
জয়িতা চট্টোপাধ্যায়-এর কবিতা
আড়ালে সমিধ জ্বলে
পাঁজরের বুকে খড়ের মতন শব্দ বিছিয়ে রেখেছি
আর আমার কবিতার বুকে রেখেছি তোমার হাত
পাথরের বুক চিরে উঠে আসে রাত্রি
অজানা কোনো শৃঙ্গ থেকে গড়িয়ে পড়ে আমার নিঃশ্বাস
জীবন মানেই মস্ত এক চাকা,নীল ঘূর্ণির নাম
হেম হয়ে আসে দুহাতের কবিতারা
অক্ষরের স্রোত ভাসায় কবিকে
ভাসে কারো মুখের ছায়ায় নামের বানান।।
অববাহিকা
বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হওয়া শরীর
যুদ্ধের ক্ষণ জুড়ে লিখে যাচ্ছে প্রস্তাবনা
প্রবল জ্বরে শয্যাশায়ী সকল অঙ্গ
নির্বাসন ছাড়া সুস্হবোধ করবো না
একটা অভাব
পায়ের পাতা থেকে লতার মতো বেয়ে ওঠে
মনখারাপের শরীর মাটিতে ভাত খায়
তোমার অনুরোধে
তুমি নেই অথচ তোমার স্পর্শ পড়ে আছে
পড়ে আছে শরীর, মুহূর্তের বাঁকে
আমি আজও তুলতে পারি ঝড়
শরীর জোড়া তোমার নামের অববাহিকাতে।।
আরাম খোঁজে কাঠামো
নদী যেখানে দাঁড়ায় নিভৃতে
সেখানেই দেবীর বিসর্জন
নিহত শব, এখানে স্পর্শ নেই
নেই অপার টান
পলিমাটিতে আটকে থাকে মুকুটের মনি
অযত্নের মিষ্টি, মুখে ঠাসা পান
স্রোতে লাট খায়
আমি কি ভাবে যেন পাক খাই তার সাথে
আর দুহাতে বুনে যাই অরণ্য
জমা খরচের খেরো হিসেবের খাতা তলিয়ে যায়
দেবীর শরীরের নীল ওম ছুঁয়ে
খসে পড়া পালকের বিপন্নতা আর নয়
এভাবে চাইনি হলুদ শীত,এক বুক ঝড়
চাইনি তোমার বিসর্জনে, আমার নিরাময়।।
দ্রবীভূত
কলমে যা শব্দ আসছে তা তোমার প্রিয় নাম
সহস্র জন্মের দেনা শোধ করি কবিতা লিখে
দুর্বিনীত ভাগ্যরেখা নিয়ে আমার জন্ম
এখানে রোজ শখের চাবুক মারি বুকে পিঠে
চাবুকের রেখায় বদল আসে জীবনে
অজস্র মুহূর্তদের হারিয়ে আসতে হয় পথের পাশে
পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়
পিছনে পড়ে থাকে বিরহী থামের মতন আমাদের সাক্ষাৎ
জলের তলায় কান্না রঙে মেশে চলাচল
মেশে আমার চূড়ান্ত, মিশে যায় অসহ দিনরাতের কথা
মেশে অশব্দ ভাঙন হঠাৎ।।
তুমি নাম
বড় অগোছালো কথা ভিড় করে আসে
শরীরী পরাগে দোল খায় অনন্ত মৃত্যু
দেহময় এবড়োখেবড়ো চেনা নাম
অনন্ত কোদাল দিয়ে দুটো দিক সমান করছি
চেনা নামে পথ ভারি হয়ে আসছে
দুদিকে আকাশ আছড়ে পড়ছে
আমি তলিয়ে যাচ্ছি , আমি তলিয়ে যাচ্ছি
হে ঈশ্বর তবু তোমার স্বর্গ টলে না।।
কবিতা বিঁধছে বুকে
কলম লিখে যাচ্ছে নিরন্তর
লজ্জা , ঘেন্না,ভয় ছেড়ে
জড়িয়ে যাচ্ছে কবিতায়
তোমার নামের ইচ্ছে ইচ্ছে ওম
নিয়ম মাফিক এখানে জীবন
তবু স্বপ্নে কুড়োনো তোমার নামের ভোর
পঞ্চম আড়াল ঠেলে লেখা হচ্ছে কবিতা
অনন্য ফেরারীর মতন
সুবিখ্যাত ছায়াপথে আজ ভাসা ভাসা দিন
স্বপ্নে আহত কবিতা লেখা আঙুল
অপ্রাকৃত হাত এখানে একলা অন্তরীণ।।
আঙুলের নখে ধার
কী প্রচণ্ড মানুষী গন্ধ
একটা নেশার ঘোর
স্পর্শ আছে,
তবু বেঁধেনি নখ বুকের ভেতর
আঙুল তখন পদ্মের পাপড়ি
ঠোঁট দুটো অমৃতে চুর
তোমাকে ছোঁয়ার পর
সন্ধের দুটো হাত নিশ্চিন্তপুর।।
শূন্যের ভেতর
মৃত্যুর দুধারে অনর্থক ছোটাছুটি
আনকোরা রঙে খোঁজা মৃত্যুমুখী ঘর
একই পথে তুমি ফেরো
আমার ফেরার ঠিকানায় কাটাকুটি তারপর।
অস্পষ্ট নদীর ধারে বসে থাকা নেই
মানুষ কি জীবনে একবারই মরে?
স্বপ্নের ভেতরে ভাঙা হয় কাঁচ
ভাঙে না ঘুম, শূন্যের ভেতর শরীর ঘুমায় অঘোরে।।