অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />বিয়াল্লিশতম পর্ব <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
বিয়াল্লিশতম পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

৪২

আজকাল খুব ভোরে ঘুম ভেঙে যাচ্ছে কিঞ্জলের। মার পাশ থেকে উঠে সে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে, কেন কে জানে। ঘরে আলো জ্বলা যাবে না এখন। মা অনেক রাত অব্দি কাজ করে ঘুমোয়, সাড়ে আটটার আগে ওঠে না, আলো জ্বাললে মার ঘুম নষ্ট হবে।তাহলে অন্ধকার আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কী দেখে কিঞ্জল? দেখে, ওর জীবন, কেমন ছায়া ছায়া অবয়ব হয়ে ফুটে আছে। দেখে বোঝাই যায় না, ও কে, কোথায় চলেছে, কোথা থেকেই বা আসছে। ছোট থেকেই কানে এসেছে ভবানীর কথা। তাকে সরাসরি কথা লোকটা কমই বলেছে। তখন তার মন্দিরের এই প্রতিপত্তি ছিল না, বাড়িতেই ক্লায়েন্ট আসত। তারা নিজেদের জীবন নিয়ে জেরবার, কেন তাদের জীবনে এত দুঃখ মৃত্যু, প্রবঞ্চনা, বিড়ম্বনা- জানতে চাইত ব্যাকুল হয়ে।ভবানী শাস্ত্রী তাদের বলত- সব কিছুই আগে থেকে ঠিক হয়ে আছে। কখন কী ঘটবে, সব কম্পিউটার প্রোগ্রামের মতো ছকা আছে। এটা একটা ডিভাইন ডিজাইন।
তখন তারা জানতে চাইত এই দুঃখ থেকে বাঁচার কি কোন উপায় নেই?
ভবানী তাদের বলত ক্যানসার ফার্স্ট স্টেজে ধরা পড়লে সেরে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশি। তেমনি শিশুর জন্মমুহূর্তেই তার ছক করা থাকলে পুরো জীবনটা সিনেমার মতো জানা যায়। কারো ছকে যদি লেখা থাকে তার জলের ফাঁড়া আছে, তাকে সারাজীবন নদী পুকুর সমুদ্র স্নান থেকে ঠেকিয়ে রাখতে হবে।
এই কথাটা শুনে খুব অদ্ভুত লেগেছিল কিঞ্জলের। এরকম ভাবে বাঁচা যায়? যদি যা হবার তা হবেই, তবে তা আগেভাগে জেনে লাভ কি? জীবনের থ্রিলই তো নষ্ট।সে নিজের ভবিষ্যৎ জানতে চায় না। সে মনে করে ভবিষ্যৎ বলে কিছু নেই। দেয়ার ইজ নো টুমরো। আগামীকাল একটা ইলিউশন ছাড়া কিছু নয়। ইলিউশন, আবার সলিউশন।আজ যে অংক কষেছি, কাল হচ্ছে তার সলিউশন। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করে তার চেষ্টা, প্রবণতা আর সিদ্ধান্তের ওপর আর এসবই ঠিক করে জেনেটিক ফ্যাক্টর, তার প্রতিবেশ, প্রতিপালন। বর্তমানই মুহূর্তে মুহূর্তে বদলে যাচ্ছে ভবিষ্যতে। কুমোরের ছাঁচ থেকে যেমন মাটির জিনিস তৈরি হয়। কিন্তু ওই যে সিদ্ধান্ত? সেদিন যদি বিঘ্নেশের ফ্ল্যাটে না যেত, তবে কি ওই ফাঁদে পড়তে হত তাকে?সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল? বিছানায় শুয়ে সে দেখেছিল ঘরে জলের বোতল নেই। তার তো জল খেতে হয় মুহূর্মুহু। মাঝরাতেও ঘুম ভেঙে জল খেতে হয়। তাই জলের বোতল না থাকলে আতংকেই মরে যাবে সে। জল আনতে তাকে আবার উঠতে হল। ডাইনিং টেবিলে ছিল বোতল, জল দেখেই সে গলায় ঢালে তৃষ্ণার্তের মতো। ওরা তখন ড্রয়িং রুমের মেঝেতে বসে ছিল, চারদিকে কুশন ছড়িয়ে ছিল। ড্রিংক করছিল, গল্প করছিল। ওদের দেখে কিঞ্জলের বুকে কেমন চিন চিন করে উঠেছিল। ও কেন ওদের সঙ্গে গিয়ে বসতে পারছে না? ড্রিংক না করুক, এমনি গল্পও তো করতে পারে? সে কি ওর মায়ের চেয়ার, বাবার ক্ষমতা, ওর ইগো, নাকি ওদের মধ্যে এমন কিছু আছে যা ওকে রিপেল করছে? ও অবাক হয়ে ভেবেছিল বিঘ্নেশ একা থাকলে তো এরকম মনে হয় না। বিঘ্নেশকে বেশ ভদ্র আর নম্র ছেলেই মনে হয়। ওর ভেতরে যাই থাক, ও কিঞ্জলের ওপর জোর খাটাতে পারবে না, সেই সাহস ওর নেই। প্রিডেটর টাইপ নয়। কিন্তু আজ বিঘ্নেশকেও অসহ্য লাগছে। কেমন ভাবে চাইছে ওর দিকে। একেই কি বলে মব বিহেভিয়ার সাইকোলজি? একটা মানুষ একা যেরকম থাকে, দলে পড়লে তার আচরণ পালটে যায়। দলের ব্যবহার তাকে পালটে দ্যায়, দলের লক্ষ্য তার লক্ষ্য হয়ে ওঠে। যে মানুষ শান্তশিষ্ট, সেই মারমুখী জনতার ভিড়ে মিশে বাস পোড়ায়, লোককে পেটায়, নারীধর্ষক হয়ে ওঠে? ও একদণ্ড দাঁড়িয়ে দেখেছিল বিঘ্নেশকে।
বিঘ্নেশ চোখ নাচিয়ে বলেছিল ‘উঠলি যে, কফি খাবি?’
‘না জলটা ভুলে গেছিলাম’
‘ওই তো রাখা টেবিলে,’
‘হ্যাঁ দেখেছি, খেলাম তো, নিয়ে যাচ্ছি। তোদের গজল্লা আর কতক্ষণ?’
‘এই তো, এবার রত্নদীপাকে বাড়ি ছেড়ে আসব। তুই শিওর তুই কফি খাবি না?’
কফির নামে দুর্বল হয়ে পড়েছিল কিঞ্জল। তারপর কী হয়েছিল? সে কি কফির জন্য বসে পড়েছিল ওদের মধ্যে গিয়ে? নাহ কিচ্ছু মনে নেই আর, কিচ্ছু না।
এতদিন মনে হত কিছু মনে রাখাটা খুব ফালতু জিনিস। স্মৃতি মানুষকে কেবল পেছন দিকে টানে। বিশেষ করে পুরনো সম্পর্ক বা পুরনো কোন ট্রমার স্মৃতি। সেসব তো ভুলে গেলেই ভালো। মানে মুছে দেওয়া।কিন্তু এখন ও বুঝতে পেরেছে স্মৃতি কোনদিন মোছা যায় না, চাপা দিয়ে রাখা যায় সাময়িক, কিন্তু যতই চাপা দাও, সময়ে সময়ে তা যিশুর পুনরুত্থানের মতো উঠে বসে, দাবী করে, দাও দাও, আমাকে থাকতে দাও তোমার জীবনে, আমার পুনর্বাসন দাও।
কিন্তু কিছু জিনিস তো ভোলা উচিত নয়, অতি জরুরি বিষয়গুলো। এটা কী করে ভুলে গেল সে? তাকে কি এমন কিছু খাওয়ানো হয়েছিল যাতে তার ওই সময়ের স্মৃতি লোপ পায়? রেপ ড্রাগের মতো কিছু? সেটা জলের বোতলে মেশানো ছিল? কিন্তু এখানে একটা প্রশ্ন আছে। সে যে জল খেতে উঠবেই আর ওই বোতল থেকেই জল খাবে, সেটা কীভাবে নিশ্চিত করা গেল? নাকি পুরো ব্যাপারটাই একটা চান্স ফ্যাক্টরের ওপর দাঁড়িয়ে আছে, যদি কিঞ্জল জল নিতে ওঠে, যদি সে ওয়াটার পিউরিফায়ার থেকে নিজেই জল না খেয়ে, ভরে রাখা বোতল থেকেই জল খায়। এই চান্সের প্রোবাবিলিটি বাড়াতে প্রথমেই ওর ঘর থেকে জলের বোতল সরিয়ে দেওয়া হল, তারপর এই নীল রঙের বোতলটা একদম চোখের সামনে রাখা হল, যাতে দরজা থেকে বেরিয়ে ওটাই চোখে পড়ে কিঞ্জলের। এটা যারই মাস্টারমাইন্ড হোক, সে বা তারা কিঞ্জল সম্পর্কে কয়েকটা জিনিস পরিষ্কার জানত-
-কিঞ্জলের রাতে বারবার জল লাগে, তাই ঘরে জল না থাকলে সে বোতল আনতে উঠবেই।
-নীল রঙ তার খুব প্রিয়, সে ওই বোতলটাই নেবে।
-ঘুমের ঘোরে থাকা মানুষ হাতের কাছের জল ভরা বোতল ফেলে রান্নাঘরে ওয়াটার পিউরিফায়ার থেকে জল ভরার কষ্ট করবে না।
এটা জীবনের মতোই, অগুন্তি চান্স ফ্যাক্টর সেখানে।ভিডিও গেমের মতো রাস্তায় অজস্র ফাঁদ পাতা, প্রোগ্রামিংর অসংখ্য ইফ- দেন- বাট লুপ, যেটা তুমি গিলতে পারো, বা পাশ কাটিয়ে যেতে পারো। সেদিন কিঞ্জলের জন্যে ফাঁদ পাতা হয়েছিল, যার প্রতিটাই সে গিলেছে। কিন্তু কেন?
বিঘ্নেশ পরে বলেছে ‘বিলিভ মি, ইট ওয়াস জাস্ট আ জোক। রত্নদীপা বলেছিল তোর ফিচার্স দেখতে চায় ও, তাছাড়া তোর একটা অদ্ভুত সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স আছে, যেটা ভাঙ্গা দরকার, নইলে তুইই পরে, ইন ফিউচার সমস্যায় পড়বি’
‘তাই তোরা আমাকে স্ট্রিপ অফ করে রেখে দিলি সারারাত? আমাকে কি গাণ্ডু পেয়েছিস? অ্যাম আই টু বিলিভ যে আমার সঙ্গে কিছু করা হয়নি? আর দ্যাট বিচ রত্নদীপা, ওকে তো আমি চিনি পর্যন্ত না, ও একটা মেয়ে হয়ে বলল এই কথা আর তুই আমার এতদিনের বন্ধু, তুই সেটা করলি?’
‘কিঞ্জল তুই বিশ্বাস কর, তোকে আমরা ছুঁয়ে পর্যন্ত দেখিনি’
‘শাট আপ স্কাউন্ড্রেল! না ছুঁয়ে তোরা আমাকে স্ট্রিপ অফ করলি! আর আমার ছবি তুলিস নি, সেটা আমাকে বিশ্বাস করতে হবে?’
বিঘ্নেশ হাজার বার বলেছে কোন ছবি তোলা হয়নি, এমনকি ও তাকে দেখেওনি অব্দি, যা করার ওরাই করেছে, আর এটা সে হলফ করে বলতে পারে, কোন সেক্স করা হয়নি তার সঙ্গে।
বিঘ্নেশ শেষে বলেছিল ‘কাম অন কিঞ্জল, তুই এদিকে এত নাকি প্রোগ্রেসিভ, বন্ধুদের মধ্যে কত ন্যুড পার্টি হয় জানা নেই তোর? ধরে নে না, এটাও তেমনি’
ঠাস করে চড় মেরেছিল ওকে কিঞ্জল, সাউথ সিটি মলের ফুড কোর্টে সবার সামনে চড় মেরেছিল কষিয়ে। চিৎকার করে বলেছিল ‘সেটা সবার সম্মতিতে হয়। আমাকে ড্রাগ খাইয়ে ঘুমের মধ্যে… আমি তোদের ছাড়ব না, পুলিশে দেব। আই উইল টিচ ইউ আ লেসন।’ আর কথা না বলে বেরিয়ে এসেছিল সেদিন।
লিফটের বোতাম টিপে দাঁড়িয়েছিল চুপচাপ। নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছিল। কুল, কিঞ্জল কুল। আর সেইসময়ই লিফটটা নিচ থেকে এসে দাঁড়াল। আর তার থেকে বেরিয়ে এল যারা, তাদের দেখে ওর পা মাটিতে গেঁথে গেল। সেই রাতের তিন জন। অথচ ব্যাপারটার মধ্যে তেমন অবাক হবার মতো কী আছে? বিঘ্নেশ আর এই তিন জন, এই মুহূর্তে নামগুলো মনে পড়ছে না, বেশ কিছুদিন একসঙ্গে ঘুরছে ফিরছে, ওদের মাখো মাখো জেল হচ্ছে বেশ। ওরা আজ এখানে দেখা করতেই পারে। কিন্তু কথা সেটা না, আজ কিঞ্জলের সঙ্গে দেখা করার কথা জেনেও ওদের এখানে আসতে বলেছে বিঘ্নেশ। আর সময়টাও এমন ভাবে রেখেছে, যাতে দেখা হওয়াটা এড়ানো যায় না। এতটা ইন্সেন্সিটিভ বিঘ্নেশ। যেন একটা ভোঁতা ছুরি দিয়ে খুন করার মতো, খুনও করছে, খুন হবার আগে ভিক্টিমকে নরক যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। হয়তো ওরা নিচেই ছিল, কিঞ্জল বেরিয়ে যাচ্ছে দেখেই ওদের ফোন করে দিয়েছে যাতে লিফটে ওঠা নামার মুহূর্তটা সিংক্রোনাইজ করা যায়।আর ওদের বলা আছে বলেই ওরা চোখে চোখে তাকাল না কিঞ্জলের। যেন দেখতেই পায়নি, যেন নিজেদের মধ্যে কথা বলতে খুব ব্যস্ত, এইভাবে বেরিয়ে গেল। কিন্তু রত্নদীপা নিজের রোলটা খুব বিশ্বাস জনক ভাবে করতে পারল না, তাই সে চোখের কোণ দিয়ে তাকিয়েই ফেলল কিঞ্জলের দিকে আর ওর চোখে যে হাসিটা খেলে গেল, তাতে কী ছিল? বিদ্রূপ? শয়তানি? নাকি একটা ঠান্ডা হাড় হিম করা চাউনি? কিঞ্জলের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেল। তবে তা মুহূর্তের জন্যে, ও ওদের খানিকটা এগোতে দিয়ে, খেয়াল রাখল ওরা কোন টেবিলে বসে, তারপর ও গিয়ে এমন একটা টেবিল বাছল, যাতে ওদের নজর রাখা যায়। যদিও ওদের কথা শোনা যাবে না, খুব দূরে না বসলেও। এত ছেলেমেয়ে ক্যাঁওম্যাও লাগিয়ে রেখেছে।কিন্তু ওকে ওরা দেখতে পেয়েছে এটা নিশ্চিত, আর ওদের চোখমুখ শক্ত হয়ে উঠেছে। ওর উপস্থিতিটাই ওদের স্নায়ুর ওপর চাপ ফেলছে। এখানেও একটা অদ্ভুত মব সাইকোলজি বিহেভিয়ার লক্ষ্য করল কিঞ্জল। বিঘ্নেশ যখন একা ছিল, সে বারবার ক্ষমা চাইলেও, কিছুটা তার মধ্যে একক বন্ধুত্বের নির্ভার ব্যাপারটা ছিল। কিন্তু চারজন এক সঙ্গে হতেই ওদের মধ্যে সেই রাতটা জেগে উঠেছে। ওরা চারজন একটা বিষয়েই কানেক্ট করতে পারছে, সেটা হল কিঞ্জলের সঙ্গে সেদিনের ব্যবহার। ওদের চোখেমুখে খেলে যাচ্ছে ভয়। সেই ভয়টা খুব উপভোগ করল সে। সে কেন একা যন্ত্রণা পাবে? ওরাও পাক। কিন্তু ওদের কি লেসন শেখাবে সে? পুলিশকে বলবে? কী প্রমাণ আছে তার কাছে? তার চেয়ে অজিত আংকেলকে যদি ডাকা যায়, তার দলবল নিয়ে চেহারাটা দেখিয়ে যায় যদি!
একটা ভার্জিন মোহিতো নিয়ে এল কিঞ্জল। ওদের পাশ দিয়েই গেল। যাবার সময় বুঝতে পারল ওরা উত্তেজনায়, ভয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রয়েছে। কাউন্টারের দিকে একটু এগিয়ে যেতে ও শুনতে পেল রত্নদীপার গলা ‘মালটার খুব ঘামন্ড , তবে আমরা তো কিছু করিনি। এইরকম কিছু ঘটতই, হি সেড ইটজ ইনএভিটেবল, ভবিতব্য, এই টার্মটাই ইউজ করেছিল না? তো আমরা না করলে কেউ তো করতই, ’
‘দূর ছাড় তো, কী প্রুফ আছে’
‘কিন্তু ও কেন আমাদের দেখে ফিরে এল আবার? হোয়াই? ইটস অ্যালার্মিং। ওর স্টেয়ারটা দেখেছিস। আই অ্যাম রিয়েলি স্কেয়ার্ড’
শেষ গলাটা বিঘ্নেশের।গুড। ইট প্রুভস যে ও মবের থেকে আলাদা আইডেন্টিটি রাখার কোশিশ করে যাচ্ছে। বিকজ হি নোজ হু ইজ কিঞ্জল। ওর কলকাতা বাস এক লহমায় ঘুচিয়ে দিতে পারে সে।
কিন্তু রত্নদীপা, দ্যাট বিচ কী বলল? সেই যে, হী সেড? হু ইজ হি? এর পেছনে শুধু এরা না, তার মানে আর একটা লোক আছে। সেই ওদের প্ররোচিত করেছে এমন করতে? আর কী, কী বলেছে লোকটা, যা ঘটার ঘটবেই, কেউ ঠেকাতে পারবে না? ইটজ ইনএভিটবল।ভবিতব্য। খুব খুব চেনা লাগছে কথাটা। যেন জন্মের আগে থেকেই এমনটা শুনে আসছে।
একটা গান মনে পড়ছিল, ঠিক পুরো গানটা নয়, একটুখানি, তিন চারটে শব্দ, ‘কেন এত আয়োজন, কেন এত আয়োজন’? জন্ম থেকে শুরু হয়ে যায় দৌড়। স্কুলে ভরতি, সবাইকে টপকে ফার্স্ট হবার দৌড়, তারপর কলেজ, কেরিয়ার, এমনকি সম্পর্ক রাখতেও দৌড়ঝাঁপ, এই ব্যাপারটা তো প্রচুর বন্ধুদের মধ্যে দেখেছে। একজনকে ইমপ্রেস করার জন্যে কত চাপ নিতে হয়। এমনকি সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে মানুষ ভাবে একটু চিল করবে, সেখানেও কি চাপ! ওর ছবিতে লাইক দিচ্ছে, আমারটায় দিচ্ছে না, ইনবক্সে এসে কাকুতি মিনতি আমার পোস্টটা একটু দেখো, এই ছবিটা কোথায় তুললে, ওর সঙ্গে ঘুরতে গেলে আমার সঙ্গে গেলে না। কিঞ্জল এসব পাত্তা দ্যায় না বলে, হয়তো ওকে এসব কম বলতেই সাহস পায় জনগণ, কিন্তু একেবারে তো এয়ার টাইট কামরায় থাকে না ও, ফলে চাপ নিতেই হয় নানারকম। কিন্তু কেন? কেন এত আয়োজন? সব যদি আগে থেকেই ঠিক করা থাকে? একটা মানুষ যদি আগে থেকেই জেনে যায় কী হতে চলেছে, তবে সে আদৌ কোন পা বাড়াবে কেন? সবই যদি ইনএভিটেবল?
তার ভীষণ ক্লান্ত লাগে। হে মাঘ নিশীথের কোকিল, আমাকে জাগাতে চাও কেন?
ওর মনে হল চারদিকে এই যে এত মানুষ তাদের সঙ্গী নিয়ে বসে আছে, সামনে থরে থরে সুখাদ্য আর কফি, তাদের কথা আসলে শূকরের চিৎকার ছাড়া কিছু নয়।
কিঞ্জলের হঠাৎ মনে হল জন্ম থেকেই ও একটা ফাঁদের মধ্যেই আছে, বুঝতে পারেনি ওপর থেকে ঝোলা দড়ি গুলো এত সূক্ষ আর রেশমি ছিল যে ওগুলো যে গলার ফাঁস বুঝতেই পারেনি, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, ততই তার গলায় জড়িয়ে যাচ্ছে, তার দম আটকে আসছে, অথচ, অথচ তাকে হিহি করে হেসে যেতে হচ্ছে, দাঁত কেলিয়ে হাসতে হচ্ছে, যেন কিছুই হয়নি।
এই যে তার এই অদ্ভুত সমস্যাটা, যেখানে সে পুলিশের কাছে যেতে পারছে না, আংকেলের কথা ভাবছে, আসলে, এটাও একটা ফাঁদ। তাদের সব বৈধ অধিকার আস্তে আস্তে কেড়ে নেওয়া হয়েছে, রাখা আছে শুধু একটাই অপশন, যেখানে তোমার কিছু বিশেষ বিশেষ লোকের সঙ্গে ব্যবস্থা থাকতে হবে। তারা তোমাকে চিনলে, তারা তোমার জন্য কিছু করলে তবে তোমার সমস্যা মিটবে। তোমার বাড়ির ভাড়াটে উঠবে, তোমার বাবার খুনী, তোমার বোনের ধর্ষক শাস্তি পাবে, তোমার বদলির ফাইল নড়বে, হসপিটালে বা স্কুলে তোমার অ্যাডমিশন হবে, এমনকি তোমার প্লাম্বার, রঙ মিস্ত্রি বা ইলেক্ট্রিশিয়ান গদগদ হেসে তোমার বাড়ির কাজ করে ধন্য হয়ে যাবে, পড়শি নিজের প্রতিটি প্রাইভেট পার্টিতে তোমাকে নেমন্তন্ন করবে। এই ছাতা থাকলে তুমি সবকিছুতে ডাক পাবে, নাহলে তুমি কিচ্ছু না।
কী করবে এখন কিঞ্জল? ভার্জিন মোহিতো নিয়ে ফিরছে যখন, তখন দেখতে পেল কী একটা কথায় সবাই হেসে গড়িয়ে পড়ছে। সে বুঝতে পারল ওদের হাসির তলায় আসলে লুকিয়ে আছে টেনশন। কিন্তু এতক্ষণ যে দোনামনা করছিল, তা কেটে গেল এক মুহূর্তে ওই হাসি দেখে। আক্ষরিক অর্থেই ঝাঁট জ্বলে গেল তার। টেবিলে গ্লাসটা রেখে সে ফোন লাগাল, ওদিক থেকে সেই চেনা খসখসে গলা ‘হেলো, আরে বেটির তাহলে আমাকে মনে পড়েছে, কুছ মুসিবত কেয়া?’ ওদের দিক থেকে চোখ না সরিয়ে কিঞ্জল কেটে কেটে বলল ‘একটু রগড়ে দিতে হবে। তোমার সাদা কলারের ফোর্স চাই। সাউথ সিটি মলের ফুড কোর্ট। এখুনি’

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes