
রিয়া চন্দ্রের কবিতাগুচ্ছ
দেহস্থিত
১
চাঁদের আলোর নিচে বরাভয় তৃষিত উন্মাদনা
আজ সঙ্কেত দাও, নৈশ আগুনে আহুতি যাক
প্রণয়-তরুর অরূপরতন । অন্ধকারে বসে আছি
আধেকলীন কোনো বাউল যেমন আকাঙ্ক্ষার
শরীরে বিষাদবিধূর গান লেখে, অন্তঃসারহীন
শাপমোচনের এমন রাতে মৃতেরা জেগে ওঠে
তবে কি আমি মৃত? না কি সবই কল্পনার দোয়াত
যা প্রাচীন কুঞ্জের গায়ে ছেড়ে গেছে অগণ্য পালক
২
সেদিন ঝড়ের রাতে সহসা খইয়ের আলো
খেলে গেল ঘরের ভেতর, নিঃশব্দে অস্থিমালার
কাঁপনে তন্দ্রা ভেঙে ভ্রাম্যমাণ তৃষ্ণা ঢুকে পড়েছে
এসো পলাতকা হাত, অবহিত হও
সাধনা তো স্বকীয়, তার মাঝে অমেয় জল
ঘনীভূত হবে এমন বধ্যভূমি কোথায়?
অন্তিম আলোর কাছে স্তব্ধতার বর্ণময় ক্ষত ওড়ে
এই ক্ষতের কাঁটায় তুমি নিয়ে এসো পদ্মের প্রস্তাব
যা ঋজু হয়ে পৌরুষকে ছুঁয়ে যাবে লতার মতো
সমুদ্র বিলাস
পৃথিবীতে যত আলো, জলশূন্য সিঁড়ি ভেঙে
কখনো শীতল হয়ে যায়
প্রাচীন শরীরে তার কথা বলে দেহাতি বিষাদ
বিপথে যাবার আগে, এই তো সময়
ভাসান চিহ্নের কাছে কিছুক্ষণ বসো
উত্তাল ঢেউয়ের চোখে অজ্ঞাত বাসের নামে
লিখে রাখো রূপোলী নির্মাণ
সোহাগী ঘাসটি জানে নিথর হলেও এই
অক্ষর যাপন মিথ্যে নয়
রাতের প্রবাহ ভুলে বরং আহ্লাদী কোনো সুরে
নতুন মানুষ হয়ে তুমি একদিন ফিরে এসো
দৃশ্যমানতার ফাঁকে সহজিয়া বসন্তে সেদিন
উপেক্ষা সরিয়ে আমরা শব্দহীন বিচ্ছেদকে
সমুদ্র শিখিয়ে দিয়ে যাবো
আন্তরিক
লালন গোঁসাই, তোমায় বলি শোনো, যা কিছু
বরাদ্দ ছিল যত্নে সরিয়ে রেখেছে কেউ
সমস্ত মোহ মুছে যাবার আগে বুকে ছুঁয়ে আছি
কিছুটা নিস্তব্ধতা, অদৃশ্য ক্ষতদাগ, বর্ষাজল
মাঝেমধ্যে মেঘেদের আখড়ায় দুয়েকজন
অচেনা বাউল আসে, খঞ্জনি হাতে শব্দদের
শোকগৃহ ভাসিয়ে ফিরে যায় আদিম বিষাদে
এ মোহময়ী সন্ধ্যার নাম-সংকীর্তনে কত
নাভিশ্বাস উঠল, নিভে গেল অভ্যাসবশত
তারপর নিস্পৃহ চাঁদের দেশে বহুকাল আর
দেখা হয়নি আমাদের
কেবল গভীর রাতে রোজ একতারার সুরে জেগে
ওঠেন এক সাধক , ‘সে’ কিন্তু আমার স্পর্ধা নয়
গার্হস্থ্য
কারো কিছু বুঝে ওঠার আগেই খেলার বাক্সে
জমিয়ে রেখেছিলাম অনেকখানি বৈশাখের রোদ
তিরিশ বছরের জলরং,কলমিলতার উঠোন হয়ে
কবেই প্রোথিত নৈঃশব্দ্যে মা দ্বীপান্তরে চলে গেছেন
বিশ্বস্ত আঙুলের সংকেতে পেরিয়ে যাচ্ছি
একেকটা মাইলস্টোন, অথচ
প্রদাহকাল সামনে জেনেও কখনো ভাঙা
আয়নার সামনে বাবাকে দাঁড়াতে দেখলাম না
রোজ রাত হলে আলোর জন্ম দিত যে শান্ত নদী
ধীরে ধীরে তাঁর গভীরে বালির স্তর জমে
অন্ধকারের ফর্মুলা শিখে নিচ্ছেন দুটি বৃদ্ধচোখ
আচ্ছন্ন
ওই পাহাড়ি নিস্তব্ধতার কাছে কেউ যেন
একা বসে আছে, আগুন নেভার প্রতীক্ষায়
সমস্ত বিভ্রম সরিয়ে একসময় সে নাভিতে
জড়িয়ে নেয় সাদা পালকের ঘ্রাণ
জলপথের চিহ্ন মিলিয়ে আসে
দেখি, ভাঙা আলোর পথ ধরে কেমন
ঝরা পাতারা নিভৃতে কথা বলে
নদীরঙ শরীরে মেখে যারা ওপারে চলে যায়
রোদ পড়ে আসলেও আর কক্ষনো
ঘরে ফেরে না, তাদের চোখের হিম অন্ধকার
কোনো অশরীরী সন্ধ্যায়
মৃত্যুকে শুশ্রূষা দিতে থাকে আরও আরও
নিষ্কৃতি
১
এই নিত্য রূপান্তরের ভেতর উচিত-অনুচিতের
মুদ্রাদোষ সাজানো থাকে
কালো মেঘের মতো প্রেম আসে
ধরা ছোঁয়ার বাইরে বৃষ্টিপাত রেখে যায়
বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাবে জেনেও
যে রাত অপেক্ষা শিখেছিল, গুপ্তহত্যা বুঝে
তাকে তো আমি কখনো ‘শূন্যতা’ ডাকিনি
ধীরে ধীরে কোনো নীরব ঋতুবদলের টানে
শুশ্রূষার গন্ধ মেখে সে চিনে ফেলেছে
আরোগ্যের শীতলতা
২.
যে আকাশকে দেখে নীল রং জেনেছিলাম
তার পথ ধরে এগিয়ে যেতে যেতে দেখি
গড়িয়ে যাচ্ছে দুটি বিধ্বস্ত চোখ
আমি তো এক বীতনিদ্র প্রণয়িনী
সমূহ সম্ভাবনা থেকে দূরে রন্ধ্রে রন্ধ্রে
যার ছড়িয়ে আছে নীলের বিভ্রম
শিয়রে দাঁড়িয়ে ব্যথার দেবতা
দু’হাতে লুটিয়ে দিতে উদ্যত তুমুল অন্ধকার
অথচ ভয়হীন হেঁটে গেছি, প্রতি হোঁচটে
ক্ষোভের আগুন নিভিয়ে দিয়েছে
নিদারুণ জলের স্রোত
সব কবিতাগুলোই সুন্দর।
অসংখ্য ধন্যবাদ দাদা 🙏
ভাল লাগল লেখা।।। ❤️
ধন্যবাদ দাদা, শ্রদ্ধা জানবেন 🙏