অতঃ পলাশ-কথা
তুষ্টি ভট্টাচার্য

বাড়ি থেকে ফেরার পথে আজ রিক্সা নিল পলাশ। আজ মন খুব ফুরফুরে। এটুকু বাড়তি খরচ আজ করাই যায়। শুধু এটুকু কেন আজ এই রাজা-বাদশার মত দিল নিয়ে যা খুশি করে ফেলতে পারে ও। বাড়ির সামনের দোকান থেকে একটা ক্যাডবেরি সিল্ক কিনল ছেলের জন্য। সবার জন্য বাছাই কিছু মিষ্টি আগেই কিনে নিয়েছিল। পরের মাস থেকে মাস গেলে বেশ কিছু টাকা বেড়ে যাচ্ছে। আসলে টাকা বাড়ার আনন্দর থেকে বড় আনন্দ আজ দিয়েছে কিংশুক। ওর ঝুলে পড়া মুখটা মনে পড়লেই আলো আলো হয়ে পড়ছে মনটা। অনেক সহ্য করেছিল পলাশ এতদিন ধরে। ম্যাডামকে নির্লজ্জ ভাবে তেল দিয়ে দিয়ে আজ এতদূর উঠে এসেছে কিংশুক। ওর নিজের ক্রেডিট কতখানি সবাই জানে। নেহাত ম্যাডামের কাছের লোক বলে কেউ কিছু বলতে পারে না। আড়ালে মুখ টিপে হাসে নয়ত খিস্তি করে। এমনকি পিওন গোপাল পর্যন্ত ওকে টিটকিরি দেয়।
কিংশুক জানে এসব গায়ে মাখলে ওর চলবে না। ওকে যে করেই হোক অনেক ওপরে উঠতে হবে। এতটাই ওপরে যেন হিমালয়কে মুখ নামিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলতেং! কিংশুক খুব ভালো হিসেব বোঝে। ওর নির্লজ্জতা এমনই মাত্রাছাড়া যে ওর ফ্যামিলি লাইফ ডিস্টার্ব। কিংশুক কাউকে পরোয়া করে না। বউ থাকল কী গেল, ছেলেমেয়ে ঘেন্না করল কী পুজো – ওর বয়েই গেছে এসব ভাববার। অফিস থেকে ফিরে এসেও ও হিসেব করে যায়, কাকে কী ভাবে পটালে কাজ হাসিল করা যাবে। এমনকী সেই সৎ সাত্ত্বিক প্যাটেলকে পর্যন্ত ওর প্যাঁচে পড়ে ঘায়েল হতে হয়েছিল। প্যাটেলের ভয়ানক বদনাম ছিল – উনি নাকি খান না। যা কিছু অফিসিয়াল কথা অফিসেই সারেন, কারুর সঙ্গে বাইরে যান না। অনেকবার ওঁকে তেল দেওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছিল কিংশুক। কিন্তু একদিন সুযোগ নিজে থেকেই এসে গেল। সেদিন ম্যাডামের চেম্বারে কিছু আলোচনা হচ্ছিল বোর্ডমেম্বারদের। হঠাৎ দরজা খুলে প্যাটেলকে বাইরে এসে উত্তেজিত ভাবে কারুর সঙ্গে ফোনে কথা বলতে দেখা গেল। আর ঠিক সেই সময়ে ভাগ্য কিংশুককে বাথরুম যেতে পাঠালো ওই দরজার সামনে দিয়েই। চোখকান খাড়া রাখা ওর চিরকালের অভ্যেস, এসময়েও ছিল। বুঝলো প্যাটেলের কাছের কারুর কোন বিপদ ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে ও প্যাটেলকে বলল – কিচ্ছু হবে না, চলুন… কুইক্‌, সময় চলে যাচ্ছে। প্যাটেলের আর চিন্তা করার মানসিকতা ছিল না। একরকম প্রায় দৌড়ে কিংশুক গাড়ি নিয়ে প্যাটেলের সঙ্গে বেড়িয়ে এলো। তারপর অনেকদিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে কিংশুককে। নার্সিং হোমে ওর ছেলেকে ভর্তি করানো থেকে ওর ছাড়া পাওয়ার দিন পর্যন্ত প্যাটেলের পিছনে পড়ে ছিল কিংশুক। আর নার্সিং হোমে প্রথমেই ওর নিজের কার্ড ইস্যু করিয়ে রেখেছিল, বলেছিল বিল ওখান থেকে যাবে। ব্যস্‌ প্যাটেল আর ট্যাঁফু করতে পারেনি।
তারপর আক্ষরিক অর্থে না হলেও মানবিকতার দায়ে প্যাটেল একপ্রকার বিক্রি হয়ে গেছিল কিংশুকের কাছে। আর আটকায়নি ওকে কোন কাজে। প্যাটেলের মত লোক আর কটা! বাকি বেশিরভাগই নোট, মদ আর মাগীতে বিক্রি হয়ে যায়। কিংশুকের সমগোত্রীয় না হলেও কেউ কেউ ওর সঙ্গে দৌড়তে চেষ্টা করলেও কিংশুকের সঙ্গে টক্করে পারে না। যেবার অফিসের সুপ্রিম বস হয়ে এলেন ম্যাডাম সিনহা, সেদিন অনেকে আড়ালে বলেছিল এবার বোধহয় কিংশুকের বাড়বাড়ন্ত গেল। মহিলা নিশ্চই বিক্রি হওয়ার নয়, কারণ ওর স্বামী বিশাল পোস্টে আছেন, ছেলেমেয়েও নেই। তাই মনে হয় পয়সার খাঁই থাকবে না ওঁর। প্রথম প্রথম কয়েকদিন কিংশুক ম্যাডামের কাছে ঘুরঘুর করত নানা অছিলায়। খুব একটা পাত্তা পায়নি। তবে কিংশুকের হল গিয়ে শকুনের চোখ, এত সহজে ছাড়ার পাত্র ও না। ম্যাডাম একে সুন্দরী তায় বস্‌, তার ওপর আবার টাকাপয়সা ছুঁয়েও দেখেন না। প্রথম কিছুদিন খুব ভাবনায় পড়েছিল কিংশুক। শেষে রাস্তা খুলে গেল এবারেও। একদিন একদল অডিটরের অফিসে আসার খবর শোনা গেল। ম্যাডাম নতুন জয়েন করেছেন, অতটা বুঝে উঠতে পারেননি তখনও। ডাক পড়ল কিংশুকের। রাত জেগে অ্যাকাউন্টসের গরমিল ঠিক করল ও। পরের দিন ম্যাজিশিয়ানের মত হাজির হল অডিটরদের সামনে। ব্যস্, ম্যাডাম ইমপ্রেস্ড। এরপর থেকে কিংশুক ছাড়া ম্যাডাম কিছু বোঝেন না।
পলাশ শুধু দেখে গেছে এতদিন। আর মনে মনে জ্বলেছে। চোখের সামনে দিয়ে কিংশুক অনেক ইনক্রিমেন্ট ছিনিয়ে নিয়ে চলে গেছে। পলাশের থেকে অনেক অনেক বেশি সাকসেস পকেটে পুরে মুখে একটা বিজ্ঞ মার্কা হাসি ঝুলিয়ে ঘোরাফেরা করে এখন কিংশুক। পলাশ জানে, ওভাবে, মানে কিংশুকের মত ধান্দাবাজী করা ওর কম্ম নয়। তাই হেরোর মত মাথা নীচু করে দিন কাটায়। বাড়িতে মা বা ওর বউয়ের কোন টেনশান নেই। ওরা পলাশকে নিয়ে দিব্বি খুশি। শুধু পলাশই নিজেকে নিয়ে খুশি থাকতে পারে না। কিংশুকের থেকে যোগ্যতা ওর কোন অংশে কম নেই, তবু মর্যাদায় ওকে কিংশুকের নীচে থাকতে হচ্ছে। একেক সময়ে ওর মনে হয়, এই চাকরীটা ছেড়ে দেবে। কিন্তু এই বাজারে আবার একটা চাকরী জোটানো মুখের কথা নয়। সাতপাঁচ ভেবে চাকরী ছাড়া হয় না। একটা ডিপ্রেশানের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল ও। রাতে বউ উশখুশ করলেও সাড়া দিত না। ও মরে যাচ্ছিল ভেতরে ভেতরে। একদম চুপচাপ থাকত ও, বাড়ির কাউকে বা বন্ধুদের কিছু জানায়নি, কেউ জিজ্ঞেস করলেও এড়িয়ে গেছে। তবে ওই যে বলে ওপরওলার মার কেউ খণ্ডাতে পারে না, সেরকমই এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটল ওর জীবনে। একদিন ম্যাডামের ডাক পড়ল। একটা প্রজেক্ট, যেটার দায়িত্বে ছিল পলাশ, সেটা অনেকদিন ঝুলিয়ে রেখেছে ও। স্বাভাবিক ভাবেই তাই খুব ঝাড় খাচ্ছিল সেদিন। চুপচাপ গিলছিল গালাগালগুলো। আজ যেন ম্যাডাম একটু অন্য মুডে আছে মনে হচ্ছিল পলাশের। ম্যাডাম সাধারণত এত চ্যাঁচামেচি করেন না। একটা রাশভারী গাম্ভীর্য দিয়ে কাজ সেরে নেন। যাই হোক, একসময়ে দেখা গেল ম্যাডাম হাঁফাচ্ছেন, পলাশ ওঁকে জলের গ্লাস এগিয়ে দিল। ঢকঢক করে জল খেয়ে উনি চেয়ারে বসে হাঁফাতে লাগলেন। একটু পরে ম্যাডাম টেবিলে মাথা নীচু করে বসে পড়লেন। হাল্কা আওয়াজে ওকে বললেন – সরি। আমি আজ একটু আপসেট আছি। তুমি কিছু মনে কোর না আমার কথায়। পলাশ কিছু না ভেবেই এগিয়ে এলো টেবিলের কাছে। চরম রিস্ক নিল একটা। টেবিলের ওপর পড়ে থাকা ওঁর অসহায় হাতের ওপর মৃদু চাপ দিয়ে বলল – ডোন্ট ওয়ারি, সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি টেনশান নেবেন না। ম্যাডাম মুখ তুলে তাকালেন, দেখা গেল ওঁর চোখে জল। মানবিকতার খাতিরে পলাশ ওঁর কাছে গিয়ে ওঁর পিঠে একটু হাত রাখল। আচমকা ম্যাডাম উঠে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কাঁদতে লাগলেন। পলাশ ওঁকে সময় দিল। চুপ করে ওঁকে আলতো জড়িয়ে দাঁড়িয়ে রইল। একসময় ম্যাডাম শান্ত হলেন। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে বসলেন। তারপর অপ্রস্তুত হেসে ওকেও বসতে বললেন। এরপর বলে চললেন ওঁর নিজের কথা। সংক্ষেপে বলতে গেলে – ওঁর স্বামী একজন পারভার্ট। রোজ রাতে নিজের বউয়ের সঙ্গে নিত্য নতুন কায়দায় সঙ্গম না করলে তার চলে না। ‘না’ বললে ম্যাডামকে নানাভাবে নির্যাতন করেন। এতবছর সহ্য করতে করতে আর পারছেন না উনি। তাই এই বিস্ফোরণ! যাই হোক এরপর থেকে পলাশের সঙ্গে ম্যাডামের গাঢ় বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গেল। মাঝে মাঝে ওরা কফি শপে গিয়ে বসত। ওই ঘি আর আগুনের উপমা মাথায় রেখেই বলি, একদিন পলাশ আর ম্যাডাম শারীরিক ভাবে মিলেই গেল! আর এটাও চরম সত্যি দু পক্ষেরই তাতে সায় ছিল, পলাশ কোনভাবেই ম্যাডামকে ফুঁসলোয়নি। ম্যাডাম ছিলেন উপোসী আর পলাশ একঘেয়েমীর শিকার। যাই হোক না কেন, পলাশের পদন্নোতি হতে শুরু হল। কিংশুক অনেক রকম উপায়ে পলাশকে ডাউন করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এবারে আর ম্যাডামকে কব্জা করতে পারল না। শেষ পর্যন্ত সেই দিন এলো, যেদিন কিংশুককে টপকে পলাশ এগিয়ে গেল।
ম্যাডামের পাশের চেম্বারে স্থান হল পলাশের একদিন। এখনও ও ম্যাডাম ডাকটাই চালিয়ে যায়। কিছু চাপা গুঞ্জন আছে বটে ওদের নিয়ে, সে সব কানে দেয় না ওরা কেউই। যাই হোক সেদিন কিংশুকের ঝুলে যাওয়া মুখটা চিরদিন মনে থাকবে পলাশের। একটা মোক্ষম প্রতিবাদ এতদিনে করে উঠতে পেরেছে ও। কিংশুকের গালে একটা সপাট চড়ের চিহ্ন পারমানেন্টলি আঁকা রয়ে গেল। আজ ওর মত সুখী আর কেউ নয় এ পৃথিবীতে। আজ বউকে প্রাণ ভরে আদর দেবে। যদিও মনে মনে ভাববে ম্যাডামের শরীরের কথা। রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগে এটুকু সান্ত্বনা নিয়ে শোবে যে, আর যাই হোক কাউকে ছলে বলে কৌশলে পটিয়ে নিজের জায়গা আদায় করতে হয়নি। এর চেয়ে আর বেশি কিছু ওর চাওয়ার নেই বা পাওয়ার নেই। জীবনের সেরা প্রতিবাদ ও করে ফেলেছে, কিংশুককে বুঝিয়ে দিয়েছে, ওর ওপরেও কেউ আছে!
রাতে পলাশ স্বপ্নে দেখল, সেই প্রথম দিনের মত ম্যাডাম টেবিলের দিকে মুখ নীচু করে বসে আছেন। মুখ তুলতেই দেখা গেল, চোখে জল টলমল করছে। পলাশ এগিয়ে এসে ওঁর হাতে একটু চাপ দিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে দিল। ব্যাস্ অমনি ম্যাডাম একটা সুন্দর পাখি হয়ে উড়তে লাগল। ম্যাডামের চেম্বারের ছাদটা তখন আকাশ হয়ে গেছে। আর ম্যাডাম পলাশের চারদিকে উড়তে উড়তে বলতে লাগল – আমায় ধরতে পারেএএএ না…… । পলাশ দুহাত দিয়ে ম্যাডামকে মানে সেই পাখিটাকে ধরার জন্য লাফালাফি শুরু করে দিল। এরকম ছোটাছুটি লাফালাফির মধ্যে কার সঙ্গে যেন জোর ধাক্কা লাগল পলাশের। তাকিয়ে দেখে কিংশুক। সেও ওরকম ভাবেই ছুটছে আর লাফাচ্ছে! কিংশুক পকেট থেকে একটা মস্ত জাল বের করে পাখিটার দিকে ছুড়ে দিল। ওমনি পাখিটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। বোবায় ধরা গোঁগোঁ শব্দে পলাশের বউয়ের ঘুম ভেঙে গেছে তখন। সবে আলো ফুটছে, পলাশকে ঠেলা দিয়ে ওপাশ ফিরিয়ে দেয় ওর বউ।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes