
অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারাবাহিক উপন্যাস – সাদা ( প্রথম পর্ব)
শুরু হল নবীন লেখিকা অঙ্কিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতুন উপন্যাস 'সাদা'। আজ প্রথম পর্ব। লেখাটি ধারাবাহিক ভাবে পড়তে প্রতি রবিবার ক্লিক করুন www.abahaman.com
অন্ধকার হয়ে আসছে। রেলপথ বেয়ে নীল অন্ধকার এগিয়ে আসছে এধারে। পান-সুপুরির দোকানটায় আলো জ্বলে উঠল। লাল শালু মোড়া ঠাণ্ডা ভেজা পানের গা দিয়ে জল ঝরছে। মিঠে জর্দার গন্ধমাখা বসন্ত বাতাসে চুল উড়ে কপালের একাংশ দখল করে নিল। লালচে সাদা কপালের ওপর গরম বিকেলের স্মৃতি ঘাম শুকিয়ে আসছে। পাখিদের দল বেঁধে ঘরে ফেরার কোলাহলে অল্প দূরের রেলের বাঁশি মিশে যাচ্ছে। কুলফির ব্যাপারী ছেলেটা হাতের তালুতে হাত ঘষে বার কয়েক সাইকেলের ঘন্টি বাজিয়ে দিল। মার্চের শুরু, রেলগেট ডিঙিয়ে যদি কেউ এগিয়ে আসে। হাতরুটির দোকানে উনুন জ্বলে উঠল। তাওয়ায় খুন্তির আঘাতে সপাটে খিদের শব্দ উঠছে। চায়ের দোকানের পোড়া পোড়া ধোঁয়ায় দুধ ফুটছে। ছোট্ট শহরটার ভিতরে আরও ছোটো স্টেশনপথে একে একে জ্বলে ওঠা হলদে আলোয় আঁধার গভীরতর হচ্ছে। আর কালো ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে কপালে পড়ে থাকা চুলগুলির দিকে তাকিয়ে নীলার চোখে ধাঁধা লেগে গেল। নীলা বুঝতে পারল, সে ছোটো হয়ে আসছে। আবারও ধীরে ধীরে ক্ষুদ্র হয়ে আসছে তার অতি সাধারণ বাদামি শরীর। অয়নের সর্বগ্রাসী চোখদুটোর ঠিক ওপরে হাওয়ায় উড়ে আসা এককুচি চুল নীলার মাথার ভিতর আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নিখাদ আগুন! সে কি যে সে আগুন! আগুনের ভিতর জ্বলে যাচ্ছে তার বিগত দশ দিন, দশ রাত, নরম সময়, কঠিন সময়, আর মায়ার পরত। আগুনের বিভিন্ন পথ বিভিন্ন দিকে যায়। মাথার ভিতর এইসকল পথ নীলা দেখতে পায়। ঠিক কখন কোন পথে চলেছে তার ভিতরকার সমস্ত আগুন, গত দশদিনে নীলা তার মানচিত্র বুঝে গেছে। যেমন, অল্প কিছুক্ষণ আগে এই আগুন চলেছিল অভিমানের পথে। এখন চলেছে অভিমান থেকে ক্ষোভের পথে। নীলার লালচে সাদা রঙের পুতুলখানা তারই চোখের সামনে কপাল থেকে চুল সরাল, একবার হাওয়ার দিকে চোখ ঘুরিয়ে, একবার ঘুটঘুটে আকাশটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘বৃষ্টি আসছে!’ আর একবার ঝিলের ওপারে বাঁধানো সিঁড়িতে বসে থাকা আড্ডাবাজ বৃদ্ধদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘এঁরা বেশ ভাল আছেন, দেখ!’, সবটা কি নিখুঁত, নরম, যেন শুধু তাকেই মানায়। নীলা লক্ষ করল, আর বুঝল, এই সন্ধেয় তার দ্বিধা কাটছে না। কখনো সবটা ভুলে, ঝিলের জলে ছুঁড়ে ফেলে, সাদা পুতুলটার ঠোঁটে কামড় বসাতে চাইছে সে। আবার চোখে চোখ রেখে, বলা ভাল, হতবাক চোখ রেখে প্রশ্ন করতে চাইছে। প্রথম কালবৈশাখীর সন্ধে ঘিরছে।
অবশেষে অয়নের লম্বাটে আঙুলে আঙুল জড়িয়ে আঁকড়ে ধরল নীলা। তাদের বিবাহের বয়স দশদিন।
এই শহরটা নতুন। এর আগে কক্ষনো আসেনি অয়ন। অচেনা গলি, অচেনা রিকশাস্ট্যান্ড, দূরের রেলপথ, একটা নতুন দিগন্ত খুলে যাচ্ছে। দীর্ঘদিনের প্রেমিকা নীলার সঙ্গে এইখানে গড়ে উঠবে তার হিসেবের ঘর, বেহিসেবের সংসার। হাওয়ার শীতল জড়তা এখনও কাটেনি। শীত শেষ হয়ে গেছে কবে, কিন্তু এই জড়তার ভিতর এক অদ্ভুত কান্না লুকিয়ে থাকে। রেলের দরজায় দাঁড়ালে কান্নাটা মাথার ভিতর পাক খায়। অয়ন বোঝে না কী হতে চলেছে। এই না বোঝাটা তাকে আনন্দ দেয়। বহুদিন সে ঘর থেকে বেরোয়নি। চাকরি বড় বালাই। এই শহর থেকে তার দেড়তলা বাড়িখানা প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার দূরে। এই দূরত্ব তাকে পরিশ্রম শেখাবে, পাশাপাশি দেবে স্বাধীনতা। ঘরের বাইরেকার একচ্ছত্র স্বাধীনতা। আচমকা বদলির অর্ডারের কাগজটা যেদিন এল, সেদিন এটুকুই ভাবতে পেরেছিল অয়ন। এতগুলো বছরের হলদে বাড়ি, কেঠো চেয়ার টেবিল, কেঠো আলমারি, ঝোলানো ডিউটি স্কেডিউল, দরজায় ঝুলন্ত ব্লেজার, সব ছাপিয়ে চোখের সামনে পাকিয়ে উঠেছিল একটা বিকেল। আজ এই নতুন শহরে, ছোট্ট ঝিলের ধারে দাঁড়িয়ে সে দেখছে, ঠাইনাড়া হবার বিকেলগুলো একইরকম হয়। কোনও যুক্তি বুদ্ধি স্মৃতি কাজ করে না বিশেষ। শুধু এক অদ্ভুত শূন্যস্থান সৃষ্টি হয়। মৃত্যুর মতো। বাবার মৃত্যুদিনে জল থেকে উঠে আসার সময় যে কান্নাহীন শূন্যস্থান, ফাঁকাভাব কাজ করেছিল, সব ছেড়ে চলে আসার সূর্যাস্তগুলিও তেমন। তবে এবারটায় ভাল লাগছে তার। নিজেকে অন্তত খানিকটা জানে অয়ন। বদলির চিঠি আরও কিছুদিন আগে এলে সে ভাবনায় পড়ত। নতুন একটা শহরে একলা থাকার স্বাধীনতা ও যন্ত্রণা সে কোনোদিনও চেখে দেখেনি। নীলা এই শহরটাকে অল্প চেনে। স্টেশনপথ, দোকানপাট, অলিগলি, আলো-বাতাস সে জানে। ফলে সইসাবুদ মিটে গেলে নীলাই ঘর খোঁজার দায়িত্ব নিয়ে রেখেছিল। ঘর, একটা ঘরের জন্য কতদিন অপেক্ষা করেছে তারা। ঘিঞ্জি শিয়ালদার ভিড়ে, কবরখানার নির্জনে, ফুটপাথে, মফস্বলি ট্রেনে, কফির কেবিনে, রোদে, বৃষ্টিতে। এক ঠিকানায় ফিরবার বড় সাধ ছিল তাদের। আর একটু পরেই একটি মানুষ এগিয়ে আসবে। হাতে তার কতগুলি সম্ভাব্য ঠিকানা থাকবে। একটা ঠিকানা বেছে নিতে হবে। সমস্ত অনিশ্চিতের মাঝে অয়নের ভাল লাগছে।
শহরটা একটেরে। বুক চিরে চলে গেছে রেললাইন। রেললাইনের দু-ধারে গুটিকয়েক পাড়া। শহরে কোনও নদী নেই। ঝিলের শহর, অনেকগুলি ঝিল দেখা যায়, আরও অনেকগুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। দূরে একটা পাহাড়। সবুজ, আঁকার খাতায় যেমন ঢালু পাহাড় আঁকে মোমরং হাতে পাওয়া শিশু, অনেকটা তেমন। ঘরবাড়ির মাথা ছাড়িয়ে পাহাড় দেখা যায়, কিন্তু ছোঁয়া যায় না। পাহাড়ে পৌঁছতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়, একটু গোলমেলে সেই পথ। অনেকেই সেখানে পৌঁছতে চেয়েছে। অনেকেই পাহাড়ে পৌঁছতে পারেনি। অয়নের ইচ্ছে রয়েছে, গোছগাছ সব সেরে ফেলে, ছুটি শেষ হয়ে আসার আগে একদিন নীলাকে নিয়ে সবুজ আঁকা পাহাড়টায় পৌঁছবে।
নীলার আঙুলে চাপ দিতে গিয়েও আঙুল ছাড়িয়ে নেবার প্রস্তুতি নিল অয়ন। সন্ধের আবছা আলোয় একটা মিছিল এগিয়ে আসছে। সামনে ফ্লেক্সের পাঁচিল ঘেরা গুটিকয়েক মানুষ সারি বেঁধে ঝিলের দিকে এগিয়ে আসছে, ঝিলটা যেদিকে বাঁক নিয়েছে, ঠিক স্টেশনের পথে গিয়ে মিশবে বলে। তাদের মুখে রং। মূকাভিনয়ের মতো সাদা রং মেখে বেশ কিছু মানুষ এগিয়ে আসছে তাদের দিকে। হাতে পতাকা। দাবিদাওয়া কিছু বোঝা যায় না। অস্ফুট ও সমস্বরে তারা কিছু বলছে, কিছু চাইছে। কী চাইছে, সেটা তাদের কানে পৌঁছতে পারছে বলে মনে হয় না। কিন্তু তারা হাঁটছে। বলিষ্ঠ হাতগুলি মুঠো পাকিয়ে আকাশের দিকে তুলে দিচ্ছে সময়ে সময়ে। নির্দিষ্ট ছন্দে। হাতের পতাকাটা অয়ন এবং নীলা চেনে। তারা নিজেদের হাতের আঙুল ছাড়িয়ে নিল।
মিছিল থেকে বেরিয়ে এল একটা লোক। সমুদ্র রঙের পাঞ্জাবী গায়ে সাদা মুখে গাঢ় কাজলটানা একটা লোক। পাঞ্জাবীটার গলা ও বুকের কাছে অজস্র চুমকির কাজ ঝিকিয়ে উঠছে। ঝিলের বিপরীতে বাড়িগুলির ধারে একটা ছোটো মাঠ। মাঠের পাশেই টাইমকল। জল ঝরছে, এমনিই ঝরে পড়ে যাচ্ছে। লোকটা মিছিল থেকে বেরিয়ে এসে সেই জলের ধারায় নিজের মুখটা আলতো রাখল। রং, কাজল ধুয়ে যেতে থাকল। একটা কালচে তামাটে চামড়ার রং বেরিয়ে এল। তারপর দু’হাতে আঁজলা ভ’রে একপেট জল খেল মিলন। গলা, বুক, পেট ঠাণ্ডা হয়ে এলে আরও একবার মুখে গলায় ঘাড়ে জলের ঝাপটা মারল। তারপর গা ঝাড়া দিয়ে উঠে পড়ল। রোজ রোজ একপেট জল খেয়ে মিছিলে যেতে ভাল্লাগে শালা বোকাচোদা! নিজেকে খিস্তি মারতে মারতে দু’পা এগোতেই দেখল ক্লায়েন্ট দু’জন দাঁড়িয়ে আছে। অল্পবয়সী দুটো ছেলেমেয়ে। কেমন যেন বাঙালি ঘরে নতুন বিয়ের গন্ধ মাখা দুটো ছেলেমেয়ে। রজনীগন্ধা, সেন্ট, আর পাটভাঙা পোশাকের বদ্ধ গন্ধটা এদের ঘিরে একটা দেয়াল তুলে রেখেছে। নতুন মুরগি দুটোকে দালাল মিলনের পছন্দ হল। সে হাত মেলানোর উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথমে নীলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিল।
-আসুন ম্যাডাম। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছেন?
সামান্য এগিয়ে অয়ন উত্তর দিল,
-না ঠিক আছে। কোনদিকে? চলুন।
হাত মেলানোর উদ্দেশ্য সাধিত না হওয়ায় সামান্য মনঃক্ষুণ্ণ হল মিলন। শালা নাক উঁচু পাবলিক! ঠিক হ্যায়! কয়েকদিন পরে দেখে নেবে জমিদার দুটোকে! চট করে সামলে নিয়ে বলল,
-না না স্যর, এই তো কাছেই, মিনিট দুয়েকের হাঁটাপথ। টপ ক্লাস জায়গা। একদম নতুন প্রপাটি।
মফস্বলি সন্ধে ঘনিয়ে উঠেছে। ঠাণ্ডা ভেজা হাওয়া দিচ্ছে। পাশের শহরে বৃষ্টি এল যেন। হাওয়াটা ধীরে ধীরে উঠবে, ধুলো ওড়াবে, তারপর জল সব শান্ত করে দেবে। ছোট্ট মাঠটার পাশেই একটা মন্দির। মার্বেল পাথরের ছোট্ট মন্দিরটায় প্রদীপ জ্বলে উঠেছে। কাঁসর-ঘণ্টা বাজছে। মন্দিরের পাশ দিয়ে চলে গেছে একটা পায়ে চলার ছোট্ট গলি। গলির দু’ধারের বাড়িগুলোতেও সন্ধের প্রস্তুতি। হারমোনিয়াম বাজিয়ে রেওয়াজে বসেছে কেউ, মিহি গলায় গাইছে, ‘এই মোম জোছনায় অঙ্গ ভিজিয়ে এসো না গল্প করি…’। গুনগুন করে উঠল মিলন। ফেবারিট! এখন আতাক্যালানের মতো ভাড়ার দালালি করে বেড়ায় বটে, তবে এককালে মিলন সমাদ্দার গিটার বাজাত। তুহিনা ম্যাডামের অর্কেস্ট্রা পার্টির হ্যান্ডস ছিল। ফালতু কেসে জড়িয়ে সেসব ছাড়তে হল। এখনও কালীপুজোর নরম শীতে দুয়েকটা ডাক পায়। চাপা খায়। কিন্তু দালালিতে আর চলছে না। ছেলে দুটো খেলে তার আর রিন্টুর মায়ের কুলিয়ে ওঠে না। জল খেয়ে খেয়ে পেট ফুলে যায় ওদের। মিছিলে গেলে সুরাহা হবে ভেবে নিয়েছিল। বিশ্বাস ক্রমেই ভাঙছে। এবারের দালালিটায় বড় দাঁও মারবে। গলা ঝেড়ে পরিস্কার করে বলে উঠল মিলন,
-পাড়াটা কিন্তু ভাল পাড়া দাদা। হেব্বি কালচারড। সামনেই একটা বড় পুজো হয়। চুরি-ডাকাতির ভয় নেই।
অয়ন দেখল, পরের বাক্যেই লোকটা স্যর থেকে দাদায় নেমে এল। সে জ্যাঠা বললেই বা কী! কাজ মিটে গেলে কে কার! নীলার ধৈর্যচ্যুতি সহজেই ঘটে। সে বলে উঠল,
-আর কত দূর? স্টেশন থেকে হাঁটাপথ বলেছিলেন যে!
-কাছেই ম্যাডাম। বড় ঝিলের দিক থেকে ঘুরে এলেন, তাই। ওদিকে একটা রাস্তা আছে, সোজা ইস্টিশনে গিয়ে পড়বেন।
গলির পরে আরেকটা ছোট গলির শেষপ্রান্তে সাদা চারতলা বাড়িটার সামনে গিয়ে দাঁড়াল ওরা তিনজন। মিলন নামের আজব কাটিং লোকটা মিথ্যে বলেনি। অ্যাপার্টমেন্টটা সদ্য উঠেছে এই পাড়ায়। এখনও চারিদিকে ভাঙা গড়ার আর নতুন রঙের ছিটে চিহ্ন ছড়িয়ে আছে। কালো সদরগেটের পাশে রঙের বালতি বুরুশ জড়ো করে রাখা। বেশিরভাগ ফ্ল্যাট খালি। তিনতলার একটা ফ্ল্যাটে আলো জ্বলছে। সেখান থেকেই বোধহয় সন্ধের শাঁখ বেজে উঠল। মিলন তাদের ডেকে আনতে উঠে গেল। অয়ন আর নীলার অস্থিরতা বাড়ছে।
মিলনের সঙ্গে যে মহিলা নীচে নেমে এলেন, ধরা যাক তার নাম সাবিত্রী। সাবিত্রী খুব পরিপাটি মানুষ। গা ধুয়ে, চুল বেঁধে, সন্ধে দিয়ে গলায় সামান্য সেন্ট মেখে সে পরিমলের অপেক্ষা করছিল। এমন সময়ে মিলন নতুন ভাড়াটে দেখাতে নিয়ে এল। তার প্রথম কথা,
-টর্চ আছে সঙ্গে? আলো নেই কিন্তু ভিতরে।
-হ্যাঁ, মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে নেব।
-আসুন, একেবারে নতুন।
শুকনো ঝিরি ঝিরি পাতা ঝরে পড়ে থাকা সরু পথ পেরিয়ে ঝরা পাতার তিন ধাপ সিঁড়ি। ফ্ল্যাটের তালা খুলতেই নিকষ অন্ধকার।
মোবাইলের আলো ফেলে নীলা দেখল একটা ঘর, লম্বাটে। ঘরের পরে ঘর। বড়ো বড়ো দুটো জানালা, জানালার বাইরে একটা মাঠ, মাঠের পাশে ছোট্ট একটা ঝিল কোনদিকে যেন চলে গেছে। মাঠের দিকের জানালাটার নীচে তিন আঙুলের ছোট্ট ছোট্ট কালো দাগ। নির্মাণকালে কোনও এক বা একাধিক নরম কুকুরছানার খেলাঘর ছিল বোধহয়। সাবিত্রী কিছু বলে চলেছিল, মাপ, ভাড়া, মেন্টেনেন্স খরচ, অগ্রিম বাবদ খরচ সংক্রান্ত কিছু কথা। নীলা জোরালো ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় অয়নের দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখেও কত জন্মের মায়া ঝিকিয়ে উঠছে।
এই তবে ঘর! একত্র ঠিকানা… ১০৬/২… ছাদ আর চারটে দেয়াল… দেয়ালের রং সাদা।
নীলা ভাবল সমস্ত বিকেল সন্ধের পর এখনই সঠিক সময়। এখনই জানতে চাইবে অয়নের কাছে,
-তোর চোখে যদি এত মায়া, তবে কেন তোর শরীরে অন্য কেউ লেগে আছে?
(ক্রমশ)