অঘ্রানের অনুভূতিমালা-র পাণ্ডুলিপি-পাঠ ও প্রকাশিত-পাঠ– একটি তুলনামূলক আলোচনা <br /> শ্রী  তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়

অঘ্রানের অনুভূতিমালা-র পাণ্ডুলিপি-পাঠ ও প্রকাশিত-পাঠ– একটি তুলনামূলক আলোচনা
শ্রী তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’ কবিতাগ্রন্থের পাণ্ডুলিপিটি বর্তমানে ইংল্যান্ডের ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত রয়েছে। কবিতাগ্রন্থটি শ্রাবণ,১৩৮১ বঙ্গাব্দে (খ্রি.১৯৭৪) কলকাতার অরুণা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়। মোট ১৪০৬ লাইনের ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’য় ছ’টি দীর্ঘ কবিতা আছে। কবিতাগুলিকে ১,২,৩,৪,৫ ও ৬ এভাবে সংখ্যায়িত করা হয়েছে,আলাদা আলাদা কোনো নাম দেওয়া হয় নি। গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশিত হবার আগে কবিতাগুলি নানা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই বিষয়ে বিনয় নিজেই তাঁর ‘আত্মপরিচয়-প্রথম পর্ব’ প্রবন্ধে জানিয়েছেন ( দ্র. ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ ও অন্যান্য, প্রতিভাস,তৃ.স.২০১৪, সম্পদনা—শ্রী তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়) যে প্রথম কবিতাটি গৌরাঙ্গ ভৌমিক সম্পাদিত ‘অনুভব’ পত্রিকায়, দ্বিতীয় কবিতাটি নির্মাল্য আচার্য সম্পাদিত ‘এক্ষণ’ পত্রিকায়, তৃতীয় কবিতাটি জ্যোতির্ময় দত্ত সম্পাদিত ‘কলকাতা’ পত্রিকায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কবিতা দু’টি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় এবং ষষ্ঠ কবিতাটি বিমল রায়চৌধুরী সম্পাদিত ‘দৈনিক কবিতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র মূল পাণ্ডুলিপিটি বিনয় সংরক্ষণের আর্জি জানিয়ে ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এই পাণ্ডুলিপিটির একটি কপি তিনি নিশ্চিতভাবেই নিজের কাছে রেখেছিলেন যার সাহায্যে বইটির খণ্ডকবিতাগুলি পরবর্তীকালে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিনয়ের নিজের কাছে রক্ষিত পাণ্ডুলিপির কপিটির আর খোঁজ পাওয়া যায় না। পত্র-পত্রিকায় ছাপতে দেওয়ার সময়ে বিনয় হয়ত আবার কপি না–করে খণ্ডকবিতাগুলির নিজের কপিই দিয়ে দিয়েছিলেন।
‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’ গ্রন্থটি প্রকাশের সময় এটির পাণ্ডুলিপির কোনও কপি ব্যবহার করা হয় নি এবং বিনয় নিজেও এই কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলেই আমার মনে হয়। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত মূল পাণ্ডুলিপিতে দেখা যাচ্ছে যে বিনয় ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’য় “সূচিপত্র” নামে একটি অংশ রেখেছিলেন এবং গ্রন্থটি গায়ত্রী চক্রবর্তীকে উৎসর্গ করেছিলেন। প্রকাশিত ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’য় সূচিপত্র বা উৎসর্গপত্র নেই। এই বিষয়ে আমার লেখা “অঘ্রানের অনুভুতিমালা’র পাণ্ডুলিপি পরিচয়” প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বিভিন্ন পত্রিকায় ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র কবিতাগুলি সম্ভবত ১৯৬৮ সন থেকে ১৯৭০ সনের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছিল। অরুণা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হবার সময় গ্রন্থটির প্রকাশনা সংক্রান্ত কাজের দেখভাল বিনয় মজুমদার করেছিলেন কিনা জানা যায় না। কথা প্রসঙ্গে বিনয় আমাকে জানিয়েছিলেন যে দে”জ কর্তৃক প্রকাশিত তাঁর শ্রেষ্ঠ কবিতার প্রুফ তিনি নিজেই দেখেছিলেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হবার সময়ে বিনয় কবিতাগুলির প্রুফ দেখেননি বলেই মনে হয়। ‘কলকাতা’ পত্রিকার সম্পাদক জ্যোতির্ময় দত্ত আমাকে জানিয়েছেন, ‘কলকাতা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র কবিতার প্রুফ বিনয় দেখেন নি, কিছুটা তিনি নিজে দেখেছেন , বাকিটা দেখেছেন সম্ভবত সুবীর রায়চৌধুরী এবং অমিয় দেব। অমিয় দেব আমাকে জানিয়েছেন যে তিনি ‘কলকাতা’য় প্রকাশিত ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র প্রুফ দেখেছিলেন কিনা তাঁর মনে নেই। ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র পাণ্ডুলিপি-পাঠ ও অরুণা প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত-পাঠের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। দে’জ পাবলিশিং কর্তৃক প্রকাশিত বিনয় মজুমদারের শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র ৩,৪ ও ৫-নম্বর কবিতা তিনটি গৃহীত হয়েছে এবং এই তিনটি কবিতার পাঠে অরুণা সংস্করণের পাঠকেই (১৯৭৪) অনুসরণ করা হয়েছে। তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত পাঠ এবং পাণ্ডুলিপি-পাঠও সর্বত্র একরকম নয়। এই পার্থক্যগুলি কে বা কারা ঘটিয়েছেন তা কি আর কোনোদিন জানা যাবে ? আমাদের অনুমান, যে-কবিতা যে-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে, সেই কবিতা সেই পত্রিকার সম্পাদকের দ্বারাই পরিবর্তিত হয়ে থাকা সম্ভব। আমি এখানে ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র ছ’টি কবিতার পাণ্ডুলিপি-পাঠ এবং অরুণা প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম সংস্করণের পাঠের পার্থক্যগুলি, যেমনটি আমার চোখে পড়েছে, পর-পর তালিকার আকারে সাজিয়ে দিলাম ; তার সঙ্গে কোনও কোনও জায়গায় জুড়ে দিলাম প্রয়োজনীয় মন্তব্য। দে’জ পাবলিশিং কর্তৃক প্রকাশিত শ্রেষ্ঠ কবিতার পাঠকেও বর্তমান আলোচনার পরিধির মধ্যে রাখা হয়েছে । এখানে উল্লেখ করা দরকার যে ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র পাণ্ডুলিপির বানান ও বিরাম-চিহ্নের ব্যবহারের সঙ্গে অরুণা সংস্করণের বানান ও বিরাম-চিহ্নের ব্যবহারে যথেষ্ট ফারাক আছে। অরুণা সংস্করণে মূলত বুদ্ধদেব বসু ঘরানার বানান ও বিরাম-চিহ্ন ব্যবহারের রীতি অনুসৃত হয়েছে। আমার আলোচনাটিতে আমি বানান ও বিরাম-চিহ্ন ব্যবহারের পার্থক্যগুলির কিছু-কিছু উল্লেখ করেছি। নিচের তালিকায় এইকটি সংক্ষিপ্তক ব্যবহার করা হয়েছে— অ = ‘অঘ্রানের অনুভুতিমালা’, অরুণা প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত প্রথম সংস্করণ; শ্রে.ক. = বিনয় মজুমদারের শ্রেষ্ঠ কবিতা, দে’জ, ১৯৯৭,পা = পাণ্ডুলিপি-পাঠ ; ম = মন্তব্য, লা= লাইন ।
আলোচনার শুরুতেই পাঠকদের জানিয়ে রাখি, পাণ্ডুলিপিতে ‘অঘ্রান’ বানানে বিনয় ‘ণ’ ব্যবহার করেছেন, অর্থাৎ তিনি ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’ না-লিখে লিখেছেন ‘অঘ্রাণের অনুভূতিমালা’।।


কবিতা-১

সেতু চুপে শুয়ে আছে, সেতু শুয়ে তার ছায়ার উপরে ।
১.১. লা. ৩১. অ. ও প. এত বেশি অবাক যে হঠাৎ হা হ’য়ে যায়, হা ক’রে তাকায়,
ম. হাঁ অর্থাৎ মুখব্যাদান বানানে পাণ্ডুলিপিতে বিনয় চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করেন নি; বেশী-বানানে ‘ঈ’ ব্যবহার করেছেন।
১.২. লা. ৩৩. অ. এইসব অতি সত্য, বাকি সব শুধু সত্য, মিথ্যা শুধু আমি।
পা. এইসব অতিসত্য, বাকি সব শুধু সত্য, শুধু সত্য আমি।
ম. পাণ্ডুলিপির ‘শুধু সত্য আমি’ অরুণা সংস্করণে হয়েছে ‘মিথ্যা শুধু আমি’।
১.৩. লা. ৩৬. অ. ফুলের জড়িমা তবে এইবার ঝেড়ে ফেলা শ্রেয়তর হবে,
পা. ঘুমের জড়িমা তবে এইবার …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘ঘুমের জড়িমা’ অরুণা সংস্করণে হয়েছে ‘ফুলের জড়িমা’ ।
১.৪. লা. ৪৮. অ. নেচে যায়; নেচে যায়, বিহ্বলের মতো নেচে যায়
পা. নেচে যায়; নেচে যায়, নেচে যায় , বিহ্বলের মতো নেচে যায়
ম. পাণ্ডুলিপিতে ‘নেচে যায়’ রয়েছে তিন বার, অরুণা সংস্করণে রয়েছে দু’বার। মনে হয়, অসতর্কতার কারণে অরুণা সংস্করণের পাঠে ভ্রান্তি ঘটেছে। একটি ‘নেচে যায়’ বাদ যাবার ফলে অরুণা সংস্করণে লাইনটির মাত্রা সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে আঠারো।
১.৫. লা. ৫৫. অ. তাহ’লে, ও ফুল, এত– এত হাসি কী রকম ভাব—
পা. তাহ’লে, ও ফুল, এত– এত নাচ ,এত হাসি কী রকম ভাব—
ম. অসতর্কতার কারণে অরুণা সংস্করণের পাঠে পাণ্ডুলিপির ‘এত নাচ’ অংশটি বাদ চলে গেছে।
১.৬. লা. ৫৭. এবং ৬৭. পা. বিনয় ‘উঁচু’ এবং ‘ঝুঁকে’ বানানে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করেন নি। এর পরের অংশে বিনয় ‘হাঁড়ি’ এবং ‘গাঁদা’ বানানেও চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করেন নি।
১.৭. লা. ৮৩. পা. বিনয় ‘চিন্তাকারীটির’ বানান ‘চিন্তাকারিটির’ লিখেছেন।
১.৮. লা. ১৫২. অ. দুটি নাম, দেহ আর মন এক বস্তু ব’লে বড়ো ভালো লাগে
পা. দুটি নাম দেহ আর মন এক বস্তু ব’লে বড়ো ভালো লাগা
ম. পাণ্ডুলিপির ‘লাগা’ অরুণা সংস্করণে হয়েছে ‘লাগে’।
১.৯. লা. ১৫৬. অ. ভালো স্বাদ সেসবের উপকারিতার সোজা পরিমাণ ব’লে
পা. ভালো স্বাদ সেসবের উপকারিতার সোজা পরিমাপ ব’লে
ম. পাণ্ডুলিপির ‘পরিমাপ’ অরুণা সংস্করণে হয়েছে ‘পরিমাণ’।
১.১০. লা. ১৭২. অ. এরা পরে মিশে যায় নয়নতারার সাথে আকাশের তারা,
পা. এর পরে মিশে যায় নয়নতারার সাথে আকাশের তারা,
ম. প্রকাশিত পাঠে ‘এরা পরে’ নিশ্চয় ছাপার ভুল, হওয়া উচিত ‘এর পরে’। বইটির দ্বিতীয় মুদ্রণে (শ্রাবণ,১৪০৭) এই ভুল ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
১.১১.লা. ১৭৯. অ. না-হ’লে উত্তপ্ত হ’লে সকল-কিছুর থেকে তাপ বেরোত না।
পা. না-হ’লে অত্যপ্ত হ’লে …
ম. পাণ্ডুলিপিতে বিনয় ‘অত্যপ্ত’ লিখেছেন। প্রকাশিত-পাঠে শব্দটিকে পালটে সঠিকভাবেই ‘উত্তপ্ত’ করা হয়েছে। ‘অত্যপ্ত’ বলে কোনও শব্দ বাংলায় নেই।

কবিতা-২

ক্রিসেনথেমাম ফুল –- ফুলে-ফুলে একাকার ভোরের কেয়ারি
২.১. লা. ১৫. অ. অনেক সময় ধ’রে তখন এ-কেয়ারিকে মনে হবে এক
পা. অনেক সময় ধ’রে এখন এ-কেয়ারীকে মনে হবে এক
ম. পাণ্ডুলিপির ‘এখন’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘তখন’। প্রকাশিত-পাঠটিকেই গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয়। বিনয় ‘কেয়ারি’ বানান সর্বত্রই ‘কেয়ারী’ লিখেছেন।
২.২. লা. ৪৪. হয়তো বা ফুলও নেই, বিকশন আছে শুধু বিকশন আছে,
পা. হয়তো বা ফুল নেই , বিকশন আছে শুধু বিকশন আছে,
ম. পাণ্ডুলিপির ‘ফুল’ প্রকাশিত-পাঠে ‘ফুলও’ হয়েছে।
২.৩. লা. ১২২. পা. “বিরুদ্ধাচারী” বানান বিনয় লিখেছেন — “বিরুদ্ধচারী”।
বানান ও বিরাম-চিহ্নের ব্যবহারের পার্থক্যগুলি তালিকাভুক্ত করা হয় নি।
কবিতা-৩

সকল বকুল ফুল শীতকালে ফোটে, ফোটে শীতাতুর রাতে
৩.১. লা. ৫. অ. তাও ঢাকাঢাকি ক’রে এসব নরম আর গোপন বিষয়;
পা. তাও ঢাকাঢাকি ক’রে এসব নরমতম গোপন বিষয়;
ম. পাণ্ডুলিপির ‘নরমতম’ অরুণা সংস্করণে হয়েছে ‘নরম আর’।
৩.২. লা. ২৬. অ. শুধুমাত্র ভালো-ভালো, মূল্যবান জিনিসকে বেছে-বেছে নিয়ে
পা. শুধুমাত্র ভালো-ভালো দামী দামী জিনিষকে বেছে-বেছে নিয়ে
ম. পাণ্ডুলিপির ‘দামী দামী’ অরুণা সংস্করণে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে ‘মূল্যবান’।
৩.৩. লা. ৬৫. অ. এবং প. তবে বকুলের পরে আমার নিজের ছায়া, বকুলের গা-য়।
ম. পাণ্ডুলিপি , অরুণা সংস্করণ ও শ্রেষ্ঠ কবিতা– তিন জায়গাতেই লেখা হয়েছে ‘পরে’। ‘পরে’র জায়গায় ‘ ’পরে’ (অর্থাৎ উপরে) লেখা উচিত ছিল বলে মনে হয়, কেন না এখানে ‘বকুলের পরে’ মানে কি ‘বকুলের ওপরে’ নয়?
৩.৪. লা. ৬৮. অ. এবং শ্রে.ক. বকুলের আকারের মতো এক নারী আছে – শঙ্খমালা আছে,
পা. বকুলের আকারের মতো নারী আছে …
ম. অরুণা সংস্করণ এবং শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘এক’ শব্দটি যোগ করা হয়েছে। বিনয় নিশ্চিতভাবে ‘এক’ শব্দটি পাণ্ডুলিপিতে লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন। ‘এক’ শব্দটি যোগ করা না- হলে এই লাইনটিতে ছন্দপতন ঘটত।
৩.৫. লা. ১৪৪. অ. হ’তে পারে, আমাদের ডালপালা, পাতাগুলি কুঁড়িও বকুল
পা. হ’তে পারে … পাতাগুলি কুঁড়ি ও বকুল
ম. অরুণা সংস্করণে রয়েছে, ‘কুঁড়িও বকুল’। হওয়া উচিত, ‘কুঁড়ি ও বকুল’। শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘কুঁড়ি ও বকুল’ই আছে।
৩.৬. লা. ১৭৯. অ. যোগাযোগহীন তাকে একত্বের ভিত্তি ব’লে ধ’রে নিলে তবে,
পা. যোগাযোগহীনতাকে একত্বের ভিত্তি ব’লে ধ’রে…
ম. পাণ্ডুলিপিতে বিনয় লিখেছেন, ‘যোগাযোগহীনতাকে’। প্রকাশিত-পাঠে ভুল ছাপা হয়েছে, ‘যোগাযোগহীন তাকে’। শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘যোগাযোগহীনতাকে’ই আছে।
৩.৭. লা. ১৮১. অ. এবং শ্রে.ক. আলাদা -আলাদা এক হবে না ভূবক্ষে থেকে, শুয়ে,বেঁচে,উঠে
পা. আলাদা-আলাদা এক হবে না ভূবক্ষে থেকে, শুয়ে,বেঁচে,উঠে।
ম. প্রকাশিত-পাঠে ভুলবশত লাইনের শেষে পূর্ণচ্ছেদ দেওয়া হয়নি।
৩.৮. লা. ৮১ ও ৯৬. বিনয় লিখেছেন এমন দু’টি বানানের উল্লেখ করি। বিনয় লিখেছেন ‘আটোসাটো’ এবং ‘হাসফাস’। প্রকাশিত-পাঠে প্রচলিত বানান ‘আঁটোসাঁটো’ এবং ‘হাঁসফাঁস’-ই লেখা হয়েছে।
কবিতা-৪

বিশাল দুপুর বেলা চারিদিকে ফুটে আছে, ফুটে আছে আকাশে আকাশে।
৪.১. লা. ১৩. অ. এবং শ্রে.ক. খুঁজে-খুঁজে দীর্ঘ হয়ে, বড়ো হ’য়ে চ’লে যায় সুখ মনে আনবার সুখে;
পা. খুঁজে-খুঁজে দীর্ঘ হয়ে, রড হ’য়ে …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘রড হয়ে’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘বড়ো হ’য়ে’। পাণ্ডুলিপিতে বিনয় “রড” শব্দে উত্থিত পুরুষ লিঙ্গকে বোঝাতে চেয়েছেন। “অঘ্রানের অনুভূতিমালা” লেখার সময়ে তিনি মানসিকভাবে কিছুটা অসুস্থ ছিলেন। “রড” শব্দের এই ব্যবহার কবির মানসিক অসুস্থাতা প্রকাশ করে বলেই মনে হয়। এই কবিতাটি ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকায় ১৯৬৮ সনে প্রকাশিত হয়েছিল। আমার ধারণা, ‘রড’ শব্দটির অভব্যতা ঢাকতেই ‘কৃত্তিবাস’-এর সম্পাদক ‘রড’-এর বদলে ‘বড়ো’ শব্দটিকে এখানে জুড়ে দিয়েছেন।
৪.২. লা. ১৭. অ. এবং শ্রে.ক. এইখানে পাহাড়ের ভাঁজ বলা যেতে পারে, বাঁক বলা যেতে পারে, অথবা আসলে
পা. এইখান পাহাড়ের ভাঁজ …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘এইখান’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘এইখানে’।
৪.৩. লা. ২৭. পা. বিনয় ‘চূড়া’ না-লিখে লিখেছেন ‘চুড়া’।
৪.৪. লা. ৮৯. অ. এবং শ্রে.ক. পথের নিয়ম তাই ক্রমাগত আমাদের টেনে রাখে পথের নিয়মে
পা. পথের নিয়ম তাই ক্রমাগত আমাদের টেনে রাখে আমাদের পথের নিয়মে
ম. প্রকাশিত-পাঠে পাণ্ডুলিপির শেষ ‘আমাদের’-টিকে সঠিকভাবেই বাদ দেওয়া হয়েছে।
৪.৫. লা.১৪২. অ.এবং শ্রে.ক. এসে উপস্থিত তারা ভাবনা-ভাবনা ব’লে আমাদের মনে হ’তে থাকে
পা. এলে উপস্থিত তারা ভাবনা ভাবনা ব’লে …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘এলে’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘এসে’।
৪.৬. লা. ১৪৮. অ. এবং শ্রে.ক. তৃতীয়ার জ্যোছস্নায় উড়েছি অনেকবার এ-সকল নিজেই দেখেছি।
পা. তৃতীয়ার জ্যোছস্নায় অনেক অনেকবার এ-সকল নিজেই দেখেছি।
ম. পাণ্ডুলিপির ‘অনেক অনেকবার’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘উড়েছি অনেকবার’।
৪.৭. লা. ১৫৮. অ. এবং শ্রে.ক. বক্তা ও শ্রোতার মনে একই সঙ্গে ঠিক একই চলচ্চিত্র চ’লে যেতে থাকে
পা. বক্তার ও শ্রোতার মনে …
৪.৮. লা. পা. ১৬৪. পাণ্ডুলিপির এই লাইনটি অরুণা সংস্করণ এবং শ্রেষ্ঠ কবিতায় বাদ চলে গেছে—‘কেন যে এমনভাবে একসঙ্গে না মেলালে মনে হয় কিছুই বুঝি নি’।
ম. বইটির পরবর্তী সংস্করণে এই লাইনটি জুড়ে দেওয়া প্রয়োজন।
৪.৯.লা. ২০১. অ. এবং শ্রে.ক. স্বাভাবিক নড়াচড়া বা তার কিছুটা বেশি ন’ড়ে ওঠে, দোলে, ফুলে ওঠে।
পা. স্বাভাবিক নড়াচড়া যা তার …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘যা তার’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘বা তার’।
৪.১০. লা.২১৫. অ.এবং শ্রে.ক. জ’মে ন’ড়েচ’ড়ে ফেরে, ধীরে-ধীরে নড়ে-চড়ে, মনে হয় গড়াগড়ি খায়।
পা. জ’মে ন’ড়েচ’ড়ে ফেরে … নড়ে চলে, …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘নড়ে চলে’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘নড়ে-চড়ে’।
৪.১১. লা. ২১৮. অ. এবং শ্রে.ক. মেঘ প্রথমেই জমে, একেবারে ঘিরে ধরে একেবারে ঢেকে ফ্যালে মেঘে
পা. মেঘ প্রথমেই জমে … ঢেকে ফ্যালে মেঘ
ম.পাণ্ডুলিপির ‘মেঘ প্রথমেই জমে … ঢেকে ফ্যালে মেঘ’ প্রকাশিত পাঠে হয়েছে ‘মেঘ প্রথমেই জমে … ঢেকে ফ্যালে মেঘে’ ।
৪.১২. লা.২৩২. অ. বর্ষার সকল মেঘ সেই সব-কিছু ছেড়ে ঝ’রে যাবে দূরে চ’লে যাবে
পা. বর্ষার সকল মেঘ যেই সব কিছু …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘যেই সবকিছু’ অরুণা সংস্করণের -পাঠে হয়েছে ‘সেই সব-কিছু’ । শ্রেষ্ঠ কবিতায় ‘যেই সব কিছু’ই আছে।
৪.১৩. লা. ২৩৩. অ. এবং শ্রে.ক. হয়তো তখন সব কমলা রঙের হবে, অকারণে সবুজ হবে না।
পা. হয়তো তখন …সবুজ রবে না।
ম. পাণ্ডুলিপির ‘সবুজ রবে না’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘সবুজ হবে না’।
৪.১৪. লা. ২৩৯. অ. এবং শ্রে.ক. সবুজ রয়েছে, চূড়া, আসলে কমলা-রঙা হবার কথা না ?
পা. সবুজ রয়েছে , চূড়া, আসলে কমলা-রঙা হবার কথা না, চূড়া, হবার কথা না ?
ম. পাণ্ডুলিপির ৩০ মাত্রার লাইনটিকে প্রকাশিত-পাঠে ২২ মাত্রায় নামিয়ে আনা হয়েছে। পাণ্ডুলিপির শেষের ‘চূড়া, হবার কথা না’ অংশটিকে প্রকাশিত-পাঠে বাদ দেওয়া হয়েছে, হয়ত ভুল করে।
৪.১৫. লা. ২৪০. অ. এবং শ্রে.ক. কখনো ও-চূড়া কোনো জবাব দেয় নি শুনে থেকে গেছে একা চুপচাপ।
পা. কখনো ও-চূড়া কোনো জবাব দেয় নি শুধু শুনে গেছে একা চুপচাপ।
ম. পাণ্ডুলিপিতে আছে, ‘… শুধু শুনে গেছে একা চুপচাপ।’ এই অংশটি প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে, ‘শুনে থেকে গেছে একা চুপচাপ।’
৪.১৬. লা. ২৪৩. অ. এবং শ্রে.ক. চূড়ার নিচেও জমে, দু-বাড়ির মাঝখানে বরাবর জমে বহু মেঘ।
পা. চূড়ার নিচেও …মাঝখান বরাবর …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘মাঝখান বরাবর’ প্রকাশিত-পাঠে ভুলবশত হয়েছে ‘মাঝখানে বরাবর’ ।
৪.১৭. লা. ২৫৮. অ. এবং শ্রে.ক. ঘরে যদি মেঘ ঢোকে, ঢুকে চলাচল করে তবে সব-কিছু ভিজে যায়,
পা. ঘরে যদি মেঘ … তবে সব ভিজে ভিজে যায়
ম. পাণ্ডুলিপির ‘তবে সব ভিজে ভিজে যায়’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে, ‘তবে সব-কিছু ভিজে যায়’।
কবিতা-৫

কেমন মোহানা, চুপে মোহানারই মতো হ’য়ে চারিপাশে এলিয়ে রয়েছে
পাণ্ডুলিপিতে এই কবিতাটির দু’টি পাঠ রয়েছে; প্রথম পাঠটি প্রাথমিক পাঠ এবং দ্বিতীয় পাঠটি চূড়ান্ত পাঠ। নিচের তালিকাটিতে চূড়ান্ত পাঠটির সঙ্গে প্রকাশিত পাঠের পার্থক্যগুলি দেখানো হয়েছে।
এই কবিতাটি নিয়ে আলোচনার শুরুতেই একটি শব্দের বানান সম্বন্ধে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। পাণ্ডুলিপিতে বিনয় লিখেছেন ‘মোহনা’ ; অরুণা সংস্করণ এবং শ্রেষ্ঠ কবিতায় লেখা হয়েছে ‘মোহানা’।

৫.১. লা.৯. অ. এবং শ্রে.ক. দূরের পাহাড় ছেড়ে, যেন ভুলে ছেড়ে দিয়ে অন্ধকারে আরো কিছু খুঁজে,
পা. দূরের পাহাড় ছেড়ে, হাত খুলে …
৫.২. লা. ৩৩. অ. এবং শ্রে.ক. বলে নিজেদের কাছে, আর কাউকেই জল আপনার বিষয় কাহিনী
পা. বলে নিজেদেরই কাছে …
৫.৩. লা. ৪১. অ.এবং শ্রে.ক. তাহ’লেও সেটা ঠিক মিশে যাওয়া হয় না তো, একেবারে মিশে যাওয়া নয়।
পা. তাহ’লেও সেটা ঠিক মিলে যাওয়া …
৫.৪. লা. ৮৫. অ. এবং শ্রে.ক. এই দূর গাছপালা বেশ ভালো ভালো লাগে যেন ওরা গাছপালা নয়,
পা. ওই দূর গাছপালা …
ম. পাণ্ডুলিপির “ওই দূর গাছপালা” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে “এই দূর গাছপালা”। পাণ্ডুলিপি-পাঠই যুক্তিসঙ্গত।
৫.৫. লা. ৮৭. অ. এবং শ্রে.ক. তার মাঝখান দিয়ে মোহানাও দেখা যায়, মোহানাটি মোটে কালো নয়।
পা. তার মাঝখান দিয়ে ওই মোহনাও দেখা যায়, মোহনাটি মোটে কালো নয়।
ম. পাণ্ডুলিপিতে বিনয় প্রথমে লিখেছিলেন, “ তার মাঝখানে ওই মোহনাও দেখা যায়… ”। পরে সংশোধন করে লিখেছিলেন, “তার মাঝখান দিয়ে ওই মোহনাও দেখা যায়…”। এই সংশোধনটি বিনয় নিশ্চয়ই অসতর্ক হয়ে করেছিলেন, কেন না এই সংশোধনের ফলে পাণ্ডুলিপিতে লেখা লাইনটিতে দু’ মাত্রা বেশি হয়ে ছন্দপতন ঘটছে। প্রকাশিত-পাঠে কোনো ছন্দপতন নেই।
৫.৬. লা. ৮৮. অ. এবং শ্রে.ক. সাগরের কাছে এসে সকল মোহানা বেশ চওড়া হবার পরে শেষে —
পা. সাগরের কাছে এলে সকল মোহানা বেশ চওড়া হবার পরে মেশে –
ম. পাণ্ডুলিপির “সাগরের কাছে এলে” এবং “চওড়া হবার পরে মেশে” অংশ দু’টি প্রকাশিত পাঠে হয়েছে যথাক্রমে “সাগরের কাছে এসে” এবং “চওড়া হবার পরে শেষে”।
৫.৭. লা. ৯০. অ. এবং শ্রে.ক. ডাঙার ভিতর দিয়ে ব’য়ে-যাওয়া — ব’য়ে আসা নদী সব সরু-সরু হয়।
পা. ডাঙার ভিতর দিয়ে … খুব সরু সরু হয়।
ম. পাণ্ডুলিপির “খুব সরু সরু হয়” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে—“সব সরু-সরু হয়।”
৫.৮. লা. ৯৯. অ. এবং শ্রে.ক. মোহানা, তোমার যত কাছে আসি তুমি তত অধিক চওড়া হ’য়ে যাও।
পা. মোহনা, মোহনা, যত কাছে আসি তুমি তত অধিক চওড়া হ’য়ে যাও।
ম. পাণ্ডুলিপির “মোহনা, মোহনা, যত” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে — “মোহানা, তোমার যত”।
৫.৯. লা.১০০. অ. এবং শ্রে.ক. একেবারে মুখে নেমে গাছগুলি পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে দেখা যায়,
পা. একেবারে মুখে গেলে …
ম. পাণ্ডুলিপির “একেবারে মুখে গেলে” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে – “একেবারে মুখে নেমে”।
৫.১০. লা.১১৩. অ. এবং শ্রে.ক. এ এক নিয়মমাত্র, গণিত যেধারে থাকে আসলে বিশ্বের সব রস—
পা. এ এক নিয়মমাত্র, গণিত যে ধারে থাকে সে ধারে আসলে সব রস—
ম. প্রকাশিত-পাঠের লাইনটি অর্থহীন ; প্রকাশিত-পাঠে পাণ্ডুলিপির পাঠ ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন।
৫.১১.লা. ১১৪. অ. এবং শ্রে.ক. বিশ্বের সকল রস জড়ো হ’য়ে এসে জমা হ’য়ে থাকে রসের আকারে।
পা. বিশ্বের সকল রস জড়ো হয়, এসে জমা হয়ে থাকে রসের আকারে।
৫.১২. লা. ১২২. অ. এবং শ্রে.ক. সকল-কিছুর সঙ্গে হুবহু একাত্ম হ’য়ে মিলে যেতে হয় শুধু মোহানার এই কাহিনীকে।
পা. সকল-কিছুর সঙ্গে হুবহু একাত্ম হয়ে যেতে হয় শুধু মোহনার কাহিনীকে।
ম. প্রকাশিত-পাঠে ‘মিলে’ ও ‘এই’— এই শব্দ দু’টি যোগ করা হয়েছে। প্রকাশিত-পাঠের লাইনটির মাত্রা সংখ্যা ৩৪। ৩৪-মাত্রার থেকে বড়ো চালের লাইন ‘অঘ্রানের অনুভুতিমালা’য় নেই।
৫.১৩. লা.১২৬. অ. এবং শ্রে.ক. গণিতের প্রান্ত থেকে অন্তরের বাহিরেই, দরজার বাহিরেই শুধু
পা. গণিতের প্রান্ত থাকে অন্তরের বাহিরেই, দরজার বাহিরেই শুধু
ম. পাণ্ডুলিপির “গণিতের প্রান্ত থাকে” প্রকাশিত পাঠে ছাপার ভুলে হয়েছে – “গণিতের প্রান্ত থেকে”।
৫.১৪. লা. ১৩৭. অ.এবং শ্রে.ক. উৎপন্ন রেখাটির পরেকার – ঊর্ধ্বেকার উৎপন্ন রেখাটির রূপ
পা. উৎপন্ন রেখাটির পরেকার ঊর্ধ্বেকার উৎপন্ন রেখাটিরই রূপ
ম. পাণ্ডুলিপির ‘রেখাটিরই রূপ’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘রেখাটির রূপ’ ।
৫.১৫. পাণ্ডুলিপির ১৪৩ ও ১৪৪ সংখ্যক লাইন দু’টিকে প্রকাশিত-পাঠে একটি লাইনে পরিণত করা হয়েছে।
অ. এবং শ্রে.ক. লা. ১৪৪. “এখন সে ঊর্ধ্বলোকে নিজে মোটামুটি তার প্রাথমিক স্বরূপবিন্যাসে।” এই লাইনটি পাণ্ডুলিপির প্রাথমিক পাঠের ১৪৩ ও ১৪৪ লাইন দু’টি থেকে নির্মাণ করা হয়েছে ; লাইন দু’টি নিচে দেওয়া হল।
পা. লা.১৪৩. এখন সে ঊর্ধ্বলোক নিজে মোটামুটি তার নিজের আকারে এসে গেছে।
পা. লা. ১৪৪. তার মোটামুটি রূপ স্থির হয়ে গেছে তার প্রাথমিক স্বরূপবিন্যাসে
৫.১৬. লা.১৭৩. অ. এবং শ্রে.ক. পাখিরা এ- মোহানায় বহু আছে, বহু আছে, শুধুমাত্র মোহানাতে আছে।
পা. পাখিরা মোহনাময় বহু আছে, বহু আছে, শুধুমাত্র মোহানাতে আছে।
ম. পাণ্ডুলিপির “পাখিরা মোহনাময়” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে – “পাখিরা এ-মোহানায়” ।
৫.১৭. লা.২৪৮. অ. এবং শ্রে.ক. লাল-লাল ভাঙা-ভাঙা, অনেক জায়গা জুড়ে ডুবে আছে রোদ।
পা. লাল-লাল ভাঙা-ভাঙা অনেক জায়গা জুড়ে ডুবে আছে চুপচাপ রোদ।
ম. পাণ্ডুলিপির “ডুবে আছে চুপচাপ রোদ” প্রকাশিত পাঠে ভুলবশত হয়েছে – “ডুবে আছে রোদ”; “চুপচাপ” শব্দটি বাদ চলে গাছে।
৫.১৮. লা. ২৫৫. অ. এবং শ্রে.ক. রোদের বিম্বের মতো ডুবে যাওয়া মোহানার সকল গভীরে
পা. রোদের বিম্বের মতো ডুবে যাওয়া, ডুবে যাওয়া মোহনার সকল গভীরে।
ম. পাণ্ডুলিপি-পাঠে ‘ডুবে যাওয়া’ রয়েছে দু’বার, প্রকাশিত-পাঠে একবার। এই ভুল শুধরে নেওয়া প্রয়োজন। পাণ্ডুলিপিতে লাইনটির মাত্রা সংখ্যা ২৬; একটি ‘ডুবে যাওয়া’ বাদ যাওয়ার ফলে প্রকাশিত পাঠের মাত্রা সংখ্যা ২২।
৫.১৯. লা. ২৫৬. অ. এবং শ্রে.ক. ঢেউ খুব ভালো হ’লে মেঘগুলি যে-রকম ডুবে যায় সে-রকম — ঠিক
পা. ঢেউ খুব কম হলে মেঘগুলি যে-রকম ডুবে যায় সে-রকম — ঠিক
ম. পাণ্ডুলিপির “ঢেউ খুব কম হলে” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে – “ঢেউ খুব ভালো হলে”।
৫.২০. লা.২৫৭. অ. এবং শ্রে.ক. সে-রকম ডুবে যাওয়া, মাইল–মাইলব্যাপী মোহানা ভরাট ক’রে ফেলা।
পা. সেইভাবে ডুবে যাওয়া, মাইল–মাইলব্যাপী মোহানা ভরাট ক’রে ফেলা।
ম. পাণ্ডুলিপির “সেইভাবে ডুবে যাওয়া” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে – “সে-রকম ডুবে যাওয়া”।
৫.২১. লা. ২৭৪. অ. এবং শ্রে.ক. বোঝে তারপরে ওই দূর সখাটিকে বলে ভাঙা-ভাঙা লাল-লাল ভাবে।
পা. বোঝে তার, পায় তার ওই দূর সখাটিকে ভাঙা ভাঙা লাল লাল ভাবে।
ম. বিনয় নিশ্চিতভাবেই প্রুফ দেখেননি। প্রকাশিত-পাঠে ভুল হয়েছে কপি ঠিক করে পড়তে না-পারার কারণে। পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী এই ভুলের সংশোধন প্রয়োজন।
৫.২২.লা. ৩৪২. অ. এবং শ্রে.ক. অথচ তাদের কোনো খাত নেই, কারো কোনো ধরা বাঁধা পাড়, খাত নেই।
পা. অথচ তাদের কোনো খাত নেই, কোনো কারো ধরা বাঁধা পাড়, খাত নেই।
ম. পাণ্ডুলিপির “কোনো কারো” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে “কারো কোনো”।
৫.২৩. লা. ৩৭৯. অ. এবং শ্রে.ক. অনায়াসে বোঝা যায়, বোঝা যায় খোলবার বোজবার হেতু আর মানে।
পা. অনায়াসে বোঝা যায়, বোঝা যায় খুলবার বোজবার হেতু আর মানে।
ম. পাণ্ডুলিপির ‘খুলবার’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘খোলবার’।
৫.২৪. লা. ৩৮৩. অ. এবং শ্রে.ক. প্রান্তর পাহাড় সব জোয়ার এলেই দেখি দুলে ওঠে, মন দুলে যায়।
পা. প্রান্তর পাহাড় সব জোয়ার এলেই দেখি দুলে ওঠে, সব দুলে যায়।
ম. পাণ্ডুলিপিতে পাচ্ছি — “সব দুলে যায়।”। পরিবর্তিত প্রকাশিত পাঠ –- “মন দুলে যায়।”
৫.২৫. লা.৩৮৮. অ. এবং শ্রে.ক. হেলাফেলা করবার মতো তারা কোনোদিন ছিলো না বা কখনো হবে না।
পা. হেলাফেলা করবার মতো তারা কোনোদিন ছিলো না কখনো হবে না।
ম. পাণ্ডুলিপিতে রয়েছে ‘ছিলো না’ , প্রকাশিত-পাঠে পাচ্ছি, ‘ছিলো না বা’। ‘বা’ শব্দটি না- থাকলে লাইনটিতে ছন্দপতন ঘটবে। বিনয় সম্ভবত অসতর্কতার কারণে পাণ্ডুলিপিতে ‘বা’ শব্দটি লিখতে ভুলে গিয়েছিলেন, কেন না তাঁর পক্ষে ভুল ছন্দে লেখা সম্ভব নয় । তাছাড়া পাণ্ডুলিপির সংশ্লিষ্ট লাইনটি পড়লেই বোঝা যাচ্ছে যে ‘বা’ শব্দটি ভুল করে লেখা হয় নি। পাণ্ডুলিপির লাইনটি হল— “হেলাফেলা করবার মতো তারা কোনোদিন ছিল না কখনো হবে না।”

পাণ্ডুলিপিতে ৫- সংখ্যক কবিতাটির পরে “আমার কবিতা রচনাপদ্ধতি” নামে একটি গদ্য–রচনা রয়েছে। এই রচনার নামটি দেখে মনে হয়, বিনয় হয়ত এটিতে তাঁর কবিতা রচনা করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। কিন্তু তা নয়। বিনয় এই রচনায় বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড নিয়ে নানান দার্শনিক আলোচনা করেছেন। সেই আলোচনার কোনও কোনও অংশ যেমন গভীর মনন সমৃদ্ধ, কোনও কোনও অংশকে আবার প্রলাপোক্তি বলে মনে হয়। আমার লেখা ‘“অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র পাণ্ডুলিপি পরিচয়” প্রবন্ধে এই রচনাটি নিয়ে কিছু আলোচনা আছে। সেখানে সম্পূর্ণ রচনাটি পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।
কবিতা-৬

যদি কাছাকাছি থাকি তবে আর অকারণে উদয়ের ভাবনায় কখনো পড়ি না ।
পাণ্ডুলিপিতে এই কবিতাটির দু’টি পাঠ রয়েছে, প্রথমটি প্রাথমিক পাঠ এবং দ্বিতীয়টি চূড়ান্ত পাঠ। নিচের তালিকাটিতে চূড়ান্ত পাঠটির সঙ্গে প্রকাশিত পাঠের পার্থক্য দেখানো হয়েছা।
৬.১. লা. ১১ অ. দেখি, মরীচির থেকে শেষে তারা অরুন্ধতী কোমর অবধি যায়, কোমরে পৌঁছয়।
পা. দেখি, মরীচির থেকে শেষ তারা অরুন্ধতী …
ম. পাণ্ডুলিপির ‘শেষ’ প্রকাশিত-পাঠে হয়েছে ‘শেষে’।
৬.২. লা. ১৫. পা. ‘বাঁ পায়ের’ বানানে বিনয় ‘বাঁ’ শব্দে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার করেননি।
৬.৩. লা. ৪৩. অ. অবশ্য জোরালো নয়, একেবারে নাক চাপা দেবার মতন ঘ্রাণ বেশি
পা. অবশ্য জোরালো নয়, একেবারে নাক চাপা দেবার মতন খুব বেশি ঘ্রাণ নয়।
ম. প্রকাশিত-পাঠের এই পার্থক্য নিশ্চয়ই কপি ভুল পড়ার ফল।
৬.৪. লা.৮৮. অ. সমধর্মী হ’তে বাধ্য ব’লে প্রমাণিত হয়, সব-কিছু চিরকাল প্রমাণ হয়েছে।
পা. সমধর্মী হতে বাধ্য ব’লে প্রমাণিত হয়, কতকিছু চিরকাল প্রমাণ হয়েছে।
ম. পাণ্ডুলিপির “কতকিছু” প্রকাশিত পাঠে হয়েছে “সব-কিছু”।
৬.৫. লা.১০৫. অ. আর দৃশ্য ব’লে যদি ভাবো তবে অবয়ব এবং হয়তো এই প্রকৃত বস্তুটি
পা. আর দৃশ্য ব’লে যদি ভাবো তবে অবয়ব এবং হয়তো সেই প্রকৃত বস্তুটি
ম. পাণ্ডুলিপির “সেই প্রকৃত বস্তুটি” অংশের পরিবর্তিত প্রকাশিত পাঠ হল – “এই প্রকৃত বস্তুটি”। প্রকাশিত পাঠে এই পরিবর্তন অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
৬.৬. লা. ১২১. অ. সে-সকল নিশ্চিতই ত্রিগুণ নিয়মে গিয়ে ছায়াগুলিতে ও দূর পৃথিবীতে লাগে।
পা. সে-সকল নিশ্চিতই ত্রিগুণ নিয়মে গিয়ে ছায়াগুলিতেও দূর পৃথিবীতে লাগে।
ম. প্রকাশিত-পাঠে রয়েছে ‘ছায়াগুলিতে ও’ ; হবে ‘ছায়াগুলিতেও’।
৬.৭. লা. ১২২. অ. লাগে সপ্তর্ষির দেহে, সপ্তর্ষির সারা গা-য়, মনে হয় সপ্তর্ষিও সঙ্গে-সঙ্গে চলে
পা. লাগে সপ্তর্ষির দেহে, সপ্তর্ষির সারা গা-য়, মনে হয় সপ্তর্ষিও চলে
ম. প্রকাশিত পাঠে “সঙ্গে-সঙ্গে” – এই অংশটি যোগ করা হয়েছে। পাণ্ডুলিপি-পাঠের মাত্রা সংখ্যা ২৬, প্রকাশিত-পাঠের মাত্রা সংখ্যা ৩০।
৬.৮. লা. ১২৫ ও ১২৬—এই দু’টি লাইন একই, কিন্তু অরুণা সংস্করণে ছাপা হয়েছে দু’বার। বিনয় মজুমদারের ‘কাব্য সমগ্র’ সম্পাদনা করার সময়েই আমি ব্যাপারটি খেয়াল করেছিলাম। ‘কাব্য সমগ্র’-তে আমি অরুণা সংস্করণ-কেই অনুসরণ করেছিলাম। ‘কাব্য সমগ্র’-র প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় সংস্করণে আমি লাইনটি একবারই রাখতে চেয়েছিলাম কারণ আমার মনে হয়েছিল, একই লাইন দু’ বার ছাপার প্রয়োজন নেই, কিন্তু বিনয় মজুমদার আপত্তি করায় আমি তা করতে পারি নি। লাইনটি একবার ছাপার জন্যে অনুমতি চেয়ে আমি বিনয় মজুমদারকে চিঠি লিখেছিলাম। বিনয় আমাকে লিখেছিলেন, “ ‘‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’র ষষ্ঠ বা শেষ কবিতার লাইন ‘ আলো ব্যোম ও সময় খুব কাছে এসে গেছে, এত কাছে — গুঁতো লেগে যাবে মনে হয়’ যা ছেপেছ প্রথম সংস্করণে তাই থাকুক—একই লাইন দুবারই থাকুক।” (দ্র. ইতি বিনয় মজুমদার,তরুণ বন্দ্যপাধ্যায়কে লেখা বিনয় মজুমদারের ২৩/২/১৯৯৬ তারিখে লেখা চিঠি, ভাষালিপি, ২০১৬)। এই ঘটনার অনেক পরে ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’-র পাণ্ডুলিপির কপি আমার হাতে আসে। সেখানে কিন্তু লাইনটি একবারই আছে।
এই আলোচনায় ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’-র পাণ্ডুলিপি-পাঠ ও প্রকাশিত-পাঠের মধ্যে থাকা বাহাত্তরটি পার্থক্যের উল্লেখ করা হয়েছে। হয়ত আরও কিছু পার্থক্য আছে যা আমার চোখে পড়ে নি। এ ই পার্থক্যগুলি কেন ও কীভাবে ঘটেছিল তা নিশ্চিতভাবে না জানা পর্যন্ত পাণ্ডুলিপিকেই ভিত্তি ধরে প্রকাশিত-পাঠের যুক্তিসঙ্গত সংশোধন প্রয়োজন। যদি কখনও জানা যায় যে বিনয়ের নির্দেশেই পরিবর্তনগুলি ঘটেছিল, সে-ক্ষেত্রে প্রকাশিত-পাঠ পরিবর্তন করার আর কোনও প্রয়োজন থাকবে না, যদিও তার সম্ভাবনা খুবই কম।

লন্ডনের ব্রিটিশ লাইব্রেরির সৌজন্যে ‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’-র পাণ্ডুলিপির কয়েকটি পাতার ছবি ছাপা সম্ভব হল।

আইনগত কারণে এই পাণ্ডুলিপিচিত্রগুলি কেউ অন্যত্র ব্যবহার করতে পারবেন না।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Sangita Bandyopadhyay 4 years

    সুন্দর ও পরিশ্রমী লেখা। ভালো লাগল।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes