
বাবুঘাটের লাইব্রেরি
বেবী সাউ
একগুচ্ছ কবিতায় বেবী সাউ সাজিয়েছেন তাঁর অগ্রজ কবিদের উল্লেখযোগ্য কবিতার গ্রন্থগুলি সম্পর্কে একধরনের শ্রদ্ধার্ঘ্য। আলোর এই উৎসবে সেই কবিতাগুলিই রইল।
দিনগুলি রাতগুলি
কুয়াশায় ঘেরা পথ
কোনদিকে যাবে, আয়ু!
পশ্চিমে ফিরে গেছে পাখিদের দল
ডানা কাটা
তাদের পালক আজ লিপি হলো, রঙিন অক্ষর
সেসবের মানে খুঁজে নিতে নিতে আমাদেরও অবসর হয়নি
নিজের দিকে ফিরে তাকাবার…
ধোঁয়াশামাখানো পথ
আয়ু, তুমি তার দিকে গেলে!
সবকিছু ছেড়ে তার দিকে যাবে শেষতক!
যৌবন বাউল
এতকথা লেখার তো প্রয়োজন হয়নি কখনো…
প্রতিটি শূন্যতা আসলে মায়া আর মায়া
জুড়ে থাকা স্মৃতি
মাঝে মাঝে উই ধরে
ঝুরঝুরে প্রতিটি বইয়ের পাতা যেন আয়ু; যেন তুমি
হাপিত্যেশের মাঝখানে জেগে উঠে
গলা ছেড়ে গান গায়
ততক্ষণে শ্মশানের আলো নিভে গেছে
ডোমেরাও ফিরে গেছে শান্ত খিদেটির কাছে
ক্লান্ত এ শহর শুধু একা আর একা আর
একা…
ব্যান্ডমাস্টার
শোক পর্যাপ্ত নয়
সুতাহীন এই মালা জীবনের মানে হলো?
তাত্ত্বিক প্রস্তাব নিয়ে এসো আয়ু, গল্প করি
মাঝে মাঝে তুলে ধরি চিরযৌবনের কথা
তার অলিগলি
অলিখিত শিশুকাল, হাসি, খেলা, বেদনার কথা
আর তুমি সাবধানে, অতি সাবধানে
অতিথির সেবা হলো ভেবে
দাঁড়াও গেটের কাছে…
আমি জুতো বাঁধি
ফিরে এস চাকা
আয়ু, তোমারও বিভ্রম ঘটে!
গোধূলির বেলা দেবে বলে একে একে কেড়ে নিলে সঞ্চিত সঞ্চয়
ধুলো জমা খাতা, পাতা
চারপাশে বুনো ঝাড়, শ্বাপদের লোভ
এ পথ অপরিচিত ; অসূয়াদায়িনী
তুমি নেই…
এমন পথের কাছে নতমুখ, হাত চেয়ে বসি?
অন্নপূর্ণা ও শুভকাল
কার কাছে যাবো বলো,আয়ু?
কার হাতে তুলে দেবে আমার বিদ্বেষ, রাগ-ক্ষোভ!
সংযম শেখাবে, আয়ু? জাতির বিবেক হয়ে পথ দেবে এঁকে?
যে পথ শূন্যতা শুধু,
যে পথ একা একা হেঁটে যায়, দিগন্তের ব্যালকনি চেনে
তার কাছে প্রতিটি গোধূলি মিথ্যে,
সমস্ত সকাল আজ হাহাকার শিখে গেছে বেশ
কথার পরমান্ন রেঁধে বলো তাকে ‘সিঁড়ি নয়, ঘরে এসে বসো…’
রাস্তায় আবার
সে ঘর শূন্য আজ
কোলাহল নেই, চায়ের কাপগুলি ফাঁকা পড়ে আছে
তীর্যক তাকাও আয়ু!
স্মিত চোখে দেখে নাও প্রতিটি সিঁড়ির ধাপ
একেকটি অক্ষর যেন শোক-পদাবলী
ইতিহাসও নড়ে ওঠে অনাথ কবিতা যেন
হেমন্তের অরণ্যে আমি পোস্টম্যান
তোমায় আমি দেখেছিলাম আগুন নিয়ে খেলছ একা
দেখেছিলাম ঘরের মধ্যে রোদ পড়েছে পাখির মতো
ঘটনা নেই জীবন যার তেমন কোনও শস্যক্ষেতে
হারিয়ে গেছে রাস্তাখানি, তোমায় আমি দেখেছিলাম
আমার কথা এখন জানি লুকনো সেই ঘামের পাশে
মনখারাপে হারিয়ে গেছে, দেবতাহীন উপসর্গ
মন্দিরে তো যাই না , তবু কী ভোগ তুমি চাইতে গেলে
এখন শোনও লম্বা কোনও রাত্রি আসে শ্বাপদচালে
তোমায় আমি দেখেছিলাম, শ্রীপঞ্চমী, দেখেছিলাম…
সাতটি তারার তিমির
ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়িয়ে আসি
আমি তো আজ
নতুন কোনও ঘর চিনি না
মড়ক লেগে গেছে এবার
আমি তো আজ নতুন কোনও পথ চিনি না
সোনালি কাবিন
আমি যেমন করে গাই
আমি যেমন করে ভাবি
জানি কেউ কোথাও নেই
এই ভুবনমাঝে একা
ছিল রবীন্দ্রসঙ্গীত
ছিল বসন্তবেহাগ
আজ ডিসটোপিয়া ভাবি
আজ নগ্ন আয়না
আমি যেমন করে গাই
আমি যেমন করে বাঁচি
ওড়ে প্রজাপতির দেহ
ছাইভস্ম পৃথিবীর
আলোর অপেরা
জলে ডুবছে যে শহর, আমি তার কাছেও যাব
পোড়া মাঠ ভেসেছে তার
ঘরে জল ঢুকেছে যেন, সব নেওয়া বাকি
আমি তার কাছেও যাব, যার মুখ থেকে রক্ত
ভলকে ভলকে উঠছে
আগ্নেয়গিরির মতো মৃত
আলেয়াহ্রদ
হয়তো সেও আমাকে পেতে চায়
অন্ধকারে ফুল তোলার মতো
নীরবতায়
হয়তো সেও আমাকে পেতে চায়…
কখনও যাকে দেখিনি কোনওদিন
সাদা পাথরের গোলাপগুচ্ছ
ঘরোয়া গান বাজে আমার মনে
তোমার কাছে যাই
তুমি ঘরের থেকে অনেক ঘরে
আমাকে নিয়ে যাও
আমি তাদের দেখি
তারা আমায় চেনে না কোনওদিন
(পূর্বে বান্ধবনগর কর্তৃক প্রকাশিত)