
অর্থিতা মণ্ডল-এর কবিতাগুচ্ছ
তবু ফসফরাস
তোমার ধ্যান ভেঙে গেলে নির্ণীত অপাপ বিদ্ধতা
ডাহুকের ডাক ঘিরে ঘিরে জলকথা বাঁধে
কী মোহময়ী স্রোত আমাদের বাড়ির উঠোন
ধ্বসে যাওয়া ঘর শ্যাওলা গন্ধ জড়িয়ে মায়ের শীর্ণ হাত
অন্যজন্ম থেকে কেঁপে কেঁপে উঠছে
আমি ওঁকে ছুঁতে চাই আর ভেজা মুহূর্ত ফসফরাস…
অদ্ভুত বড়ো অদ্ভুত বলো, মুহূর্তরা জেগে আছে
আর এ শুধু দেয়ালে টাঙানো বিস্তৃত মায়া
চারা এবং দিনলিপি
গন্তব্যঘাট প্রিয় হলে কুড়িয়ে নাও বকুলফুল
অঝোর জলের ভেতর ক্রমশ ঝাপসা হওয়া জীর্ণ বাড়ি
মায়া কিংবা টুকিটাকি অভিমান, ন্যাপথলিন জড়ানো শাড়ির আঁচল
এসবের ভেতর কে যেন হত্যা করছে রোজনামচার দিন
হত্যাকারীর গা ঘেঁষে তোমার চোখ গেঁথে নিল ভাঙা বাড়ির দাওয়া,
মায়ের হাতপাখা, কিছুটা সুখী চালচিত্র…
এসব ছায়া হয়ে আসে, ছায়া হয়ে থাকে। তোমার গন্তব্যঘাট প্রিয় হয়
তবু কী অসহ্য টান বাবার কোল ছুঁয়ে, ঘাম মুছিয়ে দেওয়া মা…
এই দোলাচল অলৌকিক জগতে নিয়ে আসে, বিস্মিত কমণ্ডলু
হতাহতের দিনলিপির উপর চারা পুঁতে দেয় রোজ
না-মৃত এবং উল্কিরা
ভাসানের আওয়াজ ছাপিয়ে দেবী নয়, ভেসে যাচ্ছে জীবন্ত লাশ
এই লাশ তুমি চেনো। একটা গোটা উপত্যকার হাঁ, অযাচিত হাহাকার, বিস্তীর্ণ খিদে –
এইসব কিছু লাশের শরীরে উল্কির মতো লেপ্টে আছে।
খই ছড়ানো মুহূর্ত ঘিরে প্রতিমার বিষণ্ন মুখ, ডুবে যাওয়া আয়োজন
আমাদের অসুস্থ বারান্দার উপর পারিবারিক ছবি ঝুলছে,
একটা নগর মৃত হয়ে গেলে নদীর ভেতর গলে পড়া মাটি ক্লেদ হয়, ত্বক হয়
আর নিঃশব্দে পুড়ে গেল ঈশ্বরীর নিরাপদ আশ্রয় কিংবা অভয়মুদ্রা
ভাসানের আওয়াজ ছাপিয়ে দেবী নয়, ভেসে যাচ্ছে অগণিত জীবন্ত লাশ
ভান
উৎসবের রেশ মুছে গেলে গতানুগতিক ফাঁকফোকর, গুটিয়ে নেওয়া আয়ু
দুচোখের পাতা ভারী হয়ে আসে, রোজনামচার ক্ষয় নিয়ে গাছেদের বসবাস।
শহর ছাড়িয়ে চলে যাওয়া মজদুরি রাতে আমরাও ঢুকে যাচ্ছি গত শতকের মায়ায়
অথচ মায়া শুধু এক নিমিত্ত, বড়ো অগোছালো সংসার-বাঁচা,
ভানেদের মুখোশ সরিয়ে রেখে আমাদের উন্মুক্ত মুহূর্ত প্রতিদিন অমাবস্যা আঁকে-
ভাঙা মেলা, এঁটো খাবারের খোঁজে আসা সারমেয়, আমি, তুমি আর…
নীলকন্ঠ পাখির মিথ জড়িয়ে আগলে রাখছি সন্তান কিংবা যাবতীয় প্রলাপ