
রিমঝিম আহমেদ -এর কবিতাগুচ্ছ
আত্মমগ্ন পাথর
আমাদেরও শুতে হয় মুখোমুখি, ছুঁতে হয় শ্বাস
বোতাম খোলার আগে চোখজুড়ে প্লাবণের পাখি
কোন তারে গিয়ে বসে, যদি জানতাম! কুহুধ্বনি
ফুরাবার আগে তাকে বুকে পুষে খাওয়াতাম ধান!
বুঝিনি কখনো আমাদের শুতে হবে মুখোমুখি
জড়ো হবে হৃদয়ের টান, তারপর ছেড়ে আসা
ছেড়ে আসা- মানে ছাড়া নয়, তীব্র থেকে যাওয়া
আহাম্মকী! ফিরে যাবো যাবো করে ফেরার চালাকি!
মুখোমুখি শুয়ে, সমর্পিত বাহুতে আগুন জ্বেলে
অপ্রেমে দীক্ষিত করা চোখ, জানে চন্দ্রবয়স্করা
হাড় থেকে হাড়ে প্রেম কতভাবে নাচায় ময়ূর!
দুটো কঠিন পাথর মুখোমুখি শুয়ে ধ্বনি শোনে
পরস্পরের— নিষ্প্রাণ রক্তে মারে ঘাই। চাঁদ ধুয়ে
প্রায়ন্ধকারে দুটো মানুষ দুই দিকে চলে যায়
২
আত্মমগ্ন পাথর সেলাই করে যাচ্ছে জীর্ণ মন!
মনে হচ্ছে ভুল হবে ফের, আবার মরার দিন
ঘুরেফিরে এসে জাগাবে উদ্গার ক্ষত। রক্তবীণ
বাজিয়ে ভুলে যাওয়া শরীরইচ্ছা টেনে তুলবে
আমার যেটুকু পিছুটান, আরও পঙ্গু করে যাওয়া
অপ্রেমের মায়াবি পালক ঘষে ঘষে জ্বলে ওঠে
নিবিষ্ট পাঠক আমি, আদ্যন্ত তোমাকে পড়ে যাচ্ছি
অবস্থাবিশেষে ডুব দিচ্ছি চিরপ্রাচীন সঙ্গীতে
জ্বরমুখে তোমার এবার মনে পড়ে যাবে সব
বিনীত অক্ষরে ছাপা পত্রাবলি, আপ্যায়ন মাছি
চুম্বনতৃষ্ণায় পুড়ে নরম হয়েছে কাদামন
তারপর ভররোদে ধানের শরীর গেয়ে যাবে
ভাতের ক্রন্দন। এ প্রবাহ থেমে যাবে, বাস্তবতা
লেগে গেলে সমস্ত আঙুলে। থাকে কিছু বরাভয়…
৩
এই ভোর, সঙ্গহীন ভোর, একা একা
হেঁটে যায়, ওই দূরে রোদের কীর্তন
পাশে এসে বসে ছায়া, রুগ্নবনপথ
জীবনের কুহু ঝরা মাঠ আজও ফাঁকা
কত মৃত্যু দেখে এসে এই চোখ, স্তব্ধ!
কিছুটা আগুন আর কিছু দাউদাউ
এখনো রয়েছে জেগে, তারপর? জল–
শান্ত ভেসে যায় শান্তি, যতটা বরাদ্দ
কোলের ওপর দুঃখ আরামে শুয়েছে
মায়াময়, তাকে ডাকি কোন অছিলায়?
অতৃপ্ত আঁধারে ঢাকা মুখে ধূ ধূ চর
চন্দ্ররূপসীরা আজও হাটে তাপ বেচে
হাত ফস্কে সবই যাচ্ছে, শূন্য করতল
তামসতা ঘিরে আসে ছড়িয়ে আঁচল
তামস ও তামাশা
পায়ের নিচে গভীর হচ্ছে ক্ষত
কোথায় যাবো দাঁড়াবার নাই মাটি
সময়ের আজ এটুকু সময়ও নাই
নড়বড়ে সাঁকো কার হাত ধরে হাঁটি
কার হৃদয়ের ভাঙা বাঁশি বাজে সুরে
বাউলের ঝোলা স্মৃতি বয়ে নিয়ে চলে
দুরে-সুদূরের ব্যাপ্ত অন্ধকারে
মরিবার সাধ পিপীলিকা হয়ে ওড়ে
ঋজু আজও তার চড় খেয়েও শিরদাঁড়া
অস্থির নয়, বেগবান হৃদঘোড়া
শ্মশানে তারই হাড় পোড়ানোর গান
কৃষিমুকুলিত শরীরে জেগেছে চরা
আগুন পুষছি উন্মাদ নয় মোটে
কতদূর যাব! নিজেকে হটিয়ে দূরে
মা-মরা মেঘ ক্ষুধার্ত বসে কাঁদে
চাঁদ একটানা নদীজলে মাথা কোটে
আগুন না, ছাই! কী নিয়ে থাকি খুশি?
শান্ত শেয়াল উঠানে ঘুমায় সুখে
ইতিহাস নাকি ছাইচাপা লাল জবা
পাপ ও পুণ্য চিরকাল প্রতিবেশী…
ঈশ্বরের খিদে
তোমার দিকে যেতে যেতে বুঝি
গভীর কুয়াশা রাস্তা ঢেকে বসে আছে
সন্ধ্যায় ঘরে ফেরা মানুষের মতো
ত্রস্ত করছে না কোনো পিছুটান
চোখের পাতায় অন্ধকার নিয়ে
পরিপূর্ণ ভালোবেসে আরও একা হয়ে যাচ্ছি
জন্মের প্রথম ভালোবাসার মতো স্বাদ
বারবার কে পায় আর?
কে হতে পারে উদ্ভ্রান্ত, অমন দীপ্ত কৃতদাস?
কোলে নাঙ্গা হয়ে শুয়ে আছে আজও অন্য পৃথিবীর অনুভব
বুঝি, শূন্য থেকে কেউ হাততালি দিচ্ছে
তোমার দিকে যেতে যেতে দেখি, সভালগ্ন তুমি
উজ্জ্বল এ সভা ভাঙতে আরও বহু দেরি!
ততক্ষণে নিজরক্ত পান করে
দেখে যাচ্ছি বাংলা কবিতার গোয়ার্তমি