো লোককে স্রেফ ভ্যানিশ করে দেওয়া কি চাড্ডিখানি কথা? বিহার থেকে যতদিন লোক আসত, ভালো ছিল। কিন্তু বাংলার তো নিজের ইন্ডাস্ট্রি লাগবে, নাকি? শিল্প চাই, শিল্প। একটা লোক শিল্প শিল্প করে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে নিজেই শিল্প হয়ে গেল। মায়া হয় লোকটার জন্যে। কোথায় যে গেল? তাকেও কি আন্ডারগ্রাউন্ড করে দিল কেউ?
লোকে খালি আলুর চপ শিল্প নিয়ে বাওয়াল করবে। সাধে কি বলে বাঙালি কাঁকড়ার জাত? কেউ কারো ভালো দেখতে পারে না। কই কেউ তো বলে না, অজিত সিং একার চেষ্টায় বাংলায় শিল্প ডেভেলপ করে ফেলল, আগে তো সুপারি মানেই বিহার থেকে আসবে। সেই ট্রেন্ড ভেঙে দিল অজিত। একা। ইয়েস। সিং ইজ কিং। সে বাঙালি ছেলেগুলোকে দিয়েই করে দেখিয়ে দিচ্ছে তো? আউটসোর্সিং কত কমে গেছে, সেসব কেউ দেখে না। এই তো ইন্ডাস্ট্রি। অজিত সিং একাই একটা ইন্ডাস্ট্রি। তার অনুপ্রেরণায় কত ছেলে বোমা বাঁধাকে সিরিয়াসলি নিয়েছে। দাদাজীর মুখে নেতাজীর গল্প শুনেছিল ছোট্ট পাপ্পু। বাঙালি তো শুধু নেতাজীর নামে মেট্রো স্টেশন বানাতে পারে, এই অব্দি তার দৌড়। তার মতো বীর হতে পারে না। ডরপোক কাঁহিকা। সেটাই করে দেখাবে অজিত। দাদাজী বলত ক্ষুদিরাম আরো কার কার যেন কথা।মাস্টারদা না কী সব নাম। বোমা বাঁধত যেন নাড়ু পাকাচ্ছে। হাসতে হাসতে ফাঁসি যেত। সবকটার নামে দেখো মেট্রো স্টেশন। নাহ, এ জাতের কোন আশা নেই। এই যে অজিত এত খাটছে, হবে নাকি ওর নামে একটা মেট্রো স্টেশন? সব বেইমান। কেউ মনেও রাখবে না।তবু বাঙ্গালির জন্যে করে যাবে অজিত। আসলে বাঙালি মেয়েগুলো পুরো মাকখন, দেখে পাগল হয়ে যায় অজিত।এই মোহরমালা, এত পড়ালিখা জানে, এত বড় পোস্টে আছে, কোন ঘ্যাম নেই। অজিতের সঙ্গে বিছানায় যখন যাবে, যেন ওর বিয়ে করা বৌ, জলটা এগিয়ে দেবে, মাথার চুলে বিলি কেটে দেবে, পুরো ফেমিলি ফেমিলি ফিলিং হয় তখন। মনে হয় এইসব ধান্দা টেনশনের লাইন, সেটিং বেটিং ছেড়ে মোহরমালার দুধে মুখ গুঁজে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দ্যায়। আর ঠিক তখন, তখন একটা ভুলে যাওয়া সুরের মতো, কার একটা মুখ মনে পড়ে। ছোট্ট একটা মেয়ে, পাপ্পুর বয়সী, ফুলছাপ ফ্রক পরা, কী মিস্টি মুখ, যেন শিউলি ফুলের মহক। ওখানেই মাটির দুটো ঘোড়া দেখেছিল অজিত। কী মিঠা মিঠা তাদের চেহারা। বাঙ্গালির ঘোড়া বাঙ্গালির মতোই নরম। শ্যামবাজারে পাঁচ মাথার মোড়ে নেতাজী যে ঘোড়াটায় চেপে আছে, তার তবু তেজ আছে।
সেই কিস্যাটা অচানক মনে পড়ে গেল অজিতের। সেই যে নেতাজী বলেছিল জ্যাকিদাকে একটা ঘোড়ার কথা ‘ওরে জ্যাকি, এই ঘোড়াটায় কতবছর ধরে চড়ে আছি, একটা নতুন ঘোড়া এনে দে।’ জ্যাকিদা যাকে নিয়ে হাজির হল, তাকে দেখে নেতাজী রেগে বোম।
‘আমি বললাম একটা ঘোড়া আনতে, তুই তো একটা গাধা নিয়ে এলি!’
এই কিস্যাটা এক থাকে, শুধু মুখ বদলে যায়। এই রাজ্যের মতো। অজিত মাঝে মাঝে ভাবে বেচারা নেতাজী কতদিন ওই বুড়ো ঘোড়াটায় চড়বে? তাঁর একটা তেজী নতুন ঘোড়া দরকার। সেটা কে দেবে তাকে? অজিত সিং দেবে। সিং ইজ কিং। কিন্তু তার আগে অনেক কাজ। এইসব তাত্ত্বিক বুলি কপচানো প্রফেসরগুলোকে সিধে করতে হবে। সব জায়গায় নিজের লোক বসাবে অজিত। এমন সব লোক, যারা দরকার হলে অ্যাকশন করতে পারবে। পুরো সেটিং। আর ওই মার্কেজ জগাকে চোখে চোখে রাখতে হবে। দরকার হলে ওকে খাল্লাশ করে দিতে হবে। ওকে ঠিক সুবিধের লাগছে না ওর। বেটার শান্ত চোখ দুটোর নিচে যেন আগুনের বাসা। কবে কোথায় লাগিয়ে ফেলবে। তবে একটাই ভরসা বাঙালি শালা হনুমানের জাত। লঙ্কা পোড়াতে গেলে নিজের লেজে আগুন লাগায়। এইজন্যে অনেক বাঙ্গালি মেয়েরা বুঝি আজকাল হনুমানজীর পূজা চড়ায়। সেটা আবার ভালো লাগে না অজিতের। বাঙালি মেয়েরা কেন অচানক হনুমানজীর পূজা করতে শুরু করল সেটা তার খোপরিতে ঢোকে না।বাঙ্গালি মেয়ের হাতের মেহেন্দিও দুচক্ষের বিষ তার।
ভিসিকে হাত নাড়তে দেখে অজিতের হেভি ফিলিং হল। সেই তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় চালায়! সিং ইজ কিং। এই মালটা তো গিরগিটি পাক্কা। পাঁড় সিপিএম ছিল। পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজের খাওয়ার বর্তনটাই পালটে ফেলল। ফরেনে পড়াশোনা করেছে, সাহেবদের মতো ইংরেজি বলে। আর এদিকে তাকে দেখো, ইংরেজির ধার ধারে না। কোনরকমে নামসই করতে পারে। তাকে দেখে সবাই পারলে উঠে দাঁড়ায়।ওই যে দেখো, মুরগি দুটো, পিকেবির ডিপার্টমেন্টের, অজিতকে দেখেই ছুটে এল ‘আমাদের ব্যাপারটা কিন্তু ঠিক করে ফেলতে হবে’ অজিত, যেন জামায় একটা পিঁপড়ে বাইছে, এমনভাবে টোকা দিয়ে ফেলে দেবার ভঙ্গিতে ওদের সরিয়ে দিল হালকা করে। পিঁপড়ে, তবে কাঠপিঁপড়ে। একটা কুটুস করে কামড়ে দিলে সারাদিন জ্বলবে। সবচেয়ে ভালো হয় ফেলে দেবার পর জুতো দিয়ে পিষে দিতে পারলে। সে আর হচ্ছে কই? এখনো একটা সূক্ষ পর্দা রাখতে হয়। সম্মান দিতে না পারলেও অসম্মানটাও সামনাসামনি করা যায় না। পড়ালিখা প্রফেসরলোগ বলে যে অজিত এদের আলাদা কোন সম্ভ্রম করে তা নয়। আসলে দাদাজীর কিছু কথা এখনো তার দিমাকে সেঁদিয়ে আছে, সে উপেক্ষা করতে পারে না। সেই যে দাদাজী বলত, দুনিয়ার সব ডাক্তার, প্রফেসর, অফসর, রাইটার সবাই বঙ্গালি। মছলি খেলে বহোত অকল হয়।যদিও দাদাজী কোনদিন মাছ খেতে পারেনি, আরও একজন মাছ খেত না, অবশ্য রেঁধে দিত তাকে। কেন যে হঠাৎ হঠাৎ তার কথা মনে পড়ে অজিতের। বেয়াক্কেলে মেয়েমানুষ। যেন মেমসাহেব, ফরেন থেকে এসেছে, একটা চড় হজম করতে পারল না। নিজের দোষেই সব হারালি। বেঁচে থাকলে ঘর জুড়ে তুইই থাকতিস। কতগুলো ফ্ল্যাট এখন অজিতের। আগে তো তারা ভাড়াবাড়িতে থাকত। চাইলে তলাবওলা একটা খামারবাড়িও করে দিতে পারত পিংকিকে, খাস মল্লিকপুরে দেখেছে সে, এই ইউনিভার্সিটির একটা পিকনিকে গিয়ে।
পাল হারামীটা আবার বলল ‘কবে বসবে সিংজী?’
যাক, সিংজী বলেছে, অজিত বললে বা ভাই বলে পিঠে হাত দিলে তার মটকা গরম হয়ে যায়। শালা, আমার মা কি তোর বাপের সঙ্গে শুয়েছিল যে ভাই ডাকবি? কপাল করে পড়ালিখা ঘরে জন্মেছিলি, তাই প্রফেসর হয়েছিস, নইলে তুই তো একটা কীড়ে মকীড়ে। কী করে ঘোষকে তাড়িয়েছিলি জানিনা? ঘোষ তো চাকরি দিয়েছিল তোকে।যে পাতায় খেলি তাকেই ছিঁড়লি শুয়োরের বাচ্চা!

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes