
রাহুল দাশগুপ্ত-র ১০টি প্রেমের কবিতা
১
মূল্যবান মুখগুলো হাজারও চোখের আলো পেয়ে
বিদ্যুতের মতো লাগে বেদনার মুখেদের পাশে
দ্রষ্টব্য তোমার মুখ, এখন বিদ্যুৎ হয়ে আছে
বেদনার জলে ভিজে আমি আছি দর্শকের মাঝে
আমাকে বাসবে ভালো? মনে মনে শতবার বলি
নিজের খেয়ালে তুমি বেশ আছো, ভুলেছো সকলই
বেদনার মুখগুলো, যে বেদনা ভালোবাসাময়
একবার দেখে যাবে ছেড়ে এসে আলোর সঞ্চয়?
পার্কের বেঞ্চের মতো বসে একা, দূরে মঞ্চ থেকে
তোমায় বিদ্যুৎ লাগে, অন্ধকার তোমার দু’চোখে…
২
(উৎসর্গ: আর্নেস্ট হেমিংওয়ে)
যারা এই দুটি চোখ দেখে বলেছিল ‘ভালোবাসি’
বুকে মুখ ঠোঁটে ঠোঁট কাঁধে কাঁধ ঘন পরিশ্লেষ
শুধু এই দুটি চোখ দেখে বলেছিল ‘ভালোবাসি’
চোখের সমস্ত ঋণ, অধিকার, অবিশ্বাসী পায়ে
গুঁড়িয়ে মারিয়ে তারা চলে গিয়েছিল দূর দেশে
চোখের ভেতর চোখ সব স্মৃতি সব দৃষ্টি ভুলে
যুদ্ধ ভুলে স্পর্ধা ভুলে ওজন হারিয়ে বসে থাকে।
অধিকার দিয়ে যারা অধিকার কেড়ে নিতে পারে
প্রতিশ্রুতি ভুলে যারা ভালোবেসে অপমান করে
তাদের করব ক্ষমা? বুকে নেব তারা ফিরে এলে?
এখানে আপোশ চলে? প্রতিযোগিতায় দৃঢ় জিতে
হারিয়ে দিয়েছে যারা জোর করে সেখানে আপোশ?
ভালোবাসা তবু নদী, কত অ্যাগনেস ভেসে যাবে
থেকে যাব প্রতি স্রোতে মাতাল তরণী তুমি, আমি।
৩
প্রেমিকের জন্য পথ পেতে দাও
এখানে এত চড়াই উৎরাই
সে পড়ে যাবে, ছড়ে যাবে, ভেঙেও যেতে পারে।
প্রেমিকের জন্য পথ পেতে দাও
যে দীপ জ্বলছে সন্তর্পণে
সে পড়ে যাবে, ছড়ে যাবে, ভেঙেও যেতে পারে।
প্রেমিকের জন্য পথ পেতে দাও
চোখের জলের চেয়েও নরম একটা পথ
পলকের চেয়েও সংক্ষিপ্ত
নইলে ও চিনতেই পারবে না…
৪
তোমার সমস্ত মুখ ভিজে গেছে অনুতাপে
আমার সমস্ত মুখ পুড়ে গেছে ব্যথায়
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভস্ম হয়ে গেছে বাড়িঘর।
৫
যে সব শব্দ জমে ভিতরে পাথর হয়
সে কী কবিতা?
নাকি যেসব শব্দ ক্ষয়ে নদীস্রোত বয়ে যায়
তাই কবিতা?
তারপর বহুদিন ধরে সুযোগ খুঁজে একদিন আকস্মিকই
তোমার কপালে দিয়ে দিলাম ছোট্ট একটা চুমু।
তুমি তখন একেবারে নিজের মতো করেই হাসছিলে।
এরপর নেমে এল গভীর প্রশান্তিময় এক নীল নীরবতা
আমরা দেখলাম, জানলার বাইরে
কুলকুল শব্দের এক পাহাড়ি নদী। আর–
তখনই আমরা বদলে গেলাম কবিতায়।
৬
সত্য, তুমি কঙ্কাল
আর প্রেমালাপ হল
নারীর শরীর
এখন, তুমিই বলো
নারীর শরীরের ভিতর
কঙ্কাল থাকতে পারে
আবার, নাও তো পারে!
৭
সে বলেছিল, ‘আমি তোমায় নীল চোখে দেখি।’
পালকের মতো নরম প্রতিটা শব্দ
আমাকেও উড়িয়ে নিয়ে গেছিল সেই পালক।
তারপর অপেক্ষা করেছি কতদিন
সে আসেনি
আর প্রতিটি মুহূর্তে ওজন বেড়েছে
প্রতিটা শব্দের
শেষে ওরা হয়ে গেছে একেকটা
ভারি পাথর
আর আমায় নিক্ষেপ করেছে
ভূ–গর্ভের অতল অন্ধকারে।
৮
বর্ণের ভিতরে থাকে মিউজিক
মিউজিকের ভিতরে থাকে লম্বা টানা পথ
পথের হৃদয়ে থাকে কুয়াশা
ঋতুর পর ঋতু পেরিয়ে সেই পথ মেশে
ঋতুহীন বসন্তে
সমস্ত মৃত আত্মারা যেখানে
ফুল হয়ে ফুটে আছে
আর তাদের গন্ধ হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে
প্রেরণার অলৌকিক আঁচল।
৯
বাঁ–কাঁধের নীচে প্রবাহ পেয়েছে মাটি
সুযোগ পেয়েই সেও ফুল ফুটিয়েছে
সব আসা–যাওয়া সূচ হয়ে বিঁধে আছে
ছেলেটি মেয়েটি ডুবেছে বিন্দুভারে
বিন্দুর কোনো শুরু নেই, নেই শেষ–ও
আবার বিন্দু থেকেই সূচনা তাঁর–ই
সময়–শরীর বিন্দুতে এলে জেনো
অমরতা, শুধু অমরতা জেগে থাকে…
শেকড়ের মতো দাড়ি ছড়িয়েছে গালে
দশদিক থেকে ঘিরে নিতে চায় তাঁকে
মেয়েটি কেবল–ই ফুল ফোটানোর ছলে
কাঁটার সিঁড়িতে উঠে যায় দূরাকাশে!
১০
তোমার মুখের নীচে গাঢ় হয় আরো অন্ধ মুখ
তোমাদের উজ্জ্বলতা মেরে ফেলে ভিতরে ভিতরে
তোমরা সেসব চিঠি পড়তে পাও না কোনোদিন
তোমার ব্যথার পাশে আজো আমি নতজানু হই
তোমার চোখের জলে থইথই আমার কুটির
মরা গাঙ ভেসে যায়; আকাশে বাতাসে ফেরে দিন
তোমরা সেসব চিঠি পড়তে পাও না কোনোদিন…

