অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br /> পর্ব ২ <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
পর্ব ২
তৃষ্ণা বসাক

‘প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব।

প্রথম পর্ব পড়তে ক্লিক করুন — প্রথম পর্ব


ক্যাম্পাসের দেওয়াল ঘেঁষে স্টাফ কোয়ার্টারগুলো। হঠাৎ করে এসে পড়লে কেউ অবাক হয়ে যাবে। এদিকে যে একটা গমগমে ইউনিভার্সিটি, অন্যপাশে এইট বি-র মতো ব্যস্ত মোড়- কেউ বুঝতে পারবে না। কলাগাছ, আমগাছ, জামগাছে ঘেরা যেন দেশের বাড়ি, দেশের বাড়ি । অবশ্য এখানে যারা থাকে তাদের দেশ এত সজল শ্যামল নয়। বেশিরভাগই বিহারের শুখারুখা জায়গা থেকে এসেছে, লিট্টি আর ঠেকুয়ার সুবাস আসে পাশ দিয়ে গেলে। আবার এর পাশে সম্বর ডালের গন্ধ। এক ঘর তামিল আছে যে। বাঙালি এখানে নেই বললেই চলে। দাদাজী বলত বাঙালি কেন এখানে থাকবে? এ তো ফোর্থ ক্লাস স্টাফের কোয়ার্টার। বাঙালি আছে প্রফেসর কোয়ার্টারে। প্রফেসর, ডাক্তার, উকিল সব বাঙালি। একদিন সঙ্গে করে দেখিয়েও নিয়ে এসেছে প্রফেসরের ঘর। কী একটা কাগজ সই করাতে গেছিল ডঃ বক্সীর ঘরে। ছোট ছেলেটা জিগ্যেস করছে ‘ইনি গেলেই তো আমাকে সুঁই ফোটাবেন? আমি বাইরে দাঁড়াই দাদাজী?’ দাদাজী হাহা করে গলা ফাটিয়ে হেসে বলেছিলেন ‘ইনি বিমারি ভালো করার ডাক্তার নন, কামিয়াবির ডাক্তার। ছেলেদের পড়ালিখা করানোর জন্য এই তকমা পেয়েছেন।’ বলে বেল টিপেছিলেন সেই ডঃ বক্সীর দরজায়। ছেলেটা দেখেছিল দোতলার বারান্দা বরাবর পরপর এমন দরজা, আর দরজায় কাঠের টুকরোয় নাম লেখা, দাদাজী বলেছে ওখানে সব প্রফেসরদের নাম লেখা আছে। সে যদি বড় হয়ে বাঙালিদের মতো পড়ালিখা করে তবে তারও দরজায় এমন নিজের নাম লিখা থাকবে। দাদাজী আরও বলেছে, ‘নামের বহোত তাগত। মানুষ মরে গেলেও নাম থেকে যায়। তাই বেটা, পয়সা তো কামাতেই হবে জীবনে, কিন্তু পয়সার পেছনে বেশি ছুটিস না, কারণ পয়সা থাকে না। নাম থাকে। নাম কামাবার চেষ্টা কর’ দাদাজী এসব কথা বলছে যখন তখনই দরজা খুলে গেল। আর তার মতন, কি তার চেয়ে একটু কম বয়সী একটা মেয়ে, নীল আর গোলাপি ফুল ফুল ছাপ জামা পরা, বুকের কাছে আবার একটা হলুদ প্রজাপতি। মেয়েটার হাতে একটা খাতা আর পেন্সিল। সে মনে হয় কোন অংক করতে করতে উঠে এসেছে। তাদের বাদরিয়া গ্রামে এই বয়সী মেয়েরা এরকম জামা পরে না , তাদের হাতে এরকম খাতা পেন্সিলও থাকে না। তারা মায়ের হাতে হাতে চুলা ধরায়, দেওয়ালে ঘুঁটে দেয়, হ্যাঁ কেউ কেউ সমদাওনি গীত গায়, কেউ কেউ দেওয়ালে ছবি আঁকে। তবে সে তো তাদের গ্রামে না, পাশের গ্রাম সীতাপুরে, সেখানে একজন নামী শিল্পী থাকে নাকি, তারা দিনরাত ছবি আঁকে। কিন্তু তার মা বোন তো অমন না। মেয়েটার পেছনে তাদের ঘরের একটু দেখতে পেল সে। দেওয়াল জোড়া কাঠের পালিশ করা তাকে শুধু বই আর বই। একটা চৌকো বাক্স, সে ওর নাম জানে, টেলিভিশন, দাদাজীর ঘরেও একটা আছে, ছোট্ট। বাক্সের দুপাশে দুটো মাটির ঘোড়া। কীরকম অদ্ভুত দেখতে ঘোড়াদুটো। দেখে মনেই হচ্ছে না ওরা ছুটবে কোনদিন। সে মনে মনে ভাবল, বেশি পড়ালিখা বাড়ির ঘোড়ারা ছুটতে পারে না। হত তাদের মতো? বিহারে থাকলে কি হবে, তারা তো আসলে রাজপুত, কত লড়াই করেছে, রাজপুতরা কোনদিন লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে পালায় না। তাদের ঘোড়া সবসময় ছুটছে। আর বাঙালি আদমির ঘোড়া বাঙালির মতোই শান্ত শিষ্ট, মিঠা মিঠা। পরে অবশ্য সে দেখেছিল একটা ছুটন্ত ঘোড়া, ভিড়ে ভরা রাস্তার মাঝখানে, শ্যামবাজারের পাঁচমাথার মোড় নাকি নাম সে রাস্তার। সেই ঘোড়ার পিঠে একজন বীর যুদ্ধের পোশাক পরে বসে। তিনি নাকি বাঙালি! তাজ্জব কি বাত। সেসব অবশ্য অনেক পরে দেখবে সে। আপাতত প্রফেসরের ঘরে ছোট ছেলেটা মাটির ঘোড়া দেখছে আর অবাক হয়ে যাচ্ছে। সে তো এখানে থাকে না। সে থাকে রাজনগর ছাড়িয়ে বাদরিয়া গ্রামে। সেখানে আকাশের রঙ নীল ঠিকই কিন্তু হাওয়ায় এত মিঠাস নেই। এখানে মুখের বাত যেমন মিঠা, তেমনি মিঠা মেয়েগুলো, আর দেখা যাচ্ছে ঘোড়াগুলোও কি মিস্টি। মেয়েটা দরজা খুলে দিয়ে রিনরিনে গলায় চেঁচিয়ে উঠল ‘বাবা, সিংজী এসেছেন!’
ভেতর থেকে গম্ভীর গলায় কেউ বলল ‘বসতে বলো। আর ফাইলটা ওঁর কাছ থেকে নিয়ে আমায় দাও।’
কাঠের ছোট সোফা, তার ওপর সাদা কালো ঢাকা, কাচ বসানো ছোট ছোট কুশন। মুগ্ধ চোখে দেখছিল সে। সে মানে পাপ্পু। দাদাজী বলল ‘আও পাপ্পু। বইঠো’ বসল পাপ্পু। সুন্দর ফুলকাটা কাচের প্লেটে রসগুল্লা আর সন্দেশ এল, সঙ্গে কাচের গ্লাসে জল। তাও এমনি নয়, ট্রেতে, ট্রের ওপর আবার সুন্দর ঢাকনা। কিন্তু মেয়েটি আর এল না। যিনি এলেন, তাঁকে অনায়াসে দুর্গা পুজোর প্যান্ডেলে দুর্গা ঠাকুরের জায়গায় বসিয়ে দেওয়া যেত, যদি না তাঁর চুলগুলো ঘাড় অব্দি ছাঁটা আর বগলকাটা ব্লাউজ থাকত। মুগ্ধ হতে গিয়েও যেন আটকে যাচ্ছিল পাপ্পু। তার মা, চাচী, অনেক সাদামাটা দেখতে, মোটাও হয়ে গেছে, কিন্তু তাদেরই বেশি সুন্দর মনে হচ্ছিল তার। তবে সবচেয়ে সুন্দর সেই মেয়েটি, যাকে আর কখনো দেখতে পায়নি পাপ্পু। মহিলাটি তাদের সামনে মিস্টি আর জল রেখে একটাও কথা না বলে ভেতরে চলে গেলেন। দাদাজীর ইশারায় পাপ্পু মিস্টি খেল, কিন্তু সত্যি বলতে কি, তার একটুও খেতে ইচ্ছে করছিল না। তার মনে হচ্ছিল তারা আসায় মহিলাটি মোটেই তুষ্ট নয়, তারা যদি দরজা থেকে ফিরে যেত, তাও একরকম হত। কিন্তু সোফায় বসাতে হয়েছে বলেই হয়তো এত রাগ! কেন, সে তো সাফা জামা পরে আছে, দাদাজীও। জোর করে খেলেও পাপ্পু জিভে অসাধারণ মিস্টির স্বাদ পাচ্ছিল। তারা খেতে খেতেই মহিলা ফাইল ভেতর থেকে নিয়ে এলেন।
‘সই করে দিয়েছেন’
দাদাজী হাসি হসি মুখে বলল ‘প্রফেসরজীর তবিয়ত ভালো তো?’
মহিলা সেইরকম শক্ত মুখেই বললেন ‘ বেটার’
পাপ্পু চলে যেতে যেতে আর একবার ফিরে তাকাল। যদি দেখতে পায় একবার সেই মেয়েটিকে। না । ওর চোখে শুধু পড়ল পরদার দুলে ওঠা, আর তার নিচে দুটো ছোট্ট ছোট্ট ফরসা পা।
এর বহু বছর পরে পাপ্পু একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখেছিল পিংকির পা দুটো তার মাথার ওপর দুলছে। পৃথিবীটাই দুলতে শুরু করেছিল যেন। আগের সারা রাত বৃষ্টি পড়েছিল। তখন ওরা হালতুতে ভাড়া থাকত। বাড়িওলার আলাদা গেট। ও আর পিংকি নিজেদের মতো থাকতে পারে। ওদের দরজা একটা বাগানে খোলে। ছোট্ট বাগান। সেই বাগান পেরিয়ে গেট খুললেই রাস্তা। রাস্তা মানে পাড়ার ছোট রাস্তা। পরপর বাড়ি, ছোট বড়। দুটো মাঠও আছে খেলার। পুজোর সময় বাঁশ পড়ে মাঠে, প্যান্ডেল বাঁধা হয়। তখনই পাপ্পুর নাম ছড়াতে শুরু করেছে। সে পূর্বাচল মাঠপুকুর সার্বজনীন পুজো কমিটির অ্যাসিস্টেন্ট সেক্রেটারি। দুটো মাঠ আছে এদিকে, কিন্তু পুকুর এ পাড়ায় দেখেনি কোনদিন। পিংকি মাঝে মাঝে অভিযোগ করত, এ কেমন বঙ্গাল, যে তলাব নেই? সে হেসে বলেছিল, তলাব থাকলে আমরা কোথায় থাকতাম? তলাব বুজিয়েই তো এই বাড়ি। পিংকি কি বুঝেছিল, থাকা মানে একটা বাড়ির কথা বলেনি পাপ্পু? তার সামগ্রিক অস্তিত্বটাই তো বোজানো পুকুরের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেটা কি পিংকি বুঝতে পারেনি? সে বুঝতে পারেনি, তার স্বামীর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ফোর স্টাফের চাকরিতে এই জায়গায় এত রইস করে থাকা যায় না? ডাবল ডোর ফ্রিজ, দেওয়ালে ফ্ল্যাট টিভি, বিনা উপলক্ষ্যে শাড়ি গয়না, যখন তখন গাড়ি ভাড়া করে কালীঘাট দক্ষিণেশ্বর, রাজপুরের বিপত্তারিণী অব্দি, একবার দার্জিলিং, মাঝে মাঝেই দীঘা- কী দেয়নি সে পিংকিকে? পিংকি যদিও সীতাপুরের পাশের গাঁও ধূলিসরাইয়ের মেয়ে, কিন্তু একেবারে আনপড় গাঁওয়ার তো নয়। গ্যাস জ্বালানো থেকে মিক্সিতে বাটনা বাটা –সব শিখে নিয়েছিল, অ্যাক্রোপলিস শপিং মলে একা একাই যেত। এস্কেলেটর চড়তেও শিখে গেছিল, সে কি বোঝেনি এই সমাজে তাদের মতো লোকদের ওপরে উঠতে গেলে সিঁড়ি ব্যবহার করলে চলে না, চাই এস্কেলেটর? তাহলে পাপ্পুর দুসরা ধান্দা যদি সে জেনেও ফেলে, তাতে গলায় ফাঁস লাগানোর মতো মেয়ে নয় পিংকি। কেন সে এ কাজ করল? কেন একটা কালা ধাব্বা লাগিয়ে গেল তার জীবনে? এটা এখনো একটা রহস্য হয়ে আছে।
সেদিন মনে আছে সারারাত বৃষ্টি পড়েছিল। বাঙালি বৌ-র মতো পিংকি খিচুড়ি আর ডিমভাজি করেছিল। শরীর দিতে এসেছিল রোজকার মতো, পাপ্পুই নিতে পারেনি। সেদিন সারাদিন আঙ্গুরবালা সর্দারের জমি নিয়ে খুব চাপ গেছে। বুড়ি বহুত জিদ্দি, কিছুতেই ভিটে ছেড়ে অন্য কোথাও যাবে না। তাই ওকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। সে অবশ্য নিজে কিছু করেনি। এখানকার কাউকেই দেওয়া হয়নি সে কাজের ভার, মুঙ্গের থেকে একজনকে সুপারি দিয়ে আনা হয়েছিল। সে কাজ শেষ করে চলে গেছে জেনে নিশ্চিন্ত হয়ে খিচুড়ি খেতে বসেছিল। তবুও খুব ভালভাবে খেতে পারেনি। গাটা কেমন গুলোচ্ছিল। সব কাগজে বেরোবে, পঁচাত্তর বছরের বুড়ি পুকুরে থালা বাসন ধুতে এসে পা ফসকে জলে ডুবে মারা গেছে। কাল না, কয়েকদিন পর। কারণ দশ কাঠার ওপর পুকুরসুদ্ধু বুড়ির বাড়ির ধারে কাছে কেউ নেই। যতদিনে সবাই জানবে, ততদিন বডি পচে ঢোল। গলা টিপে মারার চিহ্ন পাওয়া যাবে না। বাইপাসের ধারে এমন একটা জমি! তবু গা গুলোচ্ছিল তার। প্রথম যেদিন কথা বলতে গেছিল, আঙ্গুরবালা কাঁসার রেকাবি করে নাড়ু আর জল দিয়েছিল। সেই স্বাদ গলায় আটকে যাচ্ছিল বারবার। খেয়ে উঠে পিংকিকে বলল অ্যাসিডের ওষুধ আছে কিছু? পিংকি ওষুধ আর জল এগিয়ে দিতে দিতে বলল, ছট পুজোয় সেই গঙ্গায় যেতে হয়। কাছাকাছি একটাও তলাব নেই। কী জায়গা! তলাব! পাপ্পুর মাথায় খেলে গেল আঙ্গুরবালার বডি ভেসে উঠেছে পুকুরে। কী যে হল, ঠাস করে চড় বসিয়ে দিল পিংকির গালে।
‘তলাব তলাব! রাতদিন এক চ্যানেল’ পিংকির সেই চোখের দৃষ্টিটা ভুলতে পারেনি আজো। তারপরও যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব করে বিছানায় শরীর দিতে এসেছিল পিংকি। সে-ই নেয়নি। কিন্তু এগুলো কি একটাও আত্মহত্যার কারণ হতে পারে?
সেদিন সারারাত ঘুমের মাঝে বৃষ্টির গন্ধ পেয়েছিল আর কামিনী ফুলের গন্ধ। কার কাছে যেন শুনেছিল পিংকি, এই ফুলের গন্ধে সাপ আসে। বারবার বলত গাছটা কেটে দেওয়ার কথা। ও অপেক্ষা করত কবে হরশৃঙ্গার ফুটবে। হরশৃঙ্গার মানে শিউলি। শিউলি মানে দুর্গাপুজো। পিংকি পুজো আসার প্রতীক্ষা করছিল। সে রাতে শিউলির গন্ধ পেয়েছিল পাপ্পু। একটা দুটো ফুটেছিল। পিংকি পায়নি। ও শুধু মৃত্যুর গন্ধ পেয়েছিল।

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes