
অরিন চক্রবর্তীর কবিতা
সিমেট্রি
(১)
আমার আত্মার মাগফিরাত কামনার
সামনে শুয়ে আছে সাপ…
সিঁড়ি বেয়ে দুধের স্রোত, হিসহিস!
তোমার জিভের বিষ বেয়ে বেড়ে উঠছে
আমার আগামী প্রজন্মের ফসল
তবুও সিমেট্রি জেগে থাকে
আমি শত এপিটাফের অঙ্ক মিলিয়ে দেখি
তোমার কবরের পাশে
কিছু খোলস পড়ে আছে…
(২)
পাথরের জীর্ণতা জুড়ে
সময়ের ছায়া নেমে আসে
আহা! জননীলতার গা ঘেঁষে বেড়ে উঠতে গিয়ে
তোমার কাছে পরজীবী হয়ে গিয়েছি…
লোকাল ট্রেন পেরিয়ে গেলে
আমার নিত্যযাত্রী হওয়ার শখ হয়!
জানি, ফিরবে না প্ল্যাটফর্ম, ফিরবে না মানুষ
শুধু একটি লাশ থেকে আরেকেটি লাশে
চাদর বিছিয়ে দিই…
(৩)
আমাদের ঘুমের ভিতর ময়াল শুয়ে থাকে
স্বপ্নকে পুঁজি করে ক্ষমতায় আসে ষড়যন্ত্র
রাষ্ট্রীয় বুলেট ফুঁড়ে যায় গাছের ভিতর
শিকড় ছিঁড়ে গেলে,
দেশ একটা সিমেট্রিতে পরিণত হয়
দার্শনিক থেকে কবি
সবার শরীরের উপর
রক্তের জোছনা পড়ে…
(৪)
এই সূর্যমুখী শরীর
দেহ আসক্ত রোদ্দুর
অবেলায় ছুঁয়ে থাকা তিথি
সবকিছুই ম্লান হয়ে ওঠে
ক্লান্ত ঘুমের মধ্যে…
দ্বিতীয়ার রাতে চিৎকার করে ওঠে স্বপ্ন
প্রতিটি দরজায় রজনীগন্ধা
ক্ষিদে নেই
তাই জন্ম ভুলেছে পাথর!
(৫)
কবর!
দেহকে ঘর দাও
যন্ত্রণা মেখে ফিরে যায় পরিবার
মাটি! আমাকে শিকড়ের কাছে নিয়ে চলো
মাঝরাতে যে ঘরের ভিতর
একটা কচ্ছপ হেঁটে চলে
সেই আকাঙ্খায় আমি শান্ত হতে হতে
প্রতিবেশীর দেওয়াল ভেঙ্গে দিই…
(৬)
নগ্ন সমুদ্রের ভিতর এসে পড়েছি
অতল ক্ষিদে
বড়শিতে গেঁথে যাওয়া মাছের মতন
কেঁপে উঠছে ঠোঁট…
খাবি খেতে খেতে
সবাই স্রোত পার হয়ে যায়
জেগে থাকে
একলা নাবিক…
(৭)
ঘুণ ধরছে হাড়ে
এই সবুজে বেঁচে থাকা
অনন্ত গন্ধে
মৃত্যু আসে জহ্লাদের মঞ্চে
এখনো সমবন্টনের কথা বলা হয়নি!
মিছিলে আমি একা হেঁটেছি
লালসার মুখোশ পরে
ঢেকে রেখেছি শ্রেণীশত্রুর পরিচয়
ফিরিয়ে দাও আমায়
এখনো মানুষের কথা বলা হয়নি…
(৮)
মোমবাতি জ্বেলে ওঠে
ধূসর রাতে
জোনাকির জোছনা আসে
আমি জেগে আছি মৃত্যুর ভিতর
চোখ নিভে আসে
মা এখনো প্রদীপ জ্বালেনি!
ঈশ্বর আমাকে মঞ্চের দিকে যায়
পিছন ফিরে দেখছি
আমার ছায়ার মূকাভিনয়…
(৯)
শব্দ, যা কিছু লিখে রেখেছি চামড়ায়
সব নিয়ে যাও যোগনিদ্রায়
মায়ের নাড়ির ভিতর ঘুম থেকে উঠি
সমস্ত স্থলপদ্ম রেখে গেলাম পায়ের কাছে
শুধু অলকানন্দার যত্ন নিও…
(১০)
তোমার অভিশাপ হয়ে থাকা সময়
জীবনের প্রিয় ক্যাফে ছেড়ে
চলে যাচ্ছি, ছাতিম!
শরীর যেন একটা হলুদ গোলাপ
তুমি হাত রেখো নরম!
বসে থাকো ছায়ার কাছে
মাটির কাছে এসো!
মহাকাশ আমাকে তোমার থেকে
নিয়ে যায় তোমার সময়ের কাছে…