অজিত সিং বনাম অজিত সিং <br /> চল্লিশ পর্ব  <br /> তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং বনাম অজিত সিং
চল্লিশ পর্ব
তৃষ্ণা বসাক

অজিত সিং প্রথমে ছিল বঙ্গলক্ষ্মী চানাচুর, তারপর এল আজাদ হিন্দ চানাচুর, তারপর একের পর এক বিপ্লব চানাচুর, সর্বহারা চানাচুর, উন্নততর সর্বহারা চানাচুর, এখন চলছে বিশ্ববাংলা। এখানেই কি ভাবছেন গল্প ফুরিয়ে গেল? এবার আসছে একে ফিফটি সিক্স চানাচুর। নাম যাই হোক, সোল এজেন্ট আমি।’ ‘বেওয়ারিশ’ গল্পের চানাচুরওলা এবার ঢুকে পড়েছে বাংলার শিল্পক্ষেত্র থেকে শিক্ষাজগতের ক্ষমতার অলিন্দে।খুন, যৌনতা, প্রতিশোধ, নিয়তিবাদের রুদ্ধশ্বাস সুড়ঙ্গে সে টের পাচ্ছে- -বহুদিন লাশের ওপর বসে বারবার হিক্কা তুলেছি আমরা -বহুদিন মর্গের ভেতরে শুয়ে চাঁদের মুখাগ্নি করেছি আমরা -অন্ধ মেয়ের মউচাক থেকে স্বপ্নগুলো উড়ে চলে গেছে (জহর সেনমজুমদার) এই সবের মধ্যে বাংলার কি কোন মুখ আছে আদৌ? থাকলে কি একটাই মুখ? না অনেক মুখ, সময়ের বিচিত্র রঙে চোবানো? বিগত প্রায় অর্ধশতাব্দী জুড়ে বাংলার অজস্র মুখের ভাঙ্গাচোরা টুকরো খুঁজে চললেন তৃষ্ণা বসাক, তাঁর নতুন উপন্যাস ‘অজিত সিং বনাম অজিত সিং’-এ । সব কথনই রাজনৈতিক, সেই আপ্তবাক্য মেনে একে কি বলা যাবে রাজনৈতিক থ্রিলার? সিটবেল্ট বাঁধুন হে পাঠক, ঝাঁকুনি লাগতে পারে। প্রকাশিত হল উপন্যাসের ৪০তম পর্ব। এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক।

৪০

শনিবার দুপুরের পরে কোন কাজ রাখতে চায় না অজিত। আর শালা ভগবান ওর সঙ্গে শত্রুতা করেই যেন শনিবার নতুন নতুন কাজ তৈরি করে। বিশেষ করে ইউনিভার্সিটির প্রফেসরগুলো। মালগুলো তো ঠান্ডা ঘরে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকে সারা সপ্তা, মাঠে ময়দানে অজিতের মতো ছুটতে হলে কেলিয়ে পড়বে একদিনে, তারা এই শনিবারটা তুলে রেখে দ্যায় মেন বিল্ডিং এ হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার জন্যে। কারো প্রোমোশন, কারো বিদেশ যাবার জন্যে টিকুইপের পয়সা চাই।কারো কোন ক্যান্ডিডেট আছে, তাকে ঢোকাবে। সব শালা এসে জুটবে শনিবার। মেন বিল্ডিং আসা মানে তো অজিতেরই কাছে আসা।
অজিত আজও অনেককে কাটিয়ে দিল, পরের সোমবার বসবে বলল সবাইকে। তার মধ্যে পি কে ডি ছিল। প্রদীপ্ত। প্রদীপ্ত নামের এই মালটা কারো হয়ে চাকরির কথা বলতে চায়, বলতে পারে না, কেবল বলে সিংজী, আপনার সঙ্গে একটা কথা ছিল, কনফিডেনশিয়াল।
কানাঘুষো শুনেছে মালটা নাকি বউয়ের চাকরি নিয়ে তদবির করতে চায়। সে আবার পাগল। পুরো পাগল না হলেও ছিটেল। সেই নিয়ে কম হাসাহাসি হয়নি। কিন্তু এর চাকরি তো আগের জমানার পেন্ডিং ব্যাপার। এর মধ্যে জড়াতেই চায় না অজিত । কিছু লাফড়া ছিল নিশ্চয়। তাছাড়া মেয়েছেলেদের এত চাকরি বাই কেন কে জানে। খা, দা, সাজগোজ কর, ঘোর ফের, খানা পাকা, পুজোপাঠ কর, বিছানায় নিজেকে খুলে দে । নোকরি নোকরি। যত্ত সব। এই নোকরি নোকরি করে বাঙালি জাতটা উচ্ছন্নে গেল। কি ছেলে, কি মেয়ে সব তার পেছনে পড়ে আছে একটা প্রফসারি কি অফসারিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার জন্যে। যতজন লেগে থাকে, তার কজন পায়? আগের আমলে কত পার্টি ক্যাডার সারাজীবন মিছিলে হেঁটে, গলা চিরে গান গেয়ে গেয়ে শেষ জীবনে একটা চাকরি পেত। যাহোক চাকরি। পি ডাব্লিউ ডি-র সবচেয়ে নিচু কেরানী হয়তো। ততদিনে তার যৌবন চলে গেছে, বিয়ের বয়স নেই আর, সবচেয়ে দুঃখের কথা গলা থেকে গান চলে গেছে। কখনো কোন সন্ধেয় তার গলায় ‘আমার গানের স্বরলিপি লেখা রবে’ কিংবা ‘ওগো কাজল নয়না হরিণী’ শুনে যে যে হরিণীরা মায়া চোখে তাকাত, তাদের শিকার করে নিয়ে চলে গেছে মোটা মাইনের দাপুটে বাঘেরা। সারাজীবন পার্টির সেবা করে নিজের জীবন শিল্প প্রেম স্বপ্ন যৌনক্ষমতা সব নিঃশেষ করে শেষ জীবনে একটা সরকারি চাকরি, তাও পেনশনের বয়স চলে গেছে অনেক সময়, বুড়ো বয়সে বাবা হবার গুখুরি।
তবে এই আমলে এত অপেক্ষা কেউ করে না। একদম ওপরের যারা, সোনার টুকরো ছেলেমেয়েরা, বিলেতে চলে যায়, একদম নিচের যারা , তারাও ভিন রাজ্যে খাটতে চলে যায় কিংবা পিতজা ডেলিভারি করে বা তারা অটোর লাইসেন্স বার করে আর করতে গিয়েও সেই পার্টির দাদা দিদিকেই ধরতে হয়। বিপদে পড়ে মাঝের লোকজন। সেইসব সোনার দিন শেষ। পৃথিবী এখন বৃদ্ধা হয়েছেন। সরকারি চাকরি আর কোথায়? প্রেম আর চাকরি-দুয়েরই নিশ্চয়তা বলতে কিছু নেই। তবু এরা বুঝেও বোঝে না। দাদা দিদির কাছে মাথা নোয়াবার অভ্যেস নেই, মেনেও নিতে পারে না, টাকা দিয়ে চাকরি কেনার কথা শুনলে আঁতকে ওঠে। কারণ সেই বালের আদর্শ। এরা মুখ ফুটে বলতেও পারে না, কী চায় তারা। শেষ অব্দি কম্পিউটারের লাইনে চলে যায়, ঠান্ডা ঘরে বসে কাজ করে ভাবে এই তো, পেয়ে গেছি, নিজেদের স্বর্গ। কিংবা বেচারাম হয়ে যায়। সেলসের কাজ। এর থেকে যদি অজিতের টিমেও আসত, তবে একটা কাজের কাজ হত। মার্কেজ জগাকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছে সে। মালটাকে দেখলে অস্বস্তি হয়, ওর সামনে কেমন একটা লাগে নিজেকে, লো, লো, মনে হয় ও যেন জল অচল কেউ, এমন একটা ঠান্ডা চোখে তাকায় মালটা। ওকে বেশিদিন রাখা যাবে না, খাল্লাস করে দিতে হবে। কিন্তু বহুবার ভেবেও কাজটা করে উঠতে পারেনি অজিত। এমন নয় যে মায়া পড়ে গেছে। আসলে মার্কেজের মতো এফিসিয়েন্ট লোক এই বাজারে পাওয়া মুশকিল।পিস্তলের হাত পুরো মাখন। একজন ভালো দর্জি যেমন স্যাটাস্যাট কাপড় কেটে ফেলে কাঁচি চালিয়ে, তেমনি মার্কেজ মসৃণভাবে মানুষকে খুন করে। কোথাও কোন খাঁচ খঁচ নেই।তার ওপর, যা শুনল অজিত, ওর তো মাথা ঘুরে গেল। মার্কেজের কাছে নাকি এই লাইনের সবার ডেটাবেস আছে। ওর ল্যাপটপে সব ছোট বড় মাঝারি মাসলম্যান, খোচড়, নেতা, হাফ নেতা- সবার হাঁড়ির খবর। তার মানে অজিতের খবরও নিশ্চয় আছে। আর এখন এই দুনিয়া এমন, মার্কেজকে সরিয়ে দিলে, তার ল্যাপটপ ভাঙচুর করলেও এই খবর থেকে যাবে। কোথায় কাকে পাঠানো আছে, নিরন্তর আপডেট হয়ে চলেছে, তার সব গোপন মুহূর্তের ছবি উঠে যাচ্ছে, কে জানে। কিছুর পরোয়া না করলেও, অজিত চায় না তার আর মোহরের খবর নিয়ে বেশি নাড়াচাড়া হোক।এটা তার খুব ব্যথার জায়গা, যেন খুব লজ্জার জায়গায় একটা ফঁড়া, অন্য কেউ হলে এ নিয়ে ফাটিয়ে বেড়াত । কিন্তু অজিতের পেছন মেরে দিয়ে গেছে তার দাদাজী। সেই যে বঙ্গালিদের সম্পর্কে একটা শ্রদ্ধা ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে, বিশেষ করে বঙ্গালি মেয়েদের নিয়ে এমন উঁচি কুর্সি পেতে দিয়ে গেছে তার মনে, তার থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারে না অজিত। তার মনে আছে দাদাজী একটা ছবি দেখিয়েছিল তাকে।লাল পাড় সাদা শাড়ি পরা এক বঙ্গালি আওরত। দুর্গা প্রতিমার মতো।কোমরে জলের কলস, ডান হাতে কাশ ফুল। যেন গ্রামের সাধারণ একটা বৌ জল আনতে গিয়ে কাশ ফুলে ভরা মাঠে থমকে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সাধারণ কী করে হবে? মেয়েটার কপালে একটা চোখ আঁকা। তৃতীয় নয়ন যাকে বলে। কী গভীর সেই চোখের চাউনি। যেন ভেতরের সব কিছু পড়ে নিচ্ছে। দাদাজী যখন দেখিয়েছিল, কেঁপে উঠেছিল অজিত। সে কাঁপা গলায় দাদাজীকে জিগ্যেস করেছিল
‘এই অউরত কি বঙ্গালি?’
‘জরুর। কাশ ফুল আর কাঁহা মিলবে বেটা?’
‘এই বঙ্গালি আওরত কি ইনসান না দেওতা? ইনসান হলে ওর কপালে চোখ কেন?’
এর উত্তরে ভারি অদ্ভুত একটা কথা বলেছিল দাদাজী।
বলেছিল ‘ ইয়ে অউরত ইনসান ভি, দেবী মা ভি। ইয়াদ রাখনা পাপ্পু। হর বঙ্গালি অউরত ইনসান ভি, দেবী মা ভি।কুছ কুছ বাত তেরে সমঝ কে বাহার হ্যাঁয় আভি। বড় হলে সমঝে যাবি’
বয়সের বিচারে অনেক বড়ই তো হয়েছে অজিত। জীবনে মানুষ যা যা চায়, পয়সা, গাড়ি বাড়ি, ইজ্জত। হ্যাঁ ইজ্জত মানে তো ক্ষমতা। ইউনিভার্সিটির ভি সি অব্দি তাকে দেখে বলে ‘আসুন সিংজী’ এর থেকে আর ইজ্জত কী হতে পারে। মোহরমালার মতো অত পড়ালিখা এক অফসর তার সঙ্গে এক বিছানায়… এর থেকে সাফল্য আর কী হতে পারে এক জীবনে? কিন্তু সে এখনো পুরো বুঝে উঠতে পারেনি দাদাজীর কথা। কিন্তু কথাটা ফেলতেও পারেনি। সম্ভ্রম করে চলছে বঙ্গালি অউরতদের।এরকম অনেকবার হয়েছে, যারা তার শয্যায় এসেছে, মারকাটারি চেহারা প্রত্যেকের, দেবীর মতো মুখশ্রী। কিন্তু তাদের দেখেও তার শরীর জাগেনি, বা জেগে উঠেও নেতিয়ে পড়েছে। কারণ সে অত সব রূপের হুরী পরীদের শরীরে মৃত্যুর গন্ধ পেয়েছে, তার নাকে এসেছে কামিনী ফুলের গন্ধ, বহু বছর আগে এক বৃষ্টি ভেজা রাতে যেমন পেয়েছিল, যে রাত শেষ হয়েছিল এক ভয়ঙ্কর সকালে। ঘুম ভেঙে সে দেখেছিল, মাথার ওপর দুটো পা ঝুলছে। অজিতের মনে হয় পিংকি কি সেই রাতে তাকে অ্যান্টাসিডের বদলে ঘুমের ওষুধ খাইয়েছিল? নইলে সে তো হালকা পুলকা আওরত ছিল না। কিতনি মোটি থি ও! সেই চেহারার একজন গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে রইল, ডাইনিং স্পেসে গিয়ে, ওখানেই, কারণ পরে ভেবে দেখেছে অজিত, বাড়ির মধ্যে, ওই টেবিলটাই খুব মজবুত ছিল, তার ওপর চেয়ার তুলে সে ঠিক ঠিক হাইটটা পেয়েছিল। যাকে মনে হত একেবারেই বুদ্ধু, মাথামোটা এক আওরত, সে এত মাথা খাটিয়ে বার করেছিল মরে যাবার তরিকা! তাহলে কি ওর ওই মোটাসোটা চেহারার মধ্যেই একটা পরিষ্কার মাথা লুকিয়ে ছিল, অকলমন্দ যাকে বলে, তেমন যথেষ্টই ছিল সে, অজিত ভয় দেখিয়ে তাকে ফুটে উঠতে দ্যায় নি। ঘর কা মুরগি ডাল বরাবর, এই মনে করেই তার কাছে কদর হয়নি পিংকির। তাই সে মাথা খাটিয়ে এমন এক উপায় বার করল, যাতে মরে গিয়েও সে বেঁচে থাকে, আর অজিত, অজিত সিং, সিং ইজ কিং অজিত যাকে মন্ত্রী থেকে প্রফেসর সবাই ডরিয়ে চলে, যার কথায় বাঘা বাঘা ছেলে অ্যাকশন সেরে আসে চুপচাপ, সেই অজিত বেঁচে থেকেও মরে যায়। তার সামনে সারা পৃথিবীর সুখাদ্য, বিছানায় অপ্সরা কিন্নরী- তবু কেন সে কিছুই ভোগ করতে পারে না? আলো ঝলমল রেস্তোরায় হঠাৎ হঠাৎ দেখে চোখের সামনে দুটো পা ঝুলছে। তার টেবিলের সুপের মধ্যে নেমে আসছে সেই দুটো পা। তার বিছানায় ইশারা আর নখরা নিয়ে শুয়ে থাকা নগ্ন মেয়েদের গা থেকে মৃত্যুর গন্ধ পায় সে, তার তাই নিজেকে দিতে পারে না , তখন মেয়েগুলোর ওপর রাগ হয় তার, তাদের আঁচড়ে কামড়ে একটু শান্তি পেতে চায় সে, তখন সেই মেয়েরাও ছাড়ে না, কাঁচা খিস্তি তো করেই, তার ওপর চড়াও হয়ে মারতে থাকে। কিন্তু ঘুরিয়ে তাদের লাথি চড় মারতে পারে না, কে যেন তার হাত চেপে দাঁড়ায়, হয়তো দাদাজীই। বঙ্গালি আওরতদের কপালে তিসরি আঁখ আছে, বলেছিল না দাদাজী? ভুল, ভুল বলেছিল দাদাজী। সব মেয়েদেরই থাকে কপালে তিসরি চোখ। পিংকিরও ছিল। সেও যতটা ইনসান, ততটাই দেবী মা ছিল। দেবী মা-রাই তো মরে না কোনদিন, শুধু বেঁচে থাকে না, পাপীদের শাস্তিও দিতে পারে তারা।
তবে এখনকার বঙ্গালি আওরতদের কেন জন ভালো লাগছে না একদম অজিতের। তার প্রথম এবং মুখ্য কারণ তাদের নানা রঙের চুল। খুব ছোটবেলায় মা তাকে একবার বলেছিল ‘পাপ্পু, কলকাতায় তুই থাকবি নানাজীর কাছে। ওখানে কত মিঠাই খেতে পাবি। রসগুল্লা মিস্টি দই। ওরকম মিঠাই আর কেউ বানাতে পারে না। আর মেয়েগুলো কিতনা মিঠা। ওদের চুল দেখেছিস, কুচকুচে কালো। ওরকম চুল আর কারো নেই।’
সেই বিখ্যাত কালো চুলে লাল, সবুজ, নীল রঙ, দেখেই ভেজা গরম হয়ে যায় অজিতের।চুলে মুখ না ডুবিয়ে শরীর খেলা যায়? এদের চুলে মুখ ডুবোলে মনে হয় রঙের বালতিতে মুখ ডুবিয়েছে সে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে কড়া রঙের গন্ধে। একদিন একটা মেয়ে, অপারদীপা নাম, ‘কাদের কুলের বৌ?’ সিরিয়াল করে ক্যান্টার করে দিয়েছে, সে এসেছিল অজিতের ফ্ল্যাটে। দূর থেকে অত বোঝেনি, কিন্তু মেয়েটা বিছানায় এসে শুধু পোশাক খুলল না, চুলটাও খুলে ফেল। আর সেটাই হল কেলো। অজিতের মটকা গরম হয়ে গেল লাল নীল সবুজ গেরুয়া চুল দেখে। মাগি যেন সব পার্টির পতাকা চুলে জড়িয়েছে। অজিত বলল ‘বঙ্গালি মেয়ে, কোথায় দেবী দুর্গার মতো চুল হবে, তা না, যেন সিঙ্ঘের কেশর। ফোটো এখান থেকে। হেব্বি ঘুম পেয়েছে আমার’
অজিত ভেবেছিল মেয়েটা ভয় পেয়ে যাবে। কারণ জঙ্গলে যেমন অরণ্যদেবের প্রবাদ ঘুরে বেড়ায় তেমনি টলিউডে ঘুরে বেড়ায় মিথ, অজিতকে তুষ্ট করতে না পারলে এই লাইনে আর কাজ করে খেতে হচ্ছে না। কিন্তু এ মেয়ে হেভি তেজি মাল দেখা গেল।জামাকাপড় পরতে পরতে বলল ‘আর দেবী মারাবেন না। এদিকে মেয়েদের রেপ করছেন, পুড়িয়ে মারছেন, চাকরি কেড়ে নিচ্ছেন, প্রমোশন দিচ্ছেন না, একটু নাম করলে কার কার সঙ্গে শুয়েছে তার লিস্ট বার করছেন, আর এদিকে বলছেন দেবী। তাছাড়া দেবী দুর্গা নিয়ে কথা বলাও তো হিন্দু ফান্ডামেন্টালিজম। আমার নাম হচ্ছে শবনম। আমি দুর্গার মতো হতে যাব কেন?’
‘সেকি! আমি তো জানি তোমার নাম অপারমিতা।’
‘ওই নামটা নিতে হয়েছে। মুসলমান নাম দেখে কাজ চলে যাচ্ছিল তাই।’
বিচ্ছিন্ন ঘটনা এসব। ভেবেছিল অজিত। কিন্তু তবু ওটা ভুলতে পারে না সে।
মোহরমালার চুল কুচকুচে কালো আর কত দীর্ঘ। আজ সে একটু পরেই মোহরের কাছে যাবে, ভেবে ভালো লাগছিল। কিছুই না, সে বেল টিপলে যখন মোহরমালা খুলে দ্যায়, হয়তো একটা সাধারণ কুর্তি পাজামা পরা, কিংবা হাউস কোট, ক্বচিৎ কখনো শাড়ি, তখন সেই মুহূর্তটা অসম্ভব ভালো লাগে। তাদের তো সুখা দেশ। রোদে রোদে খেলে বেড়িয়ে সারা শরীর যখন তৃষ্ণায় কাতর হত, তখন বাড়ি ফিরে মার হাতের এক লোটা জল খেলে শরীরটা যেমন জুড়িয়ে যেত, তেমনি চৌকাঠের ওপারে যখন মোহরমালার মুখটা দেখা যায়, তখন ঠিক সেইরকম শরীর মন জুড়িয়ে যায়।শনিবার ঘুম ভাঙলেই এই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা শুরু হয়ে যায়।সত্যি বলতে কি, শরীর নয়, ওই দরজায় দাঁড়ানোর ভঙ্গিটাই সবচেয়ে টানে থাকে। মনে হয় সারাদিন পরে বাড়ি ফিরল সে। মোহর তার জন্য কাচা পাজামা পাঞ্জাবি গুছিয়ে রেখে দ্যায়। নিজে কফি খেলেও অজিতের জন্যে লস্যি বানায় আর সঙ্গে শুখনো মিস্টি দু একটা আর হয়তো সামোসা, মাইক্রো ওয়েভ করে দ্যায়। ফিরে খুব সামান্যই খায় অজিত, কিন্তু এই যে কেউ তার জন্যে যত্ন করে সাজিয়ে দিচ্ছে, এটা তাকে অভিভূত করে দ্যায়। ও যখন এইসব খায়, তখন মোহর টেবিলে বসে রাতের খাওয়া সেরে নেয়। নটার মধ্যেই ওর ডিনার টাইম।
কিন্তু আজ এই কাজটা ঘাড়ে চাপল। সোমেন মুখার্জি মারা গেছে। তাকে থাকতে হবে ভিড় সামলাতে।
সোমেন মুখার্জির সঙ্গে মৌখিক আলাপ পর্যন্ত নেই।অজিত সিং বলে কেউ আছে, তাও উনি জানতেন কি না সন্দেহ। সে নিয়ে একটুও দুঃখ নেই অজিতের। কারণ সোমেনকে শেষ অব্দি ভেজিটেবেল করে রাখা হয়েছিল। ছিলেন, এই অব্দি। দলের কোন ভেতরের খবর ওঁর কাছে পৌঁছত না। তা ছাড়া অনেক দিন ধরে উনি সব ভুলে যাচ্ছিলেন একটু একটু করে। অ্যালঝাইমার না কী যেন বলে। অথচ যখন অজিত এইসব লাইনে নতুন, তখন প্রথমে তো এদের উদাহরণই দেওয়া হত। কত কীর্তি এঁর। নকশালদের নাকি শেয়ালের মতো মেরেছিলেন। বাংলার দামাল ছেলে সব। প্রথম প্রথম এইসব শুনত অজিত তারা তারা চোখ করে, তার মনে পড়ত দাদাজী যখন তাকে ছোটবেলায় বড় বড় বাঙ্গালীর কীর্তিকলাপ শোনাত, ক্ষুদিরাম,বাঘা যতীন, নেতাজী, বাঘের বাচ্চা সব। দাদাজী বলত নেতাজী বেঁচে থাকলে এই দশা হত না বাঙ্গালির। তাই বুঝত অজিত। তার মাথায় খেলত না এতদিন কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। প্রথম প্রথম এই সব দামাল ছেলেদের গল্প গাথা শুনে তার মনে হয়েছিল, এই তো বাংলার সোনার যুগ, অচিরেই সে তার মোহ কাটিয়ে ওঠে। খড় ভরা চেয়ারচাটা বাঘ এরা সব। বীর নয় কেউ। বীর যদি বলতে হয়, বীর তো সে। তার দাদা পরদাদাদের সবাই তো রাজপুতানা থেকে এসেছিল। সেই তো বীর। টিকিটের জন্যে কোনদিন হ্যাংলামি নেই তার, চেয়ারও চায় না। মুকুটহীন সম্রাট যাকে বলে, সে তাই। তার কাছে এসব নেতা ছেঁড়া ন্যাতা ছাড়া আর কী? এরা তো দুদিন অ্যাকশন করে, তারপর ঠান্ডা ঘরে বসে দুধ ঘি খাবার পাবলিক। করতে হত অজিতের মতো, তো বুঝত। কাপসা কাট হয়ে যেত।
অজিত মাঝে মাঝে চোখ বন্ধ করে ভেবে জীবনের মানে কী তার কাছে। অনেক ভেবে সে দেখেছে জীবন মানে হচ্ছে অ্যাকশন। বেঁচে যদি থাকতে চাও, তবে তোমাকে অ্যাকশনে নামতেই হবে। প্রথম ক বছর মাঠে ময়দানে, ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে, ছাদের চিলেকোঠায় রুদ্ধশ্বাসে আটকে থেকে নিজের হাতে করতে হবে। আর কী থ্রিল সেসবের। যারা নিজের হাতে কাজ শেখে না, তাদের কিস্যু হয় না। ওই সব খড়ের বাঘ। এর পরের বছর গুলোতে, আর নিজে কাজ করলে চলবে না, তাহলে কিন্তু প্রেস্টিজ গ্যামাক্সিন হয়ে যাবে। তখন লোক দিয়ে কাজ করাতে হবে। তবে তখনো হাতে পায়ে মরচে ধরতে দেওয়া চলবে না। কত নেতা আছে কথায় কথায় চড়াৎ চড়াৎ করে চামড়া বাজানোর হুমকি দ্যায়, কিন্তু তাকিয়ে দেখো বসে বসে মাল আর মাংস খেয়ে খেয়ে ঘাড়ে গর্দানে চর্বি। লোককে হুকুম দিতে দিতে নড়ে বসতেই পারে না, তো অ্যাকশন করবে কি? আর অজিতের দেখো, এখনো কি নির্মেদ ছিছিপে শরীর, মোহর তাকে আদর করে বলে কালো চিতা। মোহরের কথা মনে হতেই মন খারাপ হল অজিতের। আজ সেই পিকেডি মালটা বসবে বলেছিল ওর সংগে। কাটিয়ে দিয়েছে। এরকম আরও কয়েকটা কাজ কাটিয়ে দিয়েছে। ইচ্ছে ছিল দুপুরের মধ্যে ফ্ল্যাটে গিয়ে মাছ ভাত খাবে মোহরের হাতের, বাঙালি বরেদের মতো। মোহরও চলে যাবে বলেছিল সকাল সকাল।গিয়ে মাছের ঝোল রাঁধবে বলেছিল। ভেবেই মটকা গরম হয়ে যাচ্ছে অজিতের। মালটা আর মরার দিন পেল না? সোমবার মরতিস, কি অন্য কাজের দিন। এই উইক এন্ড টাতেই মরতে হল? তাকে এখনই নন্দনে চলে যেতে হবে। তার আগে মোহরকে বলে যাবে। নাহ ফোন বা মেসেজ করবে না সে। খুব দরকার ছাড়া সে ফোন ব্যবহার করতেই চায় না। মোহরের ঘরে গিয়ে বলবে, অন্তত দেখাটা হয়ে যাবে। লোক থাকলে বলবে ‘ম্যাডাম আজ কি ফাঁসা ফেঁসে গেছি। কত রাতে যে ফ্রি হব কে জানে!’
মোহরের ঘরে ঢুকে আর একবার মাথা গরম হয়ে গেল। এখানে চন্দন ঘোষ মালটা কী করছে? তাছাড়া যাকে দু
চক্ষে দেখতে পারে না, সেই ন্যাকা ছেলেটা, তূণীর মোহরকে কম্পিউটারে কী সব দেখাচ্ছে।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes