
শ্রেয়সী সরকার-এর কবিতাগুচ্ছ
স্বাক্ষর
পুরোনো গল্পে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়
ঘুঘুর কান্নায় মধ্য জীবনের সাঁকো দুলতে শুরু করে,
পিছুটান দেয় চোখ ভরা অসময়ের অনুতাপ।
হরিণটি উদ্ভ্রান্তের মত দৌড়াচ্ছে দেখছি….
আমি বুনোবনে প্রবেশ করছি সেদিনের কথা রাখতে….
রেডিও বাজছে জায়গাটি নিরাপদ নয়,
তবু কবিতা জুড়ে থাকবে না কোনো আক্ষেপ।
পালক শুকিয়ে গেলেও শুধু স্বাক্ষর পড়ে থাকবে –
মৃত চড়ুই রেটিনা অথবা মহিষের উপড়ে যাওয়া শিং খোলে।
পূর্বাভাস
রক্তহীন রঙ্গিন মাছের চোখে ভোর বেলার ঘুম
বোবা পাখি স্নান সেরে নেয় জংলা সবুজ জলে।
এক মায়াবী দিনের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছি,
অলৌকিক কাঁচমহলে সম্পর্কের মাধ্যাকর্ষণ,
হৃদয় প্রকোষ্ঠের চৌকাঠ থেকে উঁকি দেয় ছায়াত্মা
লুকোচুরি খেলাতে হারছি জেনেও আবার তার কাছে ফিরে আসি।
শরীরের ভিতর যুদ্ধ শুরু হলে ফুলের কান্না ,স্নান ঘরের শূন্যতায় পাতাল জুড়ে জোয়ার ভাটা…
মাটির ভেতর মৃত্যুর সানাই বাজছে
গরাদে কালো পতাকা উড়ছে ….
জীবন ও রঙ্গিলাদালানের দুমড়ে যাওয়ার পূর্বাভাষ।
গল্প ও কার্পণ্য
স্রোতে গা ভাসিয়েছে পাতিহাঁস ,
তোর্সাচরে বিকেলের রোদ পোয়ায় ফড়িং,
দূর হতে দেখি শরীরের কালো চামড়া সোনালী ভেড়ার লোম!
কাশিয়ার বাগান হাতড়ে বেরিয়ে যায় কুড়ানি দম্পতি ,
আমার নদীতে তখন চোখের জল
হলুদ পাখিও নিজেদের গান শোনায়..
আমি লিখতে বসলে শব্দ –
শকুন্তলার গল্পতে কার্পণ্য দেখে।
দোলনচাঁপা
সাদা ও ধূসর কাগজে কিছু লিখিনি পড়ে থাকবে জেনে।
তিলোত্তমার চোখে শুধু স্বপ্ন এঁকেছি হয়তো !প্রজাপতির দল উড়ছে দেখে হাসিও পেয়েছি।
নকশী কাঁথার মাঠ থেকে ধানের ধারালো শীষ কুড়িয়ে এনেছি,
জীবন বৃত্তের জ্যামিতিক নকশা আঁকবো বলে।
জল ঋণ নিতে ঝড়ের কাছে আকুল চাতকের চোখ
রং গুলিয়ে ঠোঁট ছুঁয়ে দেবো পাখির…
গ্যালারিতে প্রদর্শনী হয়তো হবে না!
শুধু গোপনে ছবি আগলে রাখে দোলনচাঁপা।
ব্যবধান ও নীরবতা
জিপ গাড়ি গলিতে প্রবেশ করলে
কালো ধোঁয়ায় আকাশে আষাঢ়ের মেঘ,
বারন্দায় শিস দেয় শালিক..
গোধূলি লগ্ন , চারিদিকে অজানা আনন্দের গান
সাজিয়ে রাখা নতুন সংসার,
রান্নাবাটি ভেঙে গেলে এখন আর কান্না বেরোয় না।
মাটির সাথে মিশে গেছে হয়তো সেই ছোট মাটির উনুন!
আর জংলা পাতার রান্না।
পানাফুল ঘুমিয়ে গেছে জেনে মৃতদেহ গোপন করেছি ,
ময়নাতদন্তে নির্যাতন হবে জেনে ।
কল্পনায় শুধু ব্যবধান আর নীরবতা বজায় থাক ।