ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন <br /> সন্দীপন চক্রবর্তী

ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন
সন্দীপন চক্রবর্তী

এবার ভাবা যাক, এই স্বীকারের স্থানগত গণ্ডি কতটুকু? অর্থাৎ একজন লেখক যে ভাষায় লিখছেন, শুধুই সেই ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে স্বীকৃতি? যেমন, বাংলা ভাষায় লেখালিখি করা এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা আন্তর্জাতিক মানের হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের আন্তর্জাতিক স্তরে কোনো স্বীকৃতি নেই। আবার, ইংরেজি ভাষার এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা অনেক বাঙালি লেখকের থেকে নিম্নমানের হলেও, শুধুমাত্র ভাষাগত কারণে, তাঁর একধরণের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। বা, এই একই সমস্যার গণ্ডিটা যদি আরেকটু ছোট করে আনি আমাদের দেশের মধ্যে? তাহলে এই একই সমস্যা দেখবো, হিন্দি বা উর্দু ভাষার লেখকদের সঙ্গে অন্যান্য ভারতীয় ভাষার লেখকদের। কিন্তু অনুবাদের মাধ্যমে কি অন্য ভাষার মধ্যেও ছড়াতে পারে না তাঁর স্বীকৃতি? রবীন্দ্রনাথের উদাহরণ ভাবি যদি?

তৃতীয় পর্ব

সাহিত্যের বা শিল্পের ক্ষেত্রে কোনো স্রষ্টা তাঁর যথার্থ স্বীকৃতি পেয়েছেন কিনা জীবৎকালে – এ নিয়ে আজকাল অনেকেই অনেক কথা বলেন, শুনি। আচ্ছা, কাকে বলে স্বীকৃতি? কতটা দরকার আছে তার? স্বীকৃতি মানে কি পুরস্কার? খ্যাতি? মিডিয়া কভারেজ? প্রকাশকদের হত্যে দিয়ে বসে থাকা? অনেক অনেক বই আর প্রচুর বই বিক্রি? কিন্তু এর সবগুলো হওয়া সত্ত্বেও, কোনো কোনো লেখক কেন তাহলে পরবর্তীকালে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যান? আবার এর কোনোটাই না হওয়া সত্ত্বেও, কোনো কোনো লেখককে, কেন পাঠকরা পরবর্তীকালে বিস্মৃতির অন্ধকার খুঁড়ে তুলে তুলে আনে আলোয়? তাহলে কি স্বীকৃতি মানে পাঠকের ভালবাসা, শ্রদ্ধা, সম্ভ্রম?

তাছাড়া, এখানে স্বীকৃতি বলতে কার স্বীকৃতি বিবেচ্য — ব্যক্তির না প্রতিষ্ঠানের? অনেকসময়েই কোনো প্রতিষ্ঠান হয়তো তার সুবিধামতো কোনো লেখককে তুলে ধরার চেষ্টা করে। তার লেখা, সাক্ষাৎকার, তাকে নিয়ে লেখা – এসব ক্রমাগত মুদ্রিত করে, অন্যান্য মিডিয়ায় তুলে ধরে, সেই লেখকের স্বপক্ষে একধরণের জনরুচি গড়ে তোলার চেষ্টা করে। এই যে ‘জনরুচি’ বলছি, তাহলে ব্যক্তিরুচি কি তার থেকে আলাদা কিছু? নাকি তারও নিয়ন্তা সেই প্রতিষ্ঠান? আর প্রতিষ্ঠান মানেই বা কী – ইন্সটিটিউশন নাকি এস্টাব্লিশমেন্ট? এ দুই কি অনেকসময়েই একাঙ্গী হয়ে যায় না? আর প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করেও কি কোনো পাঠক গড়ে তুলতে পারেন না তার ব্যক্তিরুচি? সেই ব্যক্তির স্বীকৃতিও কি একজন লেখকের কাছে স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচ্য নয়? অবশ্য ব্যক্তি হোক বা প্রতিষ্ঠান, স্বীকার করলে কী কী সুবিধা আর অসুবিধা? আর স্বীকার না করলেই বা কী?

ব্যক্তিরুচির কথাই যদি ভাবি, তাহলে প্রশ্ন ওঠে কোন ব্যক্তির স্বীকার করা? সেক্ষেত্রে সংখ্যাগত মান বিবেচ্য? নাকি গুণগত মান? অর্থাৎ কোন পাঠক? শুধুই দীক্ষিত পাঠকের ছোট বৃত্ত? নাকি তার বাইরের সাধারণ পাঠক বা আম-জনতাকে এই হিসেবের মধ্যে বিবেচনা করবো? নাকি ধরতে হবে দুটোই? যেটাই বাছি না কেন, তার কারণগুলো স্পষ্টভাবে বোঝার চেষ্টা করা উচিত। দীক্ষিত পাঠকের খুব ছোট বৃত্তে কারও লেখার সমাদর হওয়া মানেই যে, সাধারণ পাঠক তাকে ‘ওর লেখা আর ক’জন পড়ে’ এই হেলার চোখে দেখবেন অথবা সাধারণ পাঠকের বড় বৃত্তে কারও লেখার সমাদর হওয়া মানেই যে, দীক্ষিত পাঠক ধরে নেবেন ‘ও তো বাজারের জন্য লেখে, শিল্পের জন্য নয়’ – এই রোগ অনেকসময়েই আমাদের সাংস্কৃতিক মণ্ডলে উৎকটভাবে দেখা দেয় এবং তা অনেকসময়ে পাঠককেও ভুল পথে চালিত করতে পারে।

এবার ভাবা যাক, এই স্বীকারের স্থানগত গণ্ডি কতটুকু? অর্থাৎ একজন লেখক যে ভাষায় লিখছেন, শুধুই সেই ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে স্বীকৃতি? যেমন, বাংলা ভাষায় লেখালিখি করা এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা আন্তর্জাতিক মানের হওয়া সত্ত্বেও তাঁদের আন্তর্জাতিক স্তরে কোনো স্বীকৃতি নেই। আবার, ইংরেজি ভাষার এমন অনেক লেখক আছেন, যাঁদের লেখা অনেক বাঙালি লেখকের থেকে নিম্নমানের হলেও, শুধুমাত্র ভাষাগত কারণে, তাঁর একধরণের আন্তর্জাতিক পরিচিতি আছে। বা, এই একই সমস্যার গণ্ডিটা যদি আরেকটু ছোট করে আনি আমাদের দেশের মধ্যে? তাহলে এই একই সমস্যা দেখবো, হিন্দি বা উর্দু ভাষার লেখকদের সঙ্গে অন্যান্য ভারতীয় ভাষার লেখকদের। কিন্তু অনুবাদের মাধ্যমে কি অন্য ভাষার মধ্যেও ছড়াতে পারে না তাঁর স্বীকৃতি? রবীন্দ্রনাথের উদাহরণ ভাবি যদি?

আবার যদি ভাবি, সেই স্বীকারের কালগত গণ্ডি কতটুকু? অর্থাৎ, সেই স্বীকার কি শুধু সমসময়ের নিরিখে বা লেখকের জীবৎকালে? নাকি আরো অনেক বড় সময়ের গণ্ডিতে? আর এই সময়ের গণ্ডিকে যদি আমরা অতি ক্ষুদ্রে সংকুচিত করে আনি বা অতি বৃহতে সম্প্রসারিত করি, তাহলে কি এই স্বীকৃতির প্রসঙ্গটাই মূল্যহীন হয়ে পড়ে না? কোনো লেখকই কি চান যে তাঁর লেখা খবরের কাগজের মতো প্রত্যহেই ফুরিয়ে যাক, বর্জ্য হয়ে যাক? আবার কোনো লেখক যদি ‘মানুষ’ প্রজাতির উদ্ভব থেকে বিনাশ – এই বিশাল কালখণ্ডের মধ্যে রেখে নিজের লেখার স্বীকৃতি খুঁজতে চেষ্টা করেন, তাহলে তাঁর নিজের কাছেই সেটা একটা বিরাট ঠাট্টা মনে হবে। তাহলে এই স্বীকার কাজ করে কোন সময়গণ্ডির মধ্যে এবং সেই সময়গণ্ডি কিসের নিরিখে স্থির করা হবে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই যে, একজন লেখক কিসের জন্য লেখেন? স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য? একজন লেখক তাঁর অন্তরের অন্তঃস্থলে সত্যিই কতটা পরোয়া করেন স্বীকৃতির? তিনি কি নিজের অন্তরের তাগিদে নিজের জন্যই মূলত লেখেন না? এবার প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে ছাপাতে দেন কী জন্য? লিখে নিজের কাছে ফেলে রাখলেই তো হয়! সেটা তো করেন না! তাহলে স্বীকৃতি কার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয় – লেখকের নাকি পাঠকের? নাকি এ দুইয়েরই বাইরে থাকা আম-জনতার? লেখকের মনের গহনে কি সত্যিই কোনো স্বীকৃতির আকাঙ্ক্ষা থাকে না? কেউ ভাবেন, কোনো লেখক স্বীকৃতি পেলে সেটা তাঁর কাছে একটা দায়িত্বের বোঝা হয়ে দাঁড়ায় সেই স্বীকৃতি ধরে রাখা। কেউ ভাবেন, কোনো লেখক স্বীকৃতি পেলে তাঁর ভিতরের সৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা কমে আসে এবং নিজের সম্পর্কে নিজের একটা মূর্খ ধারণা তৈরি হয়। আবার কেউ ভাবেন, কোনো লেখক স্বীকৃতি পেলে, তা তাঁকে শান্ত সুস্থির হতে আর নিজের কাজের প্রতি মনযোগী হতে শেখায়; স্বীকৃতিলাভের জন্য কোনো ছট্‌ফটানি আর তখন তাকে কাজ থেকে বিক্ষিপ্ত করে অন্যদিকে চালিত করতে পারে না।

কিন্তু স্বীকার না করা মানেই কি অস্বীকার করা? নাকি এ দুয়ের মাঝে এক তৃতীয় পরিসর আছে? আর স্বীকৃতির কি কোনো শেষ আছে? তারও কি অজস্র ধাপ নেই? তার কোন পর্যন্ত যেতে চান একজন লেখক? আর কাউকে সরাসরি অস্বীকার করাও কি আসলে ঘুরিয়ে তার স্বীকৃতিকেই স্বীকার করা নয়? অস্বীকার মানে তো এই – ‘আমি জানি তোমার একধরণের স্বীকৃতি আছে, কিন্তু তোমার পথকে আমি আমার পথ করবো না। আমার পথ আমি নিজেই তৈরি করে নেবো নিজের মতো করে’। ফলে অস্বীকারের মধ্যেও লুকিয়ে থাকে, যাকে অস্বীকার করা হয়, তার স্বীকৃতি সম্পর্কে একধরণের সচেতনতা। আবার অস্বীকার করে এই যে নিজের মতো চলা, সেটাও কি আরেকধরণের স্বীকৃতির দিকেই নয়? তাহলে কি ‘স্বীকৃতি’ শেষ পর্যন্ত একটি চূড়ান্ত ব্যক্তি-সাপেক্ষ ধারণা? নাকি তারও কোনো নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ সম্ভব?

(ক্রমশ)

CATEGORIES
TAGS
Share This

COMMENTS

Wordpress (1)
  • comment-avatar
    Parthajit Chanda 4 years

    কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন…তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ সন্দীপন।।।

  • demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes