ধারাবাহিক উপন্যাস স্রোত <br />দ্বিতীয় পর্ব <br /> যশোধরা রায়চৌধুরী

ধারাবাহিক উপন্যাস স্রোত
দ্বিতীয় পর্ব
যশোধরা রায়চৌধুরী

কয়েক বছর আগে আরম্ভ পত্রিকায় কিস্তিতে কিস্তিতে প্রকাশিত হয়েছিল যশোধরা রায়চৌধুরীর অন্য নামে একটি উপন্যাস, যার উপজীব্য হল, সমসাময়িক কালখন্ড আর কিছু তরুণ তরুণীর লড়াই । গ্রন্থাকারে 'স্রোত' নাম দিয়ে একটি অতি সীমিত প্রকাশনা প্রচেষ্টাও হয়েছিল। তবে প্রকাশক সব কপিশুদ্ধু গায়েব হয়ে যাওয়াতে, স্রোতকে পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত আকারে এবার আবহমানের পাঠকদের কাছে ধারাবাহিকভাবে হাজির করার প্রচেষ্টা । "সম্পূর্ণ ভাবে নারীর দৃষ্টিকোণ থেকে লেখা এমন উপন্যাস আমি আগে পড়িনি। নারীবাদী লেখকের লেখা উপন্যাস পড়েছি। কিন্তু তাতে পুরুষের লোলুপতা কে কাঠগড়ায় দাঁড়করানো আর নারীকে শিকার প্রতিপন্ন করার চেষ্টায় প্রায়শই অবজেকট্ভিটি থাকেনি। এই উপন্যাসের শিকড় গেছে নারী জীবন যাপনের নানা স্তরে । এর মধ্যে আছে যে ভাষায় পুরুষতন্ত্র জীবনের ন্যারেটিভ এমনকি সাহিত্য ও রচনা করে , তার ইন্টারপ্রিটেশন। এতে স্পষ্ট কথা আছে, অভিমান আছে, হাস্যরস এবং অসহায়তাও আছে । এবং সর্বোপরি পুরুষকে নিজের জীবনে জড়িয়ে নেওয়ার আকাঙ্খা।..এখনকার ছেলে মেয়ে দের হাতে ই তুলে দেওয়া কাহিনীর ব্যাটন, এদের স্পস্ট করে দেখা, বলতে পারা ও অতীতের বোঝা নামিয়ে রেখে পথ চলার সাহস কে কুর্ণিশ জানিয়েছেন যশোধরা। মুক্তি এরাই আনবে। যৌনতার রহস্যময়তার আবরণ উন্মোচন করে তথ্যের নিরপেক্ষতার মধ্যে উত্তরণ।যশোধরার Clarity of perspective অতি তীক্ষ্ণ। সবমিলিয়ে উপন্যাস টি মনোভংগি ভাষা ও কাহিনী সর্ব অর্থে আধুনিক। একে বারে রিয়েল টাইমে দাঁড়িয়ে লেখা। দেশ কাল সময় ও ব্যক্তি সত্ত্বার বিশাল ব্যাপ্তিকে বিন্দুতে এনে কিভাবে প্রতিবাদের ভাষা নির্মান করেছেন যশোধরা। নির্য্যাস হয়ে মনে রয়ে যায়, পুরুষকে বিযুক্ত করার অভিপ্রায় নয়, তার সংগে আবার প্রথম থেকে পড়া জীবনের পাঠ।" ( অনিতা অগ্নিহোত্রী) "লেখক যশোধরা রায়চৌধুরী, তাঁর চাকুরি প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের, তাঁর গল্পের ভুবন প্রচলিত ভাবনাচিন্তার একেবারেই বাইরে। তিনি তাঁর লেখায় অণুবীক্ষণ দিয়ে মানুষের জীবনযাপনকে দেখতে চান, তাঁর গল্পে সেন্টিমেন্ট কম, বাস্তবতা বেশি। যেমন তাঁর গল্পে এক চাকুরে তরুণী মেল ট্রেনের নাইটজার্নি করে উপরের সিটের কাউকে অনুরোধ করে বার্থ বদলাবদলি করে পট করে উঠে যায় ও ঘুমিয়ে পড়ে। ...তাঁর শেষ উপন্যাস স্রোত -এ নারীস্বাধীনতার চূড়ান্ত ছবি। প্রতিটি নারীচরিত্র স্রোতের বাইরে গিয়ে কথা বলে। পুরনো ধ্যানধারণা ভেঙেচুরে ফেলতে চায়। সাম্প্রতিক কালে কলকাতার কোনও এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েরা প্রতিবাদ করেছিল তাদের অন্তর্বাসের ওপর প্রতিবাদের কথাগুলো লিখে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে একের পর এক টাঙিয়ে দিয়ে। স্রোত এমন আধুনিক সব বিষয়ে আলোকপাত করেছে যা কিছুকাল আগেও কল্পনা করা যেত না। এ যুগের নারীসত্তার এক অনন্য প্রতিফলন। " ( তপন বন্দ্যোপাধ্যায়-এর "ইদানীঙ কার বাংলা গল্প উপন্যাসে লেখিকাদের নারীসত্তার উপস্থিতি" প্রবন্ধ থেকে, প্রকাশিত আরাত্রিক পত্রিকা ২০২১)। দ্বিতীয় পর্ব।

অর্চির মুষ্টিযোগ

বাইক কিনে না দিলে হবে না অর্চির।

বাবা মাকে আলটিমেটাম দিয়ে দিয়েছে আজই।

আর এই আলটিমেটামগুলো একের পর এক এসেই চলেছে।

অর্চির একেবারে ছোট বেলার গল্পগুলো ছিল উল্টো। মা-বাবার বায়না ওর
চতুর্দিক ঘিরে ছিল। ওর মা ওর দু বছর বয়সে, ওকে “আ কর” বলে ঘুমচোখে তুলে
দিত। অদ্ভুত অত্যাচারী মা, এখন অর্চির ভয়ে জুজু। সেই যে পটি ট্রেইনিং
করাতে ওকে ভোর ভোর লাল প্লাস্টিকের পটিতে বসিয়ে দিত, তখনই , মন্দজনে বলে
থাকে, ওর সমস্যার শুরু।

মন্দজন মানে ওর ঠাকুর্দার সাইকোলজিস্ট, যিনি বাড়ির কুটুমও বটেন।

ওর কাকিমা স্বস্তিকার কীরকম যেন রিলেটিভ, মেসো হন। এসেছিলেন সেই কবে,
যখন প্রথম কনফিউশন শুরু হল প্রাংশুর। প্রাংশুর অবস্থা সেই থেকে খারাপের
দিকেই চলেছে। কিন্তু কুটুম সাইকোলজিস্টের কথায় অর্চির মায়ের মুখ ফুলে
যাওয়া আজো থামেনি।

ততদিনে অর্চির দশ বছর মত বয়স। খুব কনস্টিপেশন আর প্রচন্ড জেদি। বাবা মাকে
বায়না করতে করতে, আলটিমেটাম দিতে দিতে, আর যা চেয়েছে সেই জিনিস পেতে
পেতে সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠেছে।

এই অবস্থায় একদিন জিদ্দিবাজি করে নিজের ভাইকে এমন একটা রদ্দা কষিয়ে
দিয়েছিল অর্চি, যে নাক ফেটে গল গল করে রক্ত পড়ছিল টিন্টোর।

দাদু তখন অসুস্থ হতে সবে শুরু করেছেন। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নাম্বার ভুলে
যান, বাড়ি থেকে বেরিয়ে জিনিশ ভুলে আবার ফিরে আসেন। ঘামতে শুরু করে দেন
কথায় কথায়। দু একবার রাস্তায় পড়েও গেছিলেন। এইসব লক্ষণের কারণেই,
নিউরোলজিস্ট যেমন দেখানো হচ্ছিল, তেমনই একটু আধটু কনসালটেশন করানো হয়েছিল
স্বস্তিকার মেশোকে দিয়ে।

সেই দাদুর সামনেই এই নাক ফেটে রক্ত বেরোন, টিন্টোর, তার জ্যেঠতুতো দাদার
হাতে। সামান্য অ্যাক্সিডেন্ট, বলে ম্যানেজ দিয়েছিল সোমদত্ত, টিন্টোর
বাবা।

স্বস্তিকার মুখের মেঘ অবশ্য ক্রমশ গাঢ় হয়ে উঠেছিল।

মেসো ঘটনা চোখের সামনে দেখে ছোট ছোট প্রশ্নে স্বস্তিকার থেকেই জেনে
নিয়েছিলেন, অর্চির ভায়োলেন্সের কথা। আর হঠাৎ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, দু
আড়াইবছর বয়সে পটি ট্রেনিং, কীভাবে হয়েছিল অর্চির।

আর স্বস্তিকা ও তার জায়ের সামনেই বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। আসলে যেই
স্টেজে বাচ্চাদের ইগো তৈরি হয়না, সেই সময়টাই তো অ্যানাল পর্ব, পায়ুমুখী
মনোঃসংযোগের দিনকাল। তখন ওকে সঠিক গাইডেন্স দেওয়া হয়নি। পায়খানা করার
জন্য অনর্থক চাপ দেওয়া হয়েছে। সেটার ফল অতিরিক্ত জেদ, অ্যাঙ্গার
ম্যানেজমেন্টের অসুবিধা।

হবি ত হ, এই কথাগুলো আবার খাবার টেবিলে বড়দের সামনে হল । অর্চির দাদু
ঠাকুমার মাথার ওপর দিয়ে বেরুলেও এটা বোঝা গেল এও একটা ছোট মত অসুখের
লক্ষণ।

অবশ্য স্বস্তিকার সেদিন থেকেই নিজের জা-এর সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে এক বিশাল
তেপান্তর সৃষ্টি হয়েছিল।

অর্চি যাই হোক, মেন্টাল কেস নয়! এসব কী! এগুলো বলা কেন হচ্ছে, যেন আমার
ছেলে মানসিক ভাবে অসুস্থ। খেলতে খেলতে লেগে গেছে , এই তো।

এখন জা, মানে সোমদত্তর দাদা বিশাখদত্তর স্ত্রী, সুনীতা, ভুগছে তার ফল।
নিজের পরিষ্কার বাতিক, খাট বিছানায় কুঁচকোন চাদর দেখে রেগে ওঠা, বার বার
ধুলো ঝাড়া, আর ছেলেকে মাছের বড় টুকরো দেওয়া থেকে শুরু করে, পায়খানা করিয়ে
স্কুল পাঠানোর শুচিবায়ু-পারফেকশনিজম সবকিছুর ফল পাচ্ছে।

সুনীতা ভুগছে , কিন্তু দুঃখ এই যে সোমদত্ত আর স্বস্তিকাও ভুগছে কম না।

টিন্টো তাদের কোন ঝামেলা দেয়না, অন্তত দেয়নি এ পর্যন্ত, কিন্তু ভবিষ্যতেও
যে দেবে না তার গ্যারান্টি নেই কোন, কিন্তু আপাতত অর্চি দিচ্ছে।

প্রথমত বাইকটা কিনেই সেটা নিয়ে বেরিয়ে যাওয়া শুরু। তখনো বাইকের না হয়েছে
রেজিস্ট্রেশন, বা নাম্বার প্লেট। অর্চিও না পেয়েছে লাইসেন্স। তবু সাঁ সাঁ
করে বেরিয়ে পড়ল, দ্যাখো ছেলে । তারপর টিন্টোকেও চাপাবে। হেলমেট ছাড়া।
রাস্তাঘাটের অবস্থা যা তাতে এরকম করাটা নেহাতই বাবা মা কাকা কাকিমার
প্যালপিটেশন বাড়ানো। আর কিছু না।

তারপর একদিন ছোট অ্যাক্সিডেন্ট করল। পুলিশেও ধরল, তখন স্বস্তিকাকেই ফোন,
কাকিমা তোমার কে যেন পুলিশে চেনা আছে না? একটু দ্যাখো না প্লিজ।

সর্বদা এইই চলে। স্বস্তিকা ভাবে। বিপদ ঘটায় নিজেদের দোষে। তারপর বলে,
আমাকে ত্রাণ কর।

স্বস্তিকা সরকারি চাকুরে বলেই যেন পুলিশ সামলানো বাই ডিফল্ট তারই দায়।
ঝাড় পড়ল সোমদত্তর ওপরে। কারণ সোমদত্তও ইন টাউন। আর বিশাখদত্ত, অর্চির
বাবা, প্রায় কখনওই থাকে না শহরে।

আজ যেমন নতুন একটা ফ্যাকড়া । অর্চির নন এন্টিটি কাকা ও তার ব্যর্থ
মনিটরিং এর আরেকটা গল্প গজিয়ে উঠল।

তৃতীয় ফোনটার পর খুব ক্লান্ত বোধ করছিল সোমদত্ত। এইভাবে প্রতি মুহুর্তের
মনিটরিং আর কতকাল সম্ভব?

তিন হাজার তিপ্পান্ন বার ফোন করলেও শুধরোবে না ওই ছেলে। যা করার করে নাও!

অর্চি বুঝেই নিয়েছে। নিজের বাবা মাকেই মানে না , কাকাকে মানবে? হতে পারে
কাকা তোমার ছোট্টবেলায় পার্কে নিয়ে ঘুরিয়েছে, দোলনা চাপিয়েছে। লাল বল
নিয়ে ফুটবলের কিক শিখিয়েছে। ড্রিবল করা শিখিয়েছে । তারপর ?

আসল সোর্স অফ মধু কোথায় সবাই জেনে যায়, বয়স ১০-১১ হবার আগেই । ওসব
ভালবাসাটাসা কিচ্ছু না।

সোমদত্ত সজোরে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।

অর্চি জানে, বাবা মাকে একটু চাপ দিলে যা চাও পাবে। একটু ব্ল্যাকমেল করলে,
মাথা গরম করে একটু চেঁচামেচি করলেই সুড়সুড় করে টাকাপয়সা আসবে। নিজের
ইচ্ছেগুলো দিব্যি মিটিয়ে নেওয়া যাবে।

বাবা মা ছাড়া পৃথিবীর আর বাকি সব লোক, ফোটো, ফুটে যাও! ক্লোজেস্ট অ্যালাই
বাবা মা, ইন দ্য সেন্স, যে, ওরা সার্ভিস প্রোভাইডার। বাকিরা বিনে পয়সায়
জ্ঞান বিতরণ করবে। একটু স্পেস দিলেই কনট্রোল করতে আসবে। সুতরাং প্রথম
থেকেই তফাত রাখো। চেপে দাও। …নো এন্ট্রি।

অর্চির কাছে, কাকাফাকা ফাঁকা। কে কাকা, কে মামা! তা ছাড়া গার্ল ফ্রেন্ড
পাশে থাকলে , এইসব ওল্ড ফ্যাশনড কনট্রোল করা লোকগুলোকে একদম নো পাত্তা
করে রাখতে হয়। নইলে প্রেস্টিজ যায় ভাঁড় মে!

এইসব জানা সত্ত্বেও , সোমদত্তকে মনিটরিং করতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে। কেন যে
এরকম ঘোর অভাগার দশা সোমদত্তর। প্রেশার বেড়ে যায়। মধ্যপয়ঁতাল্লিশের
নেয়াপাতি ভুঁড়িও কেমন টেনশনে থরথর করে।

অথচ সোমদত্তর দাদা আর বউদি দিব্যি অর্চিকে ওর ওপর ফেলে দিয়ে চলে গেল।
একজন কিটি পার্টি গ্রুপের সঙ্গে বেরু বেরু করতে গেছে দু হাজার কিলোমিটার
দূরে। অন্যজন কাজে অকাজে সমানে বাইরেই থাকে। ব্যাঙ্ক অফিসার হোনে কে
নাতে।

একটা সতেরো আঠেরো বছর বয়সী ছেলে। সারাদিন সারাক্ষণ যার হায়ার
সেকেন্ডারির পড়া নিয়ে থাকার কথা , সে আছে ভিডিও গেম আর কম্পিউটার নিয়ে।
মোবাইল ফোন আর চ্যাটিং নিয়ে।

তাও এমনি চ্যাটিং হলে হত। এ একেবারে মোক্ষম ব্যাপার। গার্ল ফ্রেন্ড। কোথা
থেকে আজকালকার বাচ্চাগুলো এইসব রোগ পায়? বীজাণুর মত একেবারে গিজগিজ করছে
রোগটা বাতাসে যেন। তেরো উর্ধ বাচ্চাগুলো পটাপট পড়ছে এ রোগে। লাভেরিয়া।
যখন তখন তৈরি হচ্ছে বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড। বি এফ জি এফ। অ্যাফেয়ার
হচ্ছে। আবার দ্রুত ভেঙেও যাচ্ছে তা। ব্রেক আপ না কি বলে। এক ব্রেকাপ থেকে
আর এক ব্রেকাপে যাওয়া, না কী যেন বলে।

অর্চির গার্লফ্রেন্ড থাকে ব্যাঙ্গালোরে। আলাপ হয়েছে বছর দুই আগে। কলকাতায়
। তার পর থেকে সবটাই ফেসবুকে আর ফোনের চ্যাটে , ওয়াটসঅ্যাপে। একদিন মাত্র
সাক্ষাৎ হয়েছিল ওদের। সেটাও সোমদত্তদেরই দৌলতে। সোমদত্তর স্ত্রী
স্বস্তিকার বান্ধবী প্রথমার মেয়ে সুনন্দনা। ক্লাস টেনে পড়ে। সোমদত্তর
ছেলে টিন্টোর জন্মদিনে এসেছিল প্রথমা আর সুনন্দনা। সেই কাল হল।

শুরুতে অর্চি খুব নাক শিঁটকে বলেছিল, এ্যাঃ টিন্টো তোর জন্মদিনে একপাল
বাচ্চা আসছে। এদের হোস্ট করতে কিন্তু আগেই বলে দিলাম, আমার কোন
ইন্টারেস্ট নেই। ও বাবা , তোর মায়ের বন্ধুর মেয়েও আসছে? ন্যাকা হবে
একটা। টেনে পড়ে? আমি তো ওদের সঙ্গে বসে গল্প করতে পারবই না। যা তা বোরিং
সব।

সেই অর্চিই সারা সন্ধে সুনন্দনার সঙ্গে লটকে গেল। চিপকে গেল যেন চুইং
গাম। তারপর, সমস্ত বছরটা ওদের হু হু প্রেমের সাক্ষী হয়ে রইল। পড়াশুনো
মোটামুটি লাটে।

এখন সুনীতা যখন বার বার আউট অফ রিচ, মানালি না কোথায় একটা গেছে, অর্চিও
ফোন তুলছে না, সোমদত্ত ঘামছে, স্বস্তিকা বলে, সুনন্দনার সঙ্গে গেছে তো
কি হয়েছে। আমার বান্ধবীর মেয়ে বলে, আমি জবাবদিহি করতে যাব কেন? নিজের
ছেলেকে কনট্রোল করতে পারো না নিজে, আমাদের ওপর ছেলের দায়িত্ব ফেলে গেছো
কেন? অর্চির আঠারো হয়ে গেছে না? ওর রেসপন্সিবিলিটি আমাদের নাকি?

স্বস্তিকা রেগে গেলে খুব মারাত্মক। বিষ। তেতো। সোমদত্ত জানে। তাই কিছু
বলতে পারেনা। চুপ করে গিলে নেয়।

সত্যিই দাদারা এটা কী যে করছে। নিজেদের কেরিয়ার গোছাতে ছেলেটাকে কলকাতায়
ফেলে দিয়ে চলে গেল সব। দাদা পুরোটা যায় নি অবিশ্যি, কিন্তু বাবাকে আর কবে
সেভাবে মানত অর্চি। পারলেই ধমকায়, আমাকে ডিস্টার্ব করবে না বাবা। নিজের
প্রফেশনাল স্ফিয়ারে দিব্যি মান্যগণ্য বিশাখদত্ত বাড়িতে ছেলের কাছে কেঁচো।

বাবার ক্রেডিট কার্ড একটা অর্চির কাছে থাকে। সেটা দিয়ে রোজ আমাজন আর
ফ্লিপকার্ট থেকে জিনিস কিনছে, নতুন নতুন মডেলের ফোন, হেডসেট , এটা ওটা
সেটা । ব্রাউন পেপারের মোটা সরু ছোট বড় বাক্স ঢুকছে বাড়িতে। এখন, প্রেম
শুরু হবার পর, একটা বাই উঠেছে, সুনন্দনার সঙ্গে হ্যাং আউট করতে
ব্যাঙ্গালোর যেতে হবে। কার্ডে ফটাফট যাত্রা ডট কম থেকে টিকেটিং করা হয়ে
যাচ্ছে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। গতবার বিশাখদত্ত-সুনীতা কলকাতায় ছিল। এবার
নেই। কাজেই মনিটরিং এর দায়িত্ব সোমদত্ত।

সুনন্দনা মাঝে মাঝে মায়ের সঙ্গে কলকাতা আসে, তখন তো প্রথমার বাড়িতেই
সারাদিন অর্চি। লটকে থাকে পুরো ওদের সঙ্গে।

একটার পর একটা দিন, লেখা নেই পড়া নেই, এই ক্যাফে নয় ওই রেস্তোরাঁয়। দিন
কয়েকের জন্য অর্চি প্রথমাদের বাড়িতেই গ্যারেজ হয়ে যায়। আর খিটমিট করে।
এখানে প্রাইভেসি নেই। এ বাড়িতে হাটবাজার। কাকু কাকিমা দাদু ঠাকুমা।
যত্তোসব।

সুতরাং মাঝে মাঝে ব্যাঙ্গালোরও যেতে হবে। ব্যাঙ্গালোর নয়। বেঙ্গালুরু।
পালটানো নামটা সড়গড় করে নিতে হবে। এও একটা কাজ বটে।

সোমদত্ত যাবার সময়ে একবার ফোন করে জেনেছে অর্চি এয়ারপোর্ট পৌঁছল কিনা।

না, কেউ অর্চিকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেবে না। ও কন্ডিশন দিয়েছে। আতুপুতু
খোকা ভোলানো পছন্দ করেনা। টুয়েল্ভে পড়ে তো কী হয়েছে। ওকে ছেড়ে দিতে হবে,
নিজে ট্যাক্সি নিয়ে যাবে।

তবু ফোন করতেই হয় সোমদত্তকে। “থ্যাংকলেস জব” দাঁতের তলায় চাপা হিস হিস
শব্দ করে স্বস্তিকা টিপ্পনি মেরেছে। তোমার দাদা বৌদিও তো ফোন করছে ওদিক
থেকে দেখো। সব খবরই রাখছে ওরা।

দমদম এয়ার পোর্ট থেকে ফোন তুলে কোনমতে বলে দিয়েছে , জোর করে ভারিক্কি
ভাব এনে, ভারি গলায়, অর্চি। “পৌঁছে গেছি”।

ঘড়ির কাঁটার দিকে চোখ রেখে আবার বেঙ্গালুরুতে ল্যান্ডিং টাইমে ফোন করেছে
সোমদত্ত। এবার প্রথমে একবার সুইচড অফ বলেছে। তার মানে ল্যান্ড করেনি
ফ্লাইট। পরের বার বেজেছে ফোন। কেউ তোলেনি ওপারে। তারপর বার বার ফোন করে
গেছে, তোলেনি অর্চি। টেনশন হয়েছে সোমদত্তর।

রবিবার, ওরা বাড়িতেই । স্বস্তিকা ওর দিকে আড়চোখে দেখেছে, তারপর বলেছে,
চাপ নিচ্ছ কেন অযথা? ও সুনন্দনার সঙ্গে গাড়ি ফাড়িতে আছে। পকেটে ফোন থাকলে
শুনতে পায় নি হয়ত। বাইরে আওয়াজ টাওয়াজ থাকলে না-ই শুনতে পারে।

দাদাকে ফোন করেছে সোমদত্ত। ভুবনেশ্বরে কনফারেন্সে গেছে বিশাখদত্ত । নিজের
ব্যাঙ্কিং সেক্টরের কাজ। তার সঙ্গে এই সব টেকনিকাল কনফারেন্স। খাওয়াদাওয়া
আরামের ঢালাও ব্যবস্থার সঙ্গে একটু ঘোরাঘুরিও। আজ সাইট সিইং এ বাইরে
ঘুরছে । আউট অফ রেঞ্জ বলেছে।

বৌদিকেও ফোন করেছে। সুনীতা খুব টেনসড। সত্যি বেঙ্গালুরু পৌঁছে অর্চি কেন
ফোন ধরল না?

একটু পরেই পিং করে সোমদত্তর মোবাইলে একটা মেসেজ এসেছে। অর্চির মেসেজ।
খুলে তো সে থ। এই উত্তর পাঠিয়েছে অর্চি, প্লেন থেকে নেমে , ফোন না ধরে?

“ হু দ্য হেল আর ইউ?”

হু দ্য হেল আর ইউ? তুমি কোথাকার কে হে , আমাকে ম্যালা ফ্যাচফ্যাচ করতে
এয়েচ? এইরকম মুডে অর্চির মেসেজ ।

তার মানে সোমদত্তর নাম্বার সেভ করা নেই অর্চির ফোনে! বা কোন কারণে
দেখাচ্ছে না নম্বরটা।

ও চিনতেই পারছে না কাকার নাম্বার। কী করে হয়। সোমদত্ত সেটা তবু যদি বা
বিশ্বাস করতে পারে, যদিও অর্চির কাছে কাকার নাম্বার সেভ করা নেই এটা হতেই
পারে না… কিন্তু কোন অচেনা লোক অর্চিকে ফোন করেছে, মিসড কল দেখে অর্চির
তার প্রতি এই সম্ভাষণ? হু দ্য হেল আর ইউ? অতীব খচড়া ছেলে হয়ে গেছে তো
অর্চিটা। নিজের আঠারো বছরের ভাইপো সম্বন্ধে বেশ তির্যক হয়ে উঠল কাকা।

সোমদত্ত খিটকেল মুডে স্বস্তিকাকে বলল, দেখেছ, ওই মেয়েটাকে সঙ্গে পেয়েই
কেমন ভোল পালটে গেল ছেলের? কী মেয়ে গো তোমার ঐ সুনন্দনা? সেদিনই
প্রথমাদের দেখে বুঝেছিলাম, বড়লোক, আপস্টার্ট, পয়সার গরম শুধু।

স্বস্তিকা তিরিক্ষি হল মুহূর্তে। অথবা মুহূর্তও লাগল না। বলল, প্রথমাদের
টাকা আছে সেটা খুব গায়ে লেগে গেল না? অমনি দোষ হয়ে গেল সুনন্দনার। ওর
সঙ্গদোষে অর্চি অসভ্যতা করছে? আরে, তুমি তো লাকি, যে ওই মেসেজটা অন্তত
করেছে। তাহলে বুঝলে যে অর্চি পৌঁছেছে সেফলি। কনফার্মেশন তো পেলে? বাকিটা
ইম্যাজিন করে নাও। এখন সে বিজি, গার্লফ্রেন্ড ছাড়া পৃথিবীতে কারুর সঙ্গে
আর দরকার নেই। দোষটা দয়া করে অন্যদের ঘাড়ে চাপিও না। যেভাবে ভাইপোকে
তোমরা মানুষ করেছ, সেইটা দেখ! আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে তো মাথায় তুলে দিয়েছ সবাই
মিলে। এবার বোঝ।

আহা , তোমার ছেলে কিছু কম আহ্লাদে মানুষ? কিন্তু টিন্টো এরকম ভাষায় কাউকে
এস এম এস করছে, আমি তো ভাবতেই পারি না।

ওই ছেলে তোমাদের হাঁড়ির হাল করবে জেনে রাখো। প্রথম দিন সুনন্দনার সঙ্গে
আলাপ হবার পরই অর্চি তো আমাকে বলেছিল, ওরা খুব রিচ, না কাকিমা? ছুটিতে ইউ
কে বেড়াতে টেড়াতে গেছিল, বাড়িতে এক্স বক্স আছে, ল্যাপটফ ফ্যাপটপ সব। টাকা
দেখেই তো সুনন্দনার দিকে যত অ্যাট্রাকশন অর্চির। একটা হাংলাবাংলা ঘরের
সাধারণ ছেলে, তার এত লোভ কেন। চোখ নাচিয়ে বলেছিল, আমাকে ভাল ভাল গিফট
দেবে, ভাল ভাল রেস্টুরেন্টে ট্রিট দেবে, ওকে গার্লফ্রেন্ড করি?

আমরা হাংলাবাংলা ঘরের তো কী হয়েছে। নেক্সট জেনারেশনের কাছে তো ওসব পুরনো
মধ্যবিত্ততার হ্যাং ওভার নেই। বাঙালি আর কিছু না পারুক, মধ্যবিত্ত থাকার
আর কিপ্টেমি করে সারাটা জীবন ময়লা লুঙ্গি আর ছেঁড়া হাফশার্ট পরে কাটিয়ে
দেবার সেন্টিমেন্ট ছেড়ে তো বেরিয়ে এসেছে। দাদা বৌদি দুজনেই জীবনে সফল,
ছেলে যখন যা চেয়েছে দিয়েছে। ও লোভী কেন হতে যাবে। নর্মাল যে কোন বাচ্চাই
আজকাল এগুলো চায়। সোমদত্ত খ্যাঁক খ্যাঁক করে উঠেছিল।

চিপসের প্যাকেটের মত গাল ফুলিয়ে স্বস্তিকা উঠে গিয়েছিল। জানি না বাপু, সব
সময়ে নিজেদের দীনতার অভিমান আর হোলিয়ার দ্যান দাউ অ্যাটিচ্যূড যে তোমাদের
কবে যাবে। এখুনি বললে প্রথমারা আপ স্টার্ট। এখন এটা বলছ। ডাবল
স্ট্যান্ডার্ড দেখে বাঁচিনা।

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes