
দেবজ্যোতি রায় -এর কবিতাগুচ্ছ
বকুল কুড়োতে এসে
জ্যোৎস্না ভাঙতে ভাঙতে চলেছে হরিণ
চর্যাপদ থেকে বেথুয়াডহরি
কালের নিয়মে কত গোলাপ, ছত্রাক,
আত্মঘাতী পাখি, শ্রমিক মৌমাছি
জন্মাল, আবার ডুবে গেল বাদামি রহস্যে।
চোখ ঝলসে যায় বিদেশি ফলের স্বপ্নে।
চাঁদের উপত্যকায়
সোনা-রুপোর পরাগে
ঝরে পড়ছে সুরসপ্তক।
তার কাছেই ওত পেতে থাকে
টিন ও পলিথিনের ছাদ,
বোমার মশলা
সুর থেকে হত্যার দিকে রাস্তা বেঁকে যায়।
কেঁপে ওঠে পরিসংখ্যান
ধারালো ব্লেডের নীচে জগৎ-সংসার
জ্ঞানবৃক্ষচূড়া আপেক্ষিক, সতত জটিল।
এক নীলিমা থেকে অন্য নীলিমায়
পৌঁছোনোর আগেই আমি দৃষ্টিহীন,
বিষণ্ণ গাছের নীচে বকুল কুড়োতে এসে
বাচ্চাদের কোমল আঙুল
গিলে ফেলছে ড্রাকুলার খিদে !
গুলতি
মাস্তুলের শীর্ষে চাঁদ
নীচে টাল খাচ্ছে বেহুলার ভেলা
অনিশ্চয়তার ভেতর জাগে
লালকমল, নীলকমল
ঝাউবন, কাশফুল, ডিমের কুসুম।
তুমি বলেছিলে হাত ধরে নিয়ে যাবে
অন্নদামঙ্গলে, সেঁউতির ম্যাজিকে।
পাখি ও গুলতির মধ্যে সম্ভাবনাগুলি
ভর করে আমার শরীরে!
তুমি বলেছিলে জিনসের পকেটে আছে দৈববাণী।
আমি গান্ধী মূর্তির নীচে অপেক্ষা করছি
কনফেশন
গ্রন্থের প্রথম খণ্ড শেষ হল কৃতবিদ্য
রাক্ষসের জবাবি ভাষণে
এখন রিংমাস্টারের চোখে বহুবছরের ঘুম
হিংসা ত্যাগ ক’রে বাঘ, সিংহ, হাতি
কনফেশনে যাবে।
ক্যাথলিক মতে অনুতাপ,
(কোনো সাক্ষী নিরাপদ নয়)
কথা হবে সরাসরি ঈশ্বরের সাথে
যাজকের হাতে থাকবে শুধু শান্ত বাইবেল
তুমি রাস্তায় দাঁড়ালেই, প্রতিশ্রুতি ফুল হয়ে ফোটে
পথ মঞ্চ হয়ে যায়
অলীক শ্রোতারা জড়ো হন নিভৃত বিশ্বাসে!
পুলিশ রিপোর্ট পায়ে পায়ে ঘোরে
নেপথ্যে লেদ মেশিনের শব্দ শোনা যায়।
ক্রমবিকাশ
শ্রীরাধার ক্রমবিকাশের দিকে
এগিয়ে চলেছে দুটি নৌকো
অন্ধ রেললাইন
একশো চুয়াল্লিশ ধারা
এগিয়ে চলেছে প্রাচীন খিলান
কমলালেবুর গন্ধ
ঝাড়লন্ঠনের বিহ্বলতা
প্রেমিকের নিজস্ব চুম্বক
ক্রমবিকাশের দিকে তাকিয়ে রয়েছে
তরুণ কবির নৈঃশব্দ্য
বাতিল কবির আত্মরতি
মৃত কবির স্মৃতিচারণা
ক্রমশ চারপাশ জ্যামিতিক হয়ে উঠছে
একাকিত্বে পায়চারি করছে
ভাঙা গম্বুজের কারুকার্য,
গিটার বাজিয়ে এল সময়তরঙ্গ
শশিভূষণ দাশগুপ্তর সঙ্গে কথা বলছেন
বৃন্দাবনের গোস্বামীরা।
সাহিত্য ও দর্শনের গা বেয়ে চলেছে
আলোককণায় তৈরি লতাপুঞ্জ