চিরশ্রী দেবনাথ-এর গল্প

চিরশ্রী দেবনাথ-এর গল্প

 

কবির বাড়ি

 

 

দুপুরের রোদ মরে এসেছে। শান্তিনিকেতনী ঝোলাতে কয়েকটি বই নিয়ে, মেরুন রঙের পাঞ্জাবি পরে তৈরি হচ্ছিল নীলাকাশ।

—কোথায় যাচ্ছো? তোমার কবিতা শহরের বিখ্যাত কবি শুনতে চান না, তুমি কি সেটা বোঝো না, আড়ালে তোমার বন্ধুরাও হাসাহাসি করে, অনেকসময় সামনেও, অথচ তুমি তাদের কৌতুক বুঝতে পারো না?

 

—না পারি না, মানসী, আমি বুঝতে চাই না।

আমি এই ভুল ঘোরের মধ্যে জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।

—কেন এরকম করছ?

কতগুলো ফালতু কবি সম্মেলনে তিন ঘন্টা বসে থেকে একটি কবিতা পড়ে বাড়িতে এলে, কী অদ্ভুত বিরক্তিকর জিনিস। লজ্জা করে আমার, আর যাবে না ঐগুলোতে।

—তাহলে কোথায় যাবো?

মানসী ‘ কোথায় যাবো ‘ প্রশ্নটার তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর দিতে পারল না, শুধু  ফোঁস করে উঠল, বলল “একদিন তুমি কষ্ট পাবে খুব। সেদিন দুমড়ে মুচড়ে যাবে তোমার মন। ডিপ্রেশন নামের ভয়াবহ দৈত্যটা তোমাকে গিলে ফেলবে। তোমার হতাশাভরা মুখ দেখতে দেখতে আমি আরো ক্লান্ত হয়ে যাবো। একটু অন্যভাবে জীবনকে দেখো না,

স্পোর্টিংলি, মানে লেখো, কিন্তু এরকম অন্যমনস্কভাবে নয়।”

—তোমার কথাগুলো আমাকে খুব ধাঁধায় ফেলছে মানসী।

—-কোথায় ধাঁধা, সবকিছু খুব সহজ,

 দেখো আমাদের ছেলে আছে, তোমার  চাকরি আছে, সঙ্গে অন্য কোন ছোটখাটো ব্যবসা করলে আমরা একটি জায়গা কিনতে পারি, তারপর বাড়ি, আমাদের ছেলের জন্য অন্তত। তা না করে তুমি এসবের মধ্য দিয়ে ছুটছ দিনরাত, অর্থহীন লেখালেখি। কোনোদিন কি তুমি বিখ্যাত হবে? গুটিকয় লোকের মিথ্যে কয়েকটি স্তুতি বাক্য ঝোলায় পুরে নিয়ে আসবে, আসতে আসতে ঝোলার নিচ থেকে তা রাস্তার ড্রেনে পড়ে যাবে।

আচমকা নীলাকাশ স্ত্রীর দিকে তাকাল, “বাহ্ শেষ লাইনটা না তুমি দারুণ বলেছো মানসী।  এজন্যই তোমার সঙ্গে মাঝে মাঝে ঝগড়া জাতীয় কিছু হওয়া দরকার। তাতে উষ্মা হয়, উষ্ণতার ফেরে পংক্তির জন্ম হয়।”

 

এ পর্যায়ে একটি চুম্বন হওয়া উচিত।

 

সিনেমায় তাই হয়। নীলাকাশও মানসীকে জড়িয়ে ধরল, ওর ঠোঁটে ঠোঁট রাখল। মানসী মুখখানা সরিয়ে নিল বিরক্তিতে।

—আমার স্পর্শে তুমি আজকাল বিরক্ত হও, তাই না মানসী? নীলাকাশ মেঘমন্দ্র স্বরে বলল।

—ভাল্লাগে না।

—কেন আমি কবিতা লিখি বলে আমার ঠোঁটও দীন হয়ে গেছে, স্পর্শের অযোগ্য ?

মানসী আর কথা বলল না।

নীলাকাশ বেরিয়ে গেলো, এই নামটি দিয়েছেন তার মা, বাবা প্রথমে নাম রেখেছিলেন আকাশ, মা বলেছিল বড্ড চেনা নাম, তার চাইতে ওর নাম হোক নীলাকাশ।

কবি নীলাকাশ, একথা ভাবলেই সে আত্মতৃপ্তি পায়, যেন জীবনের মধ্যে ঢুকে গেছে আর একটা জীবন। খুব পলকা সেই জীবনটাকে সে স্বচ্ছ বাক্সে বন্দি করে রেখেছে, শুধু দুচোখ ভরে দেখার জন্য।

মানসী বলেছে চাকরির সঙ্গে ছোটখাটো কিছু ব্যবসা করতে।  ওটা করা সম্ভব  না তার পক্ষে । নীলাকাশ তো সবই করে, সকালে বাজার করে, তারপর অফিস করে, ছেলেকে পড়ায়, মাঝে মাঝে বেড়াতে যায় সবাইকে নিয়ে, রাতে মানসীকে আদর করে, এতো কিছুর পর কবিতা লেখার চেষ্টা করে, আর কি করবে?

ব্যবসা! ব্যবসা লোকজন কীভাবে করে?

কোনো ধারণাই নেই। মানসী বলল, শাড়ির ব্যবসা করবে, কেমন ঘোলাটে হয়ে যায় তখন নীলাকাশ। তার কাছ থেকে শাড়ি কিনবে লোকজন? তাতে লাভ হবে? শাড়ি বলতে নীলাকাশ বোঝে একটি তুঁতে রঙের শাড়ি, মানসীকে প্রথম এরকম একটি শাড়িতেই দেখেছিল।

আচ্ছা শুধু তুঁতে রঙের শাড়ির ব্যবসা করলে কেমন হয়, দোকানের নাম ‘মানসী’ এখানে শুধু বিভিন্ন শেডের তুঁতে রঙের শাড়ি পাওয়া যায়। কী সব ভাবছে সে, যত্তসব।

বিখ্যাত কবির বাসায় বিকেল থেকে রাত অব্দি খুব ভিড় হয় সপ্তাহের দুটো নির্দিষ্ট দিনে, এই দুটো দিনে তিনি অনুজ কবিদের কবিতা শুনে মতামত দেন, আলোচনা করেন। নীলাকাশের ডাক প্রায় দিনই আসে না, তবুও সে বসে থাকে, একের পর এক কবিতা ও আলোচনা শুনতে থাকে। তারপর বাড়ি ফিরে আসে। বিরলতম দু একটি দিনে বিখ্যাত কবি ওকে ডেকে নেন, দেখি তো নতুন কি লিখেছো।

নীলাকাশ আগের দিন রাতে লেখা দুটো কবিতা ওনার হাতে তুলে দেয়। তিনি মনে মনে পড়েন, ওর কবিতা এখন পর্যন্ত তিনি উচ্চারণ করে  পড়েননি, যেন তার কবিতা কাদামাটি, জোরে উচ্চারণ করলেই ছিটকে পড়বে ময়লা অন্যের ধপধপে পাঞ্জাবির গায়ে। তাতে নীলাকাশ কিছু মনে করে না। কবিতা লিখতে এলে অনেক অবহেলা সহ্য করতে হয়, একসময় হঠাৎ হঠাৎ  জ্বলে ওঠেন একজন অখ্যাত লেখক।

হয়তো সে এমন একটি আইডিয়ার কবিতা লিখে ফেলল, যা পড়ে অন্য লেখকরা ভাবল আশ্চর্য, এই ভাবনাটা তো খুব সাধারণ, কেনো যেন তাদের মনে আসেনি। সমস্যা হচ্ছে এই আইডিয়ামূলক লেখাগুলো টিকে যায় বেশিরভাগ সময়, লোকজন কিছুদিন অন্তত মনে রাখে, তারপর আর সেই দুর্বল লেখকটির কোনো ভালো লেখা হয়না। স্তিমিত অস্তরাগের কাছে তাকে আবার কাঁচুমাচু হয়ে বসে থাকতে হয়, হয়তো লোকটি বুড়ো হয়ে যায়, তার ছেলেমেয়েরা জানতেই পারে না এই লেখকসত্তার কথা, এটা তো সাংঘাতিক কিছু নয়, বরং ইলেকশনে দাঁড়ালে বলা যায় বাবা রাজনীতি করতেন।

নীলাকাশ কি এমনি করে হঠাৎ একদিন অসাধারণ কোনো আইডিয়ার কবিতা লিখে ফেলতে পারবে?

এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ি ফিরছিল সে, রাত নটা বেজে গেছে, আজকেও তার কবিতা পড়ে দেখেননি বিখ্যাত কবি। তবে তাতে তার মন খারাপ হয়নি, কিন্তু অন্য জিনিস হয়েছে,   মনখারাপের একটি নরম আনন্দ আছে, সেটা অনুভব করছে,  সকলের পেছনে বসে ব্যর্থ হয়ে  ফিরে আসা, এই আনন্দটুকু সে অনুভব করছে হৃদয় দিয়ে।

গেটের শব্দ হতেই মানসী হাট করে দরজা খুলে দিল, তাদের বাড়িটি মালিকহীন, কয়েকঘর ভাড়াটে থাকে, বাড়িটিতে বকুল গাছ আছে, উঠোনে ঝরে পড়ে থাকে,  ঢোকার মুখে প্রথম তিনটে ঘর নীলাকাশের আস্তানা,  আর একটি অযাচিত উপহার হলো তার ঘরের সামনেই বকুল গাছটি,  নীলাকাশ প্রতিদিন বকুল বিছানো পথে ঘরে ফেরেন, পৃথিবীর কাছ থেকে এর চেয়ে বড়ো প্রাপ্তি আর কি আছে?

নীলাকাশ কয়েকটি ফুল তুলল।

ঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই মানসী বলল “ খাবার রেডি, খেয়ে আমাকে রেহাই দাও, ঘুমোব।”

নীলাকাশ হাতমুখ ধুয়ে ফুলগুলো ডাইনিং টেবিলে রাখল, মানসীর হাতে দিল না, মানসী বার বার তাকাচ্ছে, ফুল দিলে ঝগড়া করতো, না দেওয়ায় ঝগড়া করতে পারছে না, খুব অস্থিরতা ওর মধ্যে, ঠকাস করে ডাল আর  মাছের ঝোলের বাটি রাখল,পাতে গরম গরম বেগুনভাজা, ঝরঝরে ভাত, কাঁচালঙ্কা । নীলাকাশের মনে হলো কবিতার প্রিয় পংক্তি যেন এক একটি খাবার।

তারপর তাকে অবাক করে দিয়ে মানসী শান্তভাবে বলল,– আজ তিনি তোমার কবিতা নিয়ে কি বললেন।

নীলাকাশ থমকালো, মানসী তো কখনো জিজ্ঞেস করে না এসব।

একটু থমকে সে বলল–তিনি পড়েননি, সময় হয়নি।

–চা খেয়েছো?

–না।

–এতোক্ষণ শুকনো মুখে বসেছিলে?

–কবিতা শুনছিলাম।

মানসীর চোখের দিকে আর তাকালো না সে।

কিন্তু  মানসী থামল না, সে বলতে লাগল,” দাদা ফোন করেছিল, একটি  জমি বিক্রি হবে, একটু দূরে শহর থেকে, তবে নতুন রাস্তা হচ্ছে, জুড়ে যাবে শহরের সঙ্গে দু তিন বছরের মধ্যেই, কয়েকজন মিলে শেয়ারে কিনছে, আমরাও ইচ্ছে করলে এই কয়েকজনের মধ্যে হতে পারি। পাঁচ লাখে হয়ে যাবে। দাদা সাহায্য করবে।”

নীলাকাশ দুটো জিনিস সঙ্গে সঙ্গে  ভাবতে লাগল, এক নম্বর পাঁচ লাখ টাকা, দুনম্বর মানসীর দাদার  চিন্তিত এবং  রাগী মুখ।

–হু।

—হু বললে হবে?  জি পি এফ থেকে লোন নাও।

—আর কারো অসুখ করলে?

–কবিতাই তোমার অসুখ, ওটা ছেড়ে দাও, –তাহলেই হবে।

–আচ্ছা।

–মানে?

–মানে ছেড়ে দেবো।

মানসী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।

এতো সহজে সব কিছু হয়ে যাবে মানসী ভাবতেই পারেনি।

নীলাকাশ সত্যি সত্যিই  জি পি এফ থেকে লোন নিল, দাদার সাহায্যও নিতে হলো, জমি কেনা হলো। চারদিকে গাছগাছালি, মাঠ।  নীলাকাশ বলল, এখন আর পারছি না মানসী,  ক’বছর পর নাহয় বাড়ি  করব।

নাতো, আস্তে করে শুরু করতে হবে, আমরা খুব কষ্ট করবো কয়েকবছর, দেখবে বাড়ি হয়ে যাবে।

তারপর কোথায় কোথায় দৌড়ুলো

নীলাকাশ।  ইট, বালি, সিমেন্ট, রড। যে লোকটা রডগুলো ছোট ট্রাকে তুলে দেয়, তার হাতের আঙুলগুলো কী শীর্ণ, এমনকি ফর্সাও, নীল হয়ে আছে নখের মাথা, তাতে লোহার আবির লেগে আছে, ওর এইরকম হাত দিয়ে একতারা বাজানোর কথা অথবা ছবি আঁকা, লেখালেখি, সে কিনা রড তুলছে ট্রাকে ।

নিজের হাতের দিকে তাকাল নীলাকাশ, মোটা মোটা আঙুল, নখগুলো শক্ত, তাতে একদমই নীলচে ভাব নেই। সাদাটে পুরু নখ, দেখলে মনেই হয় না এর নিচে কোনো রহস্যময় শিরা বা ধমনী আছে, যেখানে প্রবাহিত হয় আশ্চর্য রক্তধারা। উল্টে মনে হয় কঠিন শ্রমজীবী মানুষের হাত। রড বিক্রেতা লোকটা তার জায়গায় হলে  হয়তো দুরন্ত কবিতা লিখত, আর সে রড বিক্রেতার জায়গায় থাকলে একদিন নিজস্ব হার্ডওয়ারের বিজনেস খুলত। প্রত্যেকদিন  একলাখ টাকা লোহার মোটা সিন্দুকে রেখে ঘুমোতে যেতো। জায়গা ওলোটপালট হওয়ায়, তার ভালো কবি হওয়া হলো না, আর ঐ লোকটির ধুরন্ধর বিজনেসম্যান।

এতোসব হাবিজাবি ভাবতে গিয়ে নীলাকাশ

এই কদিনে কেমন যেন সব গুলিয়ে ফেলছে। মনে হচ্ছে ভেতরে স্বচ্ছ বাক্সের ভেতর যে লোকটা থাকে, সে কেমন বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে আছে ।

কয়েকদিন পর, বাড়ির ভিতের জন্য মাটি খুৃঁড়তে গিয়ে সেখানে পাওয়া গেল একটি প্লাস্টিকের ডল, সোনালি চুল, রেড গাউন , দেখলে মনে হয় কোনো খুকি খেলেছিল কিছুদিন আগে।  এরকম জায়গায় কোথা থেকে পুতুল এলো? ভাবতে ভাবতে নীলাকাশের খুব কষ্ট হচ্ছিল, আহা পুতুলটা হয়তো ফেলে দিয়েছে কেউ, তখন খুকুমণি অনেক কেঁদেছে, তারপর সেই খুকুমণি বড়ো হয়ে গেছে, পুতুলটির কথা তার আর এখন মনেই পড়ে না।

নীলাকাশ জানে সে খুব সাদামাটা লেখে, তবুও একদিন বড়ো পত্রিকায় সে দুটো কবিতা পাঠালো। তার বাড়ির কবিতা।

 

“এই যে পানাপুকুর, ঝোপঝাড়, লক্ষ্মীপেঁচার সাদা পালক, /

সেখানে মুখ গুঁজে পড়ে আছে দুজন নরনারী, /

তারা বাড়ি করছে, ইট গাঁথছে সুজান মিস্ত্রি /

বাড়ির উঠোনে আগে থেকে লাগিয়ে রাখছে গাছ, /

কবি এলে, ফুল বিছানো পথে হেঁটে যাবে,/

লোন নেওয়া কবি, শোধ শোধ করতে করতে/

সাদা হাড় হয়ে যাওয়া নারী, /

এর চাইতে ভালোবাসা কেউ লিখতে শেখেনি, /

কবে যেন প্রিয় নারী,  কবির স্তব্ধতায় /

শীতল হয়ে গেছে… মেঝের মতো। /”

 

এসব থেকেই বেরিয়ে এসেছিল কিছু দীর্ঘতম শ্বাস।

বড়ো পত্রিকা সেগুলো ছাপিয়ে দিলো। হয়তো

পরবর্তীতে  আর একবারও নীলাকাশের কবিতা ওরা ছাপবেন না, কিন্তু এই বাড়ি তৈরি হতে হতে দু তিন গুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত  হলো।

শহরের বিখ্যাত কবি পড়লেন, চমকালেন। অন্যদের সঙ্গে বড়ো পত্রিকার গুণগত মান নিয়ে কঠোর সমালোচনা করলেন। কিন্তু নীলাকাশ তবু আসতে লাগল তার কাছে, ওর কবিতা তিনি এখনো জোরে পড়েননি।

ছেলেটা কেন আসে? তিনি ভাবেন।

নীলাকাশ জানে, মনখারাপ জমা করতে হয়, ব্যর্থতা, ধার অথবা কষ্ট, এসব নীলাকাশ বহন করে অথবা ভরে ভরে নিয়ে যায়, তার ঔদ্ধত্য আসে না, কেবলই নুয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়,

তাহলে বোধহয় কবিতা হবে?

 

মানসীকে জিজ্ঞেস করতে হবে, চারদিকে জনমানবহীন এই বাড়িটাই কি পৃথিবীর একমাত্র কবিতা? মানসী লিখছে, নীলাকাশ দেখছে আর একটি দীন চুম্বন মাটিতে গড়াগড়ি যাচ্ছে!

 

CATEGORIES
Share This

COMMENTS

Wordpress (0)
demon slauer rule 34 lena the plug leak amateurtrheesome.com cumming in milfs mouth mujer haciendo el amor a un hombre, belle delphine of leaked emma watson in porn xxxamat.com big booty in public hidden cam gay sex, sit on face porn g a y f o r i t forcedpornanal.com please screw my wife female celebrity sex tapes