
ফকিরচাঁদ ডাকাতের কাহিনি
মিরাজ উদ্দিন মোল্লা
আমাদের গ্রামে ফকিরচাঁদ নামে একজন লোক বাস করে। আজ তারই অতীত আর বর্তমান জীবন কাহিনি শোনাবো। ফকিরচাঁদ যখন যুবক ছিল তখন তার মা ও বাবা মারা যায় । অবশেষে খারাপ সঙ্গে পরে সে গ্রামের ডাকাত দলে যোগ দেয়, সে অনেক আগের কথা,তখন সব গ্রামে প্রায়শই ডাকাত হানা দিত। তবে ফকিরচাঁদের একটা নীতি ছিল সে কখনোই নিজেদের গ্রামে ডাকাতি করেনি।সেই ফকিরচাঁদ একদিন ডাকাতি করে রক্ত মেখে নিজের এক আত্মীয়র রান্নাঘরে লুকিয়ে ছিলো। একদা বাইরের গ্রামে ফকিরচাঁদ -এর উৎপাত এতই বেড়ে যায় যে তাকে ধরার জন্য পুলিশের দল গ্রাম ঘেরাও করল।কিন্তু অত খোঁজাখুঁজি এবং নানা জিজ্ঞাসাবাদের পরেও পুলিশ ফকিরচাঁদের কোনো চিহ্ন-ই পায়নি। কেউ আন্দাজ করতে পারছে না যে সে কোথয় লুকিয়ে ছিল। সে গোরস্থানে কবরের ভেতর নিশ্বাস নেওয়ার জন্য গর্ত করে তার ভেতরে লুকিয়ে ছিল। সেই দিনের পর থেকে ফকিরচাঁদ ডাকাতি ছেড়ে দিল।ফকিরচাঁদের ডাকাতি ছাড়ার সপ্তাহ খানেক পরে গ্রামে হাস মুরগী চুরি হতে থাকে।তবে অনেকের ধারণা ছিল, অবশ্য সেই ধারণা সঠিক ছিল, যে ফকিরচাঁদ তাদের হাস-মুরগী চুরি করেছে কিন্তু নিজের গ্রামের মানুষদের সঙ্গে ভালো ব্যবহারের ফলে তারা ফকিরচাঁদকে ছেড়ে দেয়। তারপর ফকিরচাঁদ রঘু মল্লিকের খাটালে কাজ করতে লাগল। অবশেষে খাটালে কাজ করে কিছু টাকা উপার্জন করে গরু কিনল এবং সেই গরুর দুধ বিক্রি করে তার দিন ভাল ভাবেই কাটছিল।এমনকি গরীব ছেলে-মেয়েদের বিনা টাকা-পয়সায় দই তৈরি করে খাওয়াত,এমনকি তাদের ভূতের গল্প শোনাত। এর থেকে বোঝা যায় একটা মানুষ বাইরে কতো-টা কঠীর হলেও ভিতরে তার একটা নরম হৃদয় থাকতে পারে। কিন্তু সেই ফকিরচাঁদ এখন টিবি রোগে আক্রান্ত এবং তার বয়স এখন ছিয়াত্তর বছর। এখন ফকিরচাঁদের শীর্ণকায় চেহারা দেখে আন্দাজ করা মুশকিল এই সেই বাবা-ঠকুরদার মুখে শোনা বিশাল চেহারার ফকিরচাঁদ। এখন মাঝেমধ্যে ফকিরচাঁদ আমার বাবার কেরানির দোকানে বসে। আমার বাবা ওঁকে মুড়ি ও গজা খেতে দেন।

