
তাপ্তী বসুর গল্প- চিরজীবী
চিরজীবী
১.
আমি চিরজীবী I আমি কৃপাচার্য I মহাকবি ব্যাসের রচিত যুদ্ধগীতির আদিপর্বে আছে যে আমার পিতা ঋষি শরদ্বান এক অপ্সরা জানপদী প্রতি কামার্ত হলে তার বীর্য থেকে জন্ম হয় আমার ও আমার যমজ ভগিনীরI কথায় আছে আমার পিতা ঋষি শরদ্বান ছিলেন এক অতন্ত্য দক্ষ ধনুর্বিদ তবে জন্মের পর তিনি আমাদের অরণ্যে পরিত্যাগ করেন I আমার জন্ম তাই হয়েছিল মাতৃগর্ভ ব্যতীত I কাল্পনিক শোনালেও এতে কিছু সত্য অবশ্যই আছেI যদি কেউ মহাকবির রচিত যুদ্ধগীতি পাঠ করেন তবে অবশই লক্ষ করবেন যে মাতৃগর্ভ ব্যতীত যাদের জন্ম হয় তারা বা হয়তো অন্যদের তুলনায় অত্যাধিক কঠিন এমনকি নিষ্ঠুর হন I আর পুরুষ যখন গর্ভ ধারণ করেন তখন? তখন অস্ত্র ছাড়া সে কি বা প্রসব করতে পারে ? এমন অস্ত্র যা সমস্ত কুলকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়I কেই বা ভুলতে পারে কৃষ্ণ পুত্র শাম্বের গর্ভ থেকে মুষল প্রসবের কাহিনী যা হয়ে উঠেছিল সমস্ত যদুবংশের ধ্বংসের কারণ I
আমার জীবনের কাহিনী শুরু হয় হস্তিনাপুরে I একদিন রাজা শান্তনু অরণ্যে শিকার করতে গিয়ে শরগুচ্ছে কুড়িয়ে পান আমাকে ও আমার ভগিনীকেI নিজ সন্তান ন্যায় গ্রহণ করেন আর এই কুরুবংশীয় রাজার কৃপার জন্য আমার নাম হয় কৃপ ও আমার ভগিনীর নাম কৃপী I পিতা হিসাবে রাজা শান্তনুর হয়তো কোনো আদর্শ ছিল না I কেই বা না জানে যে শান্তনু এক ধীবর কন্যার প্রতি আসক্ত হলে, হস্তিনার উত্তরাধিকারি ও যুবরাজ দেবব্রত কে ভীষণ প্রতিজ্ঞা করতে হয়েছিল যে তিনি শুধু হস্তিনার রাজ্যাধিকার ত্যাগ করবেন তা নয়, চির ব্রহ্মচার্য পালন করবেন I তবুও আমি রাজার কৃপায় সারাজীবন কুরুদের কল্যাণে নিজেকে সমর্পিত করেছিলাম I
আমার জন্মদাতা পিতা ঋষি শরদ্বান ব্রাহ্মণ ছিলেন Iএকদিন উনি এসেছিলেন হস্তিনাপুরে I নিজ অর্জিত শাস্ত্র ও ধনুর্বেদ বিদ্যা আমাকে শিখিয়ে দিয়ে পিতার কর্তব্য পালন করে গিয়েছিলেনI হতে পারে তখন হয়তো ওনার মৃত্যু সন্নিভূত তবে তারপর আর ওনার সঙ্গে আমার আর সাক্ষাৎ হয়নি I আর সে বিদ্যালাভের পর আমি হয়ে উঠি কুরুদের অস্ত্র শিক্ষাগুরু আচার্য কৃপ I এমনকি সেই কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধের পর, ধৰ্মরাজ যুধিষ্ঠির ও তৃতীয় পান্ডব অর্জুনের পৌত্র পরীক্ষিৎ ও আমার অস্ত্র বিদ্যা শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েছিল I
রাজ্ কৃপায় আমিও ভীষ্ম যেটা বলেছিলেন অর্থ দ্বারা কুরুদের সঙ্গে আষ্টে পৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছিলামI ধৰ্ম তো নাকি সেই সময় জন্মেছিলেন এক দাসীর গর্ভে তাই ধর্ম চিরাচরিত রাজার অধীন I এমন সময় এটাই তো স্বাভাবিক যে রাজার হীত থাকবে ধর্মের উর্দ্ধে I অর্থ দ্বারা বাধিত বলতে কি বা বোঝায় ? কি বা তার গন্ডি? কৃতজ্ঞতা? কর্তব্য ? নাকি অন্ধের ন্যায় শুধু প্রদত্ত নির্দেশ বা আদেশ পালন করা ? হয়তো সময় এসেছে বা আসেনি এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার, যদিও আমার উত্তর দেওয়ার দায়বদ্ধতা বা কোথায় ? যুদ্ধের পরে তবুও একটা প্রশ্ন তো থেকেই যায় যে সেই সৌপ্তিক পর্বে কি করে আমি এক সামান্য পার্শ্ব চরিত্র হয়ে উঠেছিলাম অশ্বত্থামার প্রধান সহযোগী I
এর পূর্বে আমি বলি সেই সময়ের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও তাতে ব্রাহ্মণদের অবস্থান I কয়েক যুগ পূর্বে যখন পরশুরামের পিতা জমদগ্নি মুণি কে কার্ত্ত্যবীর্য হত্যা করেছিলেন তখন , প্রতিহিংসা পরায়ণ পরশুরাম একবিংশতিবার সমস্ত ক্ষত্রিয় কুলের হত্যাসাধন করেন I আর কোনটা সবথেকে বেশি দুর্ভাগ্যের ছিল যে এক ক্ষত্রিয় এক ব্রাহ্মণ কে হত্যা করেছিলেন নাকি এক ব্রাহ্মণ নিজের গুণ ত্যাগ করে ক্ষত্রিয়ের ন্যায় অস্ত্র গ্রহণ করেছিলেন ? ব্রাহ্মণরা শিক্ষা গুরু ছিলেন অন্যান্য শাস্ত্রের মতো অস্ত্র শিক্ষা তাদের জ্ঞানের পরিধিতে পড়তো তবে ব্রাহ্মণ স্বয়ং কোনো দিন নিজে হত্যা করেনিI ঋষি বশিষ্ঠ ও তার পৌত্র পরাশর কে রাক্ষস হত্যা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দিয়েছিলেন Iআর সেই চূড়ান্ত পিতৃ হত্যার প্রতিশোধ থেকে পরাশর যখন নিজেকে সংযত করতে পেরেছিলেন তখন তার পরম জ্ঞান প্রাপ্তি হয়েছিল I তিনি তখন সর্বপ্রথম পুরাণ রচনা করেছিলেন বিষ্ণু পুরাণ I ক্ষত্রিয় কে হত্যা করে তাদের হারিয়ে সর্বশেষ করেও পরাজয়ী হলেন ব্রাহ্মণরা কারণ এই রক্তক্ষরণে যেন কি একটা হারিয়ে গেলো সেটি ব্রাহ্মণদের ব্রাহ্মণত্ব বলুন বা তাদের গুণ; অহিংসা , জ্ঞান তপস্যা, আর ক্ষত্রিয়রা তাই পরাজিত হয়েও হলেন বিজয়ীI সমাজের মূল কাঠামো যেন ন্যায় অন্যায় বিচারের জায়গায় এলো প্রতিশোধ নীতিI আর যখন আমি হস্তিনায় ছিলাম তখন এক অন্য সময় ছিল আরেক ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় যুদ্ধের হননকাল একদিকে পরশুরাম ও ভীষ্মের সংঘাত আর অন্য দিকে দ্রোণ ও দ্রুপদেরI
২.
রাজা শান্তনুর দ্বিতীয় পত্নী সত্যবতীর পুত্র বিচিত্রবীর্য হস্তিনার রাজা ঘোষিত হয়েছিলেন । ভীষ্ম যখন তিন কাশী কন্যা কে তাদের স্বয়ংবর থেকে হরণ করেছিলেন নিজ ভ্রাতা বিচিত্রবীর্যের সঙ্গে বিবাহের জন্য তখন সেই জ্যেষ্ঠা কাশী কন্যা অম্বা তার অন্য দুই বোনের মতো তা মানেন নি কারণ তিনি ছিলেন শাল্ব রাজের বাগদত্তাI
কিন্তু ভীষ্মের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে শাল্ব অম্বা কে গ্রহণ করতে রাজি হননি I তার জীবনে এই সর্বনাশের জন্য অম্বা ভীষ্ম কে দায়ী করেন। না অম্বা আর কোন সময় ভীষ্মের কাছে বা হস্তিনায় যাননি বা ভীষ্মকে তাকে বিবাহ করতে বলেনিI কিন্তু যখন ধৰ্ম ন্যায় অন্যায় দিয়ে নয় শুধু জয় পরাজয় দিয়ে বিচার হয় তখন ধর্ম হয় বলশালীর অধীনI এই অন্যায়ের প্রতিবাদ অম্বা ক্ষত্রিয় ধৰ্ম দ্বারা ভীষ্ম কে পরাস্ত করে প্রতিশোধ চেয়েছিলেন। তাই অম্বা যান পরশুরামের কাছে এবং জমদগ্নি পুত্র কে অনুরোধ করেন ভীষ্মে কে পরাস্ত করতে ।
পরশুরাম যখন ভীষ্ম কে পরাজিত করতে পারলেন না তখন কোথাও যেন ক্ষত্রিয়ের অহংকার ও ক্ষমতা অনেক গুণ বেশি বেড়ে গেলোI আর এরই প্রেক্ষাপটে বলি দ্রোণ ও দ্রুপদের কাহিনীI
দ্রোণ ছিলেন ভরদ্বাজ মুণির পুত্রI কৃপীকে বিবাহের্ পর তিনি হলেন আমার ভগিনীপতি I পরে তাদের এক পুত্র হয় অশ্বত্থামা I হস্তিনা আসার পূর্বে একবার অশ্বত্থামা দুধ পান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে I দ্রোণ তখন এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ আর তার তেমন গাভী কেনার সামর্থ ছিল না I পিতা হিসাবে তিনি তার কর্তব্য পালন করতে ব্যর্থ তাই মনে করে তিনি তার বাল্য বন্ধু পাঞ্চাল রাজ্ দ্রুপদের রাজ্ সভায় গিয়ে উপস্থিত হন I
কিন্তু তখন দ্রুপদ ক্ষত্রিয় শ্রেষ্টত্বে দীক্ষিত। এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ আর যাই হোক তার বন্ধু হতে পারেন নাI বলে উঠলেন, ‘এক রাজার বন্ধু হতে পারে শুধু আরেকজন রাজা,’ অপমানিত হয়ে দ্রোণ ফিরলেন বটে কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন এর প্রতিশোধ নেবেনI
এদিকে ভীষ্ম আমার উপরন্তু কুরু ও পাণ্ডব রাজপুত্রদের জন্য আর এক যোগ্য অস্ত্র শিক্ষক এর খোঁজে ছিলেন I দ্রোণ পরশুরাম শিষ্য ছিলেন। পরবর্তী কালে দ্রোণ হস্তিনায় কুরু ও পাণ্ডব রাজপুত্রদের অস্ত্র শিক্ষা গুরু হয়ে ওঠেন ।
এদিকে দ্রোণ এক শিষ্যের খোঁজে ছিলেন যে কিনা তার হয়ে দ্রুপদকে পরাজিত করতে পারবেI আর সেই শিষ্য ছিল তৃতীয় পাণ্ডব অর্জুনI তাই গুরুদক্ষিণা হিসাবে দ্রোণ চেয়ে বসলেন পাঞ্চাল রাজ্ দ্রুপদের পরাজয় I আর কৌরবরা ব্যর্থ হলেও অর্জুন হটাৎ করে আক্রমণ করে দ্রুপদ কে বন্দি করে উপস্থিত করে তার প্রিয় গুরু দ্রোণের কাছে।
আর তারপর যা হবার তাই হলোI কিছুটা বিদ্রুপাত্মক দ্রোণ দ্রুপদ কে জিজ্ঞেসা করলেন , ‘তবে এখন বোধহয় আপনি আমাকে নিজ বন্ধু বলতে পারেন পাঞ্চাল রাজ্ ?’ দ্রুপদ অপমানে ফেটে পড়ছিলেন আর এক ক্ষত্রিয়র কাছে যুদ্ধে বন্দি হবার থেকে হয়তো মৃত্যু বরণ করা অনেক শ্রেয় তবে তখন সব সহ্য করা ছাড়া কিই বা উপায় ছিল ? আর দ্রোণ অর্ধেক পাঞ্চাল রাজত্ব দ্রুপদের থেকে নিয়ে নিলেন আর বললেন,’ পাছে আপনি আবার বন্ধু বলে অস্বীকার করেন তাই এছাড়া আর উপায় কি ?’ এই গুরুদক্ষিণা যুদ্ধ থেকে কিছুটা হলেও পোক্ত হয়েছিল কৌরব পাণ্ডব হিংসা ও বিদ্বেষ কারণ পাণ্ডবরা তো ধৃতরাষ্ট্রের অধীনে কৌরবদের সঙ্গে যুদ্ধ করেনি।
৩.
রাজা শান্তনুর দ্বিতীয় পত্নী সত্যবতীর পুত্র বিচিত্রবীর্য নিঃসন্তান ছিলেন। তার মৃত্যুর পর রানী সত্যবতী নিজেকে নিরুপায় মনে করে তার কানীন পুত্র দ্বারা বংশ রক্ষার চেষ্টা করেন । তখন কোনো ব্রাহ্মণ দ্বারা সন্তান উৎপাদন করা কে নিয়োগ প্রথা বলতো । তার কানীন পুত্র ঋষি ব্যাস দ্বারা তার দুই বিধবা পুত্রবধূ অম্বিকা ও আম্বালিকার দুই পুত্র সন্তান হয় । দ্বিতীয় বার অম্বিকা নিয়োগ প্রথায় রাজি ছিলেন না তার দাসী কে পাঠান, সেই দাসী ও মহর্ষি ব্যাসের এক সন্তান হয় । অম্বিকা পুত্র জ্যেষ্ঠ ধৃতরাষ্ট্র তিনি অন্ধ, আরেকজন অম্বালিকার পুত্র পান্ডু তিনি সন্তাক্ষম আর তৃতীয় জন দাসী পুত্র বিদুর I কে রাজা হতে সর্বোচ্চ যোগ্য তা হয়তো ধৰ্ম সঙ্গত ভাবে বলা যায়নিI মিলেমিশে থাকলে ঠিক আছে কিন্তু কেউ যদি এক সবটা চায় তবে বিপদ I তবে রাজা তো একজনই হতে পারে ।
পান্ডু সন্তাক্ষম বুঝে নিজ রাজ্য ত্যাগ করেছিলেন তবে তার মৃত্যুর পর যখন তার স্ত্রী কুন্তী তাদের ক্ষেত্রজ পাঁচ সন্তান নিয়ে আসেন , পাণ্ডব জ্যেষ্ঠ যুধিষ্ঠিরকে ধৃতরাষ্ট্র যুবরাজ্ ঘোষিত করেছিলেন। নিজ পুত্রও দুর্যোধনকে খুব একটা গ্রাহ্য করেননি। তবে তাতে শান্তি এলো কোথায় যখন যুধিষ্ঠিরের পক্ষে কিছু প্রজা চাইলেন ধৃতরাষ্ট্রই নিজ রাজত্ব ত্যাগ করুক ,তখন এলো নির্বাসন আর জতুগৃহ I
তারপর অবশ্য অর্জুন স্বয়ংবরে পাঞ্চাল কন্যা দ্রৌপদী কে জিতলে দ্রৌপদী পঞ্চপাণ্ডবের স্ত্রী হলেন I তখন তো কিছুটা ভীত হয়ে ধৃতরাষ্ট্র পাণ্ডবদের ইন্দ্রপ্রস্থ দিলেন I তারপর আপাতত যুদ্ধের সম্ভাবনা থামানো গিয়েছিলো।
তবে রাজসূয় যজ্ঞ, নিয়ে আসে দ্যূত ক্রীড়ার বিপর্যয় I যুধিষ্ঠির শেষে যখন ইন্দ্রপ্রস্থের মহারানী কে শকুনির কাছে পণ রেখে যথারীতি পরাজিত হয় তখন দুষ্ট দুঃশাসন সেই দ্রৌপদী কে টেনে আনে কুরু সভায়I কর্ণ দ্রৌপদীকে দাসী ও বেশ্যা বলেছিল I বস্ত্রহরণের চেষ্টা সফল হয়নি এমনকি দ্রৌপদী পেরেছিল পঞ্চস্বামীকে উদ্ধার করতেI এই বিষয়ে আমি সংক্ষেপেই বললাম কারণ এর পরে আসবে আমার কথা I
সব সময় তো পাণ্ডবদের গুণগান গাইতাম তবে দ্রৌপদী কে সভায় ওই ভাবে আনা হলে আমরা কেন নীরব দর্শক ছিলাম ? বিকর্ণ তো আমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিল এরূপ দ্রৌপদীর অপমানের বিরোধিতা করতে I বিদুর ও তো চেষ্টা করছিলেন এই দ্যূত ক্রীড়া রোধ করার । বিদুর তার রাজার বিরুদ্ধতা করতে পারলেন আর বিকর্ণ তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা দুর্যোধনের, কিন্তু আমি ব্রাহ্মণ শিক্ষাগুরু কেন সেই দিন নীরব ছিলাম ? রাজরোষে হয়তো ? আগেই যা বলেছি ক্ষত্রিয় রাজা যা বলতেন তাতে নিযুক্ত ব্রাহ্মণরা সহমত থাকতেন একটা নিরপেক্ষতার সুন্দর আদলে যেন সেই চিরাচরিত বর্ণধর্মের ব্রাহ্মণের শ্রেষ্টত্ব মেনে ক্ষত্রিয় রাজা শাস্ত্র অনুযায়ী রাজ্য শাসন করছেন । তবে বিরোধিতা কোনো দিন নয়। রাজার বিরোধিতা চিরকালই রাজদ্রোহ ।
দ্বিতীয় বার দ্যূতক্রীড়ায় যুধিষ্ঠির পরাজিত হওয়ার পর শর্ত অনুসারে পঞ্চ পাণ্ডব দ্রৌপদী সহ অরণ্যে গমন করে I বারো বৎসর বনবাস ও এক বৎসর অজ্ঞাতবাস I আমি জানতাম এই তেরো বৎসর অতিবাহিত হলেই বাধবে মহাযুদ্ধ যেন কোনো মহাযজ্ঞ I আর সেই যুদ্ধে মুখমুখী হবেন দ্রুপদ ও দ্রোণ ও তাদের দুই পুত্র অশ্বত্থামা ও ধৃষ্টদ্যুম্ন যে কিনা জন্মেছে দ্রোণকে হত্যা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে তার পিতার অপমানের প্রতিশোধ নিতে I
৪.
যেখানে ভীষ্ম কিছু বলছেন না সেখানে আমি ও দ্রোণ কোনো কালেই আমাদের গন্ডি অতিক্রম করিনি । দ্যূতক্রীড়ার সময় কেন আমি নীরব ছিলাম ? এমনি সময় তো কর্ণকে কত তাচ্ছিল্য করেছি ।মনে পরে সেই প্রথম দিন যেদিন কর্ণ এসেছিলI মহাকবি বলেছেন সূর্যের মতো দীপ্ত , ও অগ্নির মতো তেজ আর চন্দ্রের ন্যায় সুন্দরI কিছু মুহূর্ত পূর্বে অর্জুন কতনা সাধুবাদ কুড়িয়েছিল তার অস্ত্র শিক্ষা প্রদর্শন করে। কর্ণ দ্রোণের অনুমতি নিয়ে সে সকল অস্ত্রবিদ্যা শিক্ষা প্রদর্শন করলো নিপুণ দক্ষতায়। আর তারপর দুজন যোদ্ধা একে অপরকে এক দ্বন্দ্ব যুদ্ধে আহ্বান করে বসে I প্রশ্ন হলো যদি অর্জুন হেরে যেত ? দ্রোণের ও ভীষ্মের কুরুবংশের মান সন্মান যেতI তবে আমি বা কেন সেই দিন মাঝখানে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম I তুমি কে হে ? কর্ণ চমকে গিয়েছিল হয়তো বা ওর কোনো দুর্বলতম জায়গায় আমি আঘাত করেছিলাম I নিজ পরিচয় সত্যি সেই দিন জানতো না Iআর তারপর কুরুক্ষেত্রের সময়ও সেই একই ভাবে কর্ণর আত্মবিশ্বাস কে আঘাত করেছি Iসেইদিন কর্ণ আর আমার এই অপমান সহ্য করতে পারেনি আমার জিহ্বা কেটে দেবে এরূপ ও বলেছিল I অর্জুন শ্রেষ্ট অর্জুন শ্রেষ্ট যেন অর্জুনের গুণগান আমার আর শেষ হচ্ছিলো না I এটা কি পক্ষপাতিত্ব না বর্ণ বিদ্ধেষ না পুরোটাই ব্যক্তিগত? আসলে আমার মূল গুন্ আমার নিজস্ব কোনো চিন্তা নেই যেন আমি যা করছি তা আমি করছি না। যেন অন্যের আদেশ আমি পালন করছি তবে সেটির সঙ্গে আমার কোনো যোগ নেই তা একদমই কর্ণের বিপরিত্যে । কর্ণের চিরকাল এক নিজস্ব নীতি ছিল তাই কর্ণ কোনো দিন নিজ হিতে কিছু করে উঠে পারেনি । আর যে মানুষের নিজস্ব ন্যায় অন্যায় বোধ থাকে তার আর যাই হোক নিজস্ব দায়বদ্ধতা থাকে যা আমার কোনো কালেই নেই I
যেমন আমার গুণ ছিল তেমনি ভীষ্মের এক গুণ ছিল I তিনি বিশ্বাস করতেন ন্যায় ও ধৰ্ম শুধু বলশালীর প্রাপ্য I তাই তার ছিল দুর্বলের প্রতি ঔদাসীন্য I সূত, নারী কিংবা সামান্য সৈন্য এদের বোধহয় উনি মানুষ হিসাবে গ্রাহ্য করতেন না I সেই ঔদাসীন্য হয়তো কিছুটা এই যুদ্ধ টেনে এনেছিল । আর দ্রোণ সে তো প্রতিহিংসায় জ্ঞান শুন্যI
ভীষ্ম যুদ্ধ করেছেন টানা দশ দিন তারপর আর বলার নেই কিভাবে শিখণ্ডী কে সামনে দাঁড় করিয়ে যুদ্ধ হয় I ভীষ্ম পতন ও শরশয্যা, তারপর পনেরোতম দিনে দ্রোণের পতন ও হত্যা আর সতেরোতম দিনের শেষে কর্ণের পতন ও মৃত্যু I
গান্ধারী হয়তো সত্য বলেছিলেন যে আমরা দুর্যোধনের পক্ষে যুদ্ধ করলেও পক্ষপাতিত্ব করবো পাণ্ডবদের হয়ে । যখনি দুর্যোধন কে সন্ধি করতে বলতাম তাকে প্রথমে আশস্ত করে যে আমরা ওর হয়েই যুদ্ধ করবো । যেদিন দ্রোণ কে হত্যা করা হয়েছিল সেদিন আমি কোথায় ছিলাম কি বা করছিলাম? কোনো যুদ্ধেই তো আমি খুব একটা কিছু করতে পেরেছি বলে মনে হয় না । সঞ্জয় যুদ্ধের আখ্যান বর্ণনা করে কত না প্রশংসা কুড়িয়েছে I সঞ্জয় কি সত্যি বলেছে ? সঞ্জয় মিথ্যাও বলেনি I বরঞ্চ সঞ্জয় সত্যি ও মিথ্যার মাঝখানে যে একটা সুক্ষ পথ আছে সেটা দিয়ে হেটে গেছে। আর একের পর এক তথ্য চাপিয়ে গেছে সত্যি মিথ্যা অনুসন্ধান করেনি I I তবুও আমি অশ্বত্থামা কে জানাই যে যুধিষ্ঠির এক মিথ্যা উচ্চারণ করেছে অশ্বত্থামা হত ইতি গজ I গজ শব্দটি আস্তে বলেছে I তবে আমার মতে যুধিষ্ঠির অর্ধসত্য নয় পুরোপুরি মিথ্যা বলেছে I
যখন দ্রোণ অশ্বত্থামার তথাকথিত মৃত্যু শুনে অস্ত্র ত্যাগ করলেন তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন সেই অবস্থায় দ্রোণের শিরোচ্ছেদ করে হত্যা করে I তারপর যে তর্ক হয়েছিল তাতে কিছুটা অর্জুন ধৃষ্টদ্যুম্ন কে তিরস্কার করলে, সাত্যকি আর ধৃষ্টদ্যুম্ন তর্কে জড়িয়ে যায় । ধৃষ্টদ্যুম্ন বলে, ‘দ্রোণ আমার শত্রু I শত্রু হত্যা ধর্ম I আমি জন্মেছি দ্রোণের হত্যার জন্য তাই তা ধৰ্ম I অর্জুন ধর্ম নিয়ে বলতে পারে না কারণ সে অন্যায় ভাবে ভীষ্ম কে পরাজিত করেছে I সাত্যকি ধৰ্ম নিয়ে বলতে পারে না কারণ সে ভূরিশ্রবা কে অন্যায় ভাবে হত্যা করেছে I’ ভীম বলে,’ দুর্যোধন পাণ্ডবদের প্রতি যা যা অন্যায় করেছে তারপর কোনো অন্যায় হত্যা নিয়ে কেউ কিছুই বলতে পারে না। I’ তখন সকলে চুপ হয়ে যায় I
৫ .
অশ্বত্থামার যুদ্ধ ক্ষমতা কি অতিরঞ্জিত? ভীমের ব্যাপারে অবশ্য শ্রী কৃষ্ণ স্পষ্ট স্বীকার করেছেন দুর্যোধন ভীমের ন্যায় বেশি দক্ষ ছিলেন I কিন্তু অশ্বত্থামা? এক জায়গায় ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয় কে বলছেন অশ্বত্থামা বৃহস্পতি, পুনুন্দ্রা আরো কত প্রশংসা আর ঘটোৎকচ আর কর্ণ দুই মহান যোদ্ধার যুদ্ধ শূকর ওর কুকুরের কলহ? ধন্য তুমি সঞ্জয় তুমি সত্যি ধন্য। আঠারোতম দিন হয়ে গেছে এদিকে পিতার হত্যার প্রতিশোধ অশ্বত্থামার মাথায় ঝুলছে খড়গের মতো I শেষে আর কি বা উপায় প্রায় অর্ধ মৃত দুর্যোধনের দ্বারা নিজেকে কুরু সেনাপতি ঘোষণা করলো I তখন সেই এগারো অক্ষৌহিণী মধ্যে বেঁচে আছি শুধু মাত্র অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা ও আমি I তখন যুদ্ধও শেষ এক রাজা পরাজিত হয়েছে আর আর এক রাজা সিংহাসন অধিগ্রহনের জন্য অস্থির হয়ে গেছে I একবার শল্যের মৃত্যুর পর দুর্যোধন কে সন্ধির উপদেশ দিয়েছিলাম I আচ্ছা আমরা কি যুধিষ্ঠিরের প্রতি অন্ধ ছিলাম এটা কি জানতাম না যে শত্রু অগ্নি ও ঋণ এই তিনটির ধুলিকণাও অবশিষ্ট রাখতে নেই I যুধিষ্ঠির মহানন্দে কর্ণের মৃতদেহ দেখতে যাচ্ছে আবার ভীম দুর্যোধনের অর্ধ মৃত দেহে পদাঘাত করছে I আর পাণ্ডবরা ? সেই দুর্যোধনের শিবিরে প্রবেশ করে তার ধনরত্ন এমনকি বস্ত্রও অধিগ্রহণ করছে। তখন অশ্বত্থামা হলো কুরুদের সর্বশেষ সেনাপতি I
রাতের অন্ধকারে অশ্বত্থামা এক পেঁচকের অসহায় অন্ধ বায়সদের ওপর আক্রমণ ও হত্যা দেখে ঠিক করলো যে সে পাণ্ডব পাঞ্চাল শিবির আক্রমণ করবে রাতের অন্ধকারে যখন সকলে সৌপ্তিক I
আমি কিছুটা ওকে বোঝানোর চেষ্টা বোধ হয় করেছিলাম সেই একই দায়সারা ভাবে I তবে অশ্বত্থামা অনড় ভীষ্ম, কর্ণ ,দ্রোণ এমনকি দুর্যোধনের হত্যা পাণ্ডবরা অন্যায় ভাবে করেছে I আমি চুপ করে গেলাম I তখন আমি অশ্বত্থামার মাতুল বা বয়োজ্যেষ্ঠ কম আর অশ্বত্থামা আমার সেনাপতি বেশি Iসে যা বলবে তা মানতে আমি বাধ্য অন্তত এতো দিন তাই করে এসেছি আর সেই বয়সে গিয়ে আর অন্য রকম কিছু করা যায় না I কিন্তু আমি তো বলতেও পারতাম যে আমি এই অন্যায় প্রহসনে যাবো নাI কিন্তু না যা আগে বললাম শত্রু হত্যা অন্যায় নয় সে কাল্পনিক হোক বা সত্যি আর তখন যেন মনে হলো কোনো রাজার দণ্ড আমার মাথার ওপর ঝুলছে ।
অশ্বত্থামা যা বলবে তা রাজার আদেশ তাই তখন পাঞ্চাল ও পাণ্ডব শিবিরে আমরা গেলাম I আর সেই সঞ্জয় অনর্গল ব্যাখ্যান দিয়ে যাচ্ছে। অশ্বত্থামার মধ্যে স্বয়ং নাকি মহাদেব প্রবেশ করেছে যদিও নিদ্রায় সুপ্ত মানুষজন কে হত্যা করতে খুব একটা দৈবিক শক্তি লাগে কি ?
পিতার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে প্রথমে ধৃষ্টদ্যুম্নকে অশ্বত্থামা বিনা অস্ত্রে পা দিয়ে শ্বাসরোধ করে আর তারপর শিখণ্ডী ও দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রকে খড়গ দ্বারা হত্যা করে I নিদ্রায় প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় পাঞ্চাল সেনা শত্রু মিত্র বিভেদ করতে পারেনি I তারা অনেক সময় একে অপরকে হত্যা করেছেI আর আমার মধ্যে তো মহাদেব প্রবেশ করেনি তবুও আমি ছিলাম সেই শিবিরের দ্বারে I কেউ পালানোর চেষ্টা করলে তাকে হত্যা করেছি I তারপর সেই শিবিরে আগুন ধরিয়ে আমরা যখন ফিরছি তখন ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী কৌরব বিধবারা যাচ্ছেন কুরুক্ষেত্রেI তখন ধৃতরাষ্ট্র রাজা তাই গান্ধারী ও ধৃতরাষ্ট্র কে আমি জানাই যে পাণ্ডব পুত্র ও পাঞ্চালরা হত I যদিও ধৃতরাষ্ট্র আমাকে এরূপ কোনো আদেশ দেননি, তবু একজন রাজা কে সেই সংবাদ দিয়ে কোথায় যেন আস্বস্ত হলাম যে আমি কোনো রাজা কতৃক এ ঘৃণ্য কাজ করেছি নিজ তাগিদে নয় I
৬ .
আর সঞ্জয় প্রথম থেকেই শুধু দুর্যোদন আর ধৃতরাষ্ট্র কে ঘন ঘন দোষ দিচ্ছে আর কি যেন একটা সুস্পষ্ট সঞ্জয় বলতে পারছে না এরকম একটা ব্যাপার ছিল। শেষে কৃষ্ণ খুলে বললেন ন্যায় ভাবে যুদ্ধ করলে কোনোদিনই পাণ্ডবরা কৌরবদের পরাজিত করতে পারতেন না। একথা পরে দেবতারাও বললেন তবে এতো সময় কেন লাগলো কে জানে ।
অশ্বত্থামা তখনো শান্ত হয়নি পাণ্ডবদের নির্বংশ করতে হবে I এদিকে দ্রৌপদী তখন তার স্বামীদের প্রতিশোধের জন্য উত্তেজিত করছে Iআর যথারীতি তারা কেউই দ্রৌপদীর কথায় কোনো কান দিচ্ছে না I যুধিষ্ঠির নিজে ভেঙে পড়েছে প্রতিবিন্ধ্যের মৃত্যুতে I শেষে সব বারের মতো ভীম রথ ছোটালে তখন তার পেছনে রথ ছোটালে অর্জুন ও কৃষ্ণI
তখন সেই শেষ পাণ্ডব বংশধর উত্তরার গর্ভে লক্ষ করে অশ্বত্থামা ব্রহ্মাস্ত্র নিক্ষেপ করে I তারপর আর কি ? কৃষ্ণ অশ্বত্থামার মণি কেড়ে নিলেন তাকে অভিশাপ দিলেন তিনি হাজার হাজার বছর ব্যাধি গ্রস্ত ঘুরে বেড়াবেন I সে মণি দ্রৌপদী যুধিষ্ঠিরের মুকুটে বসালো I
আর আমি সেই আগের মতো রয়ে গেলাম কুরু পাণ্ডবদের শিক্ষাগুরু হিসাবে পদস্থ I আমায় যুধিষ্ঠির দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্রের হত্যার পরেও মেনে নিয়েছিল I আর দ্রৌপদীও যে প্রতিশোধের আগুনে দুঃশাসনের রক্ত, দুর্যোধনের পরাজয়, কর্ণের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ কামনা করেছিল সে এখন অশ্বত্থামার মণিতে সন্তুষ্ট I ভীম কোনোদিন আমাকে কোনো কটূক্তি করেনি যদিও শত পুত্র বিয়োগের পরও বৃদ্ধ ধৃতরাষ্ট্র কে অপমান করেছে বারংবার । আর অভিমন্যুর হত্যার জন্য অর্জুন সিন্ধুরাজ্ জয়দ্রথ কে দায়ী করে কারণ পাণ্ডবরা জয়দ্রত কে অতিক্রম করে চক্রব্যূহে প্রবেশ করতে পারেনি । সেই অর্জুন আমাকে দোষী করেনি I আর যুধিষ্টিরের রাজত্ব কি দুর্যোধনের থেকে আলাদা কি উন্নত ছিল I মনে হয় না I প্রজারা তো সেরকম কিছু মনে করে বলে তো কবি বলেননি ।যখন ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী রাজ্য ত্যাগ করলেন তখন বহু সংখ্যক প্রজারা বলেছেন যে দুর্যোধনের শাসন ব্যবস্থা ভালো ছিল I যুদ্ধের পর রাজকোষ শূন্য এই নিয়ে যুধিষ্ঠির কাঁদছে কিন্তু আবার তার রাজ্যাভিষেক হচ্ছে বেশ ধুম ধামেI সেই শাসনের বৈপরীত্য ।সেই আবার ভীম ও অর্জুন সেই দুর্যোধন ও দুঃশাসনের প্রাসাদ অধিগ্রহণ করলে I অশ্বমেধ যজ্ঞ হলো I
সুতরাং এতে এটিও স্পষ্ট হলো যে রাজা বদলালেও রাজার মন্ত্রী সান্ত্রী একই থাকে আর তাই আমি যুধিষ্ঠিরের ধৰ্ম রাজ্যে সম্মানিত I শিক্ষা গুরু যখন রাজার অর্থ দ্বারা বাধিত তখন সে রাজার অমাত্য ছাড়া আর কি ?
তবুও কি আমি ন্যায় অন্যায় উর্ধে? কেন? আমার মর্ত্যু নেই তাই ?এই মহাকাব্যে দেবতাদের বাদ দিয়ে অমরত্ব এক অভিশাপI ভীষ্মের ইচ্ছামৃত্যু তাকে কোনো সুখ দেয় নি আর কর্ণ ? সে যে আমার দুর্ব্যবহার আর তাচ্ছিল্য তোয়াক্কা করেনি সেই একমাত্র যে স্বেচ্ছায় অমরত্ব ত্যাগ করেছিল তার কবচ ও কুন্ডল ছিন্ন করেI মনুষ্যত্বের শ্রেষ্টত্ব অমরত্ব দেয় না সেটি হয়তো কর্ণ বোঝাতে পেরেছিলো । মনুষ্য জীবন সংক্ষিপ্ত তাতে মৃত্যু আছে তাই বীরত্ব ও মনুষ্যত্বের সম্ভাবনাও আছে ।আর আমি তো চিরজীবী রাজার অধীন যেকোনো কার্য নির্দ্বিধায় করতে আমার বাধে না কারণ আমি দায়বদ্ধতাহীন । কৌরব হোক বা পাণ্ডব যেকোনো রাজার আমলা তন্ত্রে তাই আমি এক অবিচ্ছিন্ন যন্ত্র বা অস্ত্র যাই বলুন । হয়তো কালজয়ী কবির মতে তাই আমি চিরজীবী হয়েও নিকৃষ্টতম I