স্রোত <br />  পর্ব-১৩ <br /> যশোধরা রায়চৌধুরী

স্রোত
পর্ব-১৩
যশোধরা রায়চৌধুরী

প্রতিবাদের রঙ পালটায়

প্রতিবাদের কোন জাত হয়না।
প্রতিবাদের কোন সময় হয়না।
প্রতিবাদ প্রতিবাদ। প্রতিদিন নতুন করে প্রতিবাদের জায়গা তৈরি হয়। প্রতিদিন আবার, একের পর এক ঘটনা সাজিয়ে তোলে প্রতিবাদের ছক। ছবি। নকশা।
কিন্তু অলক্তিকার দাদু , আটাশি বছরেও দুমড়ে না যাওয়া, অ্যাকটিভ দাদু, নীলমণি চট্টোপাধ্যায়? তাঁর প্রতিবাদের রঙ গেরুয়া কেন ?
নীলমণি সকাল সন্ধে জপ করেন , হরিনামের মালার বদলে, গান্ধী পরিবারের কেলেংকারির গল্প। সেই পুরনো বস্তাপচা গল্প শুনে শুনে কান পচে গেছে সবার। কিন্তু সেগুলোই তিনি বলে যাবেন। কেননা, কেননা, অলক্তিকা জানে, একটা ব্যক্তিগত ঘটনার অভিঘাত থেকেই গেছে নীলমণির অস্তিত্বের ভেতরে। দেশভাগ।
তাই নেহেরুর কেচ্ছা। ইন্দিরা গান্ধীর চরিত্রহনন। শুনতে জঘন্য লাগত একসময় অলক্তিকার। দাদু বিজেপিকে সমর্থন করে। দাদুর বাবা, ভারতীয় জনসংঘের মেম্বার ছিলেন। কলকাতার নামী অধ্যাপক। অসংখ্য বই লিখেছিলেন। সেই ভদ্রলোক, হারীত চট্টোপাধ্যায়ের জীবন ছিল সোজাসাপটা। ধুতি আর কেডস পরে পুরো কলকাতা চষে বেড়াতেন, বই দিয়ে ঘেরা একটা ছোট স্টাডি রুম, তার বড় সেক্রেটারিয়েট টেবিলের চারধারে চেয়ার পাতা। সেই ঘরটিতে বসে বসে দেশোদ্ধারের চিন্তা করতেন। দু বার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন, জনসংঘের হয়ে। একবার এম পি হয়েছিলেন, অন্যবার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
সেই হারীত পুত্র নীলমণি ষোল বছর বয়সে দেশভাগের তাপ গায়ে মেখে বরিশাল থেকে কলকাতায় ফিরে আসেন। চোখের সামনে দেখেছেন কলকাতার ছেচল্লিশের দাঙ্গা। দেখেছেন লাশ ভর্তি ঠেলাগাড়ি। রাজাবাজারে ওরা যে ভাড়াবাড়িতে এসে উঠেছিলেন, তার চারদিকে মুসলমানদের পাড়া, ঘুম ভাঙে আজানের শব্দে। সেই দু চারটে হিন্দু পরিবারকে আড়াল করে, তিনটে ব্যারাক প্যাটার্নের বাড়িঘেরা একটা চার চৌকো ইঁট বাঁধানো উঠোন ছিল। আর কিছু ছিল না। সরু গলির মুখ দিয়ে ঢোকা বেরোন। সেই গলির মুখের লোহার গেটে তালা দিয়ে বাইরে বসে ছিল সুলতান মিয়াঁ। সেই দারোয়ান। সেই রক্ষক।
নীলমণি আর বাকি তরুণ তরতাজা ছেলেরা দাঙ্গাবাজ মুসলিমদের ঠেকাতে অস্ত্র জোগাড় করছিল লুকিয়ে। আর তাদের মা দিদিমা জেঠিমা মাসিমারা ছাতে ইঁটের টুকরো জমা করেছিল। ঝাঁটা, লাঠি, বঁটি গুছিয়ে রেখেছিল।
এইসব গল্পই অলক্তিকা শুনেছে ছোটবেলায়।
দগদগে ক্ষতের মত ছেচল্লিশের দাঙ্গার স্মৃতি বহন করে দাদু বুকের খাঁচায়। দ্যাট ইজ এ ফ্যাক্ট। কিচ্ছু বলার নেই।
সেই দাদু, যে দু তিনবার দিনে ইসলাম সম্বন্ধে নানা রকম কটুকাটব্য না করে ভাত খায়না, সেই দাদুই বলে, সেবার সুলতান মিয়াঁ গলির গেট বন্ধ করে না রাখলে আমরা সবাই মারা যেতাম। দাঙ্গাবাজদের কাছে খবর ছিল, ভেতরে কয়েক ঘর হিন্দু পরিবার আছে। তবু সে গেট খোলেনি। ওদের ঠেকিয়ে দেয়।
সে পাড়ায় বড় রাস্তা দিয়ে ট্রামগাড়ি গেলে বাড়িঘর ঠক ঠক কাঁপত। প্যারামাউন্ট সিনেমার পাশে সেই বাড়ি এখন ভেঙে দশ তলা টাওয়ার উঠেছে। এককালে রাজাবাজার অঞ্চলের ওই পাড়াটায় থম থম করত দাঙ্গার গল্প। এখন ভাবা যায়না।
দেশভাগ, যাকে দাদুরা পার্টিশন বলে ডাকে, সেটার জন্য দাদুদের জীবনগুলো অন্যরকম হয়ে গেছিল বলে দাদুরা আড়ালে তরোয়াল খেলা প্র্যাকটিস করত। দাদুরা দেখেছিল ট্রেনে চেপে এ পারে আসা মেয়ে মদ্দের ঢল, শেয়ালদা স্টেশনে। দেখেছিল উড়ে যাওয়া পুড়ে যাওয়া মানুষের দলকে। শুনেছিল ট্রেনে চেপে আসা কাটা নারীস্তনের থলের গল্প। হরর স্টোরি।
দাদু নাকি লুকিয়ে তিনচারজন মিলে প্র্যাকটিস করত তরোয়াল চালানো, লাঠি চালানো। সেবার একটা প্র্যাকটিকাল কিছু না হলে নেহাত হচ্ছে না বলে, হাতের কাছে কিছু না পেয়ে একটা বেড়ালের গলা কেটেছিল। রক্তদর্শন করা প্র্যাকটিস করছিল বলে, পোষা মেনিবেড়ালের হত্যা।
অলক্তিকার বাবা মা বড় হয়ে উঠেছিল বাম আন্দোলনের বাতাসে।
এক পরিবারে তিন প্রজন্ম তিনরকম ভাবে দেখেছে প্রতিবাদকে। লড়াইকে।
অলক্তিকার প্রথম প্রতিবাদ, কলেজের দরজায় একটা পোস্টার সাঁটানো। দেখে বাবার বন্ধু ক্ষিতি জ্যাঠা নাক কুঁচকে বলল, তুই এসবের কী বুঝিস? তোদের এখনো গাল টিপলে দুধ বেরোয়। এই তো সেদিন জন্মালি। পুরোটাই তো আফটার লিবারালাইজেশন। আফটার মার্কেট ইকনমি। মোবাইল ফোন, ভার্চুয়াল, ফেসবুকে জনজাগরণ! ছোঃ।
বাবা মা চুপ করে থাকে। বোঝে কিন্তু কিছু বলে না। নিজেরা নিজেদের স্টুডেন্ট লাইফে এস এফ আই করেছে বলেই বলেনা। পরিবর্তনের পর নেহাতই থমকে গেছে ওদের চিন্তা। চাপা আক্রোশ নতুন জমানার বিরুদ্ধে, তাই।
অলক্তিকার প্রতিবাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে ঠিক বলা যায় না। তবে হ্যাঁ, বাধা দিচ্ছে না। ভয় পাচ্ছে, কিছুটা বুঝতে না পারার ব্যাপারও আছে।
অলক্তিকাও তো হোক ঝঞ্ঝার সময় থেকে ছ মাসের মাথায় টের পেল, আদতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল স্টুডেন্ট হোস্টেলে একটা মেয়ের মোলেস্টেশনের ইশ্যু থেকে, তা থেকে কেমন নিপাট সরে গেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের লড়াইটা।
লড়াই সরে গিয়ে এখন উপাচার্য হটাও। লড়াই সরে গিয়ে এখন স্টেট গভর্নমেন্টের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে নাক গলানোর বিরোধিতা। এই বিরোধিতাটাও জরুরি। প্রতিবাদ জারি রাখা জরুরি। বোঝে অলক্তিকা।
কিন্তু মূল ইশ্যু টার কী হল?
মূল ইশ্যুটা তো ছিল মেয়েদের , ছাত্রীদের নিরাপত্তা। বিশাখা নির্দেশিকা অনুসারে কমপ্লেন্টস কমিটি গঠন। অথচ নামমাত্র যে কমপ্লেন্টস কমিটিকে দেখা গেল তারা তো কেবল ধামাচাপা দিতেই ব্যস্ত। কীভাবে বাঁচানো যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি। কীভাবে চুপ করিয়ে রাখা যায় মেয়েদের বিষয়গুলো। কেননা, মেয়েদের বিষয় মানেই অশ্লীল বিষয়। ট্যাবু বিষয়। মেয়েদের বিষয় মানেই, কতগুলো অস্বস্তির বিষয়। যেগুলো নিয়ে কথা বলতে গেলে স্যারেদের গলা শুকিয়ে আসে। চোখ তুলে তাকাতে অসুবিধে হয়।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes