স্রোত <br /> পর্ব-২১ <br /> যশোধরা রায়চৌধুরী

স্রোত
পর্ব-২১
যশোধরা রায়চৌধুরী

২১

পুরানো জানিয়া চেহ না

কাউকে যখন তুমি ভালবাসবে তখন তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখবে। প্রেম মানে আসলে খুঁটিয়ে দেখা। স্বস্তিকা কোনদিন মানুষ ভালবাসত না। এখন সেটা বুঝতে পারে। কারুর দিকে পূর্ণ তাকিয়ে দেখার কষ্টটুকু অব্দি করেনি তাই তো।

হয়ত বেদনাগুলো তাইই। সোমদত্তকে বিয়ে করেছিল না ভালবেসেই। তাই সোমদত্তর দিকে তাকানোর কথা কোনদিন মনে হয়নি। আজ সোমদত্তর জীবনে ঘেন্না এসেছে, নাকি, স্বস্তিকার দিকেই আর কোন আকর্ষণ বোধ করেনা? সেটা এই না তাকানোর ঔদাসিন্যেই। স্বস্তিকা নাকি ওকে অবহেলা করে করে, ওর দিকে না দেখে দেখে, জন্তু বানিয়ে দিয়েছে। এগুলো সোমদত্ত বাড়িয়ে বলে। নিজের স্বাভাবিক, ঘটনাহীন অস্তিত্বকে ঢাকতেই হয়ত বলে।

স্বস্তিকা প্রথম মানুষের দিকে তাকানো কাকে বলে, শিখল একদিন। হয়ত পুরুষ বলে নয়, কিন্তু তারা ঘটনাক্রমে পুরুষই ছিল তো! সে তো ও অর্চি বা নিজের ছেলে টিন্টোকেই ভালবাসে। তবু, একদিন চোখে পড়ল, কত কালো ছেলে আছে কেষ্টঠাকুরের মত, সেটা অমিত, মানসীর ছেলেকে দেখে। আর সংগে সংগে পৃথিবীটা পালটে গেল।

অমিত এসেছিল মানসীকে নিতে। খুব শরীর খারাপ করেছিল মানসীর একদিন। বেলা একটা নাগাদ মাথা ঘুরুনি, বমি। শুয়ে পড়ল আঁচল পেতে বারান্দায়। কাজ করতে পারছে না। ট্রেনে করে ফিরতেও পারবে কিনা সন্দেহ। ফোন করে ছেলেকে ডেকে নিতে হয়েছিল। স্বস্তিকাই বলল ডেকে নিতে। সেদিন স্বস্তিকার অফিসের দিন না। বাড়িতেই ছিল। কিছুটা সামাল দিয়েছিল মানসীর হাতের কাজ।

ফোনে মানসীর অমিতের সঙ্গে কথা হল।

মানা, আমার বড় মাথা ঘুরছে রে। একলা যেতে পারবুনি।

কী হল? মাথা ঘুরছে কেন?

গলা দিয়ে টক জল উটেচে। মনে হচ্চে অম্বল মানা। বেলা করে খেইচি।

কী খেয়েছিলে?

রুটি দিল মাসিমা, ভেজে খেইচিলাম। একবার বমি হয়েচে। বৌদি একটা চুণ ওষুদ দিয়েচে। অ্যান্টাসিড না কি বলে।

দু ঘন্টা লেগেছে ওর আসতে। সেদিন বেল টিপে অধীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল অমিত। আধময়লা শার্ট, কিন্তু সাদা রং। সে সাদা রং এর মধ্যে থেকে ওর কালোটা ফুটে বেরুচ্ছিল। আর একটা অদ্ভুত রাগ… মা যে এবাড়িতে কাজ করে, আর রোজ বেলা বারোটায় বাসি রুটি তেল দিয়ে ভেজে খেয়ে অম্বল বানায় খালিপেটে, তা নিয়ে রাগ।

স্বস্তিকা নতুন চোখে শুধু দিকেই না, পৃথিবীর দিকেই তাকাল। মানুষ ওকে টানতে লাগল। মানুষের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকার দরকার পড়ল যেন এই প্রথম। দেখতে পেল, কত বিচিত্র বর্ণ গন্ধ মানুষের। কত না বিচিত্র তাদের অভ্যাস, থাকাথাকি।

অমিত জানতেও পারল না, ওর সদ্য কৈশোর পেরোন চঞ্চল তেজাল শরীর, ওর হালকা চালে হাঁটাচলা, ওর গোঁফ গজানো নরম ত্বক, আর হঠাৎ দৃঢ় হয়ে ওঠা চোয়াল, ওর এমনিতে শান্ত কিন্তু রেগে গেলে ভয়ংকর হয়ে ওঠা মেজাজের পৌরুষের রফলা যফলা… সব স্বস্তিকা কী ভাবে ব্লটিং পেপারের কালি তুলে নেওয়ার মত তুলে নিচ্ছিল। বলা ভাল, শোষণ করে নিচ্ছিল।

অমিতকে দেখে বাৎসল্য জেগেছে বৌদির, ভাবল মানসী। অমিত জানতেও পারল না, মাত্র কয়েক মুহূর্তে ও স্বস্তিকাকে কিভাবে পাল্টে দিল। যে স্বস্তিকা সারাজীবন নিজেকে ছাড়া আর কাউকে দেখতে পায়নি, সোমদত্তর চাওয়া, ভাল লাগা, কম্পুটার আসক্তি। বইয়ের পাতায় গাছের পাতা রাখা। সোমদত্তর কাচতে দেওয়া শার্ট –এ থেকে যাওয়া টাকার নোট। কত না অবহেলায় পড়ে থেকেছে, লক্ষ্যই করেনি। হয়ত বিয়ের কয়েক বছরের পর, ভালবাসতেই আর ধৈর্য ছল না স্বস্তিকার। এতই সে উদাসীন।

আজ সেই স্বস্তিকা, বসে বসে দেখে । সবাইকে দেখে।

মানসীকে দেখে। এমনকি প্রিয়নাথকে ক্ষমাও করে দিতে পারে সে। লোকটা শুধু দেখেইছিল তো। বুড়িয়ে যেতে যেতে শরীর চলে যাবার টেনশনে মানুষের ক্ষিদে বেড়ে যায় দেখার। হয়ত স্বস্তিকারও তাইই।

স্বস্তিকার নিজেরও সময় গড়াচ্ছিল। টিন্টো কীভাবে বড় হয়ে গেছে। ওর থেকে দূরে গেছে, ওর বাবার থেকেও দূরে , অনেক দূরে। অর্চিও বড় হল। খড়্গপুরে কাজ করে। স্বস্তিকার জা প্রায়ই ওর বিয়ে দেওয়ার কথা তোলে, কিন্তু ওর সঙ্গে এঁটে উঠতে পারে না।

অর্চির মা এখনো ছেলেমানুষের মত ভাবে , সুনন্দনাকে আসলে ভালবাসে অর্চি। ওর সঙ্গেই বিয়ে হবে।

স্বস্তিকা একটা ব্যাপারে জিতে আছে। ওদের ঘরে কম্পিউটার আছে, কম্পিউটারে ইন্টারনেট আছে। ওরা নিজেরা অপারেট করে সেসব। সোমদত্ত এইসব করেছে রাত্তিরে নিজের নতুন শেখা শেয়ারবাজারের কাজের জন্য, কিন্তু স্বস্তিকাকে বাধা দেওয়ার কথাই ওঠেনা। ফেসবুকে আছে স্বস্তিকা। আর কী আশ্চর্য, ও দেখেছে, মানসীর ছেলে অমিতেরও একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। ও অমিতকে আজকাল আড়াল থেকে দেখে। অমিতের ছবি,অমিতের কথা, অমিতের গন্ধ। ওর লেখা পুরনো সব কবিতার লাইন। রবি ঠাকুর, সুভাষ মুখোপাধ্যায়।

ওর ফেসবুক বান্ধবী হয়েছে অনেক। স্বস্তিকা আজকাল ফেসবুক থেকে নিজের পাতা থেকে যত না আনন্দ পায়, বেশি আনন্দ পায় এর ওর তার পাতায় পাতায় ডালে ডালে ঘুরে। অর্চির টিন্টোর অমিতের কত বন্ধুবান্ধবী। তাদের পাতায় গেলে মনে হয় অনেক মজা আছে এখনো, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গল্প আড্ডা খিস্তি আর এ ওকে খুনসুটি দেখলে , ওদের তরতাজা ছবিগুলো দেখলে এখনও নিজের বয়সটা কম বলে মনে হয়। ওর নিজের মধ্যবয়সের বোধ আর থাকেনা। কাজ কাজ কাজ , সারাদিন একটা দমদেওয়া পুতুলের মত কাজ করে যায় যে, সে কষ্ট থাকেনা।

আগে সোমদত্তকে ভালবাসেনি , সে কথা বুঝতে পেরে এখন ওর কষট হয় খুব। সোমদত্তর প্রেশার হয়েছে, হার্টের জন্য ওকে তেল ঘি মশলা কম খেতে হয়। এখন স্বস্তিকা সোমদত্তর গন্ধটাও টের পেয়ে যায়। যৌবনকালে কাউকে না ভালবাসলেও , বুড়োবয়সে তার জন্য অনেককিছু করা যায়। শাশুড়ি মাকে দেখছে তো, পার্কিনসনের পর শ্বশুর মশাই যখন পুরো শিশু হয়ে গেল, ডাক্তার বলল, মাথার স্নায়ুগুলো একে একে মরে যাচ্ছে, ধীরে ধীরে উনি সব ভুলে যাবেন, তখন সেই অবোধ শ্বশুরকে নিয়ে মা কীরকম তুলছেন বসাচ্ছেন শোয়াচ্ছেন । যেন বা ঠাকুরঘরের নারায়ণ শিলা।

বাবাকে ছোট বাচ্চার মত নাইয়েছেন , খাইয়েছে্ন, হাগিয়েছে্ন, ছুঁচিয়েছেন মা। বাবাও দু আড়াই বছরের বাচ্চার মত আ আ করে মাকে ডাকছেন। মা ঘুমোলে, মাকে ঘুম থেকে তোলার জন্য খিমচে দিচ্ছেন। মা চেঁচান, উ বাবাগো, আমায় মেরে ফেলবে গো। সে চেঁচানোয় সুখ আছে। সেবার বাবা পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে চৌচির। হাসপাতালে ভর্তি । ডাক্তার বলল, চলাফেরার অসুবিধে ওনার থাকবেই, নার্ভ শুকোতেই থাকবে, কোনদিন উনি ঠিক হবেন না, ক্রমশ খারাপই হবেন, শাশুড়ি কিন্তু ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ওরা যদি সারাতেই না পারে, তাহলে ওখানে রেখে দিক গে যাক, আর বাড়িতে আনার দরকার নেই।

সেই মা তারপর কোনদিন কমপ্লেন করেননি। মা চোখের আড়াল হলেই বাবা আ আ করে চেঁচান। যে শ্বশুরমশাইয়ের কথার পটুত্বের জন্য লোকে ধন্য দিত, সেই বাবা।

বাবার দ্বিতীয় শৈশবে মা নিজের বাকি কালো চুলগুলো পাকিয়েছেন।

স্বস্তিকা ভাবে, সোমদত্ত ও বাবার মত। ওরও তবে ওইরকম হবে। এখন স্বস্তিকাকে সব ব্যাপারে দোষ দেয়। বয়সের গরম কমে গেছে বলে চীৎকার কম করে। স্বস্তিকা ওর সেবাযত্ন করব আশা একরকম যখন ছেড়েই দিয়েছে, স্বস্তিকা তখনই বাড়ির দেখভাল শুরু করল। ওর জন্য ভাজা শুকনো লঙ্কা ঝোলে দিয়েই তুলে নেয়, যাতে গন্ধ হবে, ঝাল হবে না। সেদ্ধর ওপর চিকেন রাঁধার কথা বলে রান্নার লোককে। খুব যত্ন করে ওর জলখাবার বানায়। ওট, বাজরা, মকাই কিনে আনে রুটি করার জন্য।

সোমদত্ত এখন তাকায় স্বস্তিকার দিকে। ও ও আবার করে দেখার মানে বোঝে। এখনো সব হারায়নি হয়ত। ওদেরও কোন একটা ভবিষ্যত আছে। আছেই।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes