
শতাব্দী চক্রবর্তীর কবিতাগুচ্ছ
ফুলঘর
বাইরে বসন্ত
রোদ্দুর জ্বলে নেভে স্বমহিমায়
লেবু গন্ধ জানালায় জরি বোনা পর্দা
অ্যাকুয়ারিয়ামে লাল রঙের মাছ।
বৃষ্টি নামলো সবে, নামতেই হতো,
এত বেদনা বুকে করে হাঁটা যায়?
হোঁচট খেতে খেতে বৃষ্টি ঝরিয়ে
বুক ফাঁকা করতে হয়।
মাটির উত্তাপ কমলে,
মাংসল গন্ধে সাদা কাঞ্চন ফুটে ওঠে
শান্তির মার্জনা পথে পড়ে থাকে
জঠর হতে কাটা ফুলঘর।
সমুদ্রগুপ্তের বীণা বেজে উঠলে
গর্জন থেমে যায় সভ্যতার পথে।
জীবনবৃক্ষ
এই যে বিশাল বিশাল লটবহর সঙ্গে নিয়ে ঘুরিফিরি
এই যে বাতাস জমা বরফ,
মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা দুটো বালুচর
সবকিছুই মিশে যাবে
অন্ত্যেষ্টির ধোঁয়া মেখে
জ্বলবে মেদ, প্রাচুর্য আর প্রাচীন কথা বিশেষ।
লাল রঙ ঘরদোর জুড়ে পতাকা লাগাবে
শূন্য কলকব্জার আসরে,
ক্রীড়নক সত্তাটি ঢেকে দেবে রক্তের সুতো
ঈশ্বরের সৃষ্টি ও ধ্বংসের লীলায়।
আমার তখন কিছুই করার নেই
আমার যখন অনন্ত অপেক্ষা—
যতদিন আবেগ বেঁচে আছে
বেঁচে আছে শুশ্রূষার অভিরুচি
ততদিন আমিও জীবনবৃক্ষ হতে চেয়ে
দু একটি পাতার জন্ম লিখে চলি।
স্বপ্ন দেখি রোদে ডুবে যায় মৃত্যুর ঘন ঘোর রঙ
ঘোড়ার রেসে বাজি হেরে যাই প্রতিবার
প্রজাপতি জন্ম
কালের খড়কুটো ভেসে যায়
গাঙুড়ে ভাসা লখীন্দরের মতো,
কোনো বেহুলার দেবতাকে প্রসন্ন করার ইচ্ছা আর নেই
প্রতিটি স্ত্রী-বুকে জমে উঠেছে কেড়ে নেবার খিদে।
কেউ এসে ছুঁয়ে দেবে অন্তরাত্মা
তারপরে রূপান্তর হবে এক নতুন দেহে
এসব চাতুর্যের অভিধান পড়ে না কেউ।
রক্ত মজ্জায় ভালোবাসা ছোঁয়ালেই
নতুন এক প্রজাপতির জন্ম স্ত্রী-বুক একাই দেয়
যার লাল নীল ফুটকি আঁকা হেম সেলাই করা গা।
পদ্মরাগ
চানঘরে দু’দণ্ড তোমার ছায়া,
আকাশে ভরে কার্পাসিক মেঘ
মুহূর্তেই নিঝুম হয়ে আসে উচাটন মন।
রেডিওর গান, ঘোষিকার ভরাট গলার মাঝে
বেজে ওঠে তোমার ঠোঁটের আলাপ।
কুসুম ফোটা জোছনার রোয়াব শরীরময়
নিভৃতে জননীর আড়ালে দেগে দিই সর্বনাশ,
কুটিকুটি করে কিশোরী পাপড়িগুলো
সঁপে দিই তোমার শ্রীপদ্মহস্তে
মৃগ আঁখি ফুটে আছে নদী জলের
আচ্ছন্ন ভ্রমরের দেশে।
আমাদের হারাবার কিছু নেই,
যা কিছু ছিল তাকে হারিয়ে যেতে দিয়েছি নির্দ্বিধায়
আঁধার পেরিয়ে এসে বর্ষা নামে
ত্বকে স্পর্শগুলো গচ্ছিত আমানত করে
যাতে ধীরে সুস্থে প্রতি রাতে নামিয়ে আনা যায়
নীলমণিলতার সাথে তোমার পদ্মগন্ধ।
কোনো এক অমরায় দেখা হবে আবার
চোখ জুড়ে নির্বান্ধব আমি এক হা -হা রব তুলে
পালক ঝরিয়ে নেব জোনাকি গাছের নিচে বেশ।