কৌশিক দাশের কবিতাগুচ্ছ

কৌশিক দাশের কবিতাগুচ্ছ

বিয়ারের গ্লাস

মাথা আর পায়ের মধ্যে পাশবালিশ রেখে জি- টিভিতে ক্যাটরিনা কাইফের আইটেম সং-এর ড্যান্স দেখতে দেখতে স্বর্গের দেবতাদের মতো এক চুমুক বিয়ারের গ্লাসে গলা ভেজানোর পর এখন ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট সিনেমায় অভিনয় করা মহানায়ক উত্তম কুমারের সন্ন্যাসী রাজার মতো ফিল নিচ্ছি।

মহাভারতের ধৃতরাষ্ট্রের মতো এখন সবটাই অনুভব করছি চোখ নামিয়ে জীবন্তকিংবদন্তী নায়িকারা যখন ম্যাকডোনাল্ডসে বসে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিলের বিজ্ঞাপণ দেয় টিভির পর্দায় আমি তখন ব্রহ্মা ঠাকুর হয়ে মা বাবার সাথে সোফার এক পাশে বসে মাথা নামিয়ে মোবাইল ফোনে চোখ রেখে ফেইসবুকে আসা মজার মিমগুলোকে একের পর এক ফিড স্ক্রল করে নির্বোধ সাজার অভিনয় করে যাই —

লাফিং বুদ্ধের মতো এখন কলকাতার রাস্তায় ভিখারি সেজে সান্তা ক্লজ আর গোপাল ভাঁড়কে সঙ্গে নিয়ে আমি মিমিক্রি করছি ধর্মতলায় মেট্রো স্টেশনের বাইরে বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে সাজা এক আর্টিফিসিয়াল জোকারকে দেখে।

এই মর্ডান পোশাক পরা ভিতরের মানুষটার কিন্তু কিন্তু বোধ আমাকে কিছুতেই ভালভাবে ফ্রী হতে দিচ্ছে না এখনও ফার্মেসি শপের বাইরে কনডম কিনতে গিয়ে ভিড়ের পিছনে দাঁড়িয়ে আমি প্যারাসিটামল কিনে হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি! বিয়ে করলে স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে হতে
পারে —
এ কথা ভাবলে আমি আমার কেনা প্যারাসিটামলটা এখন জল ছাড়া গিলে খাচ্ছি।

আমার বান্ধবী যদি মহাভারতের দ্রৌপদী হতো তাহলে তাকে আগুনের উপর দিতে হাঁটতে বলতাম কেননা কোনও জাদুবলে যদি রোজ ভোরে কুমারিত্ব ফিরে পেত আমার আর তাহলে কোনো টেনশন থাকতো না।

শিশিরের জল

ভোরের কুয়াশায় জন্ম নেওয়া এক ফোঁটা ঠান্ডা শিশিরের জল কখনও যদি হটাৎ শরীরে এসে পড়ে তখন শরীরের ভিতরে যে পেসার কুকারের সিটি দেওয়ার মতো মুখের মধ্যে দিয়ে হালকা হি হি শব্দে ভিতর-ভিতর আমার সাড়া শরীর জুড়ে সিড়সিড়ানি – কাঁপুনি জাগায় তাতে মাথার উপর কলকাতার এক ভর্তি আকাশ নিয়েও শরীরে আমার দার্জিলিংয়ের আমেজ এসে প্যারিস শহরে আইফেল টাওয়ারে নিচে রোমান্স করা কম বয়সী ছেলেমেয়েটার মতো বসন্তের উচ্চতা ছুঁয়ে যায়।

আফগনিস্তানের হেলমন্দ নদের বুকে যেখানে হারিয়ে যাওয়া সরস্বতী নদীর খোঁজ মেলে সেখানে একবার আমিও আমার নিরুদ্দেশ হয়ে যাওয়া স্কুল জীবনে অকাল বসন্তে ঝরে পড়া প্রেমগুলোর খোঁজ নেবো জলের নিচে কিছু না পেয়েও যদি গুটিখানেক রঙিন নুড়িপাথর হাতে উঠে আসে আমার এই কবিতা লেখার সাদা পাতার উপর সেগুলো দিয়ে কিছুটা দূরে সারিসারি করে সাজিয়ে মাইলস্টোনের মতো পুরনো প্রেমগুলোর সাথে আমার দূরত্বের কিলোমিটার মাফবো।

স্কুল জীবনে সিরিয়াসলি কেউকে ভালবাসার পর এখন কলেজে এসে কোনও মেয়ের সাথে শুয়ে পড়লেও এখন কাকের মতো এক জীবনে আর দু-বার লয়াল হতে পারছি না! নরম গলে যাওয়া বরফের মতো ভেসে রয়ে গেছি একটা টুকরো হয়ে গ্লাস ভর্তি জলের উপর।

দূরন্ত ম্যাজিক

তোমার জন্য আমার বুকের ভিতর লুকিয়ে রাখা মহাকাশের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো অরবিটাল ইনক্লিনেশনগুলো উঁকি দিচ্ছে স্ট্রবেরি ফলের বাইরে বেরিয়ে থাকা বীজগুলোর মতো নিজেকে আটকে রেখে দিয়েছি ঠিক যেমন খুব ভোরে ঘুম ভাঙা শীতের সকালে নিজের ডানা দিয়ে রুফেস-নেকড হর্নবিল পাখিটা নিজের চোখ মুছে নেয় তুমিও তার মতো করে তোমার দু-হাতের নরম ঠান্ডা আঙুল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে তোমার ফ্ল্যাটের বারান্দায় পর্দা সরিয়ে কফি হাতে খোলা জানালার দিকে তাকিয়ে থাকো রাস্তার উপর সারি দিয়ে চলে যাওয়া ট্র্যাফিকে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িগুলো সবুজ সিগন্যাল পেয়ে একটার পিছনে আর একটা গাড়ি যেভাবে ছেড়ে চলে যায় চোখের সামনে নিমেষে মিলিয়ে যায় পি সি সরকারের দূরন্ত ম্যাজিকের মতো কিছুটা দূরে গিয়ে শীতের সকালের ঘন কুয়াশার ধোঁয়ায়! তুমিও তেমনি আমার সামনে দিয়ে রোজ নিয়ম করে হেঁটে চলে যাও সকাল দশটায় যাদবপুর ইউনিভার্সিটির দুই নম্বর গেট দিয়ে কিছুটা দূরে তোমার ফ্যাকাল্টি অফ আর্টস ডিপার্টমেন্টের পথে বাংলা অনার্সের ক্লাস করতে।

মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গভীরতম নোহকালিকাই জলপ্রপাতের মতো তোমার জন্য আমার বুকের ভিতর তলিয়ে যাওয়া অগভীর ভালবাসাগুলো এখন সামনে দিয়ে কোনও সুন্দরী মেয়ে চলে গেলে তাকে প্রপোজ করতে দশমিকের মতো থামিয়ে দিচ্ছে। জিঙ্গেল বেলের টুং টুং রিদিমের শব্দে শহরের কেকের দোকানে কর্মচারীরা হাসি মুখে বহু আশায় কেক সাজায় তুমি বছরের শেষে ক্রিসমাসের গল্পে উপন্যাস হয়ে রয়ে যাবে বলে মুহূর্তরা গাল ভরা মুখ ভর্তি কেকের মিষ্টি স্বাদে একটা অধ্যায় হয়ে।

তোমার চোখে মাশকারা আর আইলানায় ভরা ভাসানো হালকা ইশারায় কাবু হয়ে যাচ্ছি নিজে নিজে ঠিক যেমন শীতকালে শালিক পাখিদের দল শীতের সকালের প্রচন্ড ঠান্ডায় গুটি মেরে বসে থাকে বুকের মধ্যে ধুকপুকানি বাড়িয়ে দেয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো প্রেমে স্পর্শকাতর হয়ে।

এখন প্রেমে পড়া আমার কাছে রুটি-ভাতের মতো সহজ পাঠ্য হয়ে গেছে রাস্তায় চলাফেরা করা সুন্দরী মেয়েরা আমায় প্রতিদিন নিত্য নতুনভাবে টানে কলকাতা শহরের রাস্তায় মানুষে টানা রিক্সা গাড়িটার মতো করে।

জানি আমি সারা শরীর জুড়ে ট্যাটু করা ভয়ানক সুন্দরী মেয়েটা তোমার মতো প্রেমে অতটা লয়াল না! ফিল্ড লার্ক পরিযায়ী পাখিটার মতো একদিন আমার এই শরীরে এক মুঠো পশ্চিম নীল ভাইরাস কিংবা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, ইলেকট্রিকে পোড়ানো অনামি মৃতদেহের ছাইয়ের মতো ছড়িয়ে দেবে যার কারণে বার্ড ফ্লু রোগ হয়ে বসন্তে পাতা ঝরা গাছটার মতো ধুকবো আমার এই তাজা শরীরটার ভিতর-ভিতর!

মাইক্রোফসিল

যার গল্পে লেখা অর্ধেক পাতা হতে পারিনি আমি যার প্রেমের প্রথম পাতার প্রথম শব্দ লিখতে গিয়ে আমার বল পেনের মুখ গিয়েছে থেতলে ভেঙে সে আমার জীবনের পুরো একটা অধ্যায় হয়ে রয়ে গেলো!
সে আমার পুরো পিছন মেরে চলে গেলো!

কোথায়?
কে জানে!

বাঁশ গাছের কাঁচা পাতা দিয়ে বানানো বাঁশিটার মুখ দিয়ে হাওয়া ছাড়লে যে সুর বেজ ওঠে সে সুর এখন আর আমার জীবনের সাথে আর যায় না! বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা এখন আমার পুরোটাই কার্বন হয়ে বসে আছে আরও এক শতাব্দী যদি বেঁচে যায় এই জীবনে তারপর খুঁজলে হয়তো মাইক্রোফসিলের থেকেও ছোট একটা জীবাশ্ম পাওয়া যাবে আমার এই আহত হৃদপিন্ডের। জীবনে যতবারই আলাদা আলাদাভাবে নিজের অজান্তেই নিজের থেকেও তোমাকে বেশি করে চেয়েছি এই জীবনে, ঠিক মহাভারতের কর্ণ যেমন দ্রৌপদীকে মনে মনে অস্থির ভাবে চাইতো আমিও ঠিক তেমনি ভালবাসার বিন্দু বিসর্গ না জেনেই ঈষৎ গরম জলের মতো ফুটে উঠতে গিয়েও ফুটে উঠতে পারলাম না!

মাঝে মাঝে আমার আফসোস হয় কর্নের মতো এ জীবনে আমার কোন বন্ধু নেই! আমার দুঃখগুলো তুলসী গাছের মঞ্জুরীর মতো অগন্তীভাবে আলগা হয়ে টুকটাক মাঝে মাঝে হালকা হাওয়ায় ঝরে পড়ছে। মহাভারতে চিত্রাঙ্গদার কন্যা ভানুমতি রিজেক্ট করলে তাকে জোর করে রাজসভা থেকে তুলে নিয়ে যাবো কোনও এক বন্ধু কর্ণ হয়ে যুদ্ধ করে আমাকে সাহায্য করবে এমন বন্ধু এ জীবনে আমার একটাও নেই। যাদের এত কাল বন্ধু ভাবতাম তারা কেবলই পরিচিত তার প্রমাণ আমি পেয়ে গেছি।

বুকের ভেতর হঠাৎ চিন চিন করা শব্দগুলো যখন তখন সকাল – সন্ধ্যে, রাত – ভোর অবিরত বেজে উঠে তখন আমার চোখে আঙুল বুলিয়ে আমি উপযাচকভাবে আসা জলগুলোকে নিজের হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলবার চেষ্টা করি।
অনবরত জোরে নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টাটা কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছে না! ক্রমেই আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে এ জীবন! যদি কেড়ে নিতো কোনও ভগবান কিংবা ভগবান রূপে আবির্ভূত হওয়া কোনও এক
দানব- মানব, তাহলে আমি অন্তত শেষবার ঘুমোনাটা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতাম।

হে পৃথিবী আমার কি দোষ? আমিও তো মানুষ, আমারও তো স্বাদে-আল্লাদে থাকতে ইচ্ছে হয়…

হে ঈশ্বর কোটি জন্মের পাপ-পূর্ণ্যের হিসেব কষতে কষতে তোমার কলমের কালি শেষ হলে বলো
আমি তখন আবার মানুষ রূপে জন্ম নেবো
এই পৃথিবীতে।

জলছবি

এই জীবনে না পাওয়াগুলো দিয়ে সারারাত ধরে তার সাথে কালো রঙ আর কাঠকয়লার গুঁড়ো ছড়িয়ে একটা আর্ট পেপারের দিয়ে বেস তৈরি করবার পর এখন আমি তার উপড় সারাজীবনের ব্যার্থতার-রামধনুর গুঁড়ো রঙ ছড়িয়ে ফিগার আঁকছি! ছবিটাকে নিজের বুকের উপরের চামড়া দিয়ে ঢেকে রেখেছি কখনও স্টেনসিল সরিয়ে নিলেই বুকে জমা জলের মধ্যে ব্যার্থতার ওয়াটার কালার জলছবি হয়ে ভেসে উঠবে…!

যেমন পৃথিবীর কেন্দ্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান শূন্য সুতরাং পৃথিবীর কেন্দ্রে বস্তুর ওজনও শূন্য হবে এটাই স্বাভাবিক, ঠিক তেমনি তুমি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরেও কেমন করে কি জানি আমার এই বুকের মধ্যে তোমায় নিয়ে প্রেমগুলো এই মহাবিশ্বের মহাজাগতিক ভর অভিকর্ষ বল দ্বারা আমার জীবনে আটকে রয়ে গেছে!

প্যালিনড্রোমিক শব্দের মতো আমার জীবন সোজা অথবা উল্টো যেদিক থেকেই পড়া হোক না কেন সবই উচ্চারণ একই হবে ঋতু শেষে সমস্ত ফল ঝরে যাওয়া গাছটার মতো হতাশা ছাড়া এ জীবনে আমার আর কোনও আশা নেই! শেষমেষ আমার জীবনের সব গল্পগুলো কবিতা হয়ে উঠবে আর আর পান্ডুলিপির শেষ পাতাতে তোমার আমার প্রেমের কথা লেখা থাকবে সমস্ত ত্রিকোণ প্রেমের সিনেমার শেষটার মতো।

সুইজারল্যান্ডের সোলোথার্নে শহরের টাউন স্কোয়্যারের বিজারী ঘড়িতে যেমন কখনও বারোটা বাজে না! শহরের ইতিহাসের সঙ্গে মিল রেখে ১১ তম সংখ্যায় শেষ করে দেয়া হয়েছে ঘড়িটিকে ঠিক তার
মতো আমার জীবনে শেষ সংখ্যা আমার প্রেমের বারোটা বাজুক আমি চাইনা!

এখন দেখার ফুটবল খেলার তিনকাঠি গোলপোস্টের জালের মধ্যে বল আমি কি জড়িয়ে দিতে পারবো? যদি না পারি আমি ভেবে রেখেছি
ধুর!
আউট অফ সাইড-আউট অফ মাইন্ড…

তিলোত্তমা

দৈত্যরাজ নিকুম্ভের দুই ছেলে সুন্দ আর উপসুন্দ দেবতাদের মতন অমরত্ব চেয়ে বিন্ধ্য পর্বতের উপর যেমন কঠোর তপস্যা করেছিলো আমিও ঠিক তেমনই কোনও বাংলা ওয়েব সিরিজের সুন্দরী নায়িকাকে কোনও একদিন বিয়ে করবো এখন ভাবছি এই বর চেয়ে আমিও ওদের মতো তপস্যা করবো দেবতাদের গুরু প্রজাপতি ব্রহ্মার কাছে।

হাসনুহেনা ফুলের সুগন্ধ নিয়ে আমার জীবনে যদি কখনও কোনও সুন্দরী মেয়ে প্রেমিকা হয়ে আসে
আমি তাকে ঋগ্বেদ অনুযায়ী গন্ধর্ব যেমন তার স্ত্রী অপ্সরাকে ভালবেসে প্রতিরাতে আগলে রাখার চেষ্টা করতো আমিও ঠিক তাকে প্রতিরাতে ভালবাসায় ভরিয়ে রাখবো হাসনুহেনা ফুলেদের মতো যত রাত বাড়বে আমি তত বেশি করে আমার ভালবাসার গন্ধ ছড়িয়ে দেবো তোমার শরীরে সন্ধ্যা নামার আগে গোধূলির আলোয় ঠান্ডা শিশিরে ভেজা তরুণ তরতাজা ফুলেদের কুঁড়ির মতো প্রেমিক হয়ে।

সব অভিনেত্রীদের মতো যদি তোমারও কোনও রহস্যময় পার্সোনাল লাইফ থাকে তাতে আমার চেনা কোনও পরিচিত মুখ ওয়াটার স্ট্রাইডার পোকা যেমন জলের উপর ভেসে হেঁটে বেড়াই ঠিক তেমনই তোমার প্রেমে পড়ে জলের উপর ভাসতে থাকে
তখন আমি টাইটানিক সিনেমার নায়ক জ্যাক ডাওসনের মতো তোমাকে ভালবেসে নিজের সাইনিক্যাল ভালবাসায় ভরিয়ে রাখবো।

ব্রহ্মার বর পেয়ে যদি আমার মতো প্রেমিক হয়ে ওঠে তোমার কোনও পরিচিত পুরুষ তখন ভাবছি এতো দাপাদাপির মধ্যে না গিয়ে তোমার পিছনে আর না থেকে তখন আমিও দেবতাদের মতো রিকোয়েস্ট করে ব্রহ্মা বিশ্বকর্মাকে দিয়ে এই ত্রিভুবনের সব ভাল জিনিস তিলে তিলে সংগ্রহ করে যেমন সুন্দরী তিলোত্তমার সৃষ্টি হয়েছিলো ঠিক তেমনি আমার জন্য একটা মেয়ের জন্ম দিতে বলবো।

সি-হর্স প্রাণীর মতো আমি বড়ই ভীতু তাই মনে মনে এই ভয় আমাকে হয়তো কখনও ছেড়ে যাবে না আবারও আমার মায়াবী সুন্দরী প্রেমিকার প্রেমে পড়ে যদি কোনও মায়াবী পুরুষ।

দ্বিতীয় পুরুষ

মাদাগাস্কার দ্বীপে আমি নির্বাসনে যেতে পারি তোমাকে ভালবেসে। তোমার জীবনে যদি কোনও দ্বিতীয় পুরুষ আসে মহাভারতের
সত্যবতীর মতো যদি তুমি কোনও পরাশর মুনির ইচ্ছায় নিজেকে বিলিয়ে দাও একটা সরকারি চাকরির স্বামীর প্রয়োজনে আমি তখন তোমাকে আটকে রাখবো না আমার এ বেকার
রেইন ডেজার্ট ফ্রগের মতো অর্থহীন জীবনে।

রিং-লেজযুক্ত লেমু প্রণীর মতো আমি যদি নিজের দুঃখে গুটিয়ে থাকি তোমাকে না পাওয়ায় অবসাদে তবুও তুমি এটা ভেবে আশ্বস্ত থেকো তোমার আর তোমার এই প্রেমিকের ভালবাসার মাঝে যদি অন্য কোনও সুন্দরী মেয়ে এসে পড়ে জলযুক্ত ফেরিক অক্সাইডের জন্য লোহার মতো কোনও মরিচা পড়বে না আমার মধ্যে থাকা তোমার ভালবাসায়।

দেবরাজ ইন্দ্র যেমন জোর করে অহল্যাকে ধর্ষণ করেছিল তোমাকে নিয়ে যদি কোনও তোমার জীবনে দ্বিতীয় পুরুষ জোর করে শুয়ে পড়ে আমি ঋষি গৌতমের মতো কোনও মায়াবী অভিশাপে নয় নাইন এম এম পিস্তল দিয়ে শুট করে দেবো তাকে নিজের মধ্যে থাকা শান্ত স্বভাবের ছেলেটাকে কিছুক্ষনের জন্য সরিয়ে নিজের ভিতর-ভিতর মুড-সুইং করে।

তোমার এই ধাঁধার থেকেও জটিল ভালবাসায় নিজেকে এখন কেমন যেন ইনসিকিউর লাগে শীতকালীন পরিযায়ী পাখিদের মতো আমার জীবনে প্রেমিকারা আসে আবার ফিরে যায়! আমার এই জীবনের প্রেমের শেষ পরিণতি কী আছে? সত্যজিৎ রায়ের গোয়েন্দা গল্পের নায়ক ফেলুদা যবনিকা পাঠ করবে কোনও একদিন আমার জীবনের প্রতিটি প্রেমগুলো নিয়ে ইনভেস্টিগেশন শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছি।

চিত্রাঙ্গদা

অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলের কোরাল রিফের আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো সমুদ্রের ইন্টারসেক্স ক্লাওন ফিশের মতো নিজের সাধারণ সেক্স ক্রোমোসোমের উপর নিজেরাই যেমন নিয়ন্ত্রণ রাখে জন্ম থেকে আমিও তেমনি ওদের মতো
এক-জীবনে প্রথমে পুরুষ জন্ম নেওয়ার পর তাতে যদি আর ভাল না লাগে নিজেকে ওদের মতো ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে রূপান্তরিত করে নারী হাওয়ার স্বাদ এক জীবনে পূরণ করতে চাই।

মহাভারতে মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদার মতো হয়তো আমিও ছদ্মবেশী পুরুষ সেজে রয়েছি ভিতর- ভিতর, হয়তো আমারও ভিতর দিয়ে কোনও এক নারী উঁকি দিচ্ছে বাংলা সিনেমার পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের মতো। আমার চোখে মুখে ভার্জিনতার ছাপ স্পষ্ট তাই আমি একবার একটা নারী আর একটা পুরুষের সাথে একটা রাত কাটাতে চাই তাতে যদি নিজের ভিতরের পুরুষ আর নারী হাওয়ার দ্বন্দ্বটা মেটাতে পেরে নিজেকে ভুলে গিয়ে উজাড় করে দিতে পারি আমিও একদিন কোনও একটা নারী অথবা একটা পুরুষের শরীরের ভিতর।

আমার এ শরীরের খিদে মেটাতে এখন আমি মাঝে মাঝে আমার বাড়ির বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নিয়েই মাঝে মাঝে আকাশ কুসুম ভাবতে থাকি অ্যান্ড্রোজিনাস ফুলের মতো নিজেকে কখনও টিউলিপ, সূর্যমুখী এবং লিলি সেজে নিজেই নিজের সাথে পরাগমিলন করে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফেলি।

মহাভারতে অর্জুন আর নাগকন্যা উলুপির সন্তান রূপান্তরকামী আরাবনের মতো করে যদি আমিও কখনও নিজেকে উৎসর্গ করে দিই ভগবান কালীর কাছে নিজের প্রাণ! যেন আমিও সকল নারীর প্রেমে নিশ্চিত পরাজয় জেনে এ রূপান্তরকামী আমার শরীর নিয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে বর চেয়ে নেবো আগুনে পুড়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার। হিন্দু পুরান মতে অবিবাহিত পুরুষদের আগুনে পোড়াতে নেই তাই আশায় আছি আমাকে বর দেওয়ার ঠেলায় পরে যদি আরও একবার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নারী হয়ে নিজের পুরুষত্ব ত্যাগ করে একদিনের জন্য নারী সেজে আমাকে বিবাহ করে। তাহলে সেদিন আমি পুরুষ হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে তার নারী সাজার মেয়াদ বাড়ানোর আদবার রাখবো।

আমি এখন নিজে পুরুষ হয়ে আর এক পুরুষের প্রেমে পড়ে দিন দিন নিজে কনফিউজ হয়ে যাচ্ছি নিজের মনে মনে বাংলা সিনেমার সমান্তরাল ছবির নায়ক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো।
এখন আমার মনে হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আলো দিয়ে ঘেরা জায়গাটায় আমি থমকে দাঁড়িয়ে আছি আর আমার চারপাশটা কোনও অজানা আকর্ষণে থেমে গেছে অনেকটা একইরকম আমার মতো করেই দু-জনের শরীরে শারীরিকভাবে সবকিছুই একই থাকার পরেও একটা পুরুষের প্রেমে পড়ে গেছি কিভাবে?

মহাভারতে কাশীরাজের বড় মেয়ে অম্বার মতো আমিও ভাবছি ভগবান শিবের তপস্যা করবো কলকাতা শহরের মনুমেন্ট অথবা দ্য ফরটি-টু —এর মাথায় বসে, এই কলিযুগের পাপীতাপী মানুষ আমি
যদি মহাদেব আমার তপস্যায় সাড়া না দেয় তখন ভেবে রেখেছি এই কলকাতা শহরের কোনও এক ডাক্তারের শরণাপন্ন হবো, সেই ডাক্তারকে দিয়ে নিজের শরীরে থাকা লিঙ্গের সার্জারি করে নিজেকে শিখণ্ডী করে তুলবো। যেমন শৈশবে শিখণ্ডী রাজপ্রাসাদের ফটকে রাখা একটা মালা গলায় পড়ে দ্রুপদের কাছে এলে দ্রুপদ বুঝতে পারে শিখণ্ডীই অম্বা। কারণ কার্ত্তিকের প্রদত্ত চিরসবুজ পদ্মের মালাটি শুধু অম্বাই যেমন পরতে পারতো! আমি ঠিক তেমনি নিজের শরীরে পূর্বজন্মের জন্ম দাগ নিয়ে আমার গতজন্মের ভালবাসার মানুষটার কাছে এসে দাঁড়াবো। যাতে আমার গতজন্মের ভালবাসার মানুষটার আমাকে চিনতে না অসুবিধা হয়…
যেমন মহাভারতের ভীষ্মের আক্রমণ এড়ানোর জন্য রাজা দ্রুপদ শিখণ্ডীকে বনে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলো সেখানে শিখণ্ডী সাধনা করে স্থুণাকর্ণ নামে এক যক্ষের কাছ থেকে পুরুষত্ব লাভ করে তেমনি আমার ভালবাসার মানুষটা যদি এ জন্মে পুরুষ কিংবা নারী কোনও একটা হয়ে জন্মায় আমি সার্জারির মাধ্যমে তার বিপরীত লিঙ্গ হয়ে তার কাছে নিজেকে ধরা দেবো।

জলজ ফ্লি ডাফনিয়ার মতো আমি এখন নিজেকে প্রজননের আশায় নারী আর পুরুষ এই দুইয়ের মধ্যে মিলিয়ে দিচ্ছি নিজেকে পার্থেনোজেনেসিস মনে করে অযৌন প্রজজনের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বেশিরভাগ বৃদ্ধির ঋতুতে যেমন মহিলারা অযৌনভাবে প্রজনন করে আমিও নিজের মধ্যে থাকা মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের দুই স্বাদকে এক সাথে এক জীবনে পেতে চেয়েছি।
আমার এই প্রার্থনায় কোনও ঈশ্বর যদি সাড়া না দেয় তাহলে ঠিক করে রেখেছি, পি সি সরকারের থেকে কিছুদিন “সহজেই মেয়েদের প্রেমে ফেলার কৌশল” এই ম্যাজিক শিখে আমিও একবার অর্জুনের মতো স্বর্গে গিয়ে ঊর্বশীকে আমার প্রেমের পুরুষত্বের মায়াজালে বশীকরণ করে নিজের করে তুলবো… তাতে যদি ঊর্বশী আমার প্রেমের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে আমার উপর রেগে গিয়ে আমাকে অভিশাপ দিয়ে মহাভারতের অর্জুনের মতো আমাকে বৃহন্নলা করে দেয়! আমি আর একবার এই পুরুষ জীবন ছেড়ে পৃথিবীর প্রতিটা নপুংসক মানুষগুলোর কাছে বন্ধুত্বের দাবি জানাবো। এতে যদি অর্জুনের মতো আমাকে অজ্ঞতা বাস করতে হয় আমার পরিচিত মানুষগুলোর কাছ থেকে আমি হাসিমুখে সেই জীবনের স্বাদ পেতে চাইবো।

সি-হর্স প্রাণীরা যেমন গিরগিটির মতো রঙ বদলাতে পারে আমি আমার এক জীবনে নিজের ইচ্ছায় শরীরের বিবর্তন ঘটাবো কখনও পুরুষ আর আবার কখনও নারী —এ আমার অনেক দিনের ইচ্ছা।
এ জীবনে যদি কোনও দিন অশ্বত্থামা হয়ে উঠতে পারি শ্রী কৃষ্ণের মতো কোনও দেবতার অভিশাপে অমরত্ব লাভ করতে পারি চিরকাল বেঁচে থাকার, তাহলে ভেবে রেখেছি এই পৃথিবীর বুকে সমস্ত নিরপেক্ষ লিঙ্গের সাথে একবার করে বিয়ে করবো যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ জীবনে একটি মেয়ে রাধাকে চেয়েছিল তাকে পায়নি! তাই তার মতো আমিও ঠিক করে রেখেছি আমাকে এক জীবনে যত মেয়ে চাইবে শ্রীকৃষ্ণের মতো করে আমি সবার সাথে একবার করে বিয়ে করবো। তাতে যদি কোনও চিত্রাঙ্গদার মতো ট্রান্সজেন্ডার কেউ আমাকে বিয়ে করতে চায় তাতে আমার কোনও আপত্তি নেই।


ভিতর-বাইরে

ডানা ভাঙা একটা কাকের মতো জীবনে উড়তে জেনেও আটকে রয়ে গেছি! আমি আমার জীবনে একটা মিথ্যে প্রেমের গল্পের নায়ক হয়ে! লিম্পিং রোগ – এ আমার শরীর এখন পঙ্গু হতে হতে আমার বান্ধবীর জন্য বুকে জমে থাকা ফিলিংসের মাঝে কখন যেন আমার অনুভূতিরাও রিকেট রোগে আস্তে আস্তে অনেকদিন পড়ে থাকা বাক্সবন্দী খই-এর মতো চুপসে গিয়ে কালো হয়ে যাচ্ছে।

আর্চিস-এর ভ্যালেন্টাইন কার্ডে রোমান হরফে লেখা সোজা সরল উপন্যাসের বাংলা প্রেমিকারা এখন টিভি সিরিয়ালের আত্মবিশ্বাসী দেমাখী অভিনেত্রীটার মতো ব্যাক্তি স্বাধীনতার রিহার্সাল করছে যোগেন চৌধুরীর আঁকা বয়ফ্রেন্ডের জীবনে জল ছবির ক্যানভাস হয়ে।

নিরুত্তর কিছু প্রশ্ন থাকলে তোমার, মহাভারতে ভরা রাজ্যসভায় দ্রৌপতি বস্ত্রহরণ ঘটলেও, অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র-এর মতো খোলা চোখে দৃষ্টিহীন-দৃষ্টিতে চুপ করে থাকাটা আমার কাছে এখন স্ট্যাইল হয়ে গেছে!

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes