
ক্রিসমাস এবং চিঠি
বেবী সাউ
প্রিয়চিঠি
এমন উৎসবের দিনে আশ্চর্য কোনও স্মৃতিচিহ্ন তোমাকে দিতে ইচ্ছে করে।
ধীর, শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন আনন্দের ভেতর দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মনে হয়, এমন একটা সহজ, সরল পথ এবার আমাদের এঁকে ফেলা উচিত। আমাদের উচিত একটা শান্ত বসতবাড়ি তৈরি করা। প্রচুর শাল, সেগুন, বট,অশ্বত্থ ছায়াময় পথ এবং স্বচ্ছ স্রোতস্বিনীর পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া একটা বিশাল বিস্তৃত পথ এনে দিই তোমার জন্য। কিংবা একটা শান্ত সূর্যোদয় দেখার মতো অবসর? দিতে পারি একটা রোগমুক্ত, ভয়হীন পৃথিবীর আশ্বাসটুকুও! কখনো কখনো মনে হয় বড় অসহায় আমি, বড় দুঃখী। তোমাকে দেওয়ার মতো সামান্য সঞ্চয়টুকুও জোগাড় হল না এতদিন! এতদিন পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে ঘুরেও খোঁজ পেলাম না সেই সামান্য নিখাদ স্পর্শটুকু। ভেঙে পড়ি। নিজেকে সামলে নিয়ে দেখি সারিবদ্ধভাবে হেঁটে যাচ্ছে রাজপথ। গভীর এই রাতে চিৎকার করে ওঠে টলোমলো এক বেকার যুবক। নিজের কান চাপা দিই। দৃশ্য ঘোরানোর জন্য চেয়ে থাকি ঝলমলে শপিং মলের দিকে। ঝকঝকে স্বাধীনতা সেখানে হেলতে দুলতে কফি খাচ্ছে। খুলে ফেলছে শ্যাম্পেনের বোতল। আর… আর…
নিজেকে ভুলতে চেষ্টা করি। নিজেকে মানিয়ে নিতে নিতে সাজিয়ে তুলি উৎসব। নতজানু হয়ে, শান্ত স্বরে, অতি শান্ত স্বরে, তোমার সুগন্ধময় হাত স্পর্শ করে বলি–যদিও এ পথ স্বপ্নের এবং সম্পূর্ণ গড়ে দিতে পারিনি তোমার জন্য এমন উৎসবের দিনে, তাও, চলো একটু একসঙ্গে হাঁটা যাক। যেমন জীবন-পাখি, একেকটি যুদ্ধবিমান ক্রশ করে উড়ে যায় আকাশের বুকে, যেমন যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তবন্যার ভেতরেও ফুটে ওঠে একটা ছোট বনফুল কিংবা শত দুর্ভিক্ষের মাঝেও স্বপ্ন দেখে কোনো মা সন্তান প্রসবের, ঠিক তেমন ভাবেই! ঠিক তেমনভাবেই চলো এবার লিখে ফেলি কিছু অব্যয় এবং শব্দের কথা।
মুগ্ধ তুমি, অধিক মুগ্ধ হয়ে, হাতে হাত রেখে তখনই আশ্বাস দিলে। লিখে দিতে চাইবে স্বচ্ছ জল এবং পরিপূর্ণ আহারের কথা। অথবা বলে ফেলবে, দরকার নেই আমাদের এত উন্নতির যা আমাদের যমদূত হয়ে প্রতিটি মুহূর্তকে ভয় দেখাবে! এই উষ্ণায়ন, এই পরমাণু বোমা তৈরির কৌশল, এই একে একে জীবনঘাতক ভাইরাস — তোমার সামান্য ইশারায় ছেড়ে চলে যাবে এই নীলগ্রহের উঠোন। আর সামান্য যা কিছু বেঁচে যাওয়া, আমার সামনে এনে দাঁড় করাবে সেইসব মুখোশের মুখগুলিকে।
এমন প্রেমের পৃথিবীতে শাস্তির কোনও ব্যবস্থা নেই দেখে, সেইসব মুখোশ কি নিজের থেকে বলে উঠবে না ” মেরি ক্রিসমাস”…
এমন আশ্চর্য উপহার কে না পেতে চায়, বলো?

