‘অভয়া’ আমরা বেঁচে আছি – তোমার আংশিক জয় হয়েছে
জয়ন্ত ভট্টাচার্য

এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর সন্দীপ ঘোষ সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছে – তবে আরজি কর-এর তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় নয়, আর্থিক দুর্নীতির মামলায়। আন্দোলনকারীদের বয়ানে “নৈতিক জয়” হল। তবে আরও অনেক পথ যাওয়া বাকি। আরও অনেক ক্রিমিনাল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতারি না হওয়া অব্দি, আমার ধারণা, এ আন্দোলন চলবে। এবার আমরা পরবর্তী ধাপে আসি।

‘অভয়া’ আমরা বেঁচে আছি – তোমার আংশিক জয় হয়েছে  <br /> জয়ন্ত ভট্টাচার্য

শুরুর কথা

“নেকড়ে-ওজর মৃত্যু এল
মৃত্যুরই গান গা –
মায়ের চোখে বাপের চোখে দু-তিনটে গঙ্গা।
দূর্বাতে তার রক্ত লেগে
সহস্র সঙ্গী
জাগে ধক্ ধক্, যজ্ঞে ঢালে
সহস্র মণ ঘি…
নিভন্ত এই চুল্লিতে বোন আগুন ফলেছে!” (“যমুনাবতী”, শঙ্খ ঘোষ)

এই মুহূর্তের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খবর সন্দীপ ঘোষ সিবিআই-এর হাতে গ্রেফতার হয়েছে – তবে আরজি কর-এর তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় নয়, আর্থিক দুর্নীতির মামলায়। আন্দোলনকারীদের বয়ানে “নৈতিক জয়” হল। তবে আরও অনেক পথ যাওয়া বাকি। আরও অনেক ক্রিমিনাল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের গ্রেফতারি না হওয়া অব্দি, আমার ধারণা, এ আন্দোলন চলবে।
এবার আমরা পরবর্তী ধাপে আসি।

আজ ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪। ‘অভয়া’র নৃশংসতম ধর্ষণ ও খুনের পরে ২৩ দিন অতিক্রান্ত। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এবং কর্মবিরতি এখনও চলছে। কারণ? আজ অবধি ‘নিরপেক্ষ’ তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই আমাদের কাছে তদন্তের অগ্রগতির ব্যাপারে সামান্যতম রূপোলী রেখাও রাখতে পারেনি। জুনিয়র ডাক্তারদের এবং পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনরত ও সহানুভূতিশীল ডাক্তার সমাজের খুব নির্দিষ্ট ৫ দফা দাবী রয়েছে – (১) যারা ‘অভয়া’র ধর্ষণ, খুন এবং প্রমাণ লোপাটের মতো ঘৃণ্যতম কাজের সাথে যুক্ত সেসমস্ত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে, (২) প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যারা এই নারকীয় ঘটনার সাথে যুক্ত তাদের সবাইকে চিহ্নিত করতে হবে, এবং আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে এখুনি স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে বরখাস্ত করতে হবে, (৩) কলকাতার পুলিস কমিশনারকে তার চূড়ান্ত অপদার্থতার জন্য পদত্যাগ করতে হবে, (৪) কোনরকম রাজনৈতিক ভয় ছাড়া (প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কিংবা বাইরে থেকে) ছাত্র এবং ডাক্তারদের গণতান্ত্রিক পরিবেশ অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষিত করতে হবে, এবং (৫) পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যথোপযুক্ত নিরাপত্তা এবং সমস্ত ধরনের স্বাস্থ্যকর্মীর সভ্যভাবে কাজ করার জন্য হেলথকেয়ারের সুযোগসুবিধা সুনিশ্চিত করতে হবে। সন্দীপ ঘোষের গ্রেফতারিতে একটি দাবী কেবল পূরণ হল। বাকি দাবীগুলো এখনও অধরা। এরপরেও আমরা চাইব, পৃথিবীতে আলো আসুক, ন্যায়বিচার ফিরে আসুক।

এ আন্দোলনের কিছু বৈশিষ্ট্য

“চেতাবনি ছিল ঠিক, তুমি-আমি লক্ষ্যই করিনি
কার ছিল কতখানি দায়
আমরা সময় বুঝে ঝোপে ঝোপে সরে গেছি শৃগালের মতো
আত্মপতনের বীজ লক্ষ্যই করিনি…
লোকে ভুলে যতে চায়, সহজেই ভোলে।” (“আরুণি উদ্দালক”, শঙ্খ ঘোষ)

কিন্তু এ আন্দোলনের ক্ষেত্রে ভোলেনি। ৯ আগস্ট সকালের আলো ফোটার অপেক্ষায়। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে জীবন একইরকম হয়না। ৩১ বছর বয়সী এক ডাক্তারি পড়ুয়া তরুণীরও হয়নি। ও সারাদিনের ডিউটির শেষে রাতের খাবার খেয়ে চেস্ট ডিপার্টমেন্টের সেমিনার রুমে বিশ্রামের জন্য একাই শুয়েছিল। সম্ভবত ৩ থেকে ৪ জন পশু (৫ জনও হতে পারে, এমনকি যে দলে আরেকজন নারী চিকিৎসকও থাকতে পারে) ওকে গণধর্ষণ করে তারপরে বর্ণনাতীত হিংস্রতায় হত্যা করে। যেরকম নৃশংসভাবে ২য় বর্ষের পোস্টগ্র্যাজুয়েট এই তরুণীকে হাসপাতালের মধ্যে শেষ রাতে গণধর্ষণ করে চরমতম বীভৎসতার সাথে হত্যা করা হয়েছে সে ঘটনা সম্ভবত এক অর্থে “নির্ভয়া” বা “হাথরাস”-এর ঘটনাকেও ছাপিয়ে গেছে। কলকাতা শহরের বুকে একটি প্রথমসারির হাসপাতালের মধ্যে যে এ ঘটনা যে ঘটতে পারে, সম্ভবত ভারতের ইতিহাসেও বিরল – অন্তত আমার জানা নেই। কারণ? মোটিভ কী? ও কি কলেজের এমন কিছু নারকীয় কার্যকলাপ জেনে ফেলেছিল যে জন্য এই পরিণতি?
প্রথমত, আমার মধ্য-ষাট অতিক্রান্ত জীবনে আজ অব্দি দেখিনি, পার্টি নিয়ন্ত্রণের বাইরে একেবারে অহিংস এবং সুদৃঢ় এরকম আন্দোলন যা সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে রাস্তায় নামিয়েছে অভ্যন্তরীণ প্রেরণায়। সময়ের সাথে সাথে দুর্বল হবার পরিবর্তে আন্দোলন আরও শক্তি সঞ্চয় করেছে। এখানে কোন পার্টি প্রভাব নেই, নিয়ন্ত্রণ নেই। কোন ঝাণ্ডা নেই, কোন ‘আগুন ঝরানো’ পার্টিজান শ্লোগান নেই। এ এক ঐতিহাসিক সময় যখন ভারতের সমাজে তৃতীয় পরিসর তথা নাগরিক পরিসরের নতুন ইতিহাস তৈরি হল। কুর্ণিশ আন্দোলনকারীদের!
দ্বিতীয়ত, নারীরা এক নিজস্ব স্বাতন্ত্র্যে উজ্জ্বল এক শক্তি হিসেবে এ আন্দোলনের সহযোগী শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। হাজারে হাজারে নারী প্রশ্ন তুলেছে – কেন নারী হবার জন্য আমাকে অতিরিক্ত সুরক্ষা দিতে হবে? কিসের সুরক্ষা? আমার দেহের এবং জীবনের সুরক্ষা?
কেন এই “পবিত্র” পুরুষ-নিয়ন্ত্রিত সমাজ আমার সুরক্ষা সুরক্ষিত করতে ব্যর্থ হবে বারংবার?
উত্তর দিতে হবে, কেন আমাদের বেলাতেই কেবল সুরক্ষার প্রসঙ্গ আসবে?
কেন আমাদের সামাজিক মানসিকতা আমাকে নিজের চারিত্র্যলক্ষণ নিয়ে বাঁচা একজন “মানুষ” হিসেবে গ্রহণ করবেনা? কেন?
আর কত ধর্ষণ, হত্যা, রক্তাক্ত শরীর আর ছিন্নভিন্ন দেহ দেখতে চায় “সমাজ”? ঠিক কতটা দেখলে তৃপ্তি হবে সমাজের চোখের, মনের, ধর্ষকামিতার?
আপনারা “ফাঁসি” কিংবা “এনকাউন্টার” কিংবা “রাজনৈতিক যোগ” নিয়ে কথা বলুন, বলতে থাকুন। কিন্তু এ প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন না? এই “ইতরের দেশ” কি সভ্য হবে? উত্তর কি কেবল বাতাসেই ভেসে বেড়াবে?

আমরা যে বুকভরে বাতাসও নিতে পারিনা মরে যাবার সময়ে। আমাদের কথা ৩৬৫ দিনে একবার ভাবুন – কারো ফুটফুটে মেয়ে, সক্ষম যুবতী কিংবা গৃহবধু, কামদুনির পড়ুয়া মেয়েটি কিংবা পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের যুবতী। নির্ভয়া, কাশ্মীমেরর বাচ্চা মেয়ে আসিফা, হাথরাস, তারও আগে ২০০৪ সালে মণিপুরের মনোরমা – ধর্ষণ এবং নৃশংসভাবে খুন হবার মিছিল চলছে। এখন অব্দি সর্বশেষ সংযোজন আর জি করের ডাক্তার মেয়েটি।
অন্য কারো পরিচয়ে আমাদের চিনবেন না। আমাদের পরিচয়ে আমাদের চিনতে হবে। চিনতেই হবে।
আমাদের বিবশ হয়ে যাওয়া সামাজিক বোধকে এভাবে আর কোন স্মরণীয়কালে আর কোন আন্দোলন বিদ্ধ করেনি। এও এক অভূতপূর্ব ঘটনা।
তৃতীয়ত,

“অগ্নিবর্ণ সংগ্রামের পথে প্রতীক্ষায়
এক দ্বিতীয় বসন্ত। আর
গলিতনখ পৃথিবীতে আমরা রেখে যাব সংক্রামক স্বাস্থ্যের উল্লাস।
ততদিন আত্মরক্ষার প্রাচীর হোক
প্রত্যেক শরীরের ভগ্নাংশ।” (নির্বাচনিক”, সুভাষ মুখোপাধ্যায়)

আরজি করের ঘটনা এখানে শেষ হয়ে যায়নি। এর প্রতিবাদে “ইতরের দেশে” বাস করা RG Kar-এর জুনিয়র ডাক্তারেরা পবিত্র ক্রোধ থেকে তীব্র আন্দোলন শুরু করে পরদিন সকাল থেকেই। এতে যুক্ত হয়েছে ডাক্তারদের সংগঠন ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরাম, ডাক্তারদের জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম, কলকাতা শহরের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সব জেলার মেডিক্যাল কলেজ, ভারতের নামী ডাক্তারি প্রতিষ্ঠানগুলো – দিল্লীর এইমস, চণ্ডীগরের পিজিআই, বিএইচইউ, তামিলনাড়ুর একাধিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান, গুজরাত রাজস্থান মহারাষ্ট্র দিল্লী পাটনা সহ ভারতের প্রায় সব প্রান্তের ডাক্তারদের সংগঠন। এমনকি সর্বভারতীয় সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনও অংশগ্রহণ করেছে।
এ দেশ ছাড়িয়ে এ প্রতিবাদের ঢেউ পৌঁছচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে – অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড থেকে আমেরিকা এবং অন্যান্য দেশেও। এমনকি গার্ডিয়ান বা বিবিসি-র মতো আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমও এসমস্ত খবর প্রকাশ করেছে। ফলে আমি নতুন কথা এখনো অব্দি কিছু বলিনি – শুধু ইতিহাসকে আরেকবার স্মরণ করানো ছাড়া।

তবে গতকালের (১৫.০৮.২০২৪) নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর মতো প্রভাবশালী সংবাদপত্রের খবরটি নজরে আসার মতো – “Medic’s Killing Fuels Protests and Walkouts in India”। এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে – “Outrage among doctors has also continued to build, with many government hospitals suspending all but emergency treatment as medical workers protest to demand better protection from such violence.” হ্যাঁ, এটাই ঘটছে।

ল্যান্সেট-এর মতো মান্য মেডিক্যাল জার্নাল-এ ২৪ আগস্ট, ২০২৪-এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে “Rape and murder of doctor sparks outrage in India” শিরোনামে। সমধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল-এ। এরকম আন্তর্জাতিক চাপের একটা দেশীয় প্রভাব তো থাকবেই। ফলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং সিবিআই তদন্ত। কোথায় যাবে ‘অভয়া’-র সাথীরা? কার কাছে বিচার চাইবে? কোথায় যাবে সাধারণ মানুষ – কার কাছে সমাধান খুঁজবে? এরকম সময়ে জলকে ঘোলা করে রাজনৈতিক মুনাফার মাছ ধরার খেলা শুরু হয়েছে।
পঞ্চমত, আমাদের কাছে একটি উদ্বেগের বিষয় হল, গণধর্ষণ এবং বীভৎসতম খুনের মামলা সরে যাচ্ছে সন্দীপ ঘোষ অ্যান্ড কোম্পানির আর্থিক দুর্নীতির নিকৃষ্ট স্বরূপ উদ্ঘাটনের দিকে। মামলা এবং আমাদের দাবীর মূল ভরকেন্দ্র সরে যাচ্ছে। আমাদের দাবী তো খুব সরল – আমরা বিচার চাই (We Want Justice) এবং চাই নারীদের সামাজিক সুরক্ষা সুনিশ্চিত হোক।
আর্থিক দুর্নীতি এবং পাপের পাহাড় নিয়ে তদন্ত চলুক। কিন্তু প্রথমে সমাধান হোক – ধর্ষণকারীরা কে কে, খুনি কে বা কারা?

আমাদের বেদনা

যেসব রোগীরা ফিরে যাচ্ছে বলে খবরের কাগজে ছবি এবং খবর বেরোচ্ছে, সেসব রোগীদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। কিন্তু আমাদের তরফে জানানোর – জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবরিতিতে থাকলেও, আন্দোলন চালিয়ে গেলেও ইমার্জেন্সি এবং আউটডোর চালু আছে। ভর্তি হওয়া রোগিদের দেখছেন সিনিয়র ডাক্তাররা। জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ না দিলেও বাইরে সমান্তরাল আউটডোর চলছে। ফলে সংবাদমাধ্যমের খবরের ওপরে নির্ভর না করে আপনারা নিজেরা অভিজ্ঞতা নিন।
নতুন করে শুরু হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তারদের “অভয়া” ক্লিনিক – রোগীদের চিকিৎসা দেবার জন্য। শুরু হয়েছে টেলিমেডিসিন পরিষেবা।
আপনাদের আমরা কষ্ট বা যন্ত্রণা দিতে চাইনা। কিন্তু আপনাদের বাড়ির মেয়েটির দিকে তাকান। আমাদের অসহায় অবস্থা এবং আমাদের ওপরে লাগাতার নির্যাতনের কথা ভাবুন। আমরা আবার ফিরে আসছি – খুব শীগগিরই।
আমাদের শেষ কথা – ভেবে দেখবেন
রাজনৈতিক দল এবং ঝান্ডা ছাড়া মানুষের বিশুদ্ধ আবেগ এবং পবিত্র ক্রোধকে রাষ্ট্র সবসময় ভয় পায়। চায়, একে বারংবার সহিংস হবার পথে ঠেলে দিতে। সফল না হলে একে প্রশমিত করার জন্য গণতন্ত্রের তথাকথিত চারটি স্তম্ভই কাজ করে – বিভিন্ন স্তরে, বিভিন্ন মাত্রায়। সে কাজ করা শুরু হয়েছে, এবং করবেও। আমাদের রাস্তা ধর্ণায় বসে থাকা, পথে নেমে বন্ধু এবং সাথীকে চিনে নেওয়া। নাগরিক সমাজের বিপুল অংশগ্রহণ আমাদের নতুন ‘Human Bondage’ তৈরি করেছে। অজানা অচেনা প্রত্যন্ত গ্রামের প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষ এ আন্দোলনের সাথে জুড়ে যাচ্ছে। আড়ে-বহরে “অভয়া”-র জন্য বিচার চাওয়ার অবয়ব ক্রমাগত বড়ো হচ্ছে।, দীর্ঘ হচ্ছে।
আমাদের কাছে অজানা শিশু-কিশোর-কিশোরী-যুবক-যুবতী-মাস্টার মশাই-দিদিমণি-দাদা-বৌদি-ভাইদের আমরা জড়িয়ে ধরছি – যেন আরও বেঁধে বেঁধে থাকতে পারি আমরা।

বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত Imagine-এর গায়ক এবং লেখক জন লেনন ১৯৬০-এর দশকের উত্তাল সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন – “When it gets down to having to use violence, then you are playing the system’s game. The establishment will irritate you – pull your beard, flick your face – to make you fight. Because once they’ve got you violent, then they know how to handle you. The only thing they don’t know how to handle is non-violence and humor.”

হ্যাঁ, রাষ্ট্র হিংস্রতাবর্জিত মাটি কামড়ে পড়ে থাকা আন্দোলনের যথেষ্ট মোকাবিলা করার পদ্ধতি এখনও ভালোভাবে শেখেনি – পুলিস, গুণ্ডা, বুলেট এবং লাঠির ব্যবহার ছাড়া। এরা কৌতুকও গ্রহণ করতে পারেনা। এখানে আমরা চার্লি চ্যাপলিনকে স্মরণ করে কৌতুকে পর্যুদস্ত করার কাজ শুরু করতে পারি। দাবী না মেটা পর্যন্ত আমাদের ফিরে আসার জন্য পাড়ে কোন নৌকো বাঁধা নেই – No Boat to Return।
আপনারা সবাই আসুন, পাশে থাকুন, বেঁধে বেঁধে থাকুন, আমাদের ফিরে আসতে সাহায্য করার জন্য।

আরেকটি কথাও পাঠকেরা ভেবে দেখবেন। শহরের এই বড়ো হাসপাতালগুলোর ওপরে এত চাপ কেন? কোথায় গেল আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং জনসাস্থ্যের প্রানবন্ত উপস্থিতি?
জনস্বাস্থ্যের দর্শন একটি ভিন্ন অবস্থান। এটা কোন মেডিক্যাল শিক্ষার বুদবুদের বাজার নয় বা এখানে কোন লুকনো শিক্ষাক্রম নেই। এখানে সবকিছুই অবারিত খোলা এবং পরস্পরের প্রতি দায়বদ্ধ। নিজের নিজের সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, দৈনন্দিন জীবন-চর্যা এবং সর্বোপরি পড়শি-চেতনা ধরে আছে ভারতের মতো আরো বহু দেশের অসমসত্ত্ব বিপুল জনসমস্টিকে। এই বিশেষ অবস্থান বুঝতে না পারলে মেডিক্যাল কলেজের প্রশিক্ষণ শেষ করা মাত্র জনস্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী চিকিৎসক হয়ে ওঠা যায় না। মুক্ত বাজারের অর্থনৈতিক ও সামাজিক দর্শন, বিশেষ করে এর উপজাত social psyche, এ দুয়ের প্রভেদ মুছে দিতে বদ্ধ পরিকর।
দানবীয় বহুজাতিক কোম্পানী এবং হিংস্রতম, আগ্রাসী কর্পোরেট পুঁজির কাছে মানুষ শব্দটির ততক্ষণই মূল্য আছে যতক্ষণ সে মুনাফা দিতে পারে। এজন্য ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা, দেহ ও মন থেকে অসুস্থতাকে বিযুক্ত করে দেখে কেবলমাত্র অসুখের জন্য সমস্ত ওষুধ ও প্রযুক্তি তৈরি হয়ে চলছে সর্বোচ্চ মুনাফার জন্য, মেডিক্যাল শিক্ষাক্রমও বিপুল্ভাবে প্রভাবিত হয়।
ফলে এ আন্দোলন হয়তো প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার পথে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হয়ে উঠতে পারে।

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (8)
  • comment-avatar
    WALIUL ISLAM 8 months

    খুব সময়োপযোগী বলিষ্ঠ মতামত।

  • comment-avatar
    WALIUL ISLAM 8 months

    খুব সময়োপযোগী অসাধারণ বলিষ্ঠ মতামত।

  • comment-avatar
    Sourav Kumar Bera 8 months

    খুবি গুরুত্বপূর্ণ লেখা ।আমরা বিচার চাই ।অভয়ার আত্মা শান্তি পাক ।

  • comment-avatar
    Commander Dipankar Goswami 8 months

    Loved reading your empathetic article, visible emotion touched my heart! In my view, it is time for the doctors like you, who are candour, righteous to ‘walk the talk’. I feel entire medical fraternity of Bengal needs regeneration to bring back the old glory of Bengal, Dr Bidhan Roy’s Bengal. Let us say ‘enough is enough- stop these inhumane and barbaric acts’.

    I wish you and your doctor colleagues all the very best.

  • comment-avatar
    Sailendra Burman 8 months

    Initially the Junior Doctors and others have started the movement, at that point of time it was very much necessary. Then all are doing an impossible task which is also necessary to clean the corrupt system. You know Jayanta( the writer of this article) that all along in my student life, I was a back bencher and from my boyhood I have a special place in my heart about the meritorious students who are pursuing Medical Education, Engineering Education and also who are opting for IAS/IPS etc. through a hard and challenging process of education and competitive exam process. But after reaching this post 60 age I find that Dr. Sanjib Ghosh and Mr. Vineet Goel(IIT/IPS) and such type of people are the persons responsible for such gross irregularities 

  • comment-avatar

    Mone pore jachhe…..
    Ashapurna Devi r, Upannyas, (Pratham Pratishruti) er katha….

    Eto Alo Prithibite, tabuo prithibir manushgulo eto andhakare keno ????

    We want justice, Abaya ke Kendra kore R G KAR Hospital, Kolkata er daktarbabu
    ra je movement suru korechen ta Ajj 26
    tomo dine pouncheche. Daktarbabuder ei
    andolone sudhumatra paschimbongobasi ba
    Bharatborsho ke path dekhabe na, agami dine Sara prithibi r kache natun ek disha hoe thakbe.

  • comment-avatar
    TILAK RANJAN BERA 8 months

    Extremely nicely compiled information and observations with honest and firm expressions. Wishing this spontaneous movement a fulfilling achievement.

  • comment-avatar
    Pravin Nahar 8 months

    Its an important time for all of us. I sincerely hope that Bengal will lead again in this movement to eliminate the corruption and evil from the society as did Vidyasagar and Ram Mohan. The concern is it may fizzle out with time – lets all make efforts to keep it on till the end. 

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes
    Checking your browser before accessing...