সমীরণ চট্টোপাধ্যায়-এর গল্প

সমীরণ চট্টোপাধ্যায়-এর গল্প

দুচামচ বাড়াবাড়ি

 

 

কথায় আছে, স্বপ্নের পোলাওতে ঘি কম ঢালতে নেই। আমাদের প্রফেসর যেহেতু ঘুমোন না কিন্তু স্বপ্নেই থাকেন, তাই হয়ত ঘি কখনও কখনও কম পড়ে যায়। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা মারত্মক রোগ নাকি ক্ষমতা সেকথা বিচেরের কোন ভার আমাকে কেউ দেয় নি। সুতরাং এতুকুই জানা থাক যে আমাদের প্রফেসর একজন  সফল ব্যবসায়ী। প্রফেসরের ব্যবসা। সুতরাং কম বিনিয়োগ, বিপুল রিটার্ন আর সব থেকে ভাল কথাটা হল পুরোটাই ট্যাক্স-ফ্রী। ভাবছেন, ধরে ফেলেছেন? ব্যাবসাটা প্রাইভেট টিউশন? এত সহজ হলে ওঁকে স্বপ্ন দেখতে হতনা। যদি বলি  ব্যবসাটা শিক্ষাঙ্গন তৈরির, তাহলে আমি নির্ঘাত কেস খাব। এবং যে খেলাই হোক, রেফারিই হোক বা আম্পায়ার, হাইকোর্ট কি সুপ্রিমকোর্ট, আমাকে লাল কার্ড ধরাবেই। সুতরাং কোন ব্যাবসায়ী নয়, আমাদের প্রফেসর হয়ে উঠলেন একজন মহান উদ্যোগপতি। এইবার মহান। মহান, কারণ তাঁর উদ্যোগ শিক্ষার আলো নিয়ে দিকে দিকে আঁধার দূর করার। কিন্তু এমন মহান কাজ করতে গেলে তো দাদা মনোহর ধনকরের মতো প্রথমে দেউলে হয়ে পরে রাজনীতি করতে হবে। মুশকিল হল, তিনি আবার নেপথ্যচারী থাকতে চান। অতএব, অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাঁকে একটা গুরুদক্ষিণা নিতে হয়। সে তো পরমগুরু দ্রোণাচার্যও নিয়েছিলেন। এবং যেমন তেমন দক্ষিণাতো নয়, একেবারে রাজত্ব, রাজকন্যেটা কেবল conditions apply এর জন্য বেরিয়ে গেছে। এমন কলিকাল যে এই গুরুদক্ষিণাকে দুর্জনেরা টিউশন ফী ভেবে বসে।

 

একবারও ভাববেন না আমি তাঁর রোমহর্ষক জীবনীর পাতা খুলে বসেছি। তেমন সাধ থাকলেও সাধ্য নেই এই মুহূর্তে। আমার গল্প তাঁর নবরত্ন সভার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। একবার মনে করিয়ে দিই। আবুল ফজল, তানসেন, ফইজি, তোডরমল, বীরবল, রহিম, ফকির, মান সিং, দো পিয়াজা – এদের নিয়ে আকবরের নবরত্ন। আকবরের নবরত্নের সকলেই ছিলেন কাব্যময়। এখানে কিন্তু পূর্ণিমার চাঁদ হল ঝলসানো রুটি। সকলেই প্রায় গায়ক এবং কবি নিদেন পক্ষে লেখক বলেই নিজেদের চেনেন, এবং চেনান, কিন্তু হৃদয়ের আসনে লক্ষীর আসনটি শক্তপোক্ত, সরস্বতীর গ্যারেজটি নড়বড়ে। এখানে অবশ্য ত্রিস্তরীয় নবরত্ন, অনেকটা ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত রাজের মতো। শুনে মনে হবে নিদারুণ গণতান্ত্রিক কাঠামো। কিন্তু শেষমেশ কেন্দ্রিকতার গণতন্ত্র। গণতান্ত্রিক ভাবে এক কেন্দ্রের দিকে সকলের যাবার প্রতিযোগিতা।  এতক্ষণে গৌরচন্দ্রিকা শেষ। এবার কাহিণীতে ঢোকা যাক।

 

প্রথমেই বলে রাখা ভালো, জাঁহাপনা এবং তার নবরত্নের সকলেই ইউটিউব এবং হোয়াটসয়্যাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলারশিপ পাওয়া ছাত্র। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, আমাদের জাঁহাপনার রাতে ঘুম আসে না। সর্বক্ষণ নজর কোন রাজ্যকে মানে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, জমি, বা পুরনো কারখানা, যা আছে চোখের সামনে, তাকে ঢুকিয়ে দাও নিজের সীমানায়। কিন্তু যুদ্ধ করে নয়। ছলে, বলে, কৌশলে। অনেকটা স্ক্র্যাপ মাল কেনার মতো। নিজেকে ভাবেন যুগান্তকারী। তিনি মনে করেন, পৃথিবীর বড় সমস্যা গুলো আসলে চিন্তার দৈন্য থেকে আসে। সে সমস্যা খাবারের অভাব হোক বা কোকাকোলার গোপন ফর্মুলা হোক। কোভিডের সময় আর পাঁচটা লোকের মতো তাঁর ডিপ্রেশন হয় যদিও অ্যাডমিশন বেশিই হয়েছিল। গোল বাধল ডিপ্রেশনের ওষুধের নির্বাচনে। যদি ট্যাবলেট, ইঞ্জেকশন হত, তাহলে আমার কিছু বলার থাকত না। কিন্তু অনুপান হিসবে দেওয়া হল একটা মোবাইল আর তাতে গোঁজা থাকল এ আই। এই গোঁজামিল আর গঞ্জিকার মধ্যে নাম ছাড়া যে আর কোন তফাত থাকবে তা আমাদের ভাবনার বাইরে। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নিশ্চিন্তে আর থাকা গেল কই! কোভিডের ভাইরাস আর এ আই এর মিশেলে এমন একটা খিচুরি তৈরি হল যার ফলাফল নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না।

 

দীর্ঘ বিরতির পরে নবরত্নের সভা বসেছে। তিনি এলেন এবং বললেন, “আমি চাই ক্লোন বানাতে। একটা বীরবল একটা তানসেন থাকবে কেন? এই যুগে! আমি চাই অনেক ছোট ছোট বীরবল, তোডরমল এইখানে খেলা করবে।  সকলে রিসার্চ করো।” যেমন কথা তেমন কাজ। সকলে বসে পড়ল ল্যাপটপের সামনে। গুগল থাকতে সার্চ আর কী এমন ব্যাপার! তারপরে মোক্ষম জেন এ আই। ওটায় দেখে নিলে সার্চের ওপর রিসার্চ।  আবুল ফজল বললেন, “এ, তো জ্ঞানের জগতে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।” সারা জীবন জাঁহাপনাকে তেল দেওয়া ওঁর স্বভাব। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন কিন্তু তোডরমলের দিকে তাকিয়ে সামলে নিলেন। তখন রাস হাতে নিলেন ফইজি। বললেন, “এ নিয়ে এখন খুব রাশ, থুড়ি রেস। এই দেখছি ইউক্রেন এ ব্যাপারে রাশিয়ার চেয়ে এগিয়ে গেছে।” বলেই ল্যাপটপ বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্যাপারটা বীরবলের নজর এড়ায়নি। “আসলে এই রিপোর্টটা না বিশ বছর আগের। তারপর কী হয়েছে কে জানে?” ফিসফিস করে বীরবলকে জানালেন ফইজি। “নিয়ে নেব জাঁহাপনা?” এবার মান সিং এগিয়ে এলেন। “গোটা ইউক্রেন?” জাঁহাপনা ততক্ষণে হন হন করে হাঁটছেন।

 

আট তলার ছাদ। সেখানে ফকির ঘাস বিছিয়ে দিয়েছে। জাঁহাপনা হাঁটছেন আর ভাবছেন। “ঠিক আছে। তোমরা একটা ডিটেল রিপোর্ট দাও।” বলেই তানসেনের দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি একটা গান বাঁধ। যা শুনে লক্ষ লক্ষ ছেলে মেয়ে আমার এখানে পড়তে আসবে আর লক্ষীর কৃপায় আমাদের ভাঁড়ার ভরে উঠবে।” “সে কী! এত ছেলে মেয়ে পড়বে কোথায়?” সকলে জানতে চায়। “অনলাইনে। কোভিড আমার চোখ খুলে দিয়েছে। স্বয়ং ভগবান আমাকে সিগন্যাল পাঠাচ্ছেন। আর কোন ভয় নেই। সকলে কাজে লেগে পড়।” সবাই কাজে লেগে পড়ে। সকলেই গবেষণায় লেগে পড়েছে, কেউ চ্যাট জিপিটি জিজ্ঞেস করছে, কেউ Bing-এ গিয়ে “how to clone Birbal” লিখছে। তোডরমল একটু বেশি উৎসাহী। সে তো কিনা eBay থেকে একটা পুরোনো 3D প্রিন্টারও এনে ফেলল — বলে, “এবার বীরবলের একটা অবতার ছাপাব!” অবতার ছাপানোর আগেই ফকির এসে জানাল, “স্যার বলছেন, ক্লোনে ক্লোনে ভরে গেলে আমাদের আসল বীরবলকে চিনব কিভাবে?” তানসেন একটু গলা খাঁকারি দিয়ে বলে, “তাতে কি! আসল বীরবল গান গায়, ক্লোন তো autotune ছাড়া আওয়াজই করতে পারবে না।”

 

পরের মিটিং। তিনি এলেন। “এইবার দেখো। এমন একটা বিশ্ববিদ্যালয় বানাব, সবার তাক লেগে যাবে।” সকলে উৎসুক। “দেখ, সেখানে কোন ছাত্র পড়তে আসবে না। কোন ক্লাসরুম লাগবে না, কোন ল্যাবরেটরি থাকবে না, কোন শিক্ষককে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে না।” এইবার একটু দম নেবার জন্য যেই থেমেছেন, অমনি দো পিয়াজা বলে উঠল, “অথচ ছাত্র থাকবে!” “লাখে লাখে। আমি এমন নেগেটিভ-পজিটিভ মার্কেটিং করব যে লাখে লাখে ছেলে মেয়ে ভরতি হবে”, জাঁহাপনা জানিয়ে দিলেন। “যাক, একটা ব্যাপার ফাইনাল হল। তাহলে এই সব বিল্ডিং এর কী হবে? পড়াবে কারা?” তোডরমল আর বীরবলের চিন্তা আর বাঁধ মানে না। ফইজি ল্যাপটপ থেকে চোখ না তুলে বলে চলে, “চ্যাট জিপিটি বলছে আজকাল মানুষেরও অবতার হচ্ছে। অবতার মানে ঠিক তার মতো দেখতে একজন তার গলার স্বর নকল করে হাত পা ছুঁড়ে কথা বলবে যদি তাকে কী বলতে হবে জানিয়ে দেওয়া হয়। এই ব্যাপারটা দিয়ে আমরা একই টিচারকে একই সঙ্গে অনেক ক্লাসরুমে পড়াবার ব্যাবস্থা করতে পারি।” “যাক মাইনের বাজেট তাহলে বাড়বে না”, তোডরমল হাঁফ ছাড়ল। এইবার বীরবল, “তাহলে একটা হেভি ডিউটি ছাপাখানা বানালেই হবে। দিন রাত ঘসঘস করে সার্টিফিকেট ছাপিয়ে যাবে।” জাঁহাপনা বললেন, “বুঝে গেছ সকলে। তাহলে একটা জুতসই নাম দেওয়া যাক।” অনেক ভেবে নাম দেওয়া হল, “প্ল্যানেট নম্বর ওয়ান ইউনিভার্সিটি”।

 

গম্ভীর মুখে আবুল ফজল ফিসফিস করে বললেন, “স্যার ভাবছেন, প্রতিটা ছাত্রের জন্য এক-একটা চিপ থাকবে, যেটা তারা প্রতিদিন কী ভাবছে, কী খাচ্ছে, কোন কোর্সে মন বসছে না — সব আপডেট দেবে।” বীরবল বলল, “তাহলে তো ক্যাম্পাসে প্রেম করতে গেলেও মা বাবার কাছে নোটিফিকেশন যাবে: “Your ward is showing signs of hormonal distraction.” সকলের মাঝে তখন দো পিয়াজা চুপচাপ বসে আছে। হঠাৎ সে বলে উঠল, “স্যার তো বলেছিলেন, নতুন ইউনিভার্সিটিতে সব হবে — শুধু মানুষ ছাড়া। এতটাই ফিউচারিস্টিক।” রহিম সঙ্গে সঙ্গে বলে, “হ্যাঁ, ওখানে ছাত্র থাকবে না, শিক্ষক থাকবে না, থাকবে শুধু সার্টিফিকেট আর ইনভয়েস।” প্রফেসর তখন স্বপ্ন দেখছেন—“একটা কম্পিউটার থাকবে, যা নিজের মাথা নিজেই আপডেট করবে, নিজের চিপ নিজেই বানাবে, ছাত্র নিজেই নিজেকে পাস করাবে। এমনকি ফিডব্যাকও নিজে দেবে — ‘খুব ভাল শিখেছি নিজেকে, থ্যাংক ইউ’!” সেই সময় ফইজি বলে, “স্যার, আমি একখানা কোর্স ডিজাইন করেছি—‘Advanced Daydreaming in Disruptive Ecosystem’। ওতে চার হাজার জন ভর্তি, সকলেই চাকরি খুঁজছে এখন।” তোডরমল ধোঁকা খায় না, বলে, “কোর্সের শেষে কি হবে?” ফইজি বলে, “যা হয়! একখানা QR কোড দেওয়া হবে, স্ক্যান করলেই সনদ মিলবে, আর সাথে সাথে একটা অদৃশ্য চাকরি—যার বেতনও অদৃশ্য।” এইসব উদ্ভট আলোচনার মাঝে একদিন ফকির চুপিচুপি আবিষ্কার করল যে স্যার নিজেই নিজের একটি ভার্সন বানাচ্ছেন। ফকির রেকর্ড করে রাখে — ভার্চুয়াল প্রফেসর বলছে: “আমি মানুষ নই, ভাবনার ঢেউ। আমি ল্যাব নই, আমি স্বপ্নের লোন অ্যাপ।”

 

এই পর্যন্ত মোটামুটি ঠিকই চলছিল। বাদ সাধল দো পিয়াজা আর আবুল ফজলের মধ্যে একটা সাক্ষাত। আবুল ফজল দো পিয়াজাকে ডাকল তার বাড়িতে। তেমন কোন অনুষ্ঠান ছিল না, স্রেফ আড্ডা দেবার জন্য। রোজা সেরে খেজুর, আপেল, ডালিম খেতে খেতে কথা চলছে। দো পিয়াজা বলছে, “এই আপেল খেয়ে মনে পড়ল। পশ্চিমে কে যেন একটা আপেল পড়তে দেখে একটা ভয়ানক আবিষ্কার করে ফেলেছে।” “হ্যাঁ। ওই তো, নিউটন। কালই তো ওর একটা মেইল পেলাম”। দো পিয়াজা আর থাকতে পারল না। বলেই ফেলল, “কাল তো আমরা নিউটনের সাথেই সময় কাটালাম”। “মানে?” আবুল ফজলের গলায় সন্দেহ। “মানে আমাদের স্যারের কথা বলছি। ওঁর সঙ্গে কথা হল না? ওঁর মাথায় তো টন টন নিউ আইডিয়া। নিউটন হল কি না?” আবুল ফজল দেখলাম নোট নিচ্ছে। তারপর বললেন, “স্যার ফকিরকে দিয়ে আরও একটা চিপ বানিয়েছেন। সেটা এবার আমাদের মাথায় বসাবেন, খবর পেয়েছি।” দো পিয়াজা তো হাঁ হাঁ করে উঠল। “কি বলেন, কি বলেন, স্যারের মাথায় আগে বসালে হত না? শর্ট সার্কিট হয়ে যদি একটা কিছু ঘটে যায়, স্যারের ব্রেনটা যদি তড়িৎ প্রবাহের পরে একটুও স্বাভাবিক হয়ে যায়, তাহলে মন্দ হয়না।” ফইজি টুক করে বলে দেয়, “স্যারের কয়েকটা ক্লোন করলে আর চিপ টিপ লাগবে না, এমনিতেই আইডিয়ার ভূমিকম্প হবে।”  দো পিয়াজা আজ একটু বাঁধনহারা। “আমি তো কোন কথা বুঝতেই পারিনা, শুধু ঠিক, ঠিক বলে দিই। স্যার হয়ত রকেটের মতো সব ধরা ছোঁয়ার বাইরে যেতে চান কিন্তু জ্বালানিটা চিনা মাল, ঠিক মতো স্পিড তুলতেই পারে না, গোঁত্তা খেয়ে সেই মাটিতে পড়ে যায়। মুশকিল হল, আবুল ফজল এই সমস্ত কথা জাঁহাপনার জীবনীতে নথিবদ্ধ করল আর জাঁহাপনা সেই জীবনী পড়ে বুঝে গেলেন যে নবরত্ন তাঁর কথা নিয়ে হাসি মস্করা করছে।

 

প্রফেসর বুদ্ধিমান। তিনি ভাবেন, “যদি একটা যন্ত্র বানানো যেত, যা মানুষ কী ভাবছে সেটা চোখের সামনে দেখিয়ে দিত?” এবং ঠিক সেদিনই জন্ম নিল তাঁর জীবনের সবচেয়ে বিপজ্জনক উদ্ভাবন — “মন-বেতার চিপ”।

এটি একটি বায়ো-চিপ, যা মাথায় বসালেই সেই ব্যক্তির মনের চিন্তাগুলো স্ক্রিনে ভেসে ওঠে। গোপনীয়তা? সে কী! প্রফেসরের মতে, “গোপন মানেই ষড়যন্ত্র। চিন্তা তো হতে হবে টেলিভিশনযোগ্য।”

 

প্রথম পরীক্ষার দিন। জাঁহাপনা জানেন, বীরবল, তানসেন, ফকির আর আবুল ফজল কে নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা দো পিয়াজাকে নিয়ে। তাকে বললেন, “এসো, তুমি হবে মানবজাতির ইতিহাসে প্রথম উন্মুক্ত মস্তিষ্ক।” এই বলে একটা ছোট্ট অপারেশন করে তার মাথার খুলির মধ্যে চিপটি বসিয়ে দিলেন। ঠিক যেমন পেসমেকার বসানো হয়। খানিকক্ষণ বাদে দো পিয়াজার জ্ঞান ফিরে এল। আর মুহূর্তের মধ্যে স্ক্রিনে ভেসে উঠল:
“আবার সেই আজব প্ল্যান! এইবার নাকি বাঁদর দিয়ে নারকেল পাড়াবে AI! আঙুর ঝুলবে ড্রোনে, শালপাতা পড়বে ক্লাউডে!” ঘরে এক মুহূর্তের নিস্তব্ধতা। রহিমের মুখ শুকিয়ে গেল। জাঁহাপনা ঘাড় নাড়লেন। বললেন, “পরেরটা চিপটা আসুক। এইবার রহিমের মাথায় চিপ। স্ক্রিনে ফুটে উঠল:স্যারের কথায় হাসি চেপে রাখি, কারণ চাকরিটা চাই। কিন্তু এই লোকটা ভিনগ্রহের কি? নাকি নাসার ফেলে যাওয়া প্রোটোটাইপ?” এরপর তানসেন। স্ক্রিনে এল:স্যার যদি একদিন বলেন—‘রোবট দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়াব’, আমি অবাক হব না। তবে যেন গলায় ‘অটো টিউন’ থাকে।”

 

নবরত্নরা একদিন সবার অগোচরে একসাথে জোট বাঁধে। বীরবল বলল, “আমরা আর ভাবছি না, কারণ ভাবা মানেই বিপদ। ভাবলে চিপে ধরা পড়ে যায়।” তানসেন বলল, “আমি এখন গান গাই না, কারণ আমার কণ্ঠের ফ্রিকোয়েন্সি স্যারের মেশিনে একবার ধরে ফেলেছিল—তখন থেকেই গান হল classified data।” রহিম বলল, “আমি তো রাতে ঘুমোতে গেলেও মনে হয়, আমার স্বপ্নগুলো কেউ রেকর্ড করে নিচ্ছে।”এরপর থেকে কেউ আর “স্যার, বাহবা!” বলে না। কেউ কিছু ভাবেই না। সবাই যেন একেকটা গাছ — না কথা, না ভাব। শুধু চেয়ে থাকে। চিপ জ্বলছে, স্ক্রিনে কিছু আসছে না। জাঁহাপনা ভাবলেন, “বাহ, কেউ তো এখন আর মিথ্যে বলে না। চিপ সাকসেসফুল।” কিন্তু একটু পর বুঝলেন — কেউ আর কিছু ভাবছে না। চিন্তা হয়ে গেছে ইনহাউস ডেটা প্রসেসিং। রহিম ধীরে ধীরে চাকরি ছেড়ে দেয়। মান সিং রাজপুতানায় ফিরে গিয়ে একটা হোম ডেলিভারি এজেন্সি খুলে নাম রেখেছে “চিপ ফ্রি চপপাট”। তানসেন গান গায়, নতুন রাগের নাম রাখে  “চিপহীন চিন্তা”, গানের প্রথম পংক্তি—“ভবিষ্যতের ব্যাটারি খায়, ভাবনারা আজ চার্জ ছাড়া।”

 

কয়েকজন ছাত্র বিদ্রোহ করল। স্লোগান উঠল, “চিন্তার ওপর চিপ চাপানো চলবে না!” একদিন প্রফেসরের বিরুদ্ধেই চিপের তথ্য ভিত্তিতে মামলা ওঠে। বলা হয়, “একটি চিন্তা দেখানো মানে কি সেটি প্রমাণ? যদি কেউ মনে মনে ভূত বিশ্বাস করে, তাকে কি ভূত বলে ধরা যাবে?” সরকারও নোটিস দিল — “মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। চিন্তা যদি শেয়ারবাজার হত, তাহলে তো প্রতিদিন মামলা পড়ত।”

 

প্রফেসর তখন একা। ল্যাবে বসে নিজের চিপ চালু করলেন। স্ক্রিনে ধীরে ধীরে ফুটে উঠল তাঁর মনের কথা: “সবাই চলে গেছে? আমিই একা বাকি? আমি তো চেয়েছিলাম একটা ইউনিভার্স, যেখানে সবাই একসাথে স্বপ্ন দেখবে। এখন শুধু একটা মেশিন বাকি, যে আমাকেই প্রশ্ন করে—‘আপনি কে?’” এরপর টুক করে একটা লাইন এল স্ক্রিনে: “Dream version corrupted. Please restore original human.” চোখে জল, ঠোঁটে হালকা হাসি। একটি বাক্য ভেসে ওঠে — “বাহবা নয়, ভাবনা চাই। ভাবনায় বন্ধুত্ব চাই।”

 

দেয়ালে ঝুলে থাকা চিপটা একবার টিমটিম করে, তারপর নিঃশব্দে নিভে যায় — ঠিক যেমন ভেঙে যায় এক দিবা স্বপ্ন, যার ভেতর ছিল দু’চামচ বাড়াবাড়ি আর একটুখানি ভালোবাসা।

 

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes