
গৌতম চৌধুরীর কবিতাগুচ্ছ
অপরগুচ্ছ
১.
অগ্নিবৃষ্টির ভিতর দিয়া চলিয়া গিয়াছে পথ। সমস্ত নাট্যঘর আদালত ও পান্থশালা, সমস্ত পতঙ্গ ও কীটের ক্রন্দন, সকল মুর্শিদ ও মুর্দাফরাশ, হিমঘরে শায়িত অভিধান, সকলেই নিরঙ্কুশ। গ্রস্ততার মহাঘোর যেন অঘ্রানের আসমানের আকাশগঙ্গা। রেণু ঝরিয়া পড়ে, আর লুপ্ত হয় সাড়। কথা অস্পষ্ট। অব্যক্ত। নদী কোনও গন্তব্যের তরে চলা শুরু করে নাই। পাথর-নুড়ি বালি-কাঁকর ঠেলিয়া, সবটাই একটা যুদ্ধ। তর তর তরণী ভাসাইলে আর কিছু মনে পড়ে না। মন তো কেবল ভুলিতেই চায়। ঝুটমুট ভুলিব-না ভুলিব-না করিয়া জাঁক করে। অথচ এই পথ আগেও ছিল। বহুদিন পরেও বহিয়া চলিবে। আর, ওই অগ্নিবৃষ্টি? সেও তো নতুন কিছু নয়। থাকিয়া থাকিয়া দীর্ঘ ঘুমের অন্তে জাগিয়া উঠে। কুম্ভকর্ণের ক্ষুধা। দাও, উহাকে খাদ্য দাও…
০৭-১১-২০২১
২.
তখনও আকাশের আলো পুরা নিবে নাই। হয়তো পূর্ণিমা নিকটে। তাই পুব দিকে বড় করিয়া হলুদ বরন চাঁদ উঠিয়া পড়িয়াছে। হঠাত দেখিলে গা ছমছম করে। এমন সময় কোথাও কিছু নাই, একটি দামাল দেবশিশু কোথা হইতে আসিয়া কুট্টুস করিয়া খানিকটা কামড়াইয়া খাইয়া লইল সেই চাঁদ। তারপর চোঁচাঁ দৌড় লাগাইয়া সোজা পগারপার। দানবের বাচ্চাগুলান মাঠে খেলিতেছিল। কাণ্ড দেখিয়া হতভম্ব। তাহার চেয়েও বেশি ভীত। কারণ টের পাইল, তাহাদের কপালে দুঃখ আছে। তাহারা জানে, এসব ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হইবার আগেই বিচারের রায় ছাপা হইয়া যায়। আত্মপীড়নের পথে যে সিদ্ধি, এইভাবেই একসময় ফুরায়। ইহাই এই কাহিনির মর্মার্থ – এই কথা বলিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল অনীহা। প্রান্তরগুলি ঘিরিতেছে। আসমানগুলি নামিতেছে। জলাঞ্জলির পিপাসাটুকু তবু ধকধক করিতেছে কণ্ঠায়। নীরবতাই শেষ ধর্ম তবে…
০৮-১১-২০২১
অপূর্ব লেখা।
বড়ই আন্তরিক ভাবনার অঙ্কুরিত লিখন।