অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br />পর্ব ৪৮ <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
পর্ব ৪৮
তৃষ্ণা বসাক

৪৮

দুটো মেশিনের মাঝখানে যেটুকু ফাঁক থাকে তাতে দিব্যি একটা চাদর পেতে শুয়ে থাকা যায়। আজকাল এখানেই শুয়ে থাকে মার্কেজ। অ্যাকশন সেরে এসে, অ্যাকশনে যাবার আগে কিংবা এমনই এমনিই এখানে শুয়ে থাকতে ভালো লাগে তার। তার কয়েকটা কারণ আছে।
এক তো এটা তার ওয়ার্ক এরিয়ার খুব কাছাকাছি।
দুই একেবারে শহরের বুকে।
তিন পরিত্যক্ত জায়গা, অথচ, তেমন একটা নোংরা নয় এখনো।
মেশিনঘর সম্পর্কে একটা স্বাভাবিক আড়ষ্টতা আছে বেশির ভাগ লোকের। তাই কি এখানে এখনো সেভাবে খারাপ লোকের আস্তানা হয়নি? এটা ভেবেই হেব্বি হাসি পেল মার্কেজের। সে কি ভালো লোক নাকি, অ্যাঁ?
মার্কেজের একটা ফ্লাস্ক আছে, তাতে চা নিয়ে চলে আসে, আর বিস্কুটের প্যাকেট, কখনো রুটি তড়কা। দরকার হলে রাতটাও কাটিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আজ অবদি রাত কাটায় নি। সন্ধে হবার আগেই সে এখান থেকে চলে যায়, কারণ এই অন্ধকারটা সে নিতে পারে না, যদি এখানে কোন অ্যাকশন সারার হত, তবে ঠিক ছিল। কিন্তু ফালতু অন্ধকারে বসে সাপ খোপের কামড়ে বেঘোরে প্রাণ দেবার কোন মানে হয় না। এমনিতেই সে যে লাইনে এসেছে তাতে একদিন না একদিন বেঘোরে প্রাণ যাবেই। ফালতু আগে মরে গিয়ে কি লাভ। বিকেল হতে না হতেই তার নিজের ছোট্ট আস্তানাটার জন্যে মন কেমন করে। জোড়া ব্রিজের কাছে ফার্স্ট রোডের ছোট্ট ব্রিজটা পেরোলেই তার ফ্ল্যাট আলোকঝর্ণা, তার চারতলার ঘরে ঢুকলে মন ভালো হয়ে যায় মার্কেজের। হাত পা ধুয়ে জামা কাপড় বদলে সে একেবারে অন্য মানুষ। বিছানায় শুয়ে শুয়ে বই পড়া, এর থেকে আরামের আর কীই বা হতে পারে? শুধু বই পড়াই কারো সারা জীবনের কাজ হতে পারে। কত বই বাকি থেকে গেল পড়া। এতদিন সে কেবল লাতিন আমেরিকার সাহিত্য পড়েছে, হঠাৎ কিছুদিন আগে সে কুরতুলুন হায়দার পড়ল, তারপর মান্টো, ইসমত চুঘতাই। অনুবাদে যা যা পেল সব। তারপর দক্ষিণে বশির, তাকাষি পিল্লাই, এম মুকুন্দন। অন দা ব্যাংক্স অফ মায়াঝি পড়ে সে বিস্ময়াবিষ্ট হয়ে গেল। এত অপূর্ব লেখা সম্ভব!রাজনীতি, প্রকৃতি, হিংসা, যৌনতা কী ভাবে মিলে মিশে যাচ্ছে। অন্ধকারে তো বই পড়া যায় না, নইলে রাতটা কখনো কখনো সে মেশিন ঘরে কাটিয়ে দিতেই পারত।

কিন্তু এক সপ্তা আগে শুতে এসে চমকে গেল। ঘুমোচ্ছিল।হঠাৎ কী একটা শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। দেখল একটি মেয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে দেখছে তাকে।মেয়েটাকে দেখে কেন যে ওর প্রথমেই রূপার কথা মনে পড়ল। কোন মিল নেই চেহারার। পরে ভেবে দেখেছে, আসলে মেয়েটার পোশাক দেখেই ওর এরকম মনে হয়েছে। অনেক বছর আগে এরকম চুড়িদারের চল ছিল। রূপাও পরত এইসব। কিন্তু কিছুদিন আগে পুরুলিয়ায় হঠাৎ রূপাকে দেখে চমকে যায় সে। জিনস টি শার্ট সানগ্লাসে একেবারেই ট্রেন্ডি রূপা, তাকে দেখে সেই জ্যোৎস্না রাতের কথা মনে করা যায় না। তবু সেসব মনে পড়ল কেন যে। ওর মধ্যে যে এরকম গদগদে আবেগ রয়ে গেছে দেখে নিজের ওপরেই বিরক্তি লাগল। সেই তো অসহ্য মেলোড্রামাটিক মধ্যবিত্ত বাঙালি রয়ে গেছে ভেতর ভেতর। ডিক্লাসড হতে পারেনি মোটেই। এত সব সেরিব্রাল লেখকদের লেখা পড়ে কী লাভ হল তাহলে? মানুষকে খাল্লাস করে দিতে দিতে মানুষ সম্পর্কে মোহমুক্ত হতে পেরেছে ভেবেছিল।কোথায় কী? সেই তো রূপাকে দেখে বুকে চিনচিনে ব্যথা শুরু হল তার। সেটা যে পুরোটা কষ্টের, তা নয়, কেমন যেন আনন্দ আর বেদনায় মাখামাখি এক অদ্ভুত অনুভূতি। রূপা যে বেঁচে আছে আর ভালো আছে, এটা জেনে তার ভালো লেগেছিল। আর রূপা যে তার হল না, তার জীবনে যে অমন কোন স্বপ্ন দেখাও যায় না, এটা বুঝতে পেরে তার মন ব্যথায় অসাড় হয়ে গেছিল।এই মেয়েটাকে দেখে তার রূপার কথা মনে হল আর সেই অদ্ভুত ব্যথাটাও ফিরে এল।তার মনে হল, এত বছর পরে তার হঠাৎ মনে হল সে যে সুপারি নিয়ে এত লোককে খুন করেছে, তার মধ্যে এই মেয়েটার কেউ নেই তো? কীরকম একটা হারানো হাবভাব এর, লস্ট লুক যাকে বলে। মার্কেজ উঠে গিয়ে মেয়েটাকে অনুসরণ করল। দেখল ফুটপাথে দাঁড়িয়ে আরেকটা মেয়ের সঙ্গে কথা বলছে সে। দুজনের শুধু বয়সের নয়, সাজপোশাকের ফারাক চোখে পড়ার মতো।মার্কেজ একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের দেখছিল। এখান থেকে ওদের কথা শোনা যাচ্ছে না, কিন্তু দেওয়ালের কোন পোস্টার দেখিয়ে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। মার্কেজের হঠাৎ অদ্ভুত একটা কথা মনে হল। দেওয়াল না থাকলে এই পার্টিগুলো কোথায় থাকবে? এখন তো প্রযুক্তির বিস্ফোরণের ফলে কতরকম প্রচার মাধ্যম এসেছে, তবু পথসভা, জনসভা আর দেওয়াল লিখন মেন স্টে থেকে গেছে। এত বড় এই দেশ,সবচেয়ে বড় কথা, এত হতদরিদ্রের দেশ, যে এইসব প্রযুক্তি নিয়ে সেখানে পৌছনো যাবে না, সাবেকি কৌশলই বেশি কার্যকরী।
দু এক মুহূর্ত পরেই ওরা চলে গেল যে যার রাস্তায়। কমবয়সী যে, সে বাঁদিকে গেল, আর অন্য মহিলাটি রাস্তা পেরল। মার্কেজ দেখল সে পাঁচ নম্বর গেট দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে যাচ্ছে। এদিকের গেট দিয়ে তো পেছনের কোয়ার্টারে ঢোকা যায়। একে দেখে ছাত্রী বা শিক্ষিকা কিছুই মনে হচ্ছে না। তবে কি? হঠাৎ মনে হল, যে মেয়েটা বাঁ দিকে চলে গেল, তাকে যেন কোথায় দেখেছে সে। যেমন ভাবা অমনি সে পা চালিয়ে দেখতে গেল মেয়েটা কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু মেয়েটা কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। মার্কেজ তখন পেছন ফিরে দেখল দেওয়ালটা।
‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ধবংসের দিন আসন্ন। যোগাযোগ ভবানী শাস্ত্রী’

শাস্ত্রীজী? নামটা চেনা চেনা। এরা কি সব বলতে পারে? কোন তন্ত্র মন্ত্র, বাবা মা, অমুক শ্রী, তমুক শ্রী-কে সে জানে না, ওসব বুজরুকি বিশ্বাস করে না। কিন্তু জীবনের জাদুতে তার অগাধ বিশ্বাস। সে জানে জীবন মাঝে মাঝেই অভাবনীয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। আর সেই অভাবনীয় একবার ঘটে গেলে, সেটা আরেকবার হতে পারে। এটাকে বলে প্রবাবেলিটি। আসলে যে ঘটনা ঘটে, তার মধ্যেই আরেকবার ঘটার আসক্তি থেকে যায়। যেমন একবার জন্মানোর পর মানুষ আরেকবার জন্মাতে চায়, তাই জন্যেই সে সন্তানের জন্ম দেয়। পৃথিবীতে, খেয়াল করে দেখলে একই ঘটনা বারবার ঘটতে থাকে। লোকে বলে হিস্ট্রি রিপিটস ইটসেলফ। এই হিস্ট্রি মানে কী? চেসেস্কু, রুশ বিপ্লব, জার্মানির দেওয়াল, মনিকা, ক্লিন্টন, লাদেন , ছাপ্পান্ন ইঞ্চি- এইসবই কি হিস্ট্রি? ইতিহাস তো মানুষের যাপনের প্রতিটি মুহূর্ত, তার ইচ্ছে, সাধ, অপূর্ণতা, রাগ হিংসা, প্রেম সব কিছু মিলেই। এমনকি স্মৃতিরও ইতিহাস থাকে। আজকাল মার্কেজের মনে হয় স্মৃতিই আসল। আসল যা কিছু সব স্মৃতিতেই ঘটে। গার্সিয়া মার্কেজের আত্মজীবনীর প্রস্তাবনায় তিনি যা লিখেছিলেন, জীবন যতটা বাঁচা হয়, তার বেশিরভাগটাই বাঁচা হয় স্মৃতিতে-এইরকম তার সার কথা।Life is not what one lived, but what one remembers and how one remembers it in order to recount it সেই স্মৃতির ইতিহাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর স্মৃতিতেও ইঙ্গিত থাকে ভবিষ্যতের। কী হতে চলেছে তার ইশারা থাকে স্মৃতি আর স্বপ্নে।নইলে কিছুদিন ধরে সে এমন স্বপ্ন দেখে চলবে কে? একটা বিরাট মাঠ দিয়ে সে একটা মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে হেঁটে চলেছে, মেয়েটা একটা ঢলঢলে চুড়িদার পরে আছে, ডান হাতে একটা বই, কন্ট্রোল টেকনোলজির। বই মানুষকে শনাক্ত করে, কন্ট্রোল টেকনোলজি হাতে এ মেয়ে কখনোই রূপা হতে পারে না।ছুটতে ছুটতে সে মেয়েটির মুখ দেখতে চায়, মেয়েটি আপত্তি করে, মার্কেজ ওর চিবুক ধরে মুখটি ফেরায় তার দিকে। আকাশে ভেসে যাচ্ছে জোছনায়। মার্কেজ সেই জোছনার আলোয় চমকে দেখে কী আশ্চর্য সেই মুখ। সে মুখে মিশে গেছে পদ্মাবতী, খনা, চন্দ্রাবতী, প্রথম ঢেঁকির উদ্ভাবক অনাম্নী পল্লীবধূ, ননীবালা, মাতঙ্গিনী, বিভা চৌধুরী – সব মিলিয়ে এক প্রত্নপ্রতিমা যেন। তার চোখ স্বরবর্ণ, তার চুলে শ্রুতি স্মৃতি, তার শরীর বাংলার মানচিত্রের মতো, খণ্ডিত, লাঞ্ছিত। মার্কেজ অভিভূত হয়ে পড়ে এই বাংলার মুখ দেখে। সেদিন যে মেয়েটা এসেছিল, তার পরনে অবিকল সেই ঢলঢলে চুড়িদার। তার মানে, তাদের যে দেখা হবেই, স্বপ্নেই ইঙ্গিত ছিল তার। রূপা, জোছনা, মোরগঝুঁটি ফুল নিয়ে তার যে স্মৃতির ইতিহাস, তার পুনরাবৃত্তি হতে বাধ্য, তা তো হলই তুর্গা লেকের ধারে। একেকটা অসুখও থাকে এইরকম। বারবার ঘুরে ফিরে আসে। একসময় তার বছরে একবার দুবার চোখে আঞ্জনি হত, হতই। ডাক্তাররা বলতে পারছিল না, কেন হচ্ছে। তারপর হঠাৎ একদিন আর হল না। আসলে এই মহাবিশ্ব, তার সব সুখ অসুখ এসবের একটা বায়োলজিকাল অস্তিত্ব আছে, তাদের নিজেদের ইচ্ছে অনিচ্ছে আছে। কোন জায়গা মানেই সেটা মাটি, সিমেন্ট, অ্যাসেবেস্টস, ই&ট, কাঠ, কাঁচ দিয়ে বানানো প্রাণহীন কিছু না, একটা জায়গার শরীর থাকে, সেই শরীরের ইশারা, ডাক থাকে।যা গতিশীল, তাইই জগত। এই পৃথিবীর প্রতিটি ধূলিকণাও গতিশীল। সতত সঞ্চরণশীল। যে কোন গতিময় বস্তু তো প্রাণময়ও। সেই প্রাণ থেকে প্রাণে ডাক আসে।কোয়ান্টাম ফিজিক্স তো বলছেই দুটি কণা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলে। তবে সবাই সবাইকে তো ডাকে না, সবাই এ ডাক শুনতেও পায় না।যেমন সেই পুরুলিয়ার তুর্গা লেক, জলের মাঝ অব্দি গিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে যাওয়া সেতুটা। কী যে উত্তেজিত করে মার্কেজকে। নারী শরীরের মতো? নাহ, নারী শরীর তাকে কখনোই জাগায় না। ছোট থেকেই সে এসব বিষয়ে উদাসীন। সেই যে এক পূর্ণিমার রাতে রূপাকে ওর বাড়ি অব্দি এগিয়ে দিতে গেছিল, আর মোরগঝুঁটি ফুল ফুটে ছিল জোছনার তলায়, রূপার টান ওই সব মিলিয়ে। একটা বিছানায় শুধু রূপার নিরাবরণ শরীর আর সেই শরীর নিয়ে তার কসরত- এটা তাকে কখনো টানেনি। একটা মানুষ, সে তো তার চারপাশের মধ্যেই জড়িয়ে থাকা অংশ, তাকে শুধু শরীর করে রাখলে শুধু তাকে খণ্ডিত করা নয়, নিজের পাওনাতেও অনেকখানি কম পড়ে যায়। অথচ শরীর উদাসীন মার্কেজের জীবন আমূল পালটে গেল এই শরীরের জন্যেই।সেই প্রথম বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা হল রাজ্য জুড়ে। হঠাৎ করে বাবা চলে গেল পরীক্ষার আগে, উজ্জ্বল ছাত্র মার্কেজ সরকারি কলেজে চান্স পেল না, প্রথম সারির বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হল বাড়ির কাছাকাছি। হস্টেল সুপার ফ্যামিলি নিয়ে থাকতেন পাশেই। সুপারের স্ত্রী নানা ইশারা পাঠাতেন তাকে, মার্কেজ এড়িয়ে যাচ্ছিল বারবার। সিলেবাসের বাইরে তার একমাত্র আকর্ষণ ছিল সাহিত্য। আক্রোশে মলেস্টেশনের কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়া হল তাকে। মাথায় শাসক দলের ছাতা ছিল মহিলার। কিছুই করতে পারল না সে। কলেজ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হল। সেদিন প্রথম সে বুঝতে পারল শরীর, শরীর জিনিসটা কত রাজনীতি করতে পারে। এরপর বহুদিন ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিল। সেইসময় জামাইবাবু তাকে কন্ট্রাক্টরির বিজনেসে লাগাতে চাইল,মা জামাইবাবুকে মেসিয়া ভেবেছিল। আসলে তার পেটানো শরীরটাকেই ব্যবহার করতে চেয়েছিল জামাইবাবু। সে ব্যবসায় অনেক কাঁচা টাকার লেনদেন হত, মার্কেজ বোঝার আগেই সে হয়ে গেল বাউন্সার।অন্য দল টার্গেট করে ফেলল তাকে। মার খেল। জেল খাটল। দাগি হল। তারপর তো জীবনটাই পালটে গেল।
কোন জায়গার যে ইশারা থাকে, বুঝতে পারে মার্কেজ। ওকে কতবার ডাক দেয় রানাভূতিয়া। যেখানে এক অপার্থিব গোধূলিতে বুকোকে খাল্লাস করেছিল সে। ওপর দিয়ে সেইসময় একঝাঁক টিয়া উড়ে গিয়েছিল ট্যাঁ ট্যাঁ করতে করতে। দীঘির ধারের ঝোপে কি নাড়াচাড়া টের পেয়েছিল কিছু? সেখানে এক জোড়া প্রেমিক শরীরে শরীর মিশিয়ে দিয়েছিল নাকি, পরে তারাই পুলিশে যায়। শুনেও তাদের ওপর রাগ হয়নি তার, মনে হয়নি ও দুটোকে নিকেশ করে এত বাড়ের শাস্তি দেয়। ওদের কাজ ওরা করেছে, তার কাজ সে। এ খেলার যে শেষ আছে একদিন, সে তো জানে। আর ধরা পড়ার মুহূর্তেই সে নিজেকে শেষ করে দেবে, এটাও ভাবা আছে। তার আগে চাপ নেবার কিছু নেই। যে কটা দিন হাতে আছে, সে নিজের মতো পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ পেতে চায়। আর স্পর্শ? স্পর্শ? রূপার কথা মনে পড়ল এক মুহূর্তের জন্যে। কিন্তু তেমন বেদনা হল না। পুরুলিয়ায় ওকে দেখার পর থেকে কেমন যেন ফুরিয়ে গিয়েছে রূপা।হঠাৎ হঠাৎ মনে পড়ে, কিন্তু আগের মতো ছটফটানি তোলে না। বরং সেই যে মেশিনের মাঝখানে শুয়ে সেই মেয়েটাকে দেখল সেদিন, ওকে দেখে বহুবছর পরে শরীরে একটা ডাক এল। ও যেন রানাভূতিয়ার সেই ঝিল, তার নিচে কত না রহস্য। ওর আউটডেটেড পোশাক দেখে তার একটুও হাসি পেল না। বরং মনে হল ও সেই প্রত্নপ্রতিমা, যা সৃষ্টির আদি কাল থেকে সময়কে এক জায়গায় ধরে রেখেছে। ওর যেন আদি নেই, অন্ত নেই। কেউ ওকে বুঝতে পারেনি, জঙ্গলে পোড়ো মন্দিরে যেমন থাকে এক এক প্রতিমা, স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলে, ‘ওরে আয়, আমি বহুকাল পুজো পাইনি, আমাকে প্রতিষ্ঠা কর’, এই সেই বাংলার চিরকালের প্রতিমা।
সত্যি সত্যি সে এল আবার। মার্কেজ জানতই সে আসবে। আসা মাত্রই সে উঠে সামনে গিয়ে দাঁড়াল ধীরে ধীরে। সময় যেন থেমে গেছে। সে বলল ‘আমাদের ধরার আগেই আমরা হারিয়ে যাই চলো। একটা গ্রাম আছে, আমরা সেখানে যাব।’
‘সেখানে গেলে কি একটা চাকরি পাব?’
‘চাকরি?’
‘হ্যাঁ। এই বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সাত সাতবার রিজেক্ট করেছে, বেস্ট রেজাল্ট সত্ত্বেও নেয়নি’
‘পৃথিবীর সব থেকে বড় বিশ্ববিদ্যালয় তোমাকে নেবে বলে অপেক্ষা করছে, তার নাম জীবন’
দোলন অবাক হয়ে চেয়েছিল ওর দিকে। একেই তো দেখেছিল সে সেদিন। ভয় পেয়েছিল। আবার সেখানেই এল কেন? দুটো মেশিনের মাঝে একটুখানি জায়গায় এ শুয়ে ছিল। পাশে একটা বই ছিল। আজেবাজে বই না, মনেই পড়ছিল না যদিও ঠিক কী বই।ও হ্যাঁ, লাভ ইন দা টাইম অব কলেরা। গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ। সে তো কখনো পড়েনি এমন বই। এসব বই বিদিশা পড়ত। হ্যাঁ, বিদিশা বলত কুন্দেরা, মার্কেজ এইসব নাম। চে গুয়েভারার ডায়েরি।মুক্তি যুদ্ধের স্মৃতিকথা, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাসিতের কথা। এইসব নাম তো বিদিশার মুখেই শুনেছে।যেন রাস্তায় পড়ে থাকা পলাশ কৃষ্ণচূড়া, গুলমোহর। ক্যাম্পাস তো লালে লাল হয়ে থাকত, তার মধ্যে হলুদের প্যাচওয়ার্ক। এগুলো মাড়িয়ে সে হেঁটে যেত, হয়তো মনে মনে একটা দুরূহ জটিল অংক কষতে কষতে। পৃথিবীতে এত গান ছিল, এত বই, আর এত হ্যাঁ এত প্রেম!প্রেম, সত্যি। সেদিন ওই মেয়েটার সঙ্গে দেখা হল যখন, রাস্তা পার হতে হতে দোলন দেখল, ওর পদক্ষেপ কত দৃঢ় হয়ে গেছে। কত ভালবাসছে ও নিজেকে, যে দোলন রাস্তা পেরিয়ে ওপারে গেছিল আর যে দোলন ওপার থেকে এপারে ফিরে এল- তারা যেন অন্য মানুষ। ও বারবার ভাবল কী এমন ছিল মেয়েটার মধ্যে যে ও এত পালটে যাচ্ছে। মেয়েটা তো ওর চোখের দিকেও তাকায়নি। তবে? হঠাৎ তার মনে পড়ে সেই দুটি চোখ, শান্ত সমাহিত অন্তর্ভেদী। বহুদিন পরে এভাবে কেউ তাকাল তার দিকে।এমন সেই চোখ যার টানে সে আবার এসেছে আজ।
মার্কেজ তার একটা হাত টেনে নিয়ে রাখল একটা মেশিনের ওপর।
‘স্পন্দন শুনছ? এরা বেঁচে আছে আজও, সারা দেশ জুড়ে এমন কোটি কোটি মেশিন বেঁচে আছে। এরা স্ক্র্যাপ নয়, তুমিও স্ক্র্যাপ নও, তুমি বেঁচে উঠবে। বেড়ে চলবে। তোমার আবিষ্কার হবে’
‘বিদিশা বিদিশা কী করব আমি?’ বিদিশা উত্তর দিল না। দোলন যত নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে, বিদিশা তত সরিয়ে নিচ্ছে নিজেকে। যেন কেউ নেই বিদিশা বলে, কোনদিন ছিল না। দোলন কারো নির্দেশের অপেক্ষা না করেই মার্কেজের হাত ধরে বলল
‘চলো’

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes