অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />পর্ব ৫০<br />  তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
পর্ব ৫০
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ৫০ তম পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

৫০

আদিগন্ত সরষেক্ষেত। যেদিন সকালে এসেছিল, মুগ্ধ হয়ে দেখেছিল সর্ষেক্ষেতের রূপ। জেদিকে তাকাও, শুধু হলুদ আর হলুদ, যেন বসন্ত এসেছে।এই সর্ষেক্ষেত দেখে তাজমুলের নিজের গ্রামের কথা মনে পড়েছিল কেন কে জানে। তাদের গ্রামে কোনদিন সর্ষে চাষ হয়নি তো, দেখেইনি সে। সিনেমায় নায়ক নায়িকার গানের সিন ছাড়া এত কাছ থেকে এতখানি সর্ষে ক্ষেত দেখেনি কোনদিন। কিন্তু এবার দেখতে হল। এদিকেই কাজে পাঠিয়েছে বাপিদা।
সাউথ লাইনে এটা একটা হল্ট স্টেশন, হাতে গোণা ট্রেন দাঁড়ায়। আগে এখানে কোন স্টেশন ছিল না, লোকে বহু বছর ধরে ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে, লাইনে বসে রেল রোকো করে, চিঠি লিখে, চেল্লামেল্লি করে একটা স্টেশন আদায় করেছে। স্টেশন হবার পর জায়গাটা রাতারাতি বদলে গেল। ঠেলাগাড়িতে এগরোল চাউমিং, ফোনের দোকান, ঠান্ডা বোতল, এমনকি একটা বিউটি পার্লার পর্যন্ত। আগে যারা কলকাতা চিনত না তারা অব্দি কলকাতা চিনে গেল। মেয়েরাও রোজ ব্যাগ নিয়ে, ঘড়ি হাতে কলকাতায় ডেলি প্যাসেঞ্জারি করতে শুরু করল। সে হয়তো ব্যাগের কারখানায় কি শপিং মলে, কিংবা আয়াগিরি, কিংবা… আরে বাদ দাও না নিন্দুকেরা কত কী বলে। আর কলকাতার লোকও চিনল এ জায়গাটা। ব্যবসার গন্ধ শুঁকে শুঁকে কেউ কেউ এল। কী সব সার্ভে টার্ভে করে এখানে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খুলতে চাইল পরমেশ আগরওয়াল। তার জন্যে জমি চাই। ইস্কুল কলেজ শুনলে আগে লোকে জমি দান করে দিত, পুণ্যের কাজ বলে। কিন্তু এখন গ্রামের লোকের সরল মন কেমন তেড়া বেঁকা হয়ে গেছে। কেউ আর আগের মতো নেই। সব ভালো জিনিসকেই পেঁচিয়ে দেখে। তাদের মাথায় ঢুকেছে, নামেই কলেজ হবে, আসলে এর পেছনে থাকবে ড্রাগ আর মেয়েমানুষ নিয়ে ব্যবসা। মদের বন্যা বইবে। এমনকি কেউ কেউ বলল, মাথায় টুপি পরিয়ে তারা ছাত্র ছাত্রীর শরীর থেকে কিডনি খুলে পাচার করে দেবে। মোট কথা, যতরকমের খারাপ কাজ আছে দুনিয়ায়, সব কিছুই যে এই একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আড়ালে হবে, এ নিয়ে কারো কোন সন্দেহই রইল না। জমির যে মালিক, গোবিন্দ কাঁড়ার, ভারি ঘাঘু লোক। সে কিছুতেই জমি দেবে না। তার কথা হল, ‘আমাদের গাঁয়ের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করার দরকার হলে আমরা নিজেরাই শেখাব। তোমাদের এইসব কলেজে তো বাবুয়ানি ছাড়া কিছুই শিখবে না। এই তো আমার শালির ছেলে এরকম একটা কলেজ থেকে পাস দিল, বাড়িতে একটা ফিউজ সারাতে পারে না। হুঃ, ইঞ্জিনিয়ার না জানোয়ার সব। আর পাশ দিয়েই বা করবে কী? আমি বাজারের হালচাল বুঝিনি ভেবেছ? কোন চাকরি নেই। ওই যারা রাত জেগে জেগে বিলেতের সঙ্গে টকাটক কাজ করছে মেশিন নিয়ে, তারা ছাড়া। আর কতই বা মাইনে। এ দেকি সাহেবরা এ দেশে ছেল, ভালো ছেল। নীলের দাদন দিয়ে কত নাকি অত্যাচার করেচে শুনি। ওই যাও না, নীলকুঠি দেখতে পাবে এখনও, এখন তারা দূর থেকে আমাদের দেশ শাসন করছে। না না ওরম ফালতু পড়ালেকা করে লাভ নেই কো।যে পড়ালেকা করে সাহেবদের দাদন নিয়ে ভিন দেশে পড়ে থাকতে হয়, মরার সময় বাপ মার গালে জল দিতেও আসতে পারে না কো, সেরম পড়ালেকার কোন দরকার নেই। ওখানে আমি একটা নার্সারি করব ঠিক করেছি’
এরকম ঠ্যাঁটা লোক তাদের পথে মাঝেসাঝেই কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। সেই কাঁটা উপড়ে ফেলার তিনটে উপায় আছে।
এক তো অফারের ভাও আরও বাড়িয়ে দেওয়া, এত লোভনীয় টোপ, যে গিলতে হবেই।
দুই- এক নম্বরে কাজ না হলে চারদিকে সন্ত্রাস ফেয়লা দো। হুমকি ফোন, বাড়ির মেয়েদের পথেঘাটে হালকা করে কচলে দেওয়া, জানলা দিয়ে ঢিল বা ময়লা ফেলা।
আর এ দুটোতেও কাজ না হলে সোজা খাল্লাস। তবে এমনভাবে করতে হবে, যাতে এটা অ্যাকসিডেন্টের চেহারা পায়। লরির ধাক্কাটা সবচেয়ে ভালো। এই গ্রামের পাশ দিয়ে হাই রোড গেছে, সুতরাং সেটাই সবচে ভাল। আর নইলে বিষ বা আগুন।
তাজমুলকে এই কাজটায় লিড দেওয়া হয়েছে, কারণ সে গ্রামের ছেলে। গ্রামের রাস্তাঘাটের ভূগোল, মানুষের মনের গতিবিধি সে অন্যদের থেকে ভালো বুঝবে, এটাই ভেবেছে মাথারা। তাজমুল খুব খুশি হয়েছিল এই কাজটার দায়িত্ব পেয়ে। অনেকদিন সে ফাঁকায় যায়নি। গড়িয়ার খালপাড়ের বাইরে পা রাখেনি। সেই যে ধানক্ষেতের মধ্যে একটা চিকনি চামেলিকে চারজন মিলে রেপ আর মার্ডার করে চলে এসেছিল, তার পর আর গ্রামগঞ্জে অ্যাকশন করার সুযোগ আসেনি। একবার শুধু তাকে পটনা যেতে হয়েছিল। পটনায় নেমে আবার গাড়িতে অনেকখানি সীতাপুর। সেখান থেকে দানা আসে, তাদের সঙ্গে একটু কন্ট্র্যাক্ট রিনিউর ব্যাপার ছিল, কোয়ালিটি নিয়েও কথা বলার ছিল। সে একাই গিয়েছিল, আর বহুদিন পরে একা হতে পেরে অদ্ভুত ভালো লেগেছিল তার। হয় গড়িয়ার খালপাড়ের ওই বাড়িটা, নয়তো হালতুর দিকে একটা ফ্ল্যাটে তারা চারজন থাকে সবসময়। হালতুর ফ্ল্যাটে দুটো ঘর। একেকটায় দুজন করে থাকা, গড়িয়ার তো একটা ছোট তক্তপোষে গাদাগাদি করে থাকা, কেতোর খাওয়ার খুব বহর, সারারাত তার ধাক্কা সামলাতে হয় ওদের, ঘরের মধ্যে নিঃশ্বাস নেওয়া যায় না দুর্গন্ধে, একেক সময় মন বিদ্রোহ করে ওঠে, কেন তাকে এইভাবে থাকতে হবে, সাধারণ একটা চাকরি করলেও তো তার এর থেকে ভালভাবে বাঁচার সুযোগ হত, এখানে তার থেকে বেশি রোজগার করেও তাকে গর্তের ইঁদুরের মতো বাঁচতে হচ্ছে।এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? পটনা যাবার পথে ট্রেনে নিজেকে নিয়ে ভাবছিল তাজমুল? কুরিয়ারে যখন কাজ করত তখন বস্তিতে কষ্ট করে থাকত। এখন এত টাকা রোজগার করেও কোন উন্নতি হল না। তাহলে এ লাইন তাকে দিল কী? এর থেকে কুরিয়ার কোম্পানির কাজটা তো ভালো ছিল অনেক। তখন সপ্তায় সপ্তায় মার সঙ্গে দেখা হত, মার হাতের চালভাজা নাড়ু… কতদিন খায়নি ওসব। আজকাল খাওয়াদাওয়ার কষ্ট নেই আগের মতো, বরঞ্চ যা খাওয়া হয়, বড্ড বাড়াবাড়ি মনে হয় তাজমুলের। সপ্তার মধ্যে সাতদিনই মাংস। যেন অবস্থা ফিরেছে সেটা দেখাতে হবে মাংস খেয়ে। কিন্তু দেখাবেটা কাকে? সমাজ কোথায় তাদের? বাপিদা যদিও বলেছে আর কয়েকমাসের মধ্যেই তারা সেটল করতে পারবে, আলাদা আলাদা ফ্ল্যাটে থাকবে, বিয়ে থা করে সংসার করতে পারবে আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো, বাপিদা তাকে আড়ালে এও বলছে হাইকম্যান্ড খুবই সন্তুষ্ট তার কাজকর্মে, তারা নাকি তাকে একটা ফ্ল্যাট উপহার দেবার কথা ভাবছে।
তাজমুলের বিশ্বাস হয় না, যেন স্বপ্ন দেখছে। কলকাতার বুকে তার নিজস্ব ফ্ল্যাট, তবে সে গাঁয়ের ছেলে তো, ফ্ল্যাট তার কাছে এখনো বাড়ি নয়। তাকে তো নিজের বাড়ি করতেই হবে, সেই লেকের ধারে এখনো জমি খালি আছে নিশ্চয়, অন্য কোথাও না, সেখানেই সে তিনতলা বাড়ি হাঁকাবে, সামনে থাকবে বাগান। তবে তার আগে নিজের ফ্ল্যাট, তাও আবার কোম্পানির টাকায়, ভাবতেই পারে না সে। হ্যাঁ, বাপিদার এই কাজ তার কাছে কোম্পানিরই কাজ।কাজকারবার এতদূর ছড়িয়েছে, এত লোক তার কাছে কাজ করে যে একে কোম্পানি ছাড়া আর কীই বা বলবে সে?
নিজের ফ্ল্যাট হলে মাকে নিয়ে আসবে সবার প্রথমে। মনের মতো করে সাজাবে। মলগুলোতে গিয়ে গিয়ে ঘর সাজানোর সুন্দর সুন্দর জিনিস- বাহারি পর্দা, বসার চেয়ার, সোফা টেবিল এসব দেখে দেখে, তাছাড়া সিনেমায় নায়ক নায়িকার ঘরবাড়ির ছবি দেখে দেখে তার একটা আইডিয়া হয়েই গেছে। তবে ঘর যেমন সাজাক, খাওয়া দাওয়া হবে খুব সিম্পল। রোজ মাংস না, গাঁয়ের ছেলে সে, নানারকম ছোট মাছ খেয়েছে মার হাতে, সেগুলো খাবে আবার। মাংস খেতে না চাইলে কেতো অবাক হয়ে বলে ‘শালা মোল্লারা মাংস খেতে চায় না এই প্রথম শুনলাম। তোরা তো গরু খেয়ে ফাটিয়ে দিস’
তাজমুল ঠাস করে একটা চড় কষিয়ে দিয়েছিল কেতোর গালে। শালা বাপিদার সঙ্গে শোয় বলে যা খুশি বলবে? অন্যরা মাঝখানে পড়ে থামিয়ে না দিলে একটা দাঙ্গা বেধে যেত।
পরে তাজমুল ভেবেছে কেতোর আর কী দোষ? বেশির ভাগ লোকের ধারণাই এমন বাঁধা খাতে বয়। মুসলমান মানেই মাংস খায়, তারা শাকপাতা, মাছ খায়ই না, আরে গরিব মানুষের কোন হিন্দু মুসলমান হয় না রে শালা। বলে ভাতই জোটে না, তায় মাংস! এক একজন মানুষ যে আলাদা হয়, মানুষের যে আলাদা হবার অধিকার আছে, তা এই মাথামোটাগুলো বুঝতে পারে না। তাজমুলের রোজ মাংস খেতে ভালো লাগে না, একদমই লাগে না। মনে হয় এর মধ্যে একটা খুব বোকা বোকা ব্যাপার আছে। আর মাংস হিংস্রতা বাড়ায়। সে তো পেশাদার খুনী, রাগ আক্রোশ পুষে রাখা খুনী না। সেটা সে একজনের জন্যেই পুষে রেখেছে। তাকে একবার যদি পায়…
পটনা থেকে হাওড়া স্টেশনে নেমে তার কী যে হল। সে একটা ট্যাক্সি ধরে বলল ঝিলপাড়ে যেতে। জায়গাটা পালটে গেছে। একদম ঝকাঝক। এখানে বাড়ি করলে একদিকে মাটির স্বাদও পাবে, তার সঙ্গে আধুনিক জীবনের সবরকম সুবিধে। শপিং মল, মেট্রো, জিম, পার্লার, বড় হোটেল, আর কী চাই। মা যে কী খুশি হবে এখানে এলে।লোকটার বাড়ি থেকে একটু দূরে ট্যাক্সি দাঁড় করাল তাজমুল। সে আশা করছিল ছাদে দেখবে লোকটা বসে বই পড়ছে। কিন্তু দূর থেকে দেখল বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি। বুক ছাঁত করে উঠল তার। কে খুন করে গেল মালটাকে? তার মুখের গ্রাস কেড়ে খেল এভাবে? নাকি সুইসাইড? দূর থেকে সে বোঝার চেষ্টা করল ব্যাপারটা। মালটার বউ দাঁড়িয়ে আছে গেটে গম্ভীর মুখে। পুলিশ অফিসার বলছে ‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু কলকাতা শহর থেকে প্রচুর লোক নিখোঁজ । খুব মিস্ট্রিয়াস’
সেদিন দুপুরে সরষেক্ষেতের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবছিল তাজমুল, লোকটা কোথায় যেতে পারে। আজ রাতেই এই গোবিন্দ কাঁড়ারকে সরাবার ঠিক হয়েছে। কোন ভাবেই একে বাগে আনা যাচ্ছে না।আজকের অ্যাকশন ঠিকঠাক হবে কিনা চিন্তা হচ্ছে ওর। বহুদিন কোন টার্গেট ওকে এত ঝামেলায় ফেলেনি।
একা একা দাঁড়িয়ে সেই নিয়েই ভাবছিল তাজমুল। চারদিকে কেউ কোথাও নেই, চারদিক কী নিঝুম, হঠাৎ কে যেন ওর মুখ আর হাত বেঁধে ফেলল পেছন থেকে। তারপর বলল ‘চল’।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes