
শ্যামাশিস জানা-র কবিতাগুচ্ছ
পাহাড়
পাহাড় নাকি সবকিছু সহ্য করে নেয়
তাই অঙ্গগুলো সন্তর্পণে কেটে
লুকিয়ে রেখেছিলে,
ভেবেছিলে কেউ বুঝবে না
কিভাবে গোপনে বিক্রি হয়েছে
সমগ্র পাহাড়, নদী ও জঙ্গল
সবকিছুই ভেসে গেল জলস্রোতে
ভেসে যায় খণ্ড খণ্ড কাঠ, প্রশাখা-শাখা
পাহাড়ের শরীর কেঁপে ওঠে
ধুয়ে যায় গাছের মূল, দেহকাণ্ড, পাথরের টুকরো
সর্বসমক্ষে নগ্ন করে
শৈলজল ঢুকে পড়ে নাটকের গভীরে,
ভেসে যাচ্ছে—
খেলনা পুতুলের সংসার, মাংসপিণ্ড
আলমারি, খাট, শিশুর ভাঙা কণ্ঠস্বর
ধ্বসে পড়ে ব্যক্তিগত মত
ফেটে পড়ে মাটির কণা, ছিঁড়ে যায় দেশজ শিকড়
গলন্ত চোখের মণি ছড়িয়ে যাচ্ছে আকাশ ফুঁড়ে
ছায়াপথের কসমিক ধুলোয়
ইডিয়টস
কলেজ জীবনে দেখা একটি সিনেমা
তারপরও বহুবার ঘুরে ঘুরে দেখা,
অনেক দৃশ্যকল্প, সংলাপ ও ছবি-
মাঝেমাঝে ফিরে আসে আড্ডায়;
র্যাঞ্চো, রাজু ও ফারহানরা যেন স্বপ্নের মত
অল ইজ ওয়েল, অল ইজ ওয়েল
এমন এক দর্শন জীবনে আলো দেয়
গল্পের শেষে হেরে যায় সেই চতুর
কি যেন এক অপার তৃপ্তি, উপসংহারটিও
ন্যায়ের অস্বচ্ছ আস্তরণ দিয়ে মোড়া!
সত্যিই কি অল ইজ ওয়েল?
এগুলো কি শুধু রূপলি পর্দার চিত্রনাট্য?
বাস্তবের ঘটনাগুলো একদম উল্টো
সেই রাজু আর ফারহানের নায়ক
র্যাঞ্চো এক ঠিকানাবিহীন জেলে বন্দী
আর চতুরের দল বার বার জিতে যায়
এবং র্যাঞ্চো হেরেছে, হেরেছে, হেরেছে
তাকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে রাখে
অগণিত স্বীকারোক্তিনামায়
ব্যালেস্টিক
দুটো প্লেন আস্ত ঢুকে গেল শরীরের ভেতর
তারপর আমরাও নামাবলী গায়ে নীচে নামলাম
সূর্যাস্তের ভেতর দিয়ে উঠে যায় আলোকিত সিঁড়ি
মিছিমিছি বিষপান ধুয়ে ফেলে প্রতিটি শ্রাবণ
ঝড় এসে ভেঙে দেয় আমাদের স্খলিত সাঁকো
চোখের ভেতর বাষ্প ঘেরা এই পাপ ছড়িয়ে গিয়েছে
এক ঘেন্নার মুখ থেকে অন্য অনেক মুখে,
ঢেকে রাখো সর্বব্যাপী দ্বন্দ্বময় সীমানা ধারণা
চারপাশে ছিটকে পড়ে অযুত শিশুর মাথা
সকলেই গোপন রাখে নিজস্ব ব্যালেস্টিক ক্রোধ
বৃন্তহীনা কুকুরীরা প্রতিবাদী শব্দ শুঁকে শুঁকে-
ঘুমিয়ে পড়েছে নৈতিকতার ধূসর আঁচলে
ভেজা ক্রুশকাষ্ঠেরা সারিবদ্ধ হেঁটে যায়
শিরস্ত্রাণহীন ভেজা জেরুজালেমের দিকে