
পাঁচটি কবিতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়
হ্রীং হ্রীং হ্রীং
এ-জীবনের আপেক্ষিক আর্দ্রতা ডোবার মতো ডুবজল
রাখেনি কোথাও
পুড়ে যায় ঘরের মুধুন, কড়িকাঠ, কায়াতরুবর
তবু বেজে ওঠে আমার টেলিফোন, হ্রীং হ্রীং হ্রীং রবে
তোমার কানে, কর্ণাভরণে, ঋতুচক্রে, রাঙা জবায়
সুকুমারী
রোদের ক্ষৌরকারের কাছে মাথা পেতে মুণ্ডিত হয়েছে গাছ
পালন করেছে এক অজানা অশৌচ। মধ্যাহ্নে স্বনিয়োজিত
ছায়ায় বসে গভীর হতাশায় ডুবে গেছে পাতা-বালিকা
পাতার পোশাক যে ছিঁড়ে গেছে তার! দু-হাত দিয়ে
ঢেকে রেখেছে নিম্নাঙ্গ
চলন্তিকা, বঙ্গীয় শব্দকোষ, আকাদেমি, সংসদ থেকে
তার দিকে উড়ে আসছে অসংখ্য পরিযায়ী পৃষ্ঠা
এই সমুৎপন্ন ঝড়ে কয়েকটি ধূমায়িত বৈরী-জিভ তাকে
প্রশ্ন করছে নানা, আর উত্তরে তার দারুব্রহ্মবৎ কৌমার্য
থেকে বেরিয়ে আসছে অমৃত মহোৎসব…
যেখানে শেকল
যেখানে শেকল শেষ হয়ে গেছে, সেখানে নো ম্যানস ল্যান্ড
তবু শোনা যায় লোহা-কাটা যন্ত্রের মূর্ছনা
তার ঘূর্ণায়মান চাকার স্ফূলিঙ্গগুলির নির্বাপিত অঞ্জলি দিয়ে
কোনও কালো জাদুকে প্রসন্ন করছে একফোঁটা জলের অতীত
সেই জল ধরে ছিল পদ্মের কোরক
তার পাশে শারদা নয়, সরস্বতী নয়—
হাত বাড়ালেই ছিল আরও অনেক স্বেচ্ছাচারী জল
করকমলের কোজাগরী
সজীব নাগরিকত্ব
ভৈরবী তুমি কোথায় উবে গেলে উপুড় আলোর বৃত্ত ছেড়ে!
সজীব নাগরিকত্ব কী তা জানালো তোমার কুসুমিত উঠোন
কৃষ্ণকান্ত ভয় বসে আছে একাকী চামুণ্ডার কোলে
মণিহারা চোখ কালভৈরবের সমুচিত কুকুরের
এভাবেই শখের সুন্দর জেগে থাকে ক্ষণকাল
দুঃখ জাগে অহর্নিশ
মা মা বলে অজ্ঞাত দুখিনীর জন্য কেঁদে ওঠে তরুণ দায়বদ্ধতা
তৃষিত গোপনে
সূর্যকণার সাক্ষাতে চুঁইয়ে পড়ছে মহামতি জল
বিষ্ণুমন্দিরের স্তম্ভ থেকে
কতদিন দেখিনি মায়াসভ্যতা!
পাত্র আমার ছোট। তৃষ্ণা অনর্গল
বিগ্রহ শান্তিতে আছে তো?
শালগ্রামে জল সিঞ্চন করি আমি
তৃষিত গোপনে, হিন্দুরাষ্ট্রে
সাম্প্রতিক কালে আমার পাঠ করা সেরা কবিতাগুচ্ছ।