অনিরুদ্ধ সুব্রতর গুচ্ছ কবিতা:

অনিরুদ্ধ সুব্রতর গুচ্ছ কবিতা:

নদীর যে ঢেউ

পূর্বাপর সব
উচ্চারণ গুলোর এক একটি
আলাদা পোশাক আছে বলে মনে হয়

জিহ্বা তার পর ততবার স্নান করে নেয়
অন্তরের আলমারিতে কেনা আছে
নতুন অন্তর্বাস

‘গুড ফিলিং’ পরিভাষাটি উচ্চারণ করে
খিলখিল করে হেসে উঠেছিল
এক পরিযায়ী হাঁস

কান্না গুলোর এক একটি
আলাদা আলাদা স্বরলিপি আছে মনে হয়
সবটাই রবীন্দ্রনাথ থেকে টোকা নয়।

গ্রহ হতে গ্রহে

আত্মকথা বলবার মঞ্চ নয় এ
আমি যাকে জীবন ভাবছি
সে আসলে মহাশূন্যের ম্যাজিশিয়ান
লাল-কালো বাক্সের ভেতর
পুরে দিতে পারে পায়রা ও ফুলদানি
অথবা কান্নার স্লেজ গাড়ি, অবাধ্য হৃদয়
মেহনের মাঝখান ভেঙে মৃত্যু
উড়তে পারে স্বপ্ন-সৃজনের কালো গাউন
আত্মজীবনীর জীবন নয় এ
আমি যাকে যাপন ভাবছি
আসলে সে পরিত্যক্ত গুহায় ভ্রমণ।

কোনো পৃথিবীর শ্রাবণ মাস

কিছু মেঘ ভুলে যাবে তার নিজ ভরবেগ
ভীষণই অস্পষ্ট হবে কতিপয় কষ্ট
যে ক্ষত নীরব ও অক্ষত, তার নত-ভেদে

নিঃশব্দ করে দেবে নীল-শব্দে যা লীন
প্রত্নের পায়ে নাচবে অর্বাচীন ঘুঙুর
কিছু মেঘ বেগবতী এতো, তবু ভার-হীন

যে বৃষ্টি রোদ্দুরে হাসে প্রস্ফুটিত পুষ্পরাগ
পুনঃ গোধূলির দিকে ধাবে রক্তলাল
তখনও সে মৃদু মেঘে, অনাবৃষ্টির অনুতাপ

বড় অস্বচ্ছ কোনো পৃথিবীর শ্রাবণ মাস
কিছু মেঘ ছায়া-রহস্য দেবে ম্লান করে
বিস্মিত হুতাশে, আগলে বসবে যে চৌকাঠ।

খিদে

পৃথিবীর মানুষের কত খিদে
খিদের ভিতরে কত মানুষ দিশেহারা

দিশাহীন তেষ্টায় নিদারুণ হাহাকারে
কত কত মর্ম ও মুহূর্ত মরে মন্বন্তরে
দুর্বল ও কৃশ হয়ে যায় সেসব উপস্থিতি
স্থিতি নয়, ছুঁয়ে দেখা নয়, জঠরও নয়
মায়া খায়, মন খায়, মুক্তি ও মনন-প্রীতি

খায় কচি ডানা, ক্ষুধার্ত জানে না যেন
কেন যে তার এতো সর্বভুক লালা।


সে তো মুছে যাবে

এক প্রবহমান প্রত্ন-গদ্যের অপাংক্তেয় রচনার
অশিষ্ট দীর্ঘ বাক্য-স্রোতের মধ্যে জন্মে
অনুচ্ছেদ-হীন গলগল করে বয়ে যাওয়ার ভিতর
অনির্দিষ্ট বক্তব্যের খোলস ভাঙা শাঁস খেয়ে
আর প্রতিটি অবহেলায় অখ্যাত রসে পুষ্ট হতে হতে
ভূতপূর্ব মহিমান্বিত আকাশের দিকে রুগ্ন মাথাকে
তুলে ধরার মতো ধৃষ্টতার অশক্ত বেগে
পৃথিবীকে জানান দেওয়ার যে অসংস্কৃত প্রয়াস
তাকে শুধু ঘৃণা দিয়ে দিয়ে, থুথু দিয়ে দিয়ে
পুনঃ ক্লেদান্তরিত পথে অর্বাচীন প্রলাপে ফেলেছে প্রথা
এক প্রবহমান লক্ষ্যহীন, ভগ্ন, নষ্ট গদ্যের পথে—
কস্মিনকালেও একটি শুদ্ধপদে রচিত হলো না সে।

নিঃস্ব নৈবেদ্য

একশো আট বেমানান, তবুও নিয়েছি
ছন্নছাড়া রাতের অশ্রু হাতে,
ক্লিষ্ট, রুগ্ন তালুতে দুফোঁটা টলটলে জল
পৃথিবীর নোনতা আগুনে আহূতি কতবার
রেখেছি ভগ্ন মন, গহন, শরীর, শব্দ-উপহার
একশো আট মন্ত্রে, কখনও নয়— উচ্চারণ।

জানি না যে—তা তো নয়, মননে খনন
মিলে মিশে দারুণে দৃপ্ত— মানানসই ;
স্বপ্নের লিপি হতে মুক্ত হলে, তবু মনে হয়
একশো আট বেমানান, জেনেও কেন
বিচ্ছিন্ন দিনের ভার বয়েছি ততবার
প্রকৃষ্ট যা কিছু ক্ষত, লুকিয়ে কি প্রজ্ঞা হলো—

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রথাগত পথে পথে
প্রাচীন পথ-গানে বাতুল তুমি বেঁচে থাকো
মৃত অনুভবের প্রতিধ্বনি শোনো চুপ করে
বিচ্ছিন্ন— সমস্তের ভেতর একা, জনৈক
একশো আট বেমানান, তবুও প্রত্যহ
সাদামাটা প্রবন্ধের উপসংহার, নিজে লেখো..

ছুঁয়ে দেওয়া

সূর্য ছুঁয়ে দেয়, লক্ষ মাইল দূর থেকে
সে একটা অদ্ভুত ম্যাজিক রোজ —

তোমার কি মনে পড়ে না, হঠাৎ একদিন
দক্ষিণ ব্যলকনি খুলতেই, বসন্তের
তীক্ষ্ণ বাতাস লেগেছিল তোমার কপালে
জোছনা ছুঁয়ে দিতে পারে বলে, গোপনে
বহুদিন ছাদে এসেছ তুমি, একা একা

সবুজ ধানক্ষেত ছোঁবে বলে, লোকাল ট্রেনে
কাউকে না জানিয়ে উঠে পড়েছ, সাত বার
স্বপ্নে জড়িয়ে ধরেছ ময়ূরকন্ঠ, নরম, পেলব
তোমার কি মনে হয় না, হঠাৎ যেদিন

কল্পিত আঙুল বুলিয়ে গেল কপাল, তোমার
ভ্রুর ওপর জড়ো হওয়া যন্ত্রণা গুলো
চুপ করে সরে পড়ল গণ্ডদেশ পেরিয়ে, দূরে
সত্যি অস্তিত্বকেই ছুঁয়ে দিতে পারে, পারে
তোমার কি মনে পড়ে না, ভুল করে কখনো —

ব্লেডে কেটে যাওয়া বিচ্ছেদ শিরা, কীভাবে
থেমে যেতে পারে, চুপচাপ, একফোঁটাও
রক্ত গড়িয়ে পড়ার আগে।

আমাদের বন্ধু

ক্রেতা সুরক্ষার ঝাঁঝালো সব আইন
না পড়েই, দু’হাতে থলে নিয়ে লোকটা
শুধু খিদে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাজারে

হৃদয় ও পিত্ত বাদ দিয়েই শুয়ে আছে
বরফ-টেবিলে, কত অজানা জলের
কত অচেনা মাছের ফালি ফালি শরীর

প্রয়োজন পড়ে মুখস্থ করে চাকরি পেয়েছে
লোকটা, স্বাদ-সংহিতায় যা যা লেখা আছে
সব যে পুরাণ-সম্মত তা নয়, সময় অপব্যয়

অথচ লোক অর্থে চোখ, চোখ অর্থে দৃষ্টি
জীবনে দোকানের চেয়ে বড় গন্তব্য কোথায়..
বঙ্গোপসাগরের মাছ হিমালয়ে রান্না হয়

ক্রেতা সুরক্ষার আইনে যে গাণিতিক ভাবে
সে নাগরিক-স্বস্তির আঁচে স্থিত হয়ে বসে
ক্ষতি-হীন স্নেহে ভেঁজে তোলা কাটা দেহে..

অথচ লোকটা কোনো বৃষ্টির দিনে, থলে হাতে
ভুলে যায় কত কী, জলঙ্গীতে জল পড়ে অঝোরে
এলোমেলো কত মাছ নেয় নবধারা স্নান
তাদের বুকের হৃদয় ওপিত্ত সহ।

সংগ্রাম

আমি জানি, আমার কতটুকু ধক্ আর হক
যেমন জানি, আমার কী সাইজের রেশনকার্ড
কী হলে ডাকনাম— পাড়ার ছেলেরা খুশি হতো
কতটা সরে দাঁড়ালে একটু ভিড় কমে যেত
আর কী গান না গাইলে কাটত না কাহারবা তাল
জানি, তলোয়ার ছাড়া আমার যুদ্ধের কী হাল।

এই যে জানি কিন্তু থামি না, কাতারে সাঁতারে
মাইক্রোফোনে বলি না, শুনি পথে, শহীদমিনারে
ফুটপাতে পাঁচ টাকায় লেবুজল খাই, হাঁপাই, তবু যাই
টেবিলে ভোটারকার্ড রেখে, মাঝরাতে লাফাই
আর দু’টাকার লটারি টিকেটে— দুনিয়া বেড়িয়ে এসে
সেই, রাজার চিঠি এলো না বলে, পিওনকে ধমকাই।

এক এক দিন পচে ওঠা পান্তা খেয়ে নেশা হলে,
ঘুম হয়, ঘুম হলে স্বপ্নে প্রাণ পায়, পক্ষীরাজের ডানা
হাওড়া মানে না, শিয়ালদহে থামে না, সোজা
বিধানসভায় নামায়—
আমি জানি, আমার কতটুকু ধক্ আর কতটুকু হক
রাখতে পারি না পা, পক্ষীরাজের পিঠ থেকে নিচে
আমার সমস্ত চিৎকার বিপিএল কার্ড বেয়ে নেমে,
শুধু প্যান্ট যায় ভিজে।

ঠিক খুলে নেবে সাইনবোর্ড

পুরনো, ঝাপসা চোখের অশক্ত কর্মীরা সব
অবসর, অদরকার হয়ে পড়বে নতুন নিয়োগ
কথা কমে যাবে দূরের, উৎকণ্ঠার বা সংবাদের
বন্ধ হয়ে যাবে নিঃশব্দে, সব গুলো চিঠির অফিস।

ধুলোয় গড়াগড়ি খাবে সম্ভাসিত ডাকটিকিট
মুখ ঢাকা কলমের হারাবে তারিখ লেখার ইচ্ছে
পাষাণ পেপারওয়েট বেফালতু, নেই কাগজ আর
নবীন পাখিদের বাসা, হয়তো ডাকবাক্সের ভেতর।

দেহমন হারা কোনো ধারণার পিওন, কখনো
কোনো শূন্য বিকেলের দিকে দেবে জানান, যে
সে একান্ত ভুলো-মনের যত ভুয়ো দর্শনের কারণে
জলাভূমি শুকিয়ে, বিস্মৃত কোনো পরিযায়ী সারস।

কেবল চিঠির অফিস উঠে গেছে বলে, কেউ
কেবল নতুন কথা সাজানো ভুলে গেছে, হয়তোবা
সে-ই পুরনো সিঁড়ির রেলিং এ রেখেছে হাত, ভরসায়
শুধু দু’একটা বিচ্ছিন্ন শব্দাঘাতে নীরব বয়সের ভার।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes